Home বিবিধ, প্রবন্ধ প্রাচীন ইজিপ্টের ১০-টি অবিশ্বাস্য তথ্য যা আপনি ধারণাও করতে পারবেন না!
বিবিধপ্রবন্ধ

প্রাচীন ইজিপ্টের ১০-টি অবিশ্বাস্য তথ্য যা আপনি ধারণাও করতে পারবেন না!


Du~কলম


 

ইজিপ্ট – নাম টা শুনলেই স্বপ্নের মতো ফুটে ওঠে খাঁখাঁ মরুভূমির ভেতরে উট-এর যাত্রা, বালির ভেতর থেকে গড়ে ওঠা বিশাল বিশাল পিরামিড, সুন্দরী ক্লিওপেট্রা আর সেই তুতানখামেনের সাংঘাতিক অভিশাপ। কিন্তু আমরা কি সত্যিই প্রাচীন ইজিপ্টের ব্যাপারে অনেক কিছু জানি? নাকি কিছু চটকদার বই পরেই ইজিপ্ট-এর একটা কল্পনার লীলা মনের মধ্যে গড়ে তুলেছি?

 ইজিপ্টের ১০-টা না জানা তথ্য এই মুহূর্তে জেনে নিন। এই তথ্য গুলোও বেশ আশ্চর্যের!

 

১। উট-এ চড়া মানা

মরুভূমির সাথে আমরা যতই উট-এর মিল বার করি না কেন, প্রাচীন ইজিপ্ট-এ উটের সওয়ারি পাওয়া মুস্কিল ছিল।যাতায়াতের জন্যে ছিল গাধা আর নৌকা। সেই সময়ে নাইল বা নীল নদ ইজিপ্টের মাঝখান দিয়েই যেত এবং প্রত্যেকটা গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক স্থানকে ছুঁয়ে যেত। চাষবাসের সরঞ্জাম ও খাবার-দাবার এই ভাবেই পরিবহন করা হতো। মরুভূমির জাহাজ উটকে-বেশ অনেক কাল পরেই ইজিপ্টে দেখা গেছে‌।

 

২। মৃতেরাও খাবারে ভাগ বসায়

অদ্ভুত শোনালেও, একদম সত্যি – প্রাচীন ইজিপ্টের বাসিন্দারা মাঝেমধ্যেই তাদের মৃত আত্মীয়দের সমাধিতে খাবার রেখে যেত। তাদের মতে সমাধিতে তাদের মৃত আত্মীয়র মৃতদেহ আর তাদের আত্মা একসাথে বাস করতো। শুধু তাই নয়, সেই খাবার আবার প্রসাদের মতো বাকিদের বিতরন করা হতো। আগে খাবে আত্মা, তারপর খাবে জীবন্ত মানুষেরা। কিছু কিছু অনুষ্ঠানে তো মৃতের  আত্মীয়রা সমাধিতেই রাত কাটাত – খাবার ও পানীয় নিয়ে!

 

৩। সবাইকে মমি করা হতো না

মমির কথা ভাবলেই গাটা কেমন শিউরে ওঠে। কিলো কিলো ব্যান্ডেজ দিয়ে জড়িয়ে রাখা  একটা মানুষকে ভাবতেই ভয় হয়ে। কিন্তু ব্যাপারটা বেশ বৈজ্ঞানিক সেটাও অস্বীকার করা যায় না। একটা মৃতদেহকে নানা কেমিক্যাল দিয়ে এভাবে সংরক্ষণ করা যা হাজার বছর পরও প্রায় অক্ষত থাকবে (কাল অনুযায়ী), সেটা তো বাহবা দিতেই হয়। কিন্তু এটাও বোঝা যায় যে এই বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থা  খুবই খরচ-সাপেক্ষ ছিল। রাজা-রানি বা জমিদার ছাড়া এই সুবিধে আর কারুর ছিল না। গরিবদের জন্যে সেই মরুভুমির মাটির গর্তই যথেষ্ট। 

 

৪। হাইরোগ্লিফিকে (Hieroglyphic) বেশি লেখা হতো না

 হাইরোগ্লিফিক (Hieroglyphic) লেখনীও প্রাচীন ইজিপ্ট-এর একটা ঐতিহ্য। দাঁড়ি টেনে বা নানারকম আঁকিবুকি 

(বা এঁকেই) ওটার মানে বার করতো।  কিছুটা আমাদের দেশের সংষ্কৃতের মতো, এই লেখনি সবাই ব্যাবহার করতো না। এমন কি বাণিজ্যিক লিপিকার রাও এটারই এক সরল লেখনি দিয়ে দৈনিক কাজ চালাত। এর নাম হলও হাইরাটিক (hieratic)।

 

৫। নর-নারীর সমান অধিকার

প্রাচীন ইজিপ্টে নর-নারীর ভেদাভেদ ছিল না বললেই চলে। মহিলারা সম্পতির মালকিন হতে পারত, আর নিজের নামেই সম্পতি কেনা-বেচা করতে পারত। স্বামী মারা গেলে বা তার সাথে বিছেদ হলে, নিজের সম্পতিতে নিজেই থাকতে পারত। যদিও সংসারের ভুমিকা অনেকটাই বাঁধা ছিল – স্বামী রোজকার করবে, এবং পত্নী ঘরবাড়ি সামলাবে।

 

৬। রাজা-রানি – ভাইবোন?

