Home গল্প, বিবিধ খেলা হবে
গল্পবিবিধ

খেলা হবে

শ্রাবণী চ্যাটার্জী

শৈশবের স্মৃতির পাতায় চোখ রাখলে কত কথাই মনে পড়ে। অসংখ্য ঘটনা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। একটা সময় বড়ো হওয়ার জন্যে শৈশবটাকে ছেড়ে দিতে চাইতাম। তখন মনে হতো কবে বড়ো হবো দিদির মতো,দাদার মতো! ভাবতে ভাবতে একদিন কখন যেন মায়ের মতোই বড়ো হয়ে গেলাম। ঘর-সংসার, ছেলে-মেয়ে, দায়িত্ব-কর্তব্য সব কিছু নিয়ে ভীষণ ব্যস্ততায় কেটে গেলো জীবনের অনেকখানি। মেনে নেওয়া মানিয়ে নেওয়ার দোলাচলে, এখন আয়নায় নিজেকে দেখলে চিনতে কষ্ট হয়। সময় কেমন যেন হুশ করে ফুরিয়ে গেলো। 

এখন দিনবসানে ফিরে চলে যাই সেই শৈশবে। মাঝে মাঝে মনে হয় শৈশবকে আমি ছেড়ে এসেছি কিন্তু সে তো আমাকে ছেড়ে যায়নি! মনের গোপন ঘরে ঠিক তেমনই আছে। ভালো-মন্দ,সুখ-দুঃখ-বেদনার কত ছবি চিত্রিত হয়ে আছে মনের অলিন্দে।

আমাদের শৈশবটা ছিল আমাদের মতোই সহজ সরল। লেখাপড়া,খেলা ধুলো,আনন্দ মজা সবই ছিল বেশ একটু অন্যরকমের। আমি ছিলাম খেলা পাগল। ছেলেরা ছেলে,মেয়েরা শুধুই মেয়ে এই বোধটাও ছিলনা কোনওদিন। তাই সহজেই ভাইয়ের বন্ধুদের সঙ্গে ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, গুলি খেলে বেড়াতাম। ঘুড়ি ওড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘুঁড়ি লুটে আনতে বেশি মজা পেতাম। 

ছোটবেলার কথা কমবেশি সকলেরই মনে থাকে। তবে সেই সময়ের ছোট ছোট দু’একটা কথা,দু’একটা ঘটনা আমার মনের মধ্যে গভীর দাগ রেখে গিয়েছে। কথার অনুষঙ্গে কখনও সখনো সেই ঘটনা হঠাৎই ফিরিয়ে নিয়ে যায় অতীতে। 

আজকাল প্রতিদিনের কর্মযজ্ঞে আমরা সকলেই খুবই ব্যস্ত। দু’দন্ড দাঁড়িযে কথা বলার মতো কারুর একটুও অবসর নেই। তবুও ‘এ’ ‘ও’ ‘সে’ বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে একবার হাঁক দিয়ে যায়,একটু খবরাখবর দিয়ে-নিয়ে ফিরে যায় যে যার নিজের নিজের কাজে। বহুদিন একই  জায়গায় বসবাস করছি বলেই আশেপাশের মানুষজনের সঙ্গে কিছুটা হলেও সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

সকাল হলেই দই….দই…. ভালো দই…. বলে হাঁক দিয়ে সাইকেলে দইয়ের হাঁড়ি ঝুলিয়ে নিয়ে একটা ছেলে এখনও আমার বাড়িতে দই বিক্রি করতে আসে। সে এসে প্রথমেই প্রতিদিনের কুশল বিনিময় করে। আমার তাড়া থাকলেও দই মেপে দিতে দিতে দু-একটা কথা বলে তবে সে যায়। একদিন সকালে দই দিতে এসে বলল বৌদি, “খেলা হবে, বেশ জোরদার খেলা হবে” বুঝলেন? আমি বললাম, হঠাৎ এসব কথা বলছো কেন ভাই? সে বললো কিছু না, এমনি এমনি। সবাই বলছে তাই বললাম। কথাটা বলে হাসতে হাসতে চলে গেল।

