Home বিবিধ, প্রবন্ধ ফিরে দেখা (পর্ব-২)
বিবিধপ্রবন্ধ

ফিরে দেখা (পর্ব-২)

গোপা মিত্র

[আজকের দিনে যে বয়সে মা-বাবারা Carrier গড়তে A,B,C,D শেখায়, তখনের সেদিনে আমাদের সরল সাদাসিধে (এখনের মতে হয়ত বোকা, বাস্তববোধহীন) গুরুজনরা আমাদের মানুষ করে তোলার আন্তরিক প্রচেষ্টায় দিতে চেষ্টা করেছিল কিছু মূল্যবোধের শিক্ষা, যা এখনও আমাদের চলার পথের পাথেয় হয়ে রয়ে গিয়েছে]

পর্ব-২

শিক্ষার প্রথম ধাপ

স্মৃতির ঝাঁপি খুলে যখন লিখতে বসলাম তখন চোখের সামনে কতকগুলো ধূলিমলিন ছবির টুকরো ভেসে উঠল। স্মৃতির ঝাড়ন দিয়েই আমি সেই ধূলিধুসরিত টুকরোগুলোকে প্রথমে মালিন্য মুক্ত করার চেষ্টা করলাম। তারপর সেগুলোকে সাজাতে লাগলাম যাতে একটা সম্পূর্ণ ছবি পেতে পারি – ঐ অনেকটা ‘জিগ্‌ স’ পাজলের মত। জানিনা, ছোটবেলার বিশাল ক্যানভাসে আঁকা ছবির সব টুকরোগুলোই খুঁজে পেলাম কিনা! শুরু তো করি তারপর না হয় দেখা যাবে!

আমাদের বাড়ীর বেশ কিছু অলিখিত নিয়ম ছিল, যেগুলো আমাদের, মানে ছোটদের, মেনে চলতে হত। প্রথমতঃ গুরুজনদের তথা বড়দের কথামত আমাদের তিন বোনকে চলতে হবে, তারা যা বলবে শুনতে হবে, কোনো তর্ক করা চলবে না। কারণ তারা যাকিছু বলছে তার সবই আমাদের ভবি্ষ্যতের ভালর জন্য। বড় বলতে অবশ্য এখানে শুধুমাত্র আমাদের মা বাবা কাকু তাইমা দাদি অর্থাৎ আমাদের পরিজনদেরই বোঝাচ্ছে না, আমাদের বাড়ীর কাজের লোকেরাও কিন্তু এর মধ্যেই পড়ছে – অর্থাৎ এরাও আমাদের পরিবার বলেই ধরা হচ্ছে। হয়ত সেই কারণেই তাদের সঙ্গে আমাদের একটা সুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। তাদের কাছে আমরা এখনও বড়দি, মেজদি আর ছোড়দি। আমাদের মত তাদেরও সংসার হয়েছে, যে যার মত নিজেদের জীবন গড়ে নিয়েছে , তবু আজও কোনো প্রয়োজনে তাদের ডাক দিলে , আমরা জানি, তারা অবশ্যই এসে আমাদের পাশে দাঁড়াবে। অবশ্য সেই ছোট্ট বয়সে যখন আমাদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশই হয়নি তখন বড়দের সঙ্গে তর্ক বা ‘কেন মানতে হবে’প্রশ্ন করার চিন্তা বা সাহস আমাদের মনে আসবেই বা কি করে? আমরা শুধু জানতাম সব ছোটদেরই বোধহয় এসব মেনে চলতে হয়।

