Home প্রবন্ধ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি প্রবাসী বাঙালীর দুর্গাপুজো : গ্রেটার কৈলাশ পার্ট – ২, দক্ষিণায়ন
প্রবন্ধসাহিত্য ও সংস্কৃতি

প্রবাসী বাঙালীর দুর্গাপুজো : গ্রেটার কৈলাশ পার্ট – ২, দক্ষিণায়ন

 

সুস্মিতা রায়

বিয়ের পর থেকেই প্রবাসী বাঙালির তকমাধারী হয়ে গেলাম। পঁচিশ বছর হতে চলল প্রথম পাঁচ বছর দূর্গা পুজার সময় কলকাতাতেই চলে যেতাম। ২০০১ সালের পর থেকে দিল্লীর দুর্গা পুজো দেখার আগ্রহটা জন্মালো। ২০০৩ সালে নিউ দিল্লীর গ্রেটার কৈলাশ পার্ট ২ এর দক্ষিণায়ন ক্লাবের সদস্য হলাম। এই সদস্য হওয়ার গল্পটা খুব আকর্ষণীয়। প্রয়াত শ্রী নীপেশ চন্দ্র তালুকদার মহাশয় আমাদের ফাউন্ডার মেম্বার। তিনি একদিন আমার বাড়ির নেমপ্লেটে বাঙালি পদবী দেখে ঢুকে পড়লেন আমাদের বাড়িতে। কোনরকম ফর্মালিটি কিছুই ছিল না । অসম্ভব ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। আলাপচারিতার পর আমাদের এই ক্লাবের সদস্য হওয়ার অনুরোধ জানালে আমরা তৎক্ষণাৎ রাজি হয়ে গেলাম। সেই থেকে আর দক্ষিণায়নের ক্লাবের দুর্গাপূজা এবং অন্যান্য অ্যাক্টিভিটি যেমন পিকনিক, বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম, ছোটখাটো ঘুরতে যাওয়া, সরস্বতী পুজো এবং গেট টুগেদার এইসবের সাথে একাত্ম হয়ে গেলাম।

একটা বিশাল পরিবার আমাদের এই ক্লাব। যখন সবাই একসাথে হই, গল্প থামানো যায় না। পুজোর মিটিং এর সময় সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে কখন মিটিং শেষ হবে আর গল্প শুরু করার পারমিশন পাওয়া যাবে।

পূজোর কাজ করার যে কি আনন্দ, পুজোর চার দিন তো বাড়িতে থাকা এবং খাওয়ার কোন প্রশ্নই নেই। সবাই মিলে কাজ করা হয়। এক একটা কাজের দায়িত্ব এক একটা দল ভাগ করে নেয়। যেমন কোনো দল যদি ভোর বেলার কাজ করে অন্য দল বেদীর কাজ করে আরেক দল তখন সন্ধ্যেবেলার শীতলের দায়িত্ব নেয়।

সকালবেলা কাজের মধ্যে প্রসাদের প্যাকেট বাননো, ফল কাটা, অঞ্জলির  ফুল, মালা গোছানো, আলপনা ইত্যাদি পড়ে দুপুরের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ পুজোর মূল ভোগ প্রত্যেকটা মেম্বারের মধ্যে সমান ভাগে ভাগ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রত্যেকদিন সবাই এক একটা করে আইটেম রান্না করে নিয়ে আসে। আর দুপুরের ভোগ বিতরণ জনসাধারণের জন্য সবাই একবার করে হাত লাগায়।

নৈবেদ্যর থালা সাজানো, সন্ধিপুজোর পদ্ম খোলা, মূল ভোগের থালা সাজানো,  পূজো হয়ে গেলে সেই ভোগ আবার পুরোহিত এবং মেম্বারদের জন্য ডিস্ট্রিবিউশন এগুলো বড় কাজের মধ্যেই পড়ে।

আমাদের পুজোর আনুষঙ্গিক আরেকটি বড় আনন্দের জায়গা হল নানান রকমের অনুষ্ঠান ও নানান রকমের মজার গেম। মিউজিক্যাল চেয়ার, পেইন্টিং কম্পিটিশন যেগুলো বিভিন্ন দিনে সকালে ভাগ করে রাখা হয় সকালের অঞ্জলি থেকে দুপুরের ভোগের মাঝামাঝি সময়টায়। 

