Home বিবিধ, প্রবন্ধ পরনিন্দা পরচর্চা : এক নৈতিক অধিকার
বিবিধপ্রবন্ধ

পরনিন্দা পরচর্চা : এক নৈতিক অধিকার

সুদেষ্ণা মিত্র

“পরনিন্দা পরচর্চা : এক নৈতিক অধিকার”

আঁতকে উঠলেন নাকি!

ভাবলেন, এ কেমনধারা বিষয় সাহিত্য সংস্কৃতির ব্লগজীনে। ব‍্যাপারটা তাহলে বুঝিয়েই বলি।

আপনাদের সবাইয়ের মতো আমার ও বেশ কিছু বন্ধুবান্ধব আছে। বন্ধু বৎসল বলে পরিচিতি ও আছে। তবে হলফ করে বলতে পারি, বেশ কিছু সংখ্যক বন্ধুবান্ধব কমে যাবে, যদি আমি পরনিন্দা পরচর্চায় তাদের সঙ্গে যোগ না দিতে পারি। 

সত্যি বলতে কি পরনিন্দা পরচর্চা সব জাতির মধ্যেই কমবেশী লক্ষনীয়। শুধু বিষয় এবং বলার ধরন হয়তো আলাদা।

আমরা পরনিন্দা করি কেন? এর সাইকোলজিক্যাল ব‍্যাখাও আছে। সাইকোলজিস্ট ডানবারের মতে পরনিন্দা, পরচর্চা মানে গসিপিং সমাজের একটি অবশ‍্য কর্তব‍্য বিষয় হয়ে পড়েছে এখন। তাই তাঁর মত অনুযায়ী গসিপ হলো, সময়ের সঙ্গে সামাজিক কার্যকলাপরত নানা গোষ্ঠীর একটা রক্ষনাবেক্ষণ। তাই বোধহয় রবিঠাকুর বলেছিলেন, পরনিন্দা হলো সমুদ্রের জলের নুনের মতো। সে যেমন সমুদ্রকে দূষিত হতে দেয় না, তেমন পরনিন্দা সমস্ত সংসারকে বিকার থেকে রক্ষা করছে। 

এ আবার শ্রেণীসচেতনও।  যখন সাহিত্য সংক্রান্ত বা একটু উঁচুদরের তখন তা আড্ডা বা মিটিং। আবার যখন তা নিতান্তই এবাড়ি  ওবাড়ি বা এপাড়া ওপাড়া তখন সে তার জাত হারিয়ে হয়ে যায় পরচর্চা। 

 দেশ বিদেশের অনেক বড় বড় সাহিত্যিক ও এই পরনিন্দা পরচর্চার বিষয়টি তাদের সাহিত্যে প্রকাশ করেছেন নানা ভাবে। বাংলা সাহিত্যে কমলকুমার মজুমদার, বনফুল, প্রমথনাথ বিশী; এমনকি স্বয়ং রবিঠাকুরের লেখাতেও এই বিষয়ে নানা মজার মজার কথা পাওয়া যায়।

একটু খেয়াল করলে দেখবেন, কোনো আড্ডার জায়গায় যে ব‍্যাক্তি অনুপস্থিত তাকে নিয়ে আলোচনা হয়তো শুরুই হয়নি। যদি আচমকা কেউ প্রশ্ন তোলে, “আচ্ছা, জানো কি? অমুক বাবু আজকাল প্রায়ই বেশ দেরি করে অফিস যান?”

ব্যাস! সেই শুরু নিমেষের মধ্যে সেই অমুকবাবুর সব খবরাখবর জানা হয়ে যাবে বাকি উপস্থিত সকলের। 

এহেন পরনিন্দার অন্য দিকটি হলো কুৎসা বা স্ক‍্যান্ডেল। যারা এই কাজটি করে থাকেন তারা আমার ধারনায়  সাহিত‍্যিক হিসেবে নাম করতে পারেন অনায়াসেই। একদিনের চোখে দেখা একটা ঘটনা, মনের কল্পনায় পাঁচদিন আর লোকমুখে পঞ্চাশদিন হতে সময় বেশী লাগে না। 

সমালোচনা হলো পরচর্চার থেকে একটু উঁচুমানের। তার মধ্যে শুধু আলোচনা থাকে তা নয় মাঝে মাঝে সমস‍্যার সমাধানও থাকে। যেমন –  

“শুনলাম যে অমুকের মেয়ে বিয়ে করবে না বলেছে।” 

সেই শুনে কোনো একজনের মন্তব‍্য হলো, “আরে  ওসব ছাড়ুন তো মশাই। মেয়ে ভালো রোজগার করে তাই বাবা বিয়ে দেবে না এখন।”

অতএব, ‘বিয়ে’ নামক সমস্যার সমাধানও বেরিয়ে এলো।

অবাক লাগলেও জানবেন সমালোচনা যে না করেও থাকা যায় বা পাশ কাটিয়ে যাওয়া যায় তা এ্যারিস্টটলও বলে গেছেন। তবে কিনা সেটা নিয়েও বির্তক আছে। আসলে আমরা যাই করি তারই সমালোচনা আছে। যে, যে ভাবে ব‍্যাখ্যা করে। 

সবশেষে একটি কথা না বললেই নয়। পরনিন্দা করো না, একথা বলবার আগে একটু চিন্তা করা দরকার। কারণ এটি মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়ায়। মনে করা যাক এ পাড়ার ছেলেটি ভালোবাসে, ও পাড়ার মেয়েটিকে। সব ঠিকঠাক। হঠাৎ একদিন বিনা মেঘে বজ্রপাত। মেয়েটির বিয়ে হয়ে গেল, এ পাড়ার ছেলেটির থেকে অনেক উপযুক্ত এক পাত্রের সঙ্গে। মনে দুঃখ হলেও এ পাড়ার ছেলেটি ভেঙে পড়লো না। কারণ মেয়েটির বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই এ পাড়ার ছেলেটি এ কান ও কান হতে হতে আসা এক খবরে জানতে পারে, সেই উপযুক্ত পাত্র মানুষ হিসেবে অতীব খারাপ। বুক ফুলিয়ে সে আত্মবিশ্বাসের গলায় বলতে থাকে, “বলেছিলাম না আমার মতো ছেলে কোথাও পাবে না।” 

সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে পরনিন্দার সুফল মানুষ কে ভাঙতে দেয় না। মনের মতো করে গল্প বানিয়ে বানিয়ে মানুষকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দেয়। 

তাই পরনিন্দা করুন এবং অন‍্যকেও করতে উৎসাহিত করুন, মনের সব অপমান, অভিমান ভুলে সবাই খুশী থাকুন নিজের আনন্দে।

লেখিকা পরিচিতি

 

 

সুদেষ্ণা মিত্র

এডিটর, দু~কলম

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!