Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৩১
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৩১

গোপা মিত্র

দার্জিলিং
পর্ব ৩

দার্জিলিং-এর নেহেরু রোড ম্যালে এসে যেখানে মিশেছে ঠিক তার উল্টোদিকে – প্রায় বেল ভিউ হোটেলের বিপরীতে প্রস্তুত, বিশাল মঞ্চে তখন শোভা পাচ্ছে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর প্রতিকৃতি। পিছনে সামান্য অংশ ছাড়া রয়েছে অবজারভেটারী হিলের দিকে যাওয়ার জন্য। মঞ্চের সামনে ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। চেয়ার আনা রয়েছে, কিন্তু তখনও পাতা হয় নি।  মাইক, ইলেকট্রিসিটির কাজও চলছে। আমরা – আমি আর কল্যাণ, বসে আছি পথের ধারে পাতা বেঞ্চিগুলোর একটায়, রোদে পিঠ দিয়ে। চারিদিক খোলা সেই মঞ্চে তখন চলছে স্থানীয় স্কুল ছাত্র ছাত্রীদের নাচ গানের মহড়া। নিচে দাঁড়িয়ে তাদের নির্দেশ দিচ্ছেন সম্ভবতঃ তাদের শিক্ষক ও একজন নামী বাঙালী গায়ক – প্রস্তুতি চলছে পরের দিনের নেতাজী জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানের। পরদিন ২৩শে জানুয়ারী, নেতাজীর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে আমাদের মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্য রাখবেন।

আমার চতুর্থ বা শেষবার দার্জিলিং আসা ২০১৭ সালে একেবারেই ঠান্ডার মধ্যে জানুয়ারী মাসের মধ্যভাগে। এখানে আসার আগে অবশ্য আমি আর কল্যাণ বেড়িয়ে এসেছি ডেলো আর তিনচুলে।     

এবার আমরা দার্জিলিং-এ এসে উঠেছি গোর্খা হিল কাউন্সিলের ট্যুরিষ্ট লজ ম্যালের পাশেই ‘মেপলে’ – পাশেই তার ‘অ্যালিস ভিলা’, শেষবার এসে যেখানে উঠেছিলাম। 

এবার এসে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়লো দার্জিলিং-এর। অবশ্য কালের নিয়মে সেটাই তো স্বাভাবিক। আমাদের লজ থেকে ম্যাল যাবার পথে উপরে ছাঁউনি দেওয়া ভুটিয়াদের এক স্থায়ী বাজার তৈরী হয়েছে। গরম জামাকাপড়, ছোটো ছোটো উপহার দ্রব্য, নকল পাথরের অলঙ্কার – সারাদিনই চলে বিকিকিনি। এখন আর পাহাড় পাঁচিলে সাজিয়ে রাস্তার ধারে বসে এদের বিক্রী করতে হয় না। মহাকাল মন্দিরে ওঠার সিড়িঁর পাশেও বসে গেছে ছোট এক বাজার। ক্যাভেন্টার্স হয়েছে আরো বড়। এর কাছে রাস্তার উপরেই বিক্রী হচ্ছে ছোট বড় কমলালেবু – দেখে কয়েকটা কিনে নিলাম, খেতে খুব মিষ্টি। গ্লেনারিস্‌ও বৃদ্ধি পেয়েছে অনেকটাই। একাধিক তলবিশিষ্ট চেয়ার টেবি্লে সজ্জিত গ্লেনারিসের অন্দরে এখন একসঙ্গে অনেকেই বসে, এদের খাদ্যসম্ভার উপভোগ করতে পারে। তবে শুধুমাত্র বেকারী প্রোডাক্টস্‌ নয়, এরা সঙ্গে শুরু করেছে বার ও রেস্তোরাঁও। সজ্জার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে অবশ্য অনেকটাই। এবার আর প্রতিদিন নয়, একদিনই মাত্র খেয়েছিলাম এখানে। 

ম্যালের অন্যঅংশে, যেদিকে রয়েছে আস্তাবল, সেদিক ঘেঁষে পরপর বসে গেছে নেপালী পুরুষ মহিলাদের অনেকগুলি নেপালী খাদ্যবস্তুর দোকান – বলা যায় ‘Street Food Corner’. পর্যটকদের ভীড় দেখে আমিও একদিন সেখান থেকে কিনে খেলাম গরম গরম চিকেন মোমো। অদ্ভুত এক চাটনী দেওয়া সেই মোমোর স্বাদ, এককথায় বলা যায় অপূর্ব। 