কিন্তু একটু যখন বোঝার মত বিচারবুদ্ধি হল তখন দেখলাম আমাদের প্রিয়জন বা আত্মীয়স্বজনদের কথাবার্তা আচারব্যবহার সবসময় আমাদের মনোমত বা শিক্ষামত হচ্ছে না। কিন্তু বাড়ীর শিক্ষামত তাদের আমরা কিছুই বলতে পারছি না। তখন আবার চলে এলাম সেই গুরুজনদের কাছেই – আমাদের তবে এখন কি করা উচিৎ? তারা বলল ‘শোনো, ভগবান আমাদের দুটো কান দিয়েছেন – যা ঠিক মনে হবে মনে রাখবে, যা ভুল মনে হবে, এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বার করে দেবে। কিন্তু তবুও তর্ক বিবাদ বা প্রতিবাদে যাবে না, তাহলে অশান্তিই শুধুমাত্র বাড়বে না, সম্পর্কগুলোও খারাপ হয়ে যাবে। ভবিষ্যতে হয়ত তোমরা এমন অনেক পরিস্থিতিতে পড়বে, যে কাজটা করা উচিৎ নয় বলে তোমরা মনে করছ, সেই কাজটাই তোমাদের করতে বলা হচ্ছে – তখনই বা তোমরা কি করবে? তখনও নীরব থেকে, চুপচাপ তাদের কথা শুনবে বা অন্যমনস্ক হয়ে তাদের  কথা শুনবে না। কিন্তু পরে তোমরা যেটা ঠিক মনে করছ, সেটাই করবে। জানোতো, কথায় আছে, বোবার শত্রু নেই। তোমরাও তেমনই বোবা থেকে নিজেদের বুদ্ধি বিবেচনা মত উচিৎ মনে করা, কাজটাই করে যাবে। কিছুদিন পরেই দেখবে, তারা তোমাদের কিছু বলা বন্ধ করে দিয়েছে – এমনকি অন্যদেরও বলছে, ওকে বলে কি লাভ? ও তো কোনো উত্তরই দেয় না, নিজে যেটা ঠিক মনে করে, সেটাই করে। বরং এই বয়স থেকেই যা ভালো লাগবে না, নীরব থেকে, প্রতিবাদ না করে সেগুলো IGNORE করতে শেখো’। এই শিক্ষায় যে ভবিষ্যতে, কত কঠিন পরিস্থিতির কত সহজে মোকাবিলা করেছি অথচ নিজেদের মনেও অশান্তির আঁচ আসতে দিই নি, তা  অবশ্যই বলার অপেক্ষা রাখে না। এই নিয়ম যে শুধু আমরাই মেনে চলতাম তা নয়, আমাদের বড়রাও মনে হয়, সেগুলো মেনে চলার চেষ্টা করত – ঐ যে কথায় আছে না, ‘আপনি আচরি শিখাও’। হঠাৎ একদিন চোখে পড়ল আমাদেরই একজন বয়োজ্যেষ্ট সম্মানীয় আত্মীয় আমার সামনেই মা’কে কিছু আপত্তিকর কথা বলছেন – মা  চুপ করে দাঁড়িয়ে সেগুলো শুনছে। চুপ থাকতে না পেরে, বাড়ীর শিক্ষা ভুলে প্রতিবাদ করতে গেলাম। সঙ্গে সঙ্গেই মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে আমাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলল। পরে মা আমাকে বলেছিল “তোমার কি মনে হয় আমি কথা বলতে পারি না? আমার মুখ নেই? প্রয়োজন মনে করলে আমিই তো প্রতিবাদ করতে পারতাম। তবে কি জানো তো? উনি আমার বয়োজ্যেষ্ট, সম্পর্কেও আমার সম্মানীয় – তাই তার মুখে মুখে তর্ক করে আমি ব্যাপারটা আর বেশীদূর গড়াতে দিতে চাই নি। তার কথা আমার মনে না নিলেই তো হল!” আবার সেই IGNORE করার শিক্ষা! পরে অবশ্য তিনিই মায়ের অকুন্ঠ প্রশংসাও করেছিলেন। 

আমাদের বাড়ীতে কারো সমালোচনা করা বা কারো সম্বন্ধে কোন বিরুপ মন্তব্য করাও নিষিদ্ধ ছিল। একটা ছবি চোখের সামনে ভেসে উঠছে- কাকুর ঘরে, কাকু বিছানায় শুয়ে, তাইমা চেয়ারে আর আমরা মেঝেতে বসে গল্প করছি, এমন সময় আমাদেরই একজন অতি নিকট আত্মীয় কাকুর সামনে দাঁড়িয়ে তার নিজের সংসারের গল্প, তার বাড়ীর লোকেদের নিন্দামন্দ করতে শুরু করলেন। ব্যাস সঙ্গে সঙ্গেই তাইমা আমাদের ঘর থেকে বার করে দিল। ‘বড়দের কথার মাঝখানে বসে তোমরা কি শুনছো? কতদিন বারণ করেছি না বড়রা যখন কথা বলবে, তোমরা সেখানে থাকবে না’। আমরাও সুড়সুড় করে ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। এভাবেই সাংসারিক নানা কচ্‌কচি, পরনিন্দা পরচর্চা থেকে আমাদের দূরে রাখা হয়েছিল। টিভি, মোবাইল, নেট তথা গুগলবিহীন যুগে আমাদের এসব মেনে চলতে কোনোই অসুবিধা হত না। জানি না, এখন হলে কি করতাম!