ইজিপ্টেের রাজা রানিদের অদ্ভুত নিয়ম। কিছু রাজারা তাদের নিজের বোন, বা মাসতুতো-পিসতুতো বোনেকেও বিয়ে করেছিল। এটার কারুন বিয়ের জন্যে কোন খবর পরিবারের বাইরে যাবে না এবং যে রানি হবে, সে আগে হতেই রানির দায়িত্ব নিতে পারবে। যদিও, বলা বাহুল্য, এইটা কোন বাধ্যতামূলক নিয়ম ছিল না। অনেকের রাজপরিবারের বাইরেও বিয়ে করেছে। সাধারন মানুষরা যদিও নিজেদের পরিবারের মধ্যে বিয়ে করত না।

 

৭। মহিলা রাজা

সব দেশের মতোই, ইজিপ্টেও  রাজার ছেলে হলেই তাকে রাজা করা হতো। কিন্তু এই নিয়মতা সব সময় অক্ষর-অক্ষরে মিলত না। কখনও কখনও অন্য ক্যান্ডিডেট কেও রাজার আসনে বসানো হতো। এই ভাবেই তিন-বার ইজিপ্টে মহিলা রাজা রাজ্যতও করেছিল। এনাদের রানি বলা যায়ে না কারুন এরা মহিলা হয়েও ও পুরপুরি রাজার দায়িত্ব ও খেতাব পেয়েছিল। হাতসেপসুট কুরি বছর ধরে ইজিপ্টে মহিলা রাজা হয়ে রাজ্যত চালিয়ে ছিলেন।

 

৮। ক্রীতদাস দিয়ে পিরামিড বানানো হয়েনি

হেরোডটাস এটা বলে গেছেন যে প্রায় ১০০,০০০ ক্রীতদাস দিয়ে পিরামিড গড়ে তলা হয়েছে। কিন্তু সেটা একদম ভুল। আরকেওলোগিস্তরা বলেছেন যে ‘গ্রেট  পিরামিড’ যখন তৈরি হয়, তখন স্বাধীন মানুষদের দেশের কাজের জন্যে ডাকা হয়ে আর মাইনে দিয়ে কাজে নিযুক্ত করা হয়ে। তাদের ৩-৪ মাসের সিফতে কাজ করানো হতো আর যদি কাজের মধ্যে মারা যেত, তাহলে তাদের কাছেই কবর দেওয়া হতো। কাজের স্তানের পাশে তাদের থাকার জায়গাও করে দেওয়া হয়েছিল। দৈনিক খাবার-পত্র ও অশুদ বা ডাক্তারের ও সরঞ্জাম ছিল।

 

৯। সব রাজারাই পিরামিড বানাননি 

ইজিপ্টের রাজা অর্থাৎ ফেরাওরা সবাই পিরামিড বানাননি। প্রাচীন ইজিপ্ট তিনটে সময় ভাগ করা যায় – ওল্ড কিংডম, মিডল কিংডম ও নিউ কিংডম। ওল্ড ও মিডল কিংডমের রাজারা নিজেদের সূর্য দেবতা রা-এর সাথে মেলানোর জন্যে পিরামিড করেছিলেন। নিউ কিংডমের প্রথম দিকে ফেরাওরা পাথরের কাটা কবরস্তান তৈরি করতেন নিজেদের জন্যে। যত নিউ কিংডম পতনের দিকে যেতে থাকল, ততই সাধারন কবরএই রাজাদের মৃতদেহের জায়গা হতে থাকল।

 

১০। ক্লিওপাত্রা কি আদৌ সুন্দরী ছিল?

 ক্লিওপাত্রাকে দেখে রোমের সিজার ও মার্ক আন্টনি মুগ্ধ হয়ে প্রেমে পরে গেছিল। আলবাত তিনি সুন্দরী। কিন্তু কয়েন-এ তার ছবি দেখলেতা মনে হয়ে না। একটু লম্বাটে নাক, কঠোর দুটো চোখ আর একটু মোতা হামুখ – যেন একটা ছেলেই। এটা হতে পারে যে তিনি নিজেকে একটু পুরুষালী দেখানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ‘প্লুটার্ক’-এর কথা অনুযায়ী  ক্লিওপাত্রার ছিল এক রাজকিয় হাবভাব আর সুন্দর গলা – এই দুটোই তাকে ছেলেদের চোখের মনি করে তুলেছিল। দুর্ভাগ্যবশত,  ক্লিওপাত্রার কোন প্রত্যক্ষ সাক্ষীর বিবরন আমাদের কাছে নেই।

অবাক হলেন? 

অজান্তে তো কিছু ভ্রান্তি আমরা মনের মধ্যে পুষেই রাখি। তাতে অন্যের ক্ষতি না হলেই হলও। কিন্তু এটা বলেতেই হয়ে, প্রাচীন ইজিপ্টের সত্যগুলো-ও বেশ অবিশ্বাস্য, তাই না?

 

তথ্যসুচি – https://www.historyextra.com/period/ancient-egypt/facts-ancient-egypt-mummification-cleopatra-pharaohs-tutankhamun-life-death/

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!