অঞ্জন বসু চৌধুরী
এ লেখা সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কিছু চিঠির সংকলন। যা আমার কাকু অঞ্জন বসু চৌধুরী এই ব্লগ খোলার সময় আমায় উৎসাহ জানিয়ে লিখেছিলেন। এই লেখায় বর্ণিত চরিত্রগুলি সবাই আমার প্রিয়জন। ঘটনাগুলি এক একটা নস্টালজিয়া। তাই ওনার অনুমতি নিয়ে লেখাগুলো অপরিবর্তিত রেখে আপনাদের সামনে তুলে ধরলাম। ~ সুদেষ্ণা মিত্র
চিঠি – ২
আমার বাবা, মানে মামার ন’দাদু, পিসিমার (তমলুক) পুরো দায়িত্বে ছিলেন। যার সুবাদে, বড়দি, মেজদি (তোর ঠাম্মা), সেজদি, ন’দি, ছোড়দি (অমিয়দা) এরা সকলে বাবার প্রতি দায়বদ্ধ ছিলো। কারুর কোনোও সমস্যা হলে বা কোনোও রকম পরামর্শের দরকার হলে সকলে বাবার কাছেই আসতো বা বাবা যেতেন প্রত্যেকের এর কাছে। আর অমি যেহেতু কোনোও কাজেরই ছিলাম না, সেইজন্যে আমিও বাবার সঙ্গে থাকতাম আর বাবাকে সাহায্য করার চেষ্টা করতাম। বড়দি মানে সুধাদির মেয়েদের বিয়েতে সমস্ত দায়িত্ব বাবার ছিলো আর আমরা ভাইবোনেরা মিলে কাজ উদ্ধারের চেষ্টা করতাম। সে এক অনাবিল আনন্দ ছিলো সেই কাজের মধ্যে। জলুমাসির কথায় আসি। জলুমাসি অত্যন্ত স্নিগ্ধ ও অপরূপ সুন্দরী মহিলা ছিলো। একবারে মায়ের মেয়ে। কোনোওদিন জোরে কথা বলতে শুনিনি। আর দাঁতগুলোর মধ্যে খুব একটা মিষ্টি ভাব ছিলো। চোখে হাই পাওয়ার চশমা, যেটা মাসিকে আরোও সুন্দরী করে তুলেছিলো। মসি খুব নরম স্বরে কথা বলতো আর হাসিটা খুব মিষ্টি ছিলো। চিড়িয়া মোড়ের রেডিও গলির বাড়িতে মায়েদের গানের আসর বসতো, আমার দিদি (মিতু) খুব ভালো রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতো আর আমরা গলা মেলাতাম। মাসির বিয়েতে আমরা এক সপ্তাহ আগে আর এক সপ্তাহ পরে, মানে সেই অষ্টমঙ্গলা পর্যন্ত আনন্দ করেছিলাম। বিয়ের জিনিস কেনা কাটা থেকে শুরু করা তত্ত্ব সাজানো, সে এক আনুষ্ঠানিক পর্ব চলেছিলো আর তার সঙ্গে গান আর খাওয়া দাওয়া। কুনালদা (মাসির স্বামী) এক অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোক ছিলেন। আমার দাদার (গৌতম) সাথে কুনালদার ইঞ্জিনিয়ারিং ও কাজের সুবাদে আলাপ আলোচনা চলতো। আমাকেও কুনালদা খুব আপন করে নয়ে ছিলো। একটা মজার ঘটনা বলি। একবার আমার মেজদা (কাল্টুদা) কুনালদা আর মাসিকে নিইয়ে আমাদের পাইকপাড়ার বাড়িতে (যে বাড়িতে আমরা আজও আছি) বেড়াতে এসেছিলো। অমি জিজ্ঞেস করলাম, কি খাবে। মাসি বিয়ের পরে এরেছে। মেজদা খুব চপ, কাটলেটের ভক্ত ছিলো, বললো যে, “দেখ ফিশফ্রাই পাস কিনা।” আমি বেরিয়ে গেলাম প্রায় ঘন্টা দুয়েক পরে ফিশফ্রাই ভাজিয়ে নিয়ে এলাম। খুব আনন্দের সাথে সেই ফিশফ্রাই খাওয়া হলো। এবার যাওয়ার সময়ে আমার মেজদা তার জুতো জোড়া খুঁজে পাচ্ছে না, শেষে বললো, “অ্যাই তুই কি আমার জুতো বিক্রি করে ফিশফ্রাই খাওয়ালি?” এই রকম তাৎক্ষণিক কথা বলতো মেজদা, আর সেই শুনে সকলের সে কি হাসি। এই রকম সোজা সাপ্টা ছিলো আমাদের জীবন। আজ এই পর্যন্তই।
চিঠি – ১
চিঠি – ৩
লেখক পরিচিতি
অঞ্জন বসু চৌধুরী
কর্মাসে স্মাতক ও এম বি এ পাস করে চাকুরি জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও গান এবং গল্পের বই পড়া অঞ্জন বসু চৌধুরীর অন্যতম নেশা। এক সময়ে অসম্ভব সুন্দর মাউথ অরগ্যান বাজাতেন।