“চটি ফট্‌ফট্‌ করে চলছ কেন, লোকে কি বলবে”, “ও কি! অমন দমাস করে দরজা বন্ধ না করলে চলছিল না?” “অমন ঝুঁকে বসে পড়ছ কেন, মেরুদন্ড বেঁকে যাবে যে…”, “মাথা সোজা রেখে, সোজা হয়ে হাঁটো…”, “পা ছড়িয়ে বসেছ কেন? তোমাকে টপ্‌কে লোকেরা যাবে, না কি তোমাকে মাড়িয়ে?”, “বিছানায় বসে পড়ছো কেন? ওটা কি পড়ার জায়গা? মটিতে মাদুর পেতে বসে পড়।”, “চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে পড়, তবেই তো কানে গেলে পড়া মনে থাকবে।”, “লেখা অভ্যাস কর, তবেই তো হাতের লেখা ভালো হবে।” – এগুলো সবই আমাদের শেখানো নিয়মের মধ্যে পড়ে। 

যেহেতু আমরা প্রায় পিঠোপিঠি তিন বোন ছিলাম, ঝগড়া হওয়াই স্বাভাবিক ছিল – মাঝেমধ্যে হত না যে এমনও নয়। তবে বড়দের কঠিন নির্দেশ ছিল, নিজেরা ঝগড়া করলে নিজেদেরই মিটিয়ে নিতে হবে, কোনো মতেই তাদের কাছে নালিশ করা চলবে না। ফলে আমাদের নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করাটাই কমে গেল। আরো একটা কারণও অবশ্য ছিল – ছোটবেলা থেকেই আমাদের কানে ঢোকানো হয়েছিল, একতাই বল, একতাই শক্তি। “আমাদের অবর্তমানে তোমরা যদি মিলেমেশে না থাক, তবে তোমরা পরে কার কাছে গিয়ে দাঁড়াবে? কে আছে, যে তোমাদের সাহায্য করবে? ভবিষ্যতে প্রয়োজনে তোমরাই তো একে অপরকে সাহায্য করবে। কাজেই কোনমতেই নিজেদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি কোরো না। আর যদি তেমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়ও, তবে কখনই তৃতীয় ব্যক্তিকে সেই বিবাদ মিটোতে ডাকবে না। তাহলে তোমাদের ঝগড়া না মিটে বরং বেড়েই যাবে। ঐ অনেকটা দুই বিড়ালের মধ্যে খাবার ভাগের জন্য বাঁদরকে ডেকে যা হয়েছিল আর কি!” – এমনই সব বলে গিয়েছিল আমাদের গুরুজনেরা। আমরা এখনও তাদের সেইসব কথা মেনে চলি- আমাদের তিনজনের মধ্যে কাউকেই প্রবেশ করতে দিই না, এমনকি আমাদের অতি প্রিয় নিকটজনদেরও। আমরা তিনজন তিনরকম ব্যক্তিত্বের, কাজেই কথাকাটাকাটি তো হতেই পারে, সেটা আমরা নিজেরাই বোঝাপড়া করে মিটিয়ে নি, সেখানে কারো কোন মন্তব্য শুনতে আমরা রাজী নই। 

এছাড়া আরো এক আশ্চর্য নিয়মে মা আমাদের মধ্যে ঝগড়ার রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছিল। বাড়ীতে যদি একরকম দুটো জিনিষ আসত সেটা আমরা দুই বড় বোন পাব- কারণ জোড়া জিনিষ আর যদি একটা জিনিষ আসত তবে ছোট বোন পাবে কারণ জিনিষ একটা, মা বলত (জোড়া আর একানে)। মায়ের অবর্তমানেও সেই নিয়ম আমরা মেনে চলেছি, কাজেই কোন কিছু নিয়েই আমাদের ঝগড়া হয়নি, আমাদের তিন বোনের সম্পর্ক এখনও আছে সেই আগেরই মত।   

