Home বিবিধ, প্রবন্ধ বিভিন্ন প্রকারের নার্সিসিস্ট মানুষ
বিবিধপ্রবন্ধ

বিভিন্ন প্রকারের নার্সিসিস্ট মানুষ

সঞ্চারী গোস্বামী মজুমদার


 

‘নার্সিসিস্ট’ – এই শব্দটা শুনেই মনে হচ্ছে যে এটা একটা ইংলিশ ওয়ার্ড, বাংলাতে যার মানে হল ‘আত্ম মুগ্ধ ব্যক্তি’। অনেকেই হয়তো এর বাংলা মানে জানেন না। তাই আজ ইংলিশের এই শব্দ এবং এই শব্দের সাথে জড়িত কিছু মানুষের সম্পর্কে জানাব।

গুগল ট্রেন্ডস জানায় যে গত দশ বছরে ‘নার্সিসিস্ট’ শব্দটা অনেক বেশি ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক সময় এই শব্দটাকে ব্যবহার করা হয়েছে অসম্মান বা অপমানজনক হিসেবে। এটা দেখা যায় যে, কোনো মানুষই চায় না তাকে কেউ নার্সেস বা নার্সিসিস্টিক বিহেভিয়ারের মানুষ বলে চিহ্নিত করুক। যদিও সাইকোলজিস্টরা বলেন যে নার্সিসিস্টিক হওয়াটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে খুবই স্বাভাবিক এবং সাধারণ ব্যপার। সবাই ছোটবেলা থেকে চায় যে মা বাবার আদর পাবে,যত্ন পাবে আর বন্ধুদের থেকে তারিফ পাবে। আর এই চাওয়া পাওয়া টা খুব বৈধ এখানে কোনো অস্বাভাবিক নয়।

১৯১৪ সালে সিগমুন্ড ফ্রয়েড বলেছিলেন যে প্রত্যেকটি বাচ্চাই একটা সময় প্রাইমারি নার্সিজম এর মধ্যে দিয়ে যায় যেখানে তারা বুঝতে পারে না যে, অন্য মানুষরা তাদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। তারা সেই সময় খুব আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যায়। ফ্রয়েড এটা বলেন৷ যে যারা বড় হওয়ার পরেও নার্সিসিস্ট থেকে যায় তারা ছোটবেলা থেকেই এই ব্যবহারটাকে নিজের মধ্যে আস্তে আস্তে করে বাড়তে দিয়েছে। এটা মূলত হতে পারে যখন মা-বাবারা বাচ্চাদের হয় বেশী বা কম মাত্রায় প্রশ্রয় বা আদর দিয়েছে। অনেকে আবার এটা বলে যে নিজেকে ঠিক প্রমাণ করার চেষ্টায়, নিজের সম্মানকে বড় করার জন্য অনেকে নার্সিসিস্ট হয়ে যায়।

মানসিক এবং সামাজিক ভাবে দেখতে গেলে ‘নার্সিজম’ হল আমাদের খুবই সাধারণ ব্যবহার। নার্সিজমকে দুভাগে ভাগ করা যায় পজিটিভ এন্ড নেগেটিভ টাইপ, যাকে বলে প্র-সোশ‍্যাল এবং অ্যন্টি-সোশ‍্যাল। এবার এই দুই ভাগের নার্সিসিস্ট মানুষদের সম্পর্কে আলোচনা করব।

১.  অ্যন্টি-সোশ‍্যাল হয় তারা সবসময় এটা আশা করে যে তাদের সবাই সবসময় ভালবাসবে, প্রশংসা করবে, তাদের নিয়ে সবসময় ভাববে, আর তারা যাই কিছু করুক না কেন, পছন্দ না হলেও,অন্যরা সেটাকে নিয়ে সব সময় খুশি থাকবে। অন্যদের তাদেরকে বুঝতেও অনেকটা কষ্ট হয়। সব সময় সমস্ত সম্পর্কগুলোকে নিজের সুবিধার্থে ব্যবহার করবে। কারণ তারা সব সময় খুব বেশি রকমের সেলফ-সেন্টারেড অর্থাৎ আত্মকেন্দ্রিক।

