জ্যোতিষ্মান চট্টোপাধ্যায়
।। প্রথম ভাগ ।।
[একটি বড়সড় বাদ্যযন্ত্রের দোকান। হিন্দুস্তানী Classical বিভাগের দেখাশোনা করে তন্দ্রা। শরৎ – এক সম্ভ্রান্ত চেহারার খদ্দের প্রবেশ করে।]
ত। নমস্কার।
শ। নমস্কার।
ত। বলুন স্যার – কোন Instrument দেখাবো?
শ। ইয়ে – মানে –
ত। String Instrument চাইছেন, না Flute জাতীয় –
শ। না – ঠিক জাতের কথা ভেবে আমি আসিনি –
ত। মাপ করবেন, আপনি কি কোনো বাজনা কিনবেন?
শ। অবশ্যই! সেই জন্যই তো আসা!
ত। তাহলে একটু আন্দাজ দিন, কিরকম জিনিস চাইছেন! আপনি কোন্ Instrument বাজান?
শ। আমি? আমি জীবনে বেঞ্চ ছাড়া কিছু বাজাইনি।
ত। তবে কি আপনার বাড়ীর কেউ কিছু বাজান?
শ। আমার স্ত্রী সঙ্গীতবিমুখ। বাড়িতে আর কেউ নেই। সেটা Factor নয়, বাজনা আমি কিনবোই।
ত। কোন্ বাজনাটা চাইছেন?
শ। ইয়ে – আপনি যেটা সবচেয়ে ভালো বাজান।
ত। মানে? কি Mean করছেন আপনি?
শ। আপনি ভুল বুঝবেন না – আমি এমন কিছু Mean করছি না যা আপনার পক্ষে অপমানজনক। আসলে আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না।
ত। তবে Kindly একটু তাড়াতাড়ি বোঝান স্যার – আমাকে অন্য Customer-ও তো Attend করতে হবে!
শ। I am Sorry – হয়তো আপনাকে বিরক্ত করছি – কিন্তু Please আমার প্রয়োজনটা বোঝার চেষ্টা করুন।
ত। কি করে বুঝবো বলুন? আপনি নিজে কিছু বাজান না, পরিবারে কারো বাজনার প্রয়োজন নেই – অথচ বাজনা কিনবেন, এবং এমন বাজনা যেটা আমি বাজাতে পারি!
শ। Exactly!
ত। Exactly মানে? আপনি বাজনা কিনবেন আর সেটা আমি আপনার বাড়িতে গিয়ে বাজিয়ে আসবো?
শ। Exactly! তবে শুধু একদিনের জন্য।
ত। Demonstration চাইছেন? তার জন্যে বাড়ী যাবার দরকার কি?
শ। Demonstration চাই না ম্যাডাম। আমি চাই আপনি শুধু আজকের দিনটার জন্য আমার বাড়ীতে এসে একটা কিছু বাজিয়ে যান। তার জন্য যত Charge লাগে আমি দেব।
ত। কোনো বিশেষ Occasion?
শ। বলতে পারেন।
ত। তার জন্য কোনো Musician ভাড়া করলেই তো পারতেন! বাজনা কেনার দরকার কি!
শ। সেটা আপনি বুঝবেন না। Kindly Co-operate করুন। যত টাকা লাগে দেব।
ত। আপনার প্রস্তাবটা একটু বেয়াড়া রকমের নয় কি?
শ। হতে পারে। কিছু করার নেই। আচ্ছা – আপনি কি বাজনা বেশ ভালো বাজাতে পারেন?
ত। আপনি কি বাজনা চাইছেন?
শ। বেশ বড় সাইজের কিছু একটা।
ত। বড় সাইজের মানে?
শ। মানে, বাজনাটার সাইজটা বেশ বড় হওয়া চাই।
ত। কারণ?
শ। সাইজটা জরুরী। আচ্ছা আপনি পিয়ানো বাজাতে পারেন?
ত। আমাদের দোকানে পিয়ানো নেই।
শ। ইশ্শ্! পিয়ানো হলে ভালো হতো। তানপুরা?
