তপতী রায়
লেখিকা তপতী রায় তাঁর এই অণু গল্পটির মধ্যে দিয়ে পাঠকদের এমন এক অনুভূতির মধ্যে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন যার ব্যাখ্যা কোনো বুদ্ধি দিয়ে করা চলে না।
কিছু লিখব ভাবলেই কি লেখা যায়! হয়তো হ্যাঁ, অথবা না। বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছি কিছু লিখি; তাই স্মৃতি রোমন্থন করতে বসলাম। ভাবলাম, সমুদ্র মন্থন করার মতো স্মৃতি রোমন্থন করতে গিয়ে কিছু গল্পের খোরাক পাবো হয়তো। ঠিক তাই।
বহু বছর আগে আমার প্রিয় বান্ধবীর সাথে যা ঘটেছিল তার হুবুহু বিবরণ প্রস্তুত করলাম।
আমার প্রিয় বান্ধবী তার স্বামীর সাথে গাড়ি করে কলকাতা থেকে রাঁচি ফিরছিল। তাদের বিশ্বস্ত পুরনো ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছিল। মাঝে মাঝেই তারা সকলে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ছিল। তাই আমার চা-খোর বন্ধু ক্লান্তি দূর করার জন্য চায়ের দোকান দেখলেই গাড়ি দাঁড় করাচ্ছিল। এইভাবে ক্রমশ সন্ধ্যে নেমে এলো। চা পান করার তীব্র নেশার ফলে সে আলো-আঁধারির সময় প্রায় জনমানব শূন্য একটি জায়গায় চায়ের দোকান দেখতে পেয়ে গাড়ি দাঁড় করালো।
ড্রাইভারকে বললো, “দেখে এসো, আর কি কি পাওয়া যায়!” ড্রাইভার এসে বললো, “চা ছাড়া বিস্কুট ইত্যাদিও রয়েছে।”
আমার বন্ধু ও তার স্বামী মেন রাস্তা থেকে নেমে সামান্য একটু মেটে রাস্তার ধারে দোকানে গিয়ে চায়ের অর্ডার দিলো। সেখানে দোকানি একটি স্টোভে চা তৈরি করছিল। সাথে একটি মহিলা, মনে হয় তার স্ত্রী, বেশকিছু বাসন কলতলায় ধুচ্ছিলো। আমার বন্ধু ও তার স্বামী একটা দড়ির খাটিয়ায় বসে সেখানে চা বিস্কুট খেলো।
পয়সা দিয়ে যথারীতি তারা গাড়িতে এসে বসলো। ড্রাইভারও গাড়ি চালাতে শুরু করলো। বেশ কিছুক্ষণ পর আমার বন্ধু টের পেল যে সে তার মোবাইল সেখানেই খাটিয়ার উপরে ফেলে এসেছে। গাড়ি আবার ফেরত সেই স্থানে গেল।
ড্রাইভার পথ দেখিয়ে সেখানে তাদের নিয়ে ও গেল। কিন্তু কোথায় সেই দোকান! জনমানবশূন্য সেই জায়গায় চা ওয়ালা বা তার স্ত্রী, সেই দোকান বা জারে ভর্তি বিস্কুট, সেই কলতলায় বাসন, এমনকি সেই খাটিয়া কিছুই নেই। শুধু নম্বর ডায়াল করতেই সম্পূর্ণ নীরব নিস্তব্ধতার মধ্যে তারস্বরে বেজে উঠল মোবাইলটা। সাথে সাথে তাদের তিনজনের মধ্যে এক বৈদ্যুতিক শিহরণ জেগে উঠল। তিনজনেই ঊর্ধ্বশ্বাসে গাড়িতে বসে পড়লো। ড্রাইভার জোরে গাড়িতে স্টার্ট দিলো।
আমার গল্পটিও ফুরোলো।