এবারেও একদিন মস্‌ গুল্মে আবৃত সবুজ অবজারভেটারী হিল বেষ্টন করা, বাঁক খাওয়া পথের পাশ দিয়ে উঁচু উঁচু গাছের ছায়াময় পথ ধরে, সবুজ সতেজ অরণ্য আবৃত খাদের ধার ঘেঁষে হিমালয় গিরিশ্রেণী সঙ্গী করে, আমার সেই স্বপ্নের পথ বেয়ে পৌঁছে গেলাম, প্রথমে জুলজিক্যাল গার্ডেন, তারপর মাউণ্টেনিয়ারিং ইনষ্টিটিউট। 

ম্যাল চৌরাস্তা থেকে দু কিলোমিটার হাঁটা পথে পদ্মজা নাইডু হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক, প্রাকৃতিক পরিবেশে অনেকখানি বিস্তৃত অঞ্চল নিয়ে উঠে গেছে পাহাড়ের ধাপে ধাপে। ভিতরে, দিক নির্দেশ করা আছে – পছন্দসই জীব জন্তুর দিকে যাওয়া যেতেই পারে, কিন্তু তাতেও উপর নিচ বা চড়াই উৎরাই করতেই হবে। ওক, বার্চ, অল্ডার, আর অন্যান্য বিভিন্ন প্রজাতির গাছের পাশ দিয়ে রৌদ্রছায়া মাখা পথ ধরে এগিয়ে গিয়ে চিড়িয়াখানা দর্শন অবশ্য ব্যর্থ মনে হয় না – বিরল প্রজাতির কয়েকটি জীবজন্তু দেখার আনন্দে। কালো ভাল্লুকের সাথেই দেখলাম সাদা ভাল্লুক বা পোলার বিয়ার, তুষার চিতা, রেড পান্ডা – এসবই তো আমরা শুধুমাত্র দেখে থাকি Animal Planet-এ।

এর পাশেই, জওহর পর্বতে হিমালয়ান মাঊন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট, স্থাপনা করেছিলেন তেনজিং নোরগে ও জওহরলাল নেহেরু ১৯৫৪ সালে – ভারতীয়দের হিমালয় অভিযানে উৎসাহিত করতে। এর আগের বছরেই ১৯৫৩ সালে তেনজিং নোরগে আর এডমন্ড হিলারি জয় করেছিলেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গ ‘মাউন্ট এভারেষ্ট’ (২৯০৩৫ ফুট)। এখানে পর্বত শিক্ষার নানারকম কোর্স করানো হয় – Adventure, Basic, & Advanced Mountaineering. অন্দরে রয়েছে তেনজিং মেমোরিয়াল বা তেনজিং রক্‌ ও মিউজিয়াম। মিউজিয়ামে দেখা যায় পুরোনো সব দুষ্প্রাপ্য হিমালয় অভিযানের ছবি। শোকেস সজ্জিত পাহাড়ে ওঠার যাবতীয় সাজসরঞ্জামে –  এমনকি কত উচ্চতায় বা উষ্ণতায় কি ধরণের পোশাক পরা হয়, তাও দেখানো আছে। পাহাড়ে ওঠার দড়ি, কুঠার, তাঁবু, জুতো সবই সাজানো রয়েছে এখানে। কাঞ্চনজঙ্ঘার পটভূমিতে এই ইন্সটিটিউট আমার অত্যন্ত প্রিয়, তাই কোনোবারই আমি এখানে আসতে ভুলিনি।

দার্জিলিং-এর প্রাণকেন্দ্র ম্যাল বা চৌরাস্তা। এই অঞ্চলেরও আধুনিকীকরন তথা সৌন্দর্যায়ন হয়েছে, তবে পুরোনোকে সঙ্গে নিয়ে। ম্যালে পৌঁছবার সবচেয়ে সহজ পথ নেহেরু রোড ধরে আসা, যার শুরু গান্ধী রোডে, যেখানে রয়েছে ক্যাভেন্টার্স। জাকির হোসেন রোড, যেখানে রয়েছে ব্যস্ত স্থানীয় বাজার, সেখান থেকেও পৌঁছনো যায় ম্যালে। এখান তথা ম্যাল থেকে উঠে যাওয়া অবজারভেটারী হিল বেষ্টন করা রাস্তাটি রাজভবন বেষ্টন করে আবার ফিরে এসেছে সেই ম্যালেই অর্থাৎ অবজারভেটারী হিলের দুদিক থেকেই পৌঁছনো যায় রাজভবনে। 