অনেক নিয়মের মধ্যে, আরও এক নিয়ম ছিল – বাড়ীতে ভালোমন্দ যাই রান্না হোক্‌ না কেনো, কোনো বাছবিচার না করেই সব খেয়ে নিতে হবে, কিচ্ছু ফেলা চলবে না। তবে এখানে একটা কথা – ঝাল বা অতিরিক্ত মশলা দেওয়া রান্না আমরা তখনও খেতাম না, এখনও নয়। 

রোজ ভোরবেলা একজন কাজের লোক সঙ্গে নিয়ে কাকু কাছের, শ্যামবাজার বা হাতীবাগান বাজার থেকে শাকসব্জী, তরিতরকারী, মাছ কিনে নিয়ে আসত – ফ্রিজ তখন ছিল না, কাজেই বাজার রোজই করতে হত। সব্জী রেখে দিলেও রোজের মাছের জন্য বাজার যেতেই হত। বাসি খাওয়া আমাদের বাড়ীতে একেবারেই নিষিদ্ধ ছিল। এই প্রসঙ্গে দুটো ঘটনার কথা আমার এখনও মনে আছে। একবার, তাইমার ছোট ভাই তাইমাদের দে‌শ বনগাঁয়ের, সদ্য পুকুর থেকে তোলা একগাদা মাছ নিয়ে হাজির হল সন্ধ্যাবেলা। এত মাছ, এখন কি হবে? কাকু বলল যে, সব মাছ রান্না কর বা ভেজে ফেল, আর যে যতগুলো পার খেয়ে নাও। সেদিন আমাদের বাড়ীতে রাতে মৎস্য উৎসব পালিত হল। আবার একদিন রাতে তাইমার এক বোনপোর বিয়েতে তত্ত্বয় আসা মুখ বন্ধ এক হাঁড়ি দই আমাদের বাড়ীতে পাঠানো হল। ও মা, এ কী! এ তো দই নয়, এযে রাবড়ী! সেই এক হাঁড়ি রাবড়ীও সেই রাতে আমরা বাড়ীর কজনে মিলে শেষ করলাম – কাজের লোকজনও বাদ গেল না। ভাবা যায়!

যাক্‌, যে কথা বলছিলাম- প্রতিদিনই আমাদের বাড়ীতে ভাত, ডাল, ভাজা, একরকম তরকারী বা শাক, মাছ, ও শেষ পাতে একটা টক, রান্না হত। কাঁসার থালা বাটিতে খাওয়া হত। তিন বোনের ঝগড়া এড়াতে মা সবার বাটিতে নাম লিখিয়ে দিয়েছিল। যাকে যেমন দেওয়া হবে তাকে তেমনই খেতে হবে। টক খাওয়ার জন্য ছোট্ট ছোট্ট খুরো দেওয়া জার্মান সিলভারের বাটি ছিল। কোনো শাক বা তরকারী ভালো না লাগলেও খেতেই হত। কারণ প্রতিটা শাক সব্জীরই রয়েছে আলাদা আলাদা খাদ্যগুণ। ছোটবেলায় একসঙ্গে তিনজনকে খাওয়ানোর সময় মা প্রতিদিন আমাদের মত করে, তাদের খাদ্যগুণের বর্ণণা করত। পরে প্রাথমিক স্কুলে পাঠ্য, স্বাস্থ্যবই পড়ার সময় আমরা সেই সব শাকসব্জীর পুষ্টীগুণ নিজেরাই জেনেছিলাম শুধু নয়, দেখেছিলাম মা যেসব খাদ্যগুণের কথা বলত তার সবই সত্যি। এজন্যেই হয়ত আমরা তিন বোনেই সবরকম শাকসব্জী ও মাছ খেতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি- যেটা আজকের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে প্রায় দেখাই যায় না। ফলে এখনের ডাক্তারদের পসারও বেড়ে গেছে অনেক। নেট দুনিয়ার যুগে স্বাস্থ্যবইএর প্রয়োজনীয়তা একেবারেই ফুরিয়ে গেছে, আর সেখানে জায়গা নিয়েছে বিবিধ প্রচার মাধ্যম। এখন সেখান থেকেই আমাদের জানতে হয় কোন্‌টা খাওয়া উচিত আর কোন্‌টা নয়। তবে অনেকসময় দেখি এক মাধ্যম যা বলে অন্য মাধ্যম তার বিপরীত বলে আমাদের Confusion টাই বাড়িয়ে দেয়। 

