Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার চোখে দার্জিলিং
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার চোখে দার্জিলিং

শ্রুতি ভট্টাচার্য

সালটা তখন ২০১২। আমার বয়স চার। বাবা মায়ের হাত ধরে জীবনে প্রথম পাহাড় দেখা। তারপর কেটে গেছে আটটা বছর ……….

এখন সালটা ২০২১। আমার বয়সটাও আট বছর বেড়ে গেছে। আট বছর আগের দার্জিলিং-এর কথা আমার খুব একটা মনে নেই। তাই এইবারেও যেন আমি শহরটিকে নতুন করে দেখলাম।

আমার ভ্রমণের প্রথম দিন :

আজ তারিখটা হলো ০৩/০৩/২০২১ । আমাদের সকাল ৭ টার  ফ্লাইটে যাত্ৰা শুরু হলো দার্জিলিং-এর উদ্দেশ্যে। ৮ টা বেজে ১৫ মিনিটে আমরা পৌঁছলাম বাগডোগরা। বাগডোগরা থেকে দার্জিলিংগামী কারে KURSEONG-এর রাস্তা ধরে পাহাড় ও প্রকৃতির অপরূপ শোভা উপভোগ করতে করতে GHOOM STATION পেরিয়ে পৌঁছলাম স্বপ্নের শহর দার্জিলিং-এ। যাত্ৰা পথের বেশীরভাগ সময়টাই হাতছানি দিচ্ছে KANCHENJUNGA। আমরা পৌঁছলাম পৌনে একটা নাগাদ। আমাদের হোটেলটা ছিল ঠিক দার্জিলিং মল-এর সামনে। হোটেল থেকে KANCHENJUNGA সহ বাইরের দৃশ্যটাও ছিল অসাধারণ। দুপুরের খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং মল-এ। সেখান থেকে আবার মহাকাল মার্কেট ঘোরাঘুরি। সাথে ছিল কেভেন্টার্স-এর চিকেন সসেজ আর হট চকলেট। ঘোরাঘুরি সেরে আবার ফিরে এলাম হোটেলে।

আমার ভ্রমণের দ্বিতীয় দিন :

আজ ০৪/০৩/২০২১। মার্চ মাসেও যে এতো ঠান্ডা হতে পারে আমার ধারণা ছিলো না। আজ আমরা সকাল ছটা নাগাদ উঠে পড়েছি। সাড়ে সাতটার সময় ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম দার্জিলিং এর দর্শনীয় স্থানগুলি দেখতে। প্রথমে আমরা দেখলাম জাপানীজ টেম্পেল ও পিস প্যাগোডা। পিস প্যাগোডা ও জাপানীজ টেম্পেল দুটোই পাশাপাশি। এখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আমরা রওনা দিলাম বাতাসিয়া লুপ-এর উদ্যেশ্যে। বাতাসিয়া লুপও খুব সুন্দর একটি জায়গা। শুনেছি মে মাসে বাতাসিয়া লুপ পুরো ফুলে ঢেকে থাকে। সেই সময় বাতাসিয়া লুপ-এর সৌন্দর্য আরো বেড়ে ওঠে। কিন্তু আমরা যেহেতু মার্চ মাসে এসেছি, তাই বেশি ফুল দেখতে পাইনি। আমরা সেই কনকনে শীতের মধ্যেই তুলে নিলাম কিছু স্মৃতির পাতায় জমিয়ে রাখার মতো ছবি। তারপর আমরা গেলাম হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেটে।  চা বাগানের অদ্ভুত শোভা। সবুজে সবুজ। খাড়াই পথে ভয়ও লাগে। কিন্তু ছবি তো তুলতেই হবে।  চা বাগান দেখার পর আমরা এলাম রক গার্ডেন। এই  জায়গাটিও অপূর্ব। পাহাড়ের ওপর থেকে ঝর্ণা ঝরে পড়ছে। কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি ও ছবি তোলার পর ফিরে এলাম হোটেলে। এখন ২:৩০ বেজে গেছে। দুপুরের খাওয়া সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করে সাড়ে চারটের সময় আবার মল-এ এসে বসলাম। মল-এ সন্ধে অবধি ঘোরাঘুরি করে ও মার্কেট থেকে কেনাকাটা করে আবার হোটেল-এর দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

আমার ভ্রমণের তৃতীয় দিন :

আজ ০৫/০৩/২০২১। সকাল থেকে বৃষ্টি। তাই আমাদের বেরোতে দেরী হয়ে গেল। এখন ৯ টা বাজে। প্রথমে আমরা রওনা দিলাম হিমালায়ান জুলজিক্যাল পার্ক ওরফে জু-এর দিকে। হিমালায়ান মাউনটেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটও (HMI) সেখানে।  পৌঁছনোর পর আমরা প্রথমে HMI-এর ৩০ মিনিটের একটি শ্যো দেখলাম। তারপর আমরা জু-টা ভালো করে ঘুরে দেখে ও কিছু ছবি তুলে যাত্রা শুরু করলাম দার্জিলিং রোপওয়ের দিকে। গিয়ে দেখি রোপওয়ের বিশাল লাইন।  এখানে একটা কথা বলে রাখা দরকার , যদি কেউ রোপওয়ে চড়তে চান তাহলে অবশ্যই হাতে বেশি সময় নিয়ে যাবেন। রোপওয়েতে চাপার পর আমরা তিনটে নাগাদ হোটেল-এ ফিরলাম। তখন আমরা তিনজনেই বেশ ক্লান্ত।  তাই লাঞ্চ করে আমাদের রুমে বিশ্রাম করলাম কিছুক্ষণের জন্য। আবার সেই সন্ধে ৬ টা নাগাদ বেরোলাম কেনাকাটার উদ্যেশ্যে। কেনাকাটা করে কিছুক্ষন মল-এ বসে চলে গেলাম গ্লেনারিস-এ ডিনার করতে। ডিনার করতে করতে প্রায় সাড়ে ন’টা বেজে গেল। আস্তে আস্তে মার্কেটও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আমরাও হোটেলে ফিরে এলাম। 

