Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ২৫
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ২৫

গোপা মিত্র

শিমলা

— শেষ পর্ব —

শিমলা কি এখনও আছে তেমনই সুন্দরী, রূপসী, আকর্ষণীয়া, পরিচ্ছন্ন, কালিমা বিহীন, যেমন তাকে দেখে গিয়েছিলাম শেষবার এসে ? আবার একবার ফিরে এলাম, খুঁজে দেখতে, সেই শিমলাকে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম দিকে আনু, সুনীতের সঙ্গে। তবে এবার অবশ্য ট্রেনে নয়, সুনীতের গাড়ীতে। 

হরিয়ানা পার হয়ে পাঞ্জাবে প্রবেশ করে আমাদের গাড়ী চন্ডীগড়, কালকা ছাড়িয়ে টয় ট্রেনের লাইন ধরলো।  কখনো সেই লাইনের পাশ দিয়ে কখনো সামান্য দূর দিয়ে আমাদের চলা শুরু হলো  – পিছনে পড়ে রইলো ধরমপুর, বারোগ, সোলান, কাঁধাঘাট, তারাদেবী, সামারহিল এবং এমনই আরো অনেক ছোট ছোট শৈলশহর। এর মধ্যে অনেকগুলি আবার স্বয়ং সম্পূর্ণ, পর্যটক প্রিয়। 

দুপাশের পাহাড়, জঙ্গল, বৃক্ষরাজির দল, নাম না জানা সেতু, ও সবুজ উপত্যকার নয়নাভিরাম দৃশ্যের  মধ্যে দিয়ে আমরা এসে পৌঁছলাম হিমালয় পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত শিমলায়। শিমলা কালিবাড়ীর কালীমূর্তি বা শ্যামলা দেবীর নাম থেকেই এই জায়গার নাম হয়েছে শিমলা। কালীবাড়ীর কালীমুর্তি বা শ্যামলা দেবীকে আনা হয়েছে জয়পুর থেকে। 

এবার আমাদের থাকার ব্যবস্থা করেছে আনু, পাহাড়ের অনেক উপরে। সুনীতের গাড়ী  নিচেই রাখতে হল। কারণ এখানের অনেক রাস্তাতেই গাড়ীর প্রবেশ নিষেধ, বিশেষ করে রিড্‌জ বা ম্যাল রোডে। এরপর এখানেরই এক গাড়ী নিয়ে আমরা আঁকাবাঁকা পাহাড়ী পথে উঠে এলাম উপরে আমাদের আস্তানায়, জাকু হিলসের পিছনে অথচ ঊঁচুতে। চারিপাশে গাছপালায় আবৃত আমাদের আশ্রয়টি সবসময়েই এমন ঠান্ডা থাকে যে সর্বক্ষণই দুঘরে দুটি রুমহীটার জ্বালিয়ে রাখতে হয়। এখানে, নিচে থেকে পথ চিনে উঠে আসা আমাদের মত নবীন পর্যটকদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। তাই আমরা রোজই নিচে নামতাম হেঁটে, কিন্তু উপরে উঠতাম কোন গাড়ীতে। 

দুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ শোবার ঘর, একটি টিভি সহ বসার ঘর, সঙ্গে খাবার ব্যাবস্থা সহ ও একটি কিচেনেট নিয়ে আমাদের এই ইউনিট। রান্নাঘরে ইন্ডাকসন কুকটপ সহ, রান্নার বাসনপত্র সবই মজুত। আমরা রোজ সকালে তৈরী হয়ে ভারী প্রাতঃরাশ সেরে নেমে যেতাম নিচে। তারপর সারাদিন বেড়াবার পর সন্ধ্যামূহুর্ত্তে উঠে আসতাম উপরে। তারপর বসত আমাদের তাসের আড্ডা। আসার পথে পাশের এক হোটেলে রাতের খাবারের অর্ডার দিয়ে আসতাম – তারা সময়মত আমাদের খাবার পৌঁছে দিত।  