আমাদের পাশাপাশি দুটো বাড়িতে দুজন মহিলা ঠিকে কাজ করে। তারাও একই পাড়াতে কাছাকাছি থাকে। স্কুলের ছুটি থাকলে বাচ্চাদুটো মায়ের সঙ্গে আসে। মায়েরা কাজ করে আর বাচ্চা দুটো ঘরের বাইরে বসে খেলা করে। তারপর মায়েদের কাজ শেষ হলে ওরা চলে যায়। বাচ্চাদুটো বসে থাকে তাই আমিও বিস্কুট-পাউরুটি যা থাকে ওদের একটু খেতে দিই। ওদের সঙ্গে গল্প করি। কত রকমের গল্প! পড়ার কথা, স্কুলের কথা, বন্ধুদের কথা। ওরাও ওদের সব কথা আমায় বলে। এখনকার সব বাচ্চারাই খুব বুদ্ধিমান,আর খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে। মনে হয় যেন কেউ শিখিয়ে দিয়েছে কথাগুলো। 

আমি ক’টা বিস্কুট নিয়ে ওদের দিতে গিয়ে দেখি দুজনের হাতে দুটো ছোট লাঠি। একজন আরেকজনকে লাঠি উঁচিয়ে বলছে খেলা হবে! খেলা হবে! 

অন্যজনও সেই একই ভাবে বলছে, খেলা হবে! …

আমি বললাম, “কি রে! কি খেলা হবে”!…. 

একজন বলল, জানো না! কাল আমরা সভার মাঠে গিয়েচিলাম, ওখানে সব্বাই কত্তো চিচকার করছিল খেলা হবে, খেলা হবে। তারপর তো বাড়ি ফিরে মা বাবুকে বলচিল, “জানো এবার খেলা হবে, খেলা হবেই”! 

অন্যজন বললো জানো তো কাল সিরিল আটিস (সিরিয়াল আর্টিস্ট), সিনিমা আটিস (সিনেমা আর্টিস্ট)এসেচিল। ওরাও বলচিল খেলা হবে! ওদের সঙ্গে আমরাও চিচকার করেচি “খেলা হবে খেলা হবে বলে”….. 

আমি বললাম, তোরা লাঠি হাতে তুলে নিয়ে ওসব বলছিস কেন! তোরা কি ঝগড়া করছিস?

গুড্ডু বলল চাচি, তুমি খুব বোকা আচো ….হাঃ হাঃ হাঃ..…কথাটা বলে বাচ্চা দুটো খুব হাসছিল!

আমি রেগে উঠে বললাম, এবার তোদের মারবো কিন্তু আমাকে এসব কথা বললে।

বাচ্চা দুটোর নাম গুড্ডু আর বীরু। বীরু বলল,আমরা তো “খেলা হবে,খেলা হবে” খেলচি! এটা তো জুদ্দু জুদ্দু (যুদ্ধ) খেলা। কিন্তু জুদ্দু নয়। আমরা তো বন্দু (বন্ধু)! এসন্নে (একসঙ্গে) খেলি, এসন্নে ইস্কুলে যাই,একেনে আসি! তুমি খাবার দিলে ভাগ করে খাই! এই দেকো, বলে গুড্ডু বিস্কুটগুলো আমার হাত থেকে নিয়ে দুজনের জন্যে সমান সমান ভাগ করলো।

গুড্ডুর মা ঘর মুছতে মুছতে সব শুনছিল। চলে যাবার সময় প্রচ্ছন্ন মদতে বলল বৌদি, ওদের সঙ্গে তুমি কতায় পারবে না কো! খুব পাকা হয়েছে ওরা! 

অবাক হয়ে ভাবলাম….. এখনকার শৈশবটাও কতখানি বদলে গিয়েছে! কথার মারপ্যাঁচ কত সহজে ওরা বুঝে গিয়েছে!

