Home বিনোদন, প্রবন্ধ এভারগ্ৰীন ঋষি কাপুর…..
বিনোদনপ্রবন্ধ

এভারগ্ৰীন ঋষি কাপুর…..

সুদেষ্ণা মিত্র

 

১৯৭৯ সাল। আমার জীবনের প্রথম হিন্দি সিনেমা দেখা। ক্লাস থ্রি তে পড়ি। আমাদের সময় সিনেমা দেখা ব‍্যাপারটা ভীষণভাবে নির্ভর করতো বাড়ীর বড়দের মতামতের ওপরে। তার ওপর আবার হিন্দি সিনেমা!! চিন্তাভাবনার বাইরে ছিলো। আমার বাড়িতে টেলিভিশন ছিলো না তাই এমনিতেই সিনেমার সাথে সম্পর্ক শুধু লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা আনন্দলোকের ওপরেই সীমাবদ্ধ ছিলো। এহেন অবস্থাতেও অসম্ভব টা সম্ভব হলো। হিন্দি সিনেমা দেখার সুযোগ এলো। “সরগম”। ঋষি কাপুর আর জয়া প্রদা। আমি আজও বলতে পারবো না কেন সবাই আমায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলো, তবে আমার ধারণা, ছোটো থেকে নাচ পাগল আমাকে এই নাচকেন্দ্রিক সিনেমাটি দেখাতে বাড়ির গুরুজনেরা আপত্তি করতে পারেননি। চরম উত্তেজনা নিয়ে পুরো সিনেমাটা দেখলাম। মুগ্ধতার শুরু সেই সেদিন থেকে। বলতে পারবো না ঋষি কাপুরের ঠিক কোন কোন অভিব‍্যক্তি আমার ভালোলাগাকে বাড়িয়ে তুলেছিল দিনের পর দিন –ওনার রোমান্টিসিজম, দুষ্টুমি ভরা হাসি নাকি অপূর্ব সুন্দর চেহারা।

বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সিনেমা দেখার নেশাও শুরু হলো। ততদিনে বাড়িতে শাসন ও হালকা হয়ে এসেছে। বাড়িতে এলো ভিসিআর, আমার মাধ‍্য‍মিক পরীক্ষার পর। একের পর এক সিনেমা দেখতে শুরু করলাম। সিংহভাগ জুড়ে শুধুই ঋষিকাপুর। রিলিজ করলো “চাঁঁদনী”। প্রেমিক ঋষির আবেগ , তার প্রেমিকার প্রতি মুগ্ধতার প্রকাশ, ব‍্যর্থতা সব অনুভুতি গুলো কি এক অপূর্ব অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছিলেন; যার রেশ আমার মনে সবসময় সাক্ষর রেখে যাবে। আমার কাছে উনি একজন কমপ্লিট রোমান্টিক হিরো। তাই যখন ওনার “ইক চাদ্দর মইলি সি ” র সংবেদনশীল অভিনয় এবং “অগ্নিপথের(২০১২) খলনায়কের চরিত্রে দেখি তখন অবাক হয়ে যাই ওনার অভিনয় প্রতিভার ব‍্যাপ্তি দেখে। কিশোরী বয়সের অপরিণত মন আজ হয়তো অনেক বদলে গেছে স্বাভাবিক নিয়মে, পছন্দের তালিকাও একটু বিস্তৃত হয়েছে, কিন্তু ঋষি কাপুরের অনুরাগী আমাকে আজ ও তার সিনেমা রিলিজ করলে দেখতে যেতেই হতো। সেই কারনেই বেশ কিছু বছর পর ২০০৫ এ যখন “পেয়ার মে টুইস্ট “রিলিজ করলো আমি তিনদিন আগে এ্যাডভানস টিকিট কেটে রেখেছিলাম। খারাপ ভালো কোনো রিভিউয়ের থেকে আমার কাছে এই সিনেমাটির বিশেষত‍‌ঃ ছিলো ঋষি কাপুরের আবার অভিনয় জগতে ফিরে আসা। হল থেকে বেরিয়ে আসার অনেক পরেও আবেশ রয়ে গেছিলো ঋষি কাপুর আর ডিমপল কাপাডিয়ার রোমান্টিক কেমিস্ট্রির।

অসুস্থতার খবরে মনটা খুব খারাপ হয়েছিল দু বছর আগেই। প্রায়ই সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখতাম খবর জানার জন্যে। ওনার অগনিত গুনমুগ্ধের মতো আমিও খুশী হয়েছিলাম যে উনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। আজকে সকালেই এই অপ্রত্যাশিত খবর। আমার কিশোরী বয়সের ভালোলাগার ছন্দপতন। আমার মনে চিরকাল এভারগ্ৰীন হিরো হয়েই থেকে যাবেন ঋষি কাপুর।

 

 

Image Credit: Deccan Herald

 


Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!