যেদিন বাড়ীতে খাসীর মাংস রান্না হত সেদিন আমাদের প্রায় উৎসব মনে হত। শুধু ভাত আর মাংস – বড় বড় দুধ খাওয়ার কাঁসার বাটিতে মাংস, আহা! আমাদের বাড়ীতে তখন মুরগীর মাংসই শুধুমাত্র নয়, মুরগীর ডিমেরও প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। কারণ মুরগী তখন রামপাখী বলেই বিবেচিত হত। হাঁসের ডিমের অবশ্য চল্‌ ছিল। মাসের মধ্যে কোনোকোনো ছুটির দিনে আমাদের তিন বোনের জন্য তিন ভাঁড় দই আসত – না, কাটা দই নয়, আলাদা আলাদা ভাঁড়ে বসানো সর পড়া মাথাওলা দই। 

এভাবেই আমাদের ছোটবেলা কাটছিল নানা নিয়মকানুনের বেড়াজালে – যদিও সেইসব নিয়মকানুন আমাদের কাছে খুবই সহজ স্বাভাবিক ছিল আর তার জন্য আমাদের আনন্দের কোন ব্যাঘাত ঘটেনি। 

পরিণত বয়সে এসে আজ যখন পিছন ফিরে দেখি, তখন বুঝতে পারি, আমাদের জন্য কেন এতসব নিয়ম লাগু করা হয়েছিল। আসলে নিয়মকানুনের মোড়কে সেই ছোটবেলা থেকেই আমাদের ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছিল। প্রতিটা নিয়মের পিছনে যে কারণ রয়েছে সেগুলো তো তখনই তারা বলেছিল, আমরাই হয়ত সেগুলোয় তখন গুরুত্ব দিইনি বা বুঝিনি। “গুরুজনদের বয়সজনিত সম্মান দেওয়া উচিত, তর্কবিতর্ক না করে নীরব প্রতিবাদে কাজও হাসিল হবে অথচ সম্পর্কগুলোও নষ্ট হবে না, যা ভালো লাগবে না সেগুলো মনে না রাখলেই নিজেরা ভালো থাকবে, পরনিন্দা পরচর্চার মধ্যে গিয়ে তোমাদের লাভই বা কি, তোমরা বরং নিজেদের মত থাক, নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে ভাব, নিজেদের ভঙ্গিমা ঠিক হলে তবেই তো মেরুদণ্ড সোজা হয়ে শারীরীক গঠন ঠিক ভাবে হবে, খাওয়াদাওয়া ঠিকমত না করলে সঠিক পুষ্টির অভাবে পরে যে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়বে।” সব ব্যাপারে বড়দের দেওয়া যুক্তি বা কারণ শুনে, আমাদের অবচেতন মনেও হয়ত একটা যুক্তিবাদী চিন্তা ধারার জন্ম হচ্ছিল, যা পরে আমাদের তিন বোনকেই বিজ্ঞানমনস্ক করে তুলেছিল। ন্যায় অন্যায়, উচিত অনুচিত, ঠিক ভুল, ভালো মন্দ – এমনই সব নীতি বোধ শিক্ষার মাধ্যমে আমাদের উত্তর জীবনে প্রবেশের প্রস্তুতি বা ভিত্তি, আমাদের গুরুজনরাই তখন থেকে তৈরী করা শুরু করে দিয়েছিল। বুদ্ধির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে চরিত্র গঠনের মধ্যে দিয়ে আমরা তিন বোন আস্তে আস্তে বড়ো হয়ে উঠতে লাগলাম। 

দ্বিতীয় পর্ব সমাপ্ত

 

 

গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. অনেক পুরনো কথা সুন্দর বর্ণনা করেছো। প্রতি রবিবার দৈ থাকতো, আর আমাদের জন্মদিন রবিবার পরলে, সেদিন মা‍ংহ হতো।
    আর রবিবার রাতে লুচি । সব ছবির মতো মনে হয়।

    1. একেবারে ঠিক বলেছ । লিখতে তো অনেক কিছুই ইচ্ছে ক‍রে, কিন্তু স্বল্প পরিসরে সব তো আর লেখা যায় না তাই —

  2. Darun laaglo mashi’r lekha. Sob dekhte pelam saamne. Jaader kotha lekha, tader praye sobbaike ami dekhechi. Onek kotha mone pore gyalo.

    1. লেখা টা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো ।

  3. লেখা টা পড়ে ভালো লেগেছে জেনে খুব ভালো লাগলো ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!