২. আবার অন্যদিকে যদি আমরা প্র-সোশ‍্যাল লোকদের দেখি তাহলে তারাও কিন্তু একই রকম নিজেদের নিয়ে বেশি ভাবে। তবে তফাৎ একটাই, এই ধরনের মানুষরা প্রশংসা চায় সব সময় কিন্তু ভালো কাজের পরিবর্তে। প্র-সোশাল মানুষরা ভালো কাজ করতে কখনো পেছিয়ে যায় না বরং কি ধরনের কাজ করলে অন্য মানুষকে খুশি করা যায় তার চেষ্টা সব সময় করে। তারা ভালো কাজ করে মানুষের কাছ থেকে ভালোবাসা, ভালো কথা, প্রশংসা সবকিছু আদায় করে নেয়। কোনটাই জোর করে নয়। এই ধরনের মানুষের সাথে বন্ধুত্ব করলে পরে বোঝা যায় যে, এদের সাথে থাকা মানেই নিজেকে কতটা পজিটিভিটি জীবনের মধ্যে রাখা।

. ম্যালিগ্নন্ট নার্সিসিস্ট যারা হয় তারা সবসময় নিজের ভালো করার জন্য অন্যদের ক্ষতি করতে দুবার ভাবে না। তাদের ‘সেলফ সেন্টার’ ব্যবহার এতটাই বেশি থাকে যে তারা যেকোনো সময় কোন সম্পর্কের মধ্যে চ্যালেঞ্জ দেখলে,যা তাদের বিপক্ষে যাবে, তার থেকে তারা নিজেরা সাবধান হয় এবং অপরকে দোষী করতে পিছপা হয় না। কেউ তাদের দোষ ধরে ফেললে তারা প্রচন্ড রেগে যায়। এদের কাছে পুরো পৃথিবীটাই একটি কম্পিটিশন গ্রাউন্ড এবং তারা সব সময় সব ধরনের মানুষের সাথে কম্পিটিশন করে জিততে চেষ্টা করে।

. এক ধরনের নার্সিসিস্ট মানুষ তারা সবসময় নিজেদেরকে সবার থেকে অনেক বেশি উচ্চতর মনে করে। তাদের ধারণা তাদের আশেপাশের কোন মানুষই তাদের মতন এত উচ্চ দরের নয়। এই ধারণা তাদের মনের মধ্যে বদ্ধপরিকর হয়ে ওঠে এবং এটা তারা সবসময় ভাবে যে তারা যে জায়গায় আছে সেটা তাদের প্রকৃত জায়গা নয়। এর থেকে অনেক বেশি উপরে তাদের থাকা উচিত। এরা নিজেদেরকে এটেনশন পাওয়া থেকে ডিপ্রাইভ বলে ধরে নেয়। 

. আবার আরেক দিকে দেখা যায় যে কিছু নার্সিসিস্ট নিজেদের অনুভূতি গুলোকে লুকিয়ে রাখতে পছন্দ করে। এরকম নার্সিসিস্টরা খুব সহজেই ডিপ্রেশনে চলে যায়। এরা খুব বেশী সেনসিটিভ হয় এবং এদের মধ্যে এমপ্যাথি ব্যাপারটা থাকে না। যার ফলে এদের অনুভূতিগুলো শুধুমাত্র নিজেদেরকে ঘিরেই থাকে।

সবটা শুনে আমার মনে হয় আপনারা বুঝতেই পারছেন যে এই ধরনের মানুষের সাথে সম্পর্ক রাখা মানে অনেকটাই মানসিক সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। ‘নার্সিসিস্ট পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার’ যাদের আছে, সেইসব মানুষের সাথে কোন রকম সম্পর্ক রাখাটা খুব কষ্টকর। এরা শুধু নিজের টুকু ছাড়া আর কিছুই বুঝবে না কখনো। শত চেষ্টার ফলেও আপনার প্রতি এমপ্যাথি করতে এরা পারবে না। তার ফলে আপনার জীবনে অনেক বেশি নেগেটিভ এক্সপিরিয়েন্সও হবে। আমার মতে এই ধরনের মানুষের কাছ থেকে একটু দূরে সরে থাকলে সবার জন্য ভালো।

 



লেখিকা পরিচিতি

Sanchari Goswami Majumdar

Loves to teach and practice dance. Likes to read books.

 

 

 


 

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!