ম্যালে নেহেরু রোড আর জাকির হোসেন রোডের মাঝামাঝি জায়গায় রয়েছে নেপালী কবি ভানুভক্ত আচার্যর সোনালী পূর্ণাবয়ব মূর্তি। নেপালী ভাষায় রামায়ণ অনুবাদ করেছিলেন তিনি। তার পিছনেই রেলিং দিয়ে ঘেরা পার্কের মত এক এলাকা – যার চারিদিকে রয়েছে কংক্রীটের গ্যালারি, আর মধ্যভাগে ফাঁকা বাঁধানো এক অঞ্চল। যে কেউ এখানে যে কোনোরকম অনুষ্ঠান করতেই পারে। এখানে কোনো অনুষ্ঠান হলে দর্শক চারিদিক থেকেই দেখতে পাবে। দেখলাম বিশাল এক TV Screen বসানো হয়েছে – জানিনা কদিন পরের নেতাজী জন্মজয়ন্তীর জন্য না কি বরাবরের জন্য! ম্যালের কংক্রীটের পার্কের পিছনে যে অংশটি কুলঙ্গির আকৃতির, রয়েছে অবজারভেটারী হিলের মধ্যভাগে, সেটি অবশ্য রয়েছে সেই আগেরই মত – সুসজ্জিত বাঁধানো, বসার জায়গা সমেত।

ম্যালের চতুর্দিকেই ইতস্ততঃ ছড়ানো বসার ব্যবস্থা। ভালো লাগে শীতের রোদ গায়ে মেখে, এক চাপ চা হাতে নিয়ে দূরের পাহাড় আর নিচের অরণ্যপ্রকৃতির মাঝে অন্যমনস্ক হয়ে দার্জিলিং-এর চলমান জীবনের ছবিতে হারিয়ে যেতে।

ম্যাল থেকে নেহেরু রোড ধরে একটু এগোতেই চোখে পড়লো দার্জিলিং-এর সেই পুরোনো চিরচেনা দোকানগুলো – তিব্বতি Art & Work Center, যেখানে বিক্রী হয় স্থানীয় কারিগরদের তৈরী হস্তশিল্প ও কিউরিও, অক্সফোর্ড বুক অ্যান্ড ষ্টেশনারী – যেটি দার্জিলিং-এর সবচেয়ে বড়ো বইয়ের দোকান, তার পাশেই দুই ভাইএর দোকান, হাবিব মল্লিক অ্যান্ড সন্স, যেখানে পাওয়া যায় দুষ্প্রাপ্য আর্টওয়ার্ক, কিউরিও ও আর্টিফিসিয়াল গহনা।

অক্সফোর্ড বুক-এর পাশেই গোল্ডেন টিপস্‌ টি লাউঞ্জ, যেখানে চা ও নানারকম স্ন্যাক্স পাওয়া যায়। তিব্বতি আর্ট ওয়ার্কের পাশ দিয়ে নেমে গেছে এক সরু রাস্তা, যেখানে রয়েছে একাধিক দোকান।এসবের কাছেই প্রায় ম্যালের উপরেই বেল ভিউ হোটেল, যেখান থেকে সমগ্র ম্যালই চমৎকার ভাবে দৃশ্যমান। 

ম্যালের প্রায় সূচনায় যে রাস্তা এগিয়ে গিয়েছে জুলজিক্যাল গার্ডেনের দিকে সেখানে গড়ে উঠেছে বিশাল ভানু ভবন বা গোর্খা রঙ্গমঞ্চ ভবন – উপরে তার সোনালী ডোম, মাথায় তার কুকরি হাতে নেপালী তরুণ। প্রবেশ তোরণ পার হলেই বিশাল চত্বরে উপবিষ্ট বীণা হস্তে দেবী বীণাপাণি, পিছনে তার একাধিক তলবিশিষ্ট অট্টালিকা। ভানু ভবনের ঊল্টোদিকে এক সরু পথ উঠে গিয়েছে উপরের পাহাড়ে, জিমখানা ক্লাবে।