আসলে “খেলা হবে” কথাটা শুনলে, আমার ভেতর থেকে কেমন যেন একটা ভয় ঠেলে বেরিয়ে আসে। 

আমার বেশ মনে পড়ে…….তখন আমি ক্লাস টু-থ্রি’তে পড়ি…..

সন্ধ্যেবেলা লোডশেডিং হতো। একদম ঘড়ি ধরে তিন ঘন্টা। আমাদের দুটো হ্যারিকেন ছিল। একটা বড় ঘরে জ্বলত আর একটা ছোট ঘরে,সেখানে বড়দা-ছোড়দা পড়াশুনা করতো। আর মা রান্নাঘরে মাটির উনুনের পাশে,কাঠের তৈরি লম্ফদানিতে টিনের লম্ফ জ্বালিয়ে রেখে রান্না করতো। লম্ফ জ্বললে মোটা কালো শিশ উঠতো ওপরের দিকে। আর জলন্ত লম্ফর মুখে গোল গোল কালো কালো পলতে পোড়া জমে থাকতো। 

তখনকার সময়ে লোডশেডিংটা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। সন্ধ্যেবেলা লোডশেডিং হলেই আমাদের আর পায় কে! লেখাপড়া শিকেয় তুলে আমি আর আমার ভাই চেঁচাতাম, চল চল,এবার আমাদের ‘খেলা হবে’ বলে। তারপর ওই অন্ধকারে দৌড়-দৌড়ি করে খেলা শুরু করতাম। মা অতিষ্ট হয়ে চিৎকার করে রোজ বকাবকি করতো।

একবার সন্ধ্যেবেলায় লোডশেডিংয়ে খেলা হবে খেলা হবে বলে দৌড়তে গিয়ে আমার ভাই ঘরের চৌকাঠে হোঁচট খেয়ে ছিটকে পড়লো উঠোনে। তারপর তার থুতনি ফেটে গিয়ে উঃ…… সে কি রক্ত,কি রক্ত! ভাই অজ্ঞান হয়ে গেল। ভাইয়ের ওই অবস্থা হওয়াতে সব দোষ গিয়ে পড়লো আমার উপর। বাড়ি তোলপাড়, চেঁচামেচি। ধর ধর তোল তোল। সেই ফাঁকে কোনও কথা নেই। চুলের ঝুঁটি ধরে মায়ের হাতের দু’চার ঘা কিল চড় পড়েছিল আমার পিঠে। তার মধ্যেই ভাইকে তুলে নিয়ে এসে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। শানের(সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো) উঠোন ভেঙে সিমেন্টের টুকরো ঢুকে গিয়েছিল ওই কাটা জায়গাটায়।

বর্তমানকালের মতো সেইসময়ে ঘরে ঘরে মোটর সাইকেল বা গাড়ি ছিল না। শেষ অবধি বাবা আর কাকু মিলে রিক্সা করে  ভাইকে হাসপাতালে নিয়ে গেল। চারটে সেলাই পড়েছিল থুতনিতে। সেদিন রাতে ভাইয়ের অত রক্ত দেখে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। আমি রক্ত একদম সহ্য করতে পারি না। তার উপর মায়ের হাতের মার খেয়ে আমার অবস্থা একেবারে কাহিল হয়েছিল। সেইথেকে লোডশেডিং হলেও আর কখনও খেলা করিনি। 

 সেই সময় আমাদের পাড়ায় একটা ক্লাব ছিল। ওরা প্রতিবছর ফুটবল টুর্নামেন্ট করতো। ক্লাবেরও দুটো ফুটবল টিম ছিল। সেখানে মেয়েদের দলে আমি খেলতাম,আর ছেলেদের দলে ভাই ফুটবল খেলতো। ফুটবল ট্যুর্নামেন্টে মেয়েদের খেলানো হতো না। তবে রোজ প্র্যাকটিস হতো। ভাই খুব ভালো খেলতো তাই ট্যুর্নামেন্টে ও সবসময় সুযোগ পেতে।

রমাদা ছিল ছেলেদের কোচ আর ক্ষিতিশদা মেয়েদের কোচ। সেবারে আমাদের ক্লাবের দল এবং বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা দল নিয়ে মোট ৩৬টা দল খেলবে ওই ট্যুর্নামেন্টে।

