সঞ্চারী গোস্বামী মজুমদার
ভালবাসা শব্দটা বলাটা যতটা সহজ তার মানে বোঝা বাস্তবে ঠিক ততটাই কঠিন। এই ভালবাসাকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন চেষ্টা ও পরিশ্রম যাতে একটা সম্পর্ককে ঠিকভাবে বজায় রাখা যায়। দুজনকে সমানভাবে সম্পর্ককে গুরুত্ব ও সময় দিতে হবে যাতে করে যে সম্পর্কতে আছে সেটা সফলতা পায়।
প্রেম বা ভালবাসার কথা বললেই আমাদের মনে চলে আসে সেই সব রুপোলি পর্দায় দেখা চলচ্চিত্র বা সিনেমার কথা যা আমাদের ভালবাসাকে এক কাল্পনিক রূপকথার দুনিয়াতে নিয়ে গেছে এবং আমাদের অন্তরে একটা গভীর ছাপ ফেলেছে। কিন্তু বাস্তবে আদৌ তা হওয়াটা কঠিন আর হলেও গল্পের মতো খুব সহজ বা মসৃণ ভাবে হয় না।
কখনো ভালবাসা একতরফা হয়ে থাকে আবার অনেক সময় দুজনে মিলে একটা সম্পর্কতে থাকলেও তাকে শেষ অবধি টিকিয়ে রাখতে অসফল হয়।
এইরকম কঠিন সত্য আরও আছে ভালবাসা নিয়ে যা হয়তো আমাদের অজানা। কিন্তু এই অজানা সত্যগুলোকেই আমাদের জানতে হবে আর সেই পাওয়া তথ্যগুলোকে আমাদের বুঝতে হবে।
এই ভাবেই সময়ের সাথে সাথে আমরা ভালবাসাকে বুঝতে পারব এবং আমাদের মধ্যে সেই পরিণত চিন্তা বোধ অর্থাৎ ম্যাচিউরিটি আসবে।
আমি জানি এই সত্যকে বোঝাটা খুব একটা সহজ ব্যাপার নয়। তবে আশা করি যে সঠিক চেষ্টা করলে আমরা ধীরে ধীরে বুঝতেও পারবো আর যত আমরা বুঝব তত আমাদের কাছে সহজ হয়ে যাবে এই ব্যাপারটা। নিচে আমি কিছু সত্যকে সহজ করে বলব যেটা আশা করি বুঝতে সাহায্য করবে ভালো করে আরো।
১. কখনো আমরা এমন কাউকে পছন্দ করি যে আমাদের আখি চোখে দেখেনা
অনেক সময় আমাদের আশেপাশে থাকা মানুষকে আমরা ভালোবেসে ফেলি এটা না জেনেই যে তারা কেমন মানুষ বা আদৌ তারা আমাদের ভালোবাসে কিনা। আমরা তাদের জন্য ভাবলেও তারা আমাদের জন্য বিন্দুমাত্র চিন্তিত হয় না আর শুধু নিজের স্বার্থের জন্য আমাদের সাথে মেশে। এইরকম মানুষদের থেকে দূরে থাকা উচিত এবং কোন সম্পর্কে না জড়ানোই উচিত।
২. সবার উপরে নিজেকে ভালবাসা দরকার
নিজেকে যদি কেউ ঠিক করে না ভালবাসতে পারে তাহলে অন্যকে ভালবাসা বা সেই ভালবাসাকে প্রকাশ করাটা কঠিন হয়ে যায়।
নিজেকে অবহেলা না করে আমাদের উচিত সর্বপ্রথম নিজেকে ভালবাসা। অন্যের কাছে রোমান্সের জন্য না গিয়ে নিজের মনে নিজের জন্য একটা ভালবাসার জায়গা করলে ভালো থাকা যায় বেশি বলে আমার মনে হয়।
৩. ক্ষণিকের জন্য ঘৃণা
যাকে ভালোবাসি আমরা অনেক সময় অনেক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির কারণে ক্ষণিকের জন্য আমরা সেই মানুষটাকে ঘৃণাও করে থাকি। ভাবছেন, কেন এই ধরনের পরিস্থিতি হবে বা এই রকম হওয়ার কারণ কি! বেশি ভাববেন না এটা কোনো কারনে হয়ে থাকে কারোর কারোর সাথে কিন্তু তার মানে এটা নয় যে এই ঘৃণা আর যাবেই না।
কারণ সত্যিকারের ভালবাসার মানুষের সাথে আমরা অনেক সময় সহমত হই না। কিন্তু তার ওপর বেশিক্ষণ রাগ বা ঘৃণাও দীর্ঘস্থায়ী হয় না কখনই। তাই উচিত ক্ষণিকের ঘৃণাকে বেশি প্রাধান্য না দেওয়া যাতে সত্যিকারের ভালবাসা নষ্ট হয়ে যায়।
৪. সবার সমান অধিকার আছে ভালবাসা পাওয়ার
আমরা জানি মানুষ সমাজবদ্ধ জীব। সবারই ভালবাসার উপর সমান অধিকার আছে। কোন ব্যক্তিকে আমাদের পছন্দ নাও হতে পারে কিন্তু তার মানে আমাদের কোন অধিকার নেই তাদের ছোট বা হেয় করার। আপনি যাকে পছন্দ করেন না, হতে পারে সে অন্যের কাছে অনেক বেশি প্রিয়। আমরা নিজেরা যেমন নিজেদের জন্য ভালবাসা চায় তেমনি অন্য ব্যক্তি একই জিনিস চায়।
৫. শুধু ভালবাসা এই ভালবাসার জন্য যথেষ্ট নয়
অনেক সময় একজন অপরজনকে ভালবাসলেও সম্পর্ক ভেঙে যায়। এর কারণ হচ্ছে যে ভালবাসা থাকা মানে একটা সম্পর্ক সাফল্য পায় না। এর কারণ হয়তো সেটা পারফেক্ট রিলেশনশিপ হয় না। সে ক্ষেত্রে আমাদের সেটা বুঝে উচিত সেই সম্পর্ক থেকে সরে আসা। তাতে আমাদের সম্মানও বজায় থাকে।
৬. ভালবাসা সহজ নয়
আগেও বলেছি যে ভালবাসা গল্পের মতন সহজ হয় না। ভালবাসা মানে আমাদের জানতে হবে যে জটিল এবং মানসিক চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হবেই। কখনো এটা একদিকে যেমন ভালো লাগার অনুভূতি দেয় তেমনি কিছু সময় মনকষ্টের কারণও হয়ে উঠতে পারে। আমাদের এইসব সত্যকে বুঝে তারপরে ভালবাসার দিকে যাওয়া উচিত। কারণ ভালবাসায় খারাপ এবং ভালো দুদিকই সমান ভাবে আছে।
৭. জোর করে ভালবাসা হয়না
ভালবাসা জোর করে কখনোই হয়না। আমরা যাকে ভালোবাসি সে আমাদের নাও ভালবাসতে পারে। আমাদের উচিত সেটা বোঝা এবং সেই ভাবনার সম্মান করে তাকেও কোন রকম জোর না করা। জোর করে ভালবাসা কখনোই আদায় করা যায় না।
ভালবাসার কোন নির্দিষ্ট নিয়মাবলী হয় না। কিন্তু আমি আশা করবো যে এই সাতটি সত্য ভালোবাসতে বা ভালবাসাকে বুঝতে অনেকটাই সাহায্য করবে।
Khub sotti