এসবই তো হল, দার্জিলিং-এর বহিরঙ্গের কিছু পরিবর্তন। কিন্তু দার্জিলিং-এর অন্তরাত্মা? রাজকীয় সেই কাঞ্চনজঙ্ঘা? সেতো আছে সেই আগেরই মত স্থির নিশ্চল, গর্বোদ্ধত, মহামহিম, শুভ্রবরণ। অবজারভেটারী হিল বেষ্টন করে যে পথ গিয়েছে মহাকাল মন্দিরের দিকে, সেই পথ ধরে এগোতেই চোখে পড়লো কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের বেশ কয়েকটি ভিউ পয়েন্ট। অবজারভেটারী হিলের এদিকের পুরো পথটাই তো কাঞ্চনজঙ্ঘাময়। মাঝের একটি ভিউ পয়েন্ট তো একেবারেই কাঞ্চনজঙ্ঘার সঙ্গে লম্বদূরত্বে – একেবারেই চোখের সোজাসুজি। উপরে ছাঁউনি দেওয়া বসার স্থানবিশিষ্ট, এখানে বসে সারাদিনই অনুভব করা যায় তাকে – কাঞ্চনজঙ্ঘাকে। সমগ্র দার্জিলিংই তো দেখা হয়ে যায় এখানে বসলে, অন্য কোথাও যাবার দরকারই বা কি?

দার্জিলিং-এর নিম্ন অঞ্চল, ষ্টেশনের কাছাকাছি বা চক্‌ বাজার হয়েছে আরো বেশী ঘিঞ্জি। ম্যালের আশেপাশে পাহাড়ের ধাপেও তৈরী হয়েছে নতুন নতুন বাড়ী – তার জন্যই মনে হয় দার্জিলিং-এর সৌন্দর্যহানি হয়েছে অনেকটাই। এমনটা না হলেই হয়ত ভালো হত ! 

পরিশেষে একটা কথা – অনেকেই হয়ত দার্জিলিং আসেন খুবই অল্প সময় হাতে নিয়ে, অথচ তারা দেখতে চান দার্জিলিং-এর সমস্ত দ্রষ্টব্য। তাদের জন্য সরকারী ও বেসরকারী গাড়ীতে সাইট সিয়িংএর ব্যবস্থাও আছে। তারা অবশ্যই গাড়ীতে ফাইভ পয়েন্টস্‌ বা সেভেন পয়েন্টস্‌ ট্যুর নিতে পারেন। সেভেন পয়েন্টস্‌ ট্যুরে আড়াই তিন ঘন্টায় দেখানো  হয় হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউট, জুলজিক্যাল গার্ডেন, টিবেটান রিফিউজি সেলফ হেল্প সেন্টার, রঙ্গিত ভ্যালি প্যাসেঞ্জার রোপওয়ে, হ্যাপী ভ্যালী টি এস্টেট, লেবং রেস কোর্স ও তেনজিং গম্বু রক্‌। যদিও এত কম সময়ের মধ্যে চিড়িয়াখানাই শুধু নয়, অনেক কিছুই ভালো করে দেখা যায় না। শেষ চারটে তো রাস্তায় যেতে যেতে গাড়ী থেকেই দেখিয়ে দেওয়া হয়। ফাইভ পয়েন্টস্‌ ট্যুরে, ওই একই সময়ে দেখানো হয়্‌, জাপানী বৌদ্ধ মন্দির ( এর অবস্থান গোর্খা হিল কাউন্সিলের অফিস, লাল কুঠির কাছে ), লালকুঠি, আভা আর্ট গ্যালারী, ধীরধাম মন্দির, ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম। আবহাওয়া ভালো থাকলে শেয়ার জিপ ভোরবেলা রওনা হয়ে টাইগার হিলে সুর্যোদয় দেখিয়ে, ফেরার পথে ঘুম মনাষ্ট্রি, বাতাসিয়া লুপ সঙ্গে ওয়ার মেমোরিয়াল দেখিয়ে নিয়ে আসে। 