শিমলার প্রাণকেন্দ্র রিড্‌জ রোড, এক বিশাল খোলা এলাকা, সুন্দর করে সাজানো, পর্যটকদের ভীড়ে সবসময়ই জমজমাট। শিমলার নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয় এখানে। গ্রীলে ঘেরা, একাধিক বসার স্থান বিশিষ্ট বাঁধানো এই পথ ধরে ঝল্‌মলে রোদে হাঁটার সময় সঙ্গে চলে হিমাণী শিখর বিশিষ্ট গিরিমালা বা তাদেরই ঢালে সবুজে ছাওয়া ওক, পাইন, ফার গাছের সারি আর তারই ফাঁকে ফাঁকে উঁকি মারা লালচে বা সবুজ রঙের ত্রিভুজাকৃতি ঢালু চাল বিশিষ্ট বাড়ীগুলি। বরফ পড়লে যাতে জমে না থেকে গড়িয়ে পড়ে যায়, তাই চালগুলি এমন ঢালু।

রিড্‌জের একপ্রান্তে স্ক্যান্ডেল পয়েন্ট ছাড়ালেই লকড়ি বাজার বা লক্কড় বাজার। এখানের কাঠ বা বাঁশের তৈরী ছোট ছোট উপহার সামগ্রী বা নিত্য প্রয়োজনীয় সাংসারিক দ্রব্যগুলি একেবারেই বিশিষ্ট এবং খুবই সুন্দর। আর একটু এগিয়েই জাকু হিলসের মাথায় রয়েছে হনুমান মন্দির। এবার অবশ্য জাকু হিলসে উঠলাম না – চারিদিকে বড়ই হনুমানের উপদ্রব।  

বরফ পড়লেই রিড্‌জ ঢেকে যায় বরফে। আমরা আসার কয়েকদিন আগেই শিমলায় হয়ে গেছে প্রচন্ড তুষারপাত। তারই কিছু চিহ্ন রয়ে গেছে এখানে ওখানে। রিড্‌জ থেকে গ্রীলের ফাঁক দিয়ে নিচে উঁকি মারতেই দেখতে পেলাম নিচে জমে থাকা ময়লা বরফ। লকড়ি বাজারেও রয়ে গেছে সেই বরফের চিহ্ন – তারই ওপর চট চাপা দিয়ে চলছে বিকিকিনি। এখন অবশ্য আকাশ পরিষ্কার নীল, চারিদিক রোদে ঝল্‌মলে।

রিড্‌জে রয়েছে মহাত্মা গান্ধী ও ইন্দিরা গান্ধীর মূর্ত্তি। মাঝে মাঝেই তাদের আশেপাশে দেখা যায় ছোট ছো্ট ছেলেমেয়েরা ঘোড়সওয়ারী করছে। রয়েছে নিও-গথিক শৈলীতে নির্মিত আংলিসিয়ান ক্রাইস্ট চার্চ – উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীন চার্চ। রিড্‌জ ধরে অন্যপ্রান্তে হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে কালীবাড়ী, বিধান সভা। এছাড়াও চোখে পড়বেই ব্রিটিশ আমলে তৈরী বেশ কিছু বড় বড় বাড়ী ও হোটেল। 

রিড্‌জের এক ধাপ নিচে, রিড্‌জ বরাবর চলেছে ম্যাল রোড। দুপাশে ছোটবড় দোকান দিয়ে সাজানো ম্যাল রোড সবসময়েই জমজমাট, স্থানীয় আর পর্যটকদের বিকিকিনিতে। ম্যাল রোড যেখানে রিড্‌জ রোডে মিলেছে, সেই জায়গাই স্ক্যান্ডাল পয়েন্ট। শিমলা মিউনিসিপ্যাল অফিস, ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন, পুলিশ ষ্টেশন, বা ব্যাঙ্ক সবই রয়েছে এই ম্যাল রোডে। একটা কথা এখানে বলতেই হয়, রিড্‌জ রোডের মতই ম্যাল রোডও একেবারেই পরিচ্ছন্ন ও কালিমাবিহীন। বিজ্ঞাপনে দেখলাম, রাস্তায় ময়লা ফেললেই জরিমানা দিতে হবে, লেখা রয়েছে। এরা এতই সচেতন যে ময়লা সবসময়েই ময়লার জায়গাতেই ফেলে থাকে। 