পুজো শুরুর আগে পঞ্চমীর দিন প্রধান অ্যাট্রাকশন হলো আনন্দমেলা প্রত্যেকটা সদস্য বাড়ি থেকে নানান রকম সুস্বাদু রান্না করে দেয় সেগুলো আত্মীয় স্বজনদের কাছে এবং বন্ধু বান্ধবীদের মধ্যে বিক্রি করা হয় সবাই খুব আনন্দ করে সেই জিনিস গুলি করে অনেকে তো বাড়ির ডিনার সেখানেই সেরে নেয় কেউ আবার তাকে নিয়ে যায় বাড়িতে আরাম করে বসে ডিনার করবে বলে প্রবাসের সমস্ত পুজোতেই আনন্দমেলা ব্যাপারটি খুব জনপ্রিয় এবং প্রচলিত।

পুজোর দিনগুলোর দ্বিতীয় আকর্ষণ সন্ধ্যেবেলার ধুনুচি নাচ  এবং বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রাম। দক্ষিণায়নের সদস্যদের সপ্তমীর দিন সন্ধ্যায় এবং বাইরের আর্টিস্টদের অন্যান্য দিনগুলিতে  আয়োজন করা হয়ে থাকে। অনেক সময় নবমীর দিন মুভি দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়।

বিসর্জন বা ভাসানের জন্যে ক্লাবের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া করা হয়। সিঁদুর খেলা ও বরণের পর আমরা সবাই ভারাক্রান্ত মনে বাসে করে বিসর্জনে যাই। সবার পক্ষে যদিও সামিল হওয়া সম্ভব হয় না। আমাদের একটি “দ” শাড়ি আছে যেটা আমরা সবাই এই দিনে পড়ি। ভাসানের পরে মণ্ডপে ফিরে এসে সিঙ্গারা ও জিলিপি খাওয়া হয়।

এরপর সন্ধ্যাবেলা শান্তির জল নিতে ও কোলাকুলি করবার জন্যে সিনিয়র ও জুনিয়র মেম্বাররা মিলে এক জায়গায় জড়ো হয়। তার সঙ্গে জমিয়ে চলে খাওয়া দাওয়া।

আমাদের প্রবাসে পুজোর সাজ অন্যতম আকর্ষণ। এক মাস আগের থেকে শুরু হয়ে যায় এর প্রস্তুতি। যত দিন যায় উত্তেজনার পারদ বাড়তে থাকে। হাস্যকর শোনাবে কিন্তু এটাই সত্যি। একথা না বললেই নয় আমাদের পুজোর মিটিং চার পাঁচটা হয়। প্রত্যেকটা মিটিং কোনো না কোনো সদস্যের বাড়িতে আয়োজন করা হয়। প্রতিটি মিটিংয়ে বেশ কয়েকজন মেম্বার মিলে  ডিনার স্পনশর করে থাকেন। কারণ ইটিং ছাড়া মিটিং ভাবাই যায় না।  

এরপর সপ্তমীর সন্ধ্যার যে পুজোর কালচারাল প্রোগ্রাম তার রিহার্সাল অনেকদিন আগেই শুরু হয়। প্রায় দেড় মাস ধরে চলতে থাকা এই রিহার্সালের অন্যতম আকর্ষণীয় হলো গানের তালিম এর পাশাপাশি গল্প আর খাওয়া-দাওয়া।

চিত্তরঞ্জন পার্কের প্যান্ডেল হপিং ষষ্ঠীর জন্যই বরাদ্দ থাকে। কেননা এর পর সেখানে ঠাকুর দেখতে  আর যাওয়া যায় না। তারপর সেদিন আর বিশেষ কোনো কাজ থাকে না। 

এই বছর শুধু ঘরে বসে পুরনো স্মৃতিচারণ আর মন খারাপ করা ছাড়া কিছুই করার নেই তাই কলম চালিয়ে নিজের মনের ভাবটাকে একটু হালকা করলাম।

সমাপ্ত 

সুস্মিতা রায়

Kathak dance teacher and choreographer at Chittaranjan Park Bangiya Samaj for the last 10 years. Botany Honours graduate and B.Ed from Calcutta University. Lives in C. R. Park, New Delhi. Loves to travel, read, sing, music editing, painting and cook special dishes. Loves to hang out with friends, watch movies. Loves to drive and obviously teach dance. Crazy about dance costume designing and shopping.

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!