দার্জিলিং-এর সব দ্রষ্টব্যর কথাই আমি আগে লিখেছি, সম্ভবতঃ লেখা হয় নি তেনজিং গম্বু রকের কথা। লেবং কার্ট রোড ধরে যাবার সময়ই চোখে পড়ে রাস্তার পাশেই নিচের খাদ থেকে হটাৎই যেন উঠে এসেছে মুখোমুখি দুই ন্যাড়া পাহাড় – রাস্তার সীমা ছাড়িয়ে তারা উঠে গেছে আরো উপরে। এদের একটি প্রথম এভারেষ্ট বিজয়ী তেনজিং, অন্যটি ১৯৬৩ ও ১৯৬৫ সালে প্রথম পরপর দুবার এভারেষ্ট বিজয়ী নাওয়াং গম্বুর নামাঙ্কিত গম্বু রক। নাওয়াং গম্বু ছিলেন তেনজিং নোরগের ভাইপো। শুনেছি মাউন্টেনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীদের পর্বতারোহনের প্রথম অভিজ্ঞতা হয় এই তেনজিং রকে চড়েই। এই রকের বামদিক এতটাই খাড়া যে রীতিমত শিক্ষা ছাড়া এদিকে ওঠা একেবারেই অসম্ভব। তবে এর ডানদিক তত বেশী খাড়া নয় বলে ইদানিং সেদিকে সৌখীন পর্বতারোহীরা গাইডের সাহায্যে পর্বতারোহনের চেষ্টা করেন।

একমাত্র টাইগার হিল ছাড়া দার্জিলিং-এর সব দ্রষ্টব্যই কয়েক কিমির মধ্যে। তাই সময় থাকলে প্রায় সব জায়গাই পায়ে হেঁটে দেখে নেওয়া যায়। কাঞ্চনজঙ্ঘাকে সঙ্গে নিয়ে দার্জিলিং-এর পথে হেঁটে হেঁটে, দার্জিলিংকে যেমন চেনা যায় বা আবিস্কার করে আনন্দ পাওয়া যায়, পাখীর চোখের দেখায় তা কি কখনো সম্ভব? আজকাল অবশ্য অনেকেই টাইগার হিল না গিয়ে ম্যালের ভিউ পয়েন্ট থেকেই সূর্যোদয় দেখে নেয়। সেক্ষেত্রে তারা ভোরে টাইগার হিল যাবার রোমাঞ্চটাই মিস্‌ করে যায়। 

আজ ২৩শে জানুয়ারী, নেতাজি জন্মজয়ন্তী, আমাদের ফিরে যাবার দিন। একটু পরেই শুরু হবে অনুষ্ঠান। লোকজন আসা শুরু হয়ে গেছে। লজের কর্মকর্তার কথায় প্রাতঃরাশ সেরেই আমরা রওনা দিয়েছি নিউ জলপাইগুড়ির পথে কাঞ্চনজঙ্ঘাকে বিদায় জানিয়ে। একটু তাড়াতাড়িই রওনা হয়েছি, রাস্তা জ্যাম হলে দেরী হয়ে যেতে পারে। 

এভারেষ্ট আমি সেভাবে দেখিনি, সান্দাকফু, ফালুট, টুমলিং আমার যাওয়া হয় নি। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘাতেই  আমি মুগ্ধ। আবারও হয়ত আসবো কাঞ্চনজঙ্ঘার পায়ের তলে। তখন নাহয় একবার যেতে চেষ্টা করবো সান্দাকফু। –কিন্তু আসবো তো সেই শীতকালে তখন কি যাওয়া সম্ভব হবে সেখানে? তবুও আমি একবার অন্ততঃ যেতে চাই ভারত নেপাল সীমান্তে, সান্দাকফুতে, দেখতে চাই একই সঙ্গে তুষারাবৃত শৃঙ্গমালা – এভারেষ্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোৎসে, মাকালু, দর্শন পেতে চাই সেই ঘুমন্ত বুদ্ধ (Sleeping Buddha) বা ঘুমন্ত শিব (Sleeping Shiva) এর।

— দার্জিলিং পর্ব সমাপ্ত —

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

    1. অনেক ধন্যবাদ , উৎসাহিত করার জন্য ।

  1. খুব সুন্দর লেখা হয়েছে।আমি ও গিয়েছি ওখানে, তবে তোমার লেখা পড়ে দেখছি অনেক কিছু miss করেছি। যাইহোক তোমার লেখা পড়ে আনন্দ পেলাম।শেষে ছবিটি দারুণ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!