ক্লাবকর্তাদের সব কথাই আমাদের সামনে আলোচনা হতো। সেবছর ক্লাব সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে এবার থেকে একজন কোচের অধীনেই ছেলে ও মেয়েদের খেলা শেখানো হবে এবং ট্যুর্নামেন্টে ক্লাবের শিল্ড-কাপ অন্য কোনও দল যেন নিয়ে যেতে না পারে। যে কোচের তত্ত্বাবধানে নিজেদের দল জিতবে,সেই কোচকেই রাখা হবে। আর খুব সামান্য বেতন দেওয়া হবে। কোচ রমাদা উঠে পড়ে লাগলো নিজেদের দলকে যে ভাবেই হোক জেতাতেই হবে।

শনি-রবি দু-দিন খেলা হলো। প্রত্যেক দলের খেলোয়াড় পিছু ১০ টাকা করে এন্ট্রি ফি। সেইসময় ফুটবল খেলা দেখতে প্রচুর ভিড় হতো। সেবারের ফুটবল ট্যুর্নামেন্টে আমাদের ক্লাবের ছেলেদের নিয়ে 4টে টিম সেমি ফাইনালে উঠেছিল। খেলা শেষে ঘোষণা হলো পরের রবিবার ফাইনাল খেলা।

কোচ হিসেবে রমাদাকে সবাই খুব ভয় পেতো। চোয়াল শক্ত করে এমনভাবে কথা বলতো যে তার কথার ওপর কথা বলার ক্ষমতা ছিল না কারুর। ফাইনাল খেলা প্র্যাকটিস করাবার সময় সবাইকে ডেকে বললো খেয়াল রাখিস, সেমিফাইনালের টিমের সবকটা খেলোয়াড়ই অসম্ভব ভালো খেলে। তোদেরও ভালো খেলতে হবে। তবে তোদের এই কথাটা মনে রাখতে হবে যে এবার কিন্তু সত্যিকারের “খেলা হবে! খেলা হবেই! একটু কৌশল করে খেলতে হবে বুঝলি। যদি বলে লাথি মারতে সুযোগ নাও পাস,পায়ে বা কোমরে লাথি মারবি। মেরে শুইয়ে দিবি। আর মাঝমাঠ থেকে বল কাটিয়ে নিয়ে যাবার সময় যদি ফরোয়ার্ড ঠিক মতো করতে না পারিস, তবে ফাউল করে মেরে শুইয়ে দিবি,রক্ত ঝরে ঝরবে। মোট কথা যে কোনও মূল্যে নিজেদের ক্লাবের শিল্ড অন্যের হাতে তুলে দেওয়া চলবে না।

আমার ভাইয়ের বন্ধু সান্টু খুব ভালো খেলতো। ওর বাবা স্বপন সরদার খুব ভালো ফুটবলার ছিলেন। শুনেছিলাম,তিনি নাকি খেলার জন্যই ব্যাঙ্কে চাকরি পেয়েছিলেন। স্টেট-ব্যাংকের স্পোর্টস ক্লাবে ফুটবল খেলতেন। রমাদা যখন এসব বোঝাচ্ছিল তখন সান্টু বলল,কিন্তু বাবা যে বলে খেলায় লড়াই হয় ঘাম ঝরিয়ে। মেরে বা রক্ত ঝরিয়ে নয়! রমাদা আড়চোখে সান্টুর দিকে তাকিয়ে একটু বাঁকা কথায় বললো সান্টু,তবে তুই খেলতে নামিস না। 

রমাদা আরও অনেক কিছু বলেছিল…. তবে সবশেষে বলেছিল শুধু এই কথাটা সব্বাই মাথায় ঢুকিয়ে নে ‘খেলা হবে’। আর এই ক’দিন সারাক্ষণ নিজের মনে মনেই বলবি “খেলা হবে…..খেলা হবে…..ব্যস। আর আজকে তোদের যা বললাম, সে কথা যেন বাইরের কেউ জানতে না পারে। যার মুখ দিয়ে বেরোবে সে ফাইনাল খেলা থেকে বাদ চলে যাবে। ভয়েতে আমার ভাই সে কথা কাউকে বলেনি। শুধু আমিই জানতাম।

