Home বিবিধ, প্রবন্ধ আমার বিজয়া
বিবিধপ্রবন্ধ

আমার বিজয়া

সঙ্গীতা প্রামাণিক

আজকের এই করোনা যুদ্ধের সময়ে ছোট বড় সকলের যখন একমাত্র ভরসা মুঠোফোন, এতগুলো ঘরবন্দী মাস বেশীরভাগ মানুষ কাটিয়ে দিয়েছি ছোট্ট এই যন্ত্রের সাহারায়, তবুও মাঝে মাঝেই মনে হয় দিয়েছে যত… নিয়েছে অনেক বেশী। 

এখন তো যেকোন উৎসব মানেই হোয়াটসঅ্যাপ ফেসবুক ভর্তি মেসেজ কিন্তু তাতে কি সত্যি কোনও প্রাণের স্পর্শ থাকে! কিছু বছর আগে অন্তত টেলিফোনে গলাটুকু শোনা যেত এখন তো সেও দূর অস্ত ! কিছু ছবি বা ফরওয়ার্ড মেসেজ দিয়ে কি বিজয়ার আবেগকে ছোঁয়া যায় !

সে এক ছিল আমাদের ছোটবেলা, আর সে এক ছিল বিজয়ার আড়ম্বর ছিল সেই বেলায়… পুজোর আগে থেকেই তার তোড়জোড় চলতো।

ময়দার কুচো নিমকি ভেজে রাখা, নারকেল নাড়ু বানিয়ে রাখা, ঘুগনির জন্য ভাজা মশলা গুঁড়িয়ে রাখা, আরো অনেক রকম খাবার বানানোর যোগাড়যন্ত্র সারা হয়ে যেত নবমীর আগেই। 

পাড়াতুতো জ্যেঠু-জ্যেঠিমা, দাদু-দিদিমা-ঠাকুমা, পিসি, কাকু-কাকিমা অগুনতি থাকতো, আর থাকতো দল বেঁধে প্রণাম সারতে যাওয়ার হিড়িক, বড়রাও প্রণাম নিতে বড্ড ভালোবাসতেন, কেউ যদি না করে ফাঁকি মারার চেষ্টা করতো তাকে দিয়ে ঘাড় ধরে করানো হত, বলতে গেলে প্রণাম করার ট্রেনিং চলতো রীতিমত। 

কার বাড়িতে কি বানানো হয়েছে তার খবর জোগাড় হয়ে যেত বহু আগে থেকে, সেই বুঝে হানা দেওয়া, অনেক বাড়িতে হয়তো ইচ্ছে করেই দু তিনদিন পর করা হত, যাতে সবাই খেতে পারে। তবে নাড়ু ছেড়ে আসা হত না কোনোমতেই, হাতে প্যাকেট থাকতো সঙ্গে, নাড়ু সবার আগে পাচার হত তাতে, যাতে বাড়ি গিয়ে আরাম করে কদিন ধরে খাওয়া যায়, তারও আবার ভাগীদার থাকতো। 

উন্নতির জোয়ারে, যান্ত্রিকতার শিকলে আজ মানুষ বন্দী তার ছোট্ট গন্ডীতে। আজ আর বিজয়া সারতে যাওয়া হয় না, সুগারের জন্য নাড়ু খাওয়া চলে না, কোমরের অসুখে প্রণাম বড্ড হ্যাপা, অম্বলের ভয়ে ঘুগনির ঠাঁই হয়না রান্নাঘরে। 

এখন তার ভোল বদল হয়েছে বিজয়া সম্মিলনীতে, রসনা তৃপ্ত করতে এসেছে বিরিয়ানি আর সুগার ফ্রী মিষ্টি।  

কৃত্রিম অভিব্যক্তিওয়ালা কিছু সেলফি, আলতো কোলাকুলি, মেকি হাসি, লিপস্টিক বাঁচিয়ে মেপে মেপে কিছু কথা, আর দামী শাড়ির রেষারেষিতে ধীরে ধীরে কোথায় যেন হারিয়ে গেল ফোকলা দাঁতে দাদুর সেই অমলিন মুখখানা, অলৌকিক স্বাদের সব খাবারগুলো, ঠেলাঠেলি করে প্রণাম করার হিড়িক, আর কম দামী জামা কাপড়ের মধ্যে লুকোনো অনন্ত আনন্দের ভান্ডার।

রেস্তোরাঁর প্যাকেট বন্দী খাবারে পাওয়া যায় না, জ্যেঠিমার রান্নাঘর থেকে ভেসে আসা লবঙ্গলতিকার সুবাস !

।। সমাপ্ত ।।

(লেখার সঙ্গের ছবিটি : বিজয়া দশমীর দিন অনেক বাড়িতে আজও দুর্গা নাম লেখা হয় ” শ্রী শ্রী দুর্গা সহায়” ছবিটি সেই দুর্গা নাম লেখার। Du~কলমের ব্যক্তিগত সংগ্রহ তাই হয়ত খুব বেশি পরিষ্কার নয়। একটি প্রথা কে বোঝানোর চেষ্টা মাত্র ছবির সাহায্যে।)

লেখিকা পরিচিতি

 

সঙ্গীতা প্রামাণিক

তাঁর পরিচয় তাঁর নিজের কথায় :

“হবি বলতে যা বোঝায় তার প্রায় সবগুলোই থাকার ফলে খুব বেশি সমস্যায় পড়তে হয়। বাগান করা, ছবি আঁকা, রান্না করা, আরও অনেক রকম ভাল লাগার পাশাপাশি বেড়ানো আর লেখা পড়াটাও মারাত্মক টানে আমায় তাই চব্বিশ ঘন্টা মনে হয় যেন বড্ড কম।”

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. প্রণাম করাটা খুব অপছন্দের ছিলো, কিন্তু খাবারের লোভটা সত্যিই সামলানো যেতো না। তবে বাবাকে প্রণাম করতে হতো না, শুধু কোলাকুলি। কারণ, আমার বাবা কারুর প্রণাম নেওয়ার ঘোর বিরোধী ছিলেন; যদিও অন্যদের প্রণাম করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!