Home বিবিধ, গল্প গুরু  নাম  কেবলাম
বিবিধগল্প

গুরু  নাম  কেবলাম

তপতী রায়

রীতার জন্ম এক সংযুক্ত পরিবারে। তার বাড়ীর সবাই গুরু দীক্ষায় দীক্ষিত। সব কথায় তারা “জয় গুরু” বলতে অভ‍্যস্ত। বিয়ের পরদিন বিদায়ের সময় তার মা তাকে গুরুদেবের একটি ছবি দিয়ে বললো, “সব সময় গুরুকে স্মরণ করবি, দেখবি সব ভালো হবে।”

এইভাবে সে বাপের বাড়ি থেকে বিদায় নিলো। স্বামীর কর্মসূত্রে সে দেশের নানা জায়গায় ঘুরতে থাকলো। অবশেষে তারা উপস্থিত হলো গুজরাতের এক গ্রামে। দুই সন্তান, শ্বশুর – শ্বাশুড়ি নিয়ে তার সংসার। কিন্তু সেখানে আসার পর থেকেই তার শরীর ক্রমশ খারাপ হতে লাগলো। বহু ডাক্তার ওষুধ করেও তার শরীর ঠিক হচ্ছিলো না।

একদিন তার প্রতিবেশী বললো, “তুমি এত ডাক্তার দেখিয়েও ঠিক হওনা। তাই তুমি আমার মতে ঝাড় ফুঁক করাও। হয়তো তুমি তাতেই ঠিক হয়ে যাবে।”

রীতা পড়ালেখা জানা শিক্ষিত মহিল। সে কিছুতেই তাতে রাজি হতে পারছিল না। গ্রামের অশিক্ষিত লোকেদের এই সব অন্ধ বিশ্বাস আছে, তা সে জানে। কিন্তু প্রতিবেশীর আগ্রহে সে তাতে রাজি হয়ে গেলো।

সে বাড়ীর লোকের পরামর্শে একদিন এক তান্ত্রিককে নিজের বাড়ীতে ডাকলো। বাচ্চারা স্কুলে গেছে। শ্বশুর -শ্বাশুড়িকে অন্য ঘরে রেখে তারা স্বামী স্ত্রী পুজোতে বসলো।

তান্ত্রিক নানা ভাবে পুজো করতে লাগলো। এরপর সে হোমের জন্য তার স্বামীকে কাঠ আনতে পাঠালো এবং এই সুযোগে সে পুজোর বাহানায় অযাচিত ভাবে তাকে স্পর্শ করতে লাগলো।

রীতা নিথর পাথরের মতো চুপ করে ছিল, কেউ যেন তাকে সম্মোহন করেছে, সে তা বুঝতে পারছিলো। কিন্তু অনেক কষ্টে সে নিজেকে শক্ত করলো। সে সজোরে ধাক্কা মেরে তান্ত্রিককে ফেলে দিলো।

তান্ত্রিক রেগেমেগে তাকে অভিশাপ দিতে থাকলো আর যাবার সময় প্রদীপের আগুন তাদের ঘরের বিছানায় লাগিয়ে দিয়ে উর্ধস্বাসে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।

রীতা কিছু বোঝার আগেই আগুন ছড়াতে লাগলো। সে দৌড়ে গিয়ে জল দিয়ে আগুন নেভাবার চেষ্টা করতে লাগলো।

বৃদ্ধ শ্বশুর-শ্বাশুড়ি ভয় পাবে ভেবে, সে চিৎকার করতেও পারছিল না। সে হতাশ হয়ে দৌড়ে গিয়ে গুরুদেবের ছবিটা প্রানপণে চেপে ধরলো।

সে কাঁদতে থাকলো আর বলতে থাকলো, “গুরু তুমি আমাদের রক্ষা করো। তুমি ছাড়া এ বিপদ থেকে রক্ষা করার আমাদের আর কেউ নেই।”

সে কাঁদতে লাগলো আর জল দিয়ে আগুন নেভাতে লাগলো। কিছুক্ষনেই সব আগুন নিভে গেলো। রীতা এতদিনে বুঝতে পারলো তার মা তাকে বিদায়ের সময় গুরুদেবের ছবি কেন দিয়েছিল।

গুরু নামে অপার শক্তি। তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস মানুষকে সব বিপদ থেকে রক্ষা করে।

জয় গুরুর জয়!!



তপতী রায়

জন্ম ও পড়াশুনা অধুনা ঝাড়খণ্ডে। বিবাহসূত্রে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরেছি। উপস্থিত রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে গত পঁচিশ বছর ধরে বাস করছি। জয়পুরের প্রচুর বাঙালী আছেন এবং তাঁদের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা যথেষ্টই আছে। আজ আমি গর্বিত বাঙালী বলে ও জয়পুরের বাসিন্দা বলে।

 

 

 


 

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!