রবিবার একটু দেরি করেই ফুটবল ট্যুর্নামেন্টের ফাইনাল শুরু হয়েছিল। সেমিফাইনালিস্ট প্রথম দুটো দল খেললো। তারপর আরেকটা দলের সঙ্গে আমাদের ক্লাবের ছেলেদের খেলা শুরু হলো। মাঠ উপছে পড়ছে ভিড়ে। আমাদের সবার বাবা-দাদারাও খেলা দেখতে গিয়েছিল। আধঘণ্টা খেলা হয়ে যাবার পর শুরু হলো সেই আসল খেলা……

মনে হয় রমাদার মতো সব দলের কোচই শিখিয়ে রেখেছে ‘খেলা হবে’র মন্ত্রটা।

দেখে চমকে উঠেছিলাম। বিজন হঠাৎ এগিয়ে বল কাটাতে গিয়ে চুক্কি খেয়ে ওদের একজনকে ল্যাং মেরে ফেলে দিলো। পড়ে গিয়ে তার নাক ফেটে ঝরঝরিয়ে রক্ত গড়াচ্ছে। তাকে বসিয়ে ওরা অন্য প্লেয়ার নামালো। 

এবার ওরাও মারমুখী হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে আমাদের একটা গোল হয়ে গিয়েছে। খেলা শেষ হবার মিনিট পনেরো আগে ঘটলো সেই ঘটনা। নেপাল বল দিলো রতনকে। রতন রেডি হয়ে গোল ঢুকিয়ে দিতে যাবে এমন সময় গোলকিপার এগিয়ে এসে লাফিয়ে উঠে রতনের পেটে মাথাটা দিলো গুঁজে, রতন পড়ে যেতেই আরেকজন রতনকে নিমেষে শট করলো। রতন ততক্ষণে তালগোল হয়ে গিয়েছে। রেফারি বাঁশি দিয়ে খেলা বন্ধ করে দিলো। সবাই হই হই করে উঠলো। দোষারোপ শুরু করলো একে অপরকে। কিন্তু কেউ তখনও জানে না রতন আর নেই। রতনের বাবা ততক্ষণে ছুটে গিয়ে মাঠের মাঝেই বসে পড়লো রতনকে ধরে! বার বার রতনের শরীরটা ধরে ঝাঁকুনি দিয়ে ওর বাবা বলছিল, “রতন, বাবা রতন একটি বার সাড়া দে! কথা বলছিস না কেন? কি কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে। বল,বল না রে!..”

সেদিনের ঘটনা আজও ভুলিনি। ছেলের নিথর দেহটা দুহাতে তুলে নিজের বুকের সঙ্গে চেপে ধরে রতনের বাবা বলছিল  “কি খেলা খেললি বাপ!……….. এটা কি খেলা হলো??.. কি খেলা হলো রে”!!……মনে পড়লে বুঝতে পারি রতনের বাবার কান্নাটা আমার বুকে এখনও জমাট বেঁধে আছে।

বাচ্চা দুটোর মুখে “খেলা হবে” কথাটা শোনার পর, আমার মনে হল, “খেলা হবে খেলা হবে” কথাটা বোধ হয় দীর্ঘদিন বাদে শুনলাম। এখন আবার নতুন করে টিভিতে সভাতে খবরে ফোনেতে রাস্তায় দোকানে বাজারে এমনকি সদ্য বুলি ফোটা বাচ্চার মুখে মুখে শুনতে শুনতে মাঝে মাঝে সেই ভেতরের ভয়টা ঠেলে বেরিয়ে আসে। 

কি “খেলা” হবে কেমন খেলা হবে তা জানি না। খেলার ফলাফলটা যে সুখকর নয় সেটা উপলব্ধি করতে পারছি।

সমাপ্ত

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!