আমার ভ্রমণের চতুর্থ দিন :

আজ ০৬/০৩/২০২১। চতুর্থ দিন। আজ আমরা যাবো লামাহাটা ও তাগদা। প্রতিদিনের মতো আজকেও আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়িতে উঠে পড়লাম। ঘড়িতে তখন বাজে আটটা। রাস্তার অপরূপ দৃশ্য দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম তাগদা। তাগদাতে একটি সুন্দর অর্কিড গার্ডেন আছে। এতো সুন্দর সুন্দর অর্কিড আমি আগে কখনো দেখিনি। চারিদিকে বড়ো বড়ো পাইন গাছ, তার মাঝে সূর্য কখনো উঁকি মারছে, কখনো  যেন মেঘ নেমে আসছে মাটিতে। কিছুক্ষন পর ছবি তোলা ও ঘোরা সেরে তাগদাকে বিদায় জানিয়ে রওনা দিলাম লামাহাটার উদ্যেশ্যে। যখন পৌঁছলাম তখন বাজে সাড়ে এগারোটা। ৫,৭০০ ফিট উচ্চতায় এই শেরপাদের গ্রাম , তিব্বতি লামাদের ভারত সরকার এইখানে বসবাসের ব্যাবস্থা করায় এই জায়গাটির নাম হয়েছে লামাহাটা। পাইনের জঙ্গলের ভিতরে গাছগাছালি, পাহাড় আর অসংখ্য ফুলের অপরূপ সমারোহ এই পার্কে। পার্কের ভেতর রয়েছে সুন্দর বসার জায়গা আর আকর্ষণীয় কাঠের ওয়াচটাওয়ার। বাগানের একেবারে ওপরে ওঠার জন্য জঙ্গল কেটে আঁকা বাঁকা রাস্তা তৈরি করা আছে। আমরা চূড়ায় পৌঁছে দেখলাম একটা সুন্দর লেক আছে যেটা গ্রামবাসীদের কাছে খুব পবিত্র। গেলে অবশ্যই হাতে সময় নিয়ে যাবেন কারণ চড়াই রাস্তা উঠতে আমাদের বেশ সময় লেগেছিল। তবে নামার সময় খুব একটা সময় আমাদের লাগেনি  লামাহাটা ঘুরে ও ছবি, সেলফি সব তোলার পর আমরা গাড়ি করে হোটেলের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। হোটেলে পৌঁছে আমরা খুবই ক্লান্ত। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম মহাকাল টেম্পল দেখার উদ্দেশ্যে। মহাকাল মন্দির একটি হিন্দু মন্দির। মহাকাল মার্কেটের দোকানগুলোর পাশ দিয়ে কিছুটা গিয়ে রাস্তার বাঁ পাশে কয়েক ধাপ সিঁড়ি উঠে একটা চড়াই রাস্তা। এই চড়াই আঁকাবাঁকা হয়ে উঠে গেছে পাহাড়ের মাথায়। এটাই মহাকাল মন্দিরের রাস্তা। মহাকাল মন্দিরটি আমার বেশ ভালো লেগেছে। কিছুক্ষণ মন্দির ঘুরে দেখার পর আমরা মল-এ গিয়ে বসলাম। তখন বাজে পৌনে ৬ টা। 

সাড়ে আটটার মধ্যে আমরা মল-এ ঘোরাঘুরি সেরে ও ডিনার করে হোটেলে ফিরলাম। 

আমার ভ্রমণের শেষ দিন:

আজকে ০৭/০৩/২০২১। দার্জিলিং-এ আমাদের শেষ দিন। আজকে আমাদের আর কোথাও ঘোরার নেই।  আমাদের ফ্লাইট আছে বিকাল চারটেয়। তাই সকাল ১০ টার মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম বাগডোগরা এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। অনেক ভালো ভালো স্মৃতি নিয়ে দার্জিলিংকে বিদায় জানালাম।

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
 
 
 
শ্রুতি ভট্টাচার্য

আমি শ্রুতি ভট্টাচার্য। সেন্ট জনস্‌ ডায়াসেশন গার্লস্‌ হায়ার সেকেণ্ডারী স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ি। ছবি আঁকতে ও গল্প পড়তে আমার খুব ভালো লাগে । ‘Du~কলম’-এ সবার লেখা পড়ে আমারও ইচ্ছে জেগেছে কিছু লেখার।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. অপূর্ব । দার্জিলিং চোখের সামনে নতুন করে ধরা দিল । আরো এমন লেখা পড়তে চাই ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!