জয়শ্রী বোস
||শেষ পর্ব||
দিন কেটে যায় নিজের ছন্দে। ইতিমধ্যে মেয়ের কোলে এলো সন্তান আমাদের নাতিবাবু। মেতে রইলাম তাকে নিয়ে। এ জীবনের আর এক অধ্যায়। নতুন পরিচয়। কোলে এসে নাতিবাবু কতো কথা যে বলে যায়–তাকিয়ে দেখতে দেখতে মনে হয় বলি “তোমার কথা বোঝার আশায় দিয়েছি জলাঞ্জলি”…
কিন্তু ঐ যে আমার মতো সুখী কে আছে এ ভাবনা বোধহয় বড়ই স্বল্প সময়ের। তাই হঠাৎ করে আমার খুব ভালো লাগার গানের কলি যেন সত্যি হয়ে গেলো….”যে রাতে মোর দুয়ার গুলি ভাঙ্গলো ঝড়ে”— জীবনের সব চেয়ে বড়ো দুয়ার ভাঙ্গলো যেদিন ;সেদিন কোনোকিছু ভাবনা চিন্তার আর অবকাশ থাকলো না- সব বেসুরো হয়ে গেল।
আমার স্বামী এক পথ দূর্ঘটনায় দশ মিনিটের মধ্যে চলে গেলেন। সংসার ছেলে মেয়ে ভালোবাসা সব কিরকম এলোমেলো হয়ে গেলো। কাটিয়ে কোনোদিন উঠতে পারবো তা ভাবিনি। কিন্তু ঐ যে তিনি বলেছেন “মরণ বলে আমি তোমার জীবন তরী বাই”..জানি না গুনীজনেদের কাছে এ গানের কি ব্যাখ্যা তবে আমার জীবনতরী আমাকে বইতেই হলো আমার ছেলের মুখের দিকে চেয়ে, মেয়ের ভেঙে পড়াকে সামলে দিতে। শক্ত হাতে হাল ধরতে হলো সংসারের। নতুন করে শুরু করতে হলো সবকিছু।
কিছুই থেমে থাকলো না। কালের নিয়মে ছেলের বিয়ে হলো। ঘরে এলো বউমা। আশ্চর্যের বিষয় হলো রবীন্দ্রনাথ তার ও জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ঠিক আমাদের মতোই। ছেলে মেয়ে বউমা সবাই বোঝে আমার ফাঁকা হয়ে যাওয়া জায়গাটা। তাই বোধহয় ওরা চায় ব্যস্ত থাকি আমি কিছু না কিছু নিয়ে । পেরিয়ে এলাম আরো কিছু বছর। নাতির পর আরো দুই নাতনী এলো ঘরে। সবাইকে নিয়ে জীবন কেটে যায় নিজের গতিতে। শুধু আজ ও অবসরে সেই ফেলে আসা দিনগুলোকে যেন আরো বেশী মনে পড়ে।
ধীরে ধীরে শরীরের বয়স ও বেড়েছে, চোখের সমস্যা শুরু হয়েছে তবু ছাড়িনি বই পড়ার নেশা। বউমার গান আর মেয়ের সঙ্গে তার আলোচনার মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ কে আরো যেন বেশী অনুভব করি । একের পর এক প্রিয় মানুষের মৃত্যুতে অবিচল কবি আমাকে প্রেরণা দেন জীবনের ওঠাপড়াকে ভয় নয় যেনো পেরোতে পারি নিজের মতো করে।
আজ তাই বোধহয় বারবার শুনি “আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার পরাণসখা বন্ধু হে আমার”। স্বামীর প্রতি প্রেম আজ মিলেমিশে যায় ভগবানের পূজোয়। তাই কবির এই গান শুনলেই মন উদাস হয়ে যায়, বড়ই প্রিয় বড় ভাললাগা আমার এই গান আর তার কথা– “রাত্রি এসে যেথায় মেশে দিনের পারাবারে, তোমার আমার দেখা হলো সেই মোহনার ধারে”।
সমাপ্ত
জয়শ্রী বোস
গৃহবধূ। রান্না আর বই পড়া অন্যতম শখ। গান সোনা হলো ভালোবাসা।
তোমাকে দেখে অন্যদেরও শেখা উচিত।
puro ta porechi kakima, khub valo legeche..
মন ছুঁয়ে গেল। ভালো থেকো কাকীমা।
অনবদ্য ।
অপূর্ব ।
পড়ে মন খারাপ ও লাগলো আর লেখাটি ভাল ও লাগলো।
Apurbo kakima .
লেখিকার লেখা মনে রবে বহু দিন
খুব ভালো।
একেবারে অন্তর থেকে লিখেছো। আমার মন ছুঁয়ে গেছে।