ত। তা আছে।
শ। তাহলে তানপুরাই নেব। আপনি Home Delivery-র ব্যবস্থা করুন। এছাড়া আপনার পারিশ্রমিক যেটা হবে –
ত। Kindly বিল কাউন্টারে গিয়ে পেমেন্ট করুন আর আপনার বাড়ীর ঠিকানাটা লিখে দিন।
শ। Thank You – তবে Home Delivery-র সময় আপনাকে অবশ্যই আসতে হবে। ডোবাবেন না Please –
ত। কোনোরকম আপত্তিকর কিছু দেখলেই কিন্তু আমি সঙ্গে সঙ্গে চলে আসবো।
শ। ঠিক আছে। Deliver Time কিন্তু ঠিক সন্ধ্যে সাতটা।
।। দ্বিতীয় ভাগ ।।
[শরতের বাড়ী। তানপুরা এসে পৌঁছেছে।]
ত। তানপুরাটা কোথায় রাখতে হবে একটু বলে দিন।
শ। Kindly এটা দোতলায় নিয়ে আসতে বলুন। — হ্যাঁ – সিঁড়ির টার্নিংটা সাবধানে – দেখে ভাই – ভেঙে না যায় – হ্যাঁ – এবার ভিতরে নিয়ে আসুন।
ত। এ কি! এটা তো আপনার বেডরুম!
শ। ইয়ে – হ্যাঁ!
ত। বেডরুমে তানপুরা থাকবে!
শ। না না ! অতটা অবাক হবে না। ওপাশে একটা অ্যাটাচ্ড্ বাথরুম দেখতে পাচ্ছেন? Kindly তানপুরাটা ওই বাথরুমে ঢুকিয়ে দিন।
ত। বাথরুমে তানপুরা! দেখুন – পাগলামীর একটা সীমা আছে! আপনার স্ত্রী কোথায়?
শ। সিনেমায় গেছেন। ও ফেরা অবধি আপনাকে একটু কষ্ট করতে হবে। হ্যাঁ ভাই – ওই বেসিনের পাশে আড় করে রাখুন।
ত। আমি আপনার বাথরুমে বসে তানপুরা বাজাবো?
শ। Exactly! শুধু কিছুক্ষণের জন্যে।
ত। আর আপনি তখন বাথরুম করবেন? আমি কিন্তু এবার পুলিশে খবর দেব!
শ। ছি ছি! বাথরুমে আপনি একাই থাকবেন। আমি এখানে বসে বই পড়বো। রাজী হয়ে যান Please – আপনাকে ডবল টাকা দেব।
ত। টাকার প্রশ্ন নয়। পুরো ঘটনাটার ব্যাখ্যা না দিলে আমি পুলিশ ডাকবোই।
শ। আসলে কি জানেন – আমার স্ত্রী সব ব্যাপারেই খুব উদাসীন। একবার আমার গোটা মাসে মাইনের টাকা পকেটমার হয়ে গেল। প্রায় কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী ফিরলাম। আমার স্ত্রী রেবা উল বুনছিলো। আমি বললাম – “সর্বনাশ হয়ে গেছে রেবা! আমার সারা মাসের রোজগার পকেটমার হয়ে গেছে।” রেবা মুখ না তুলেই বললো – “ও! তাই না কি!” বলে আবার উল বুনতে লাগলো।
ত। তার সঙ্গে তানপুরা কেনার কি সম্পর্ক!
শ। Kindly শুনুন। একবার আমি একচুলের জন্য দোতলা বাসের নিচে চাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গেলাম। হাঁপাতে হাঁপাতে বাড়ী ফিরে রেবাকে বললাম – “রেবা! আজ একচুলের জন্য বাসচাপা পড়তে পড়তে বেঁচে গিয়েছি!” রেবা টি.ভি. দেখচিলো – চোখ না সরিয়েই বললো – “ও! তাই না কি?”
ত। দেখুন – এটা আপনাদের পারিবারিক সমস্যা। আমি তানপুরা বাজিয়ে কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করবো?
শ। আমি সমাধান চাই না। প্রতিশোধ চাই।
ত। কিভাবে?
শ। আজ রেবা বান্ধবীদের সঙ্গে সিনেমায় গেছে। ফিরে ও প্রথমেই বাথরুমে ঢুকবে। আমি এই চেয়ারটায় বসে বই পড়বো। আপনি বাথরুমে বসে তানপুরা বাজাবেন। রেবা বাথরুমের দরজা খুলেই চিৎকার করে উঠবে – “শুনছো! বাথরুমে একটা মেয়ে বসে তানপুরা বাজাচ্ছে!” আমি বই থেকে মুখ না তুলেই বলবো – “ও! তাই না কি!”
।। সমাপ্ত ।।
দুর্দান্ত ! অসম্ভব মজার !