গতকালই বুকিং করে এসেছিলাম – আজ চলেছি ট্যুরিজমের বাসে নালদেরা, কুফ্‌রী। ঝক্‌ঝকে নীল আকাশ আর পাহাড়ের তরঙ্গ দেখতে দেখতে প্রায় ২৫ কিমি আসতেই ১৯০৫ সালে স্থাপিত নালদেরা গল্‌ফ ক্লাব। পথে পড়লো নিরিবিলি নির্জন মাসাব্রার, ওক, পাইন, সিডার সমৃদ্ধ পান্না সবুজ বনভূমি ও ফলের বাগান। 

বাস যেখানে থামলো, সেখান থেকে, দুদিকের সারিবদ্ধ গাছের মাঝ দিয়ে, জমে থাকা বরফের পাশ দিয়ে খানিক উপরে উঠলে, চোখে পড়লো, পাহাড় আকাশের সীমানার ঢালে ছবি আঁকা সবুজে বিস্তৃত ১৯টা হোল (Hole) বিশিষ্ট নিশ্চুপ সুন্দরী নালদেরা। তারই মাঝে এক জায়গায় তখনও জমে রয়েছে বরফ গলা জলের ছোট্ট এক ডোবা। সেই সবুজের চারিপাশে আকাশ ছুঁয়েছে দীর্ঘ পাইন, ওক, সীডার, বা হিমালয়ান দেওদারের ঘন অরণ্য। পাহাড়, জঙ্গল, আর তারই ঢালে ছোট ছোট বাড়ীগুলির এক চমৎকার প্যানোরামিক ভিউ পাওয়া গেল এখান থেকে।

কিছুক্ষণ সেই দৃশ্যাবলী উপভোগ করে, পাশের কাফেটেরিয়ায় কফি পান করে ফিরে এলাম বাসে। কাছেই রয়েছে এক নাগ মন্দির, সেখানে আর গেলাম না। 

শিমলা থেকে ২০ কিমি দূরত্বে ৮৯২০ ফুট উচ্চতায় কুফরী এক ছোট্ট শৈলশহর – রয়েছে মাত্র কয়েকটি থাকার জায়গা, আর গুটিকয় রেস্তোরাঁ। এর অনেক উঁচুতে রয়েছে হিমালয়ের বন্য প্রাণীদের এক চিড়িয়াখানা। আমরা অবশ্য এসব দেখতে আসি নি। শীতের বরফাবৃত কুফরীর অসাধারণ দুগ্ধধবল সৌন্দর্য দেখতেই এসেছি। শীতকালে এখানের ঢালু জমিতে বসে ‘স্কী’-র আসর। নির্জন আঁকাবাঁকা মায়াময় রোমাঞ্চকর পাহাড়ীপথ পার হয়ে বাস যেখানে থামল, মুগ্ধ বিস্ময়ে দেখলাম, সেখানে তখন বরফের পুরু আস্তরণ। দুপুরের রোদে ঝল্‌সানো সেই বরফের রাজ্যের ঝলমলে রূপে যেন চোখে ধাঁধা লেগে যায়। সেই বরফের ওপর দিয়ে আমরা হাঁটলাম, পড়লাম, মাখলাম, আবার বরফ ছুঁড়ে খেললামও। কিন্তু কতক্ষণই বা ? সময় তো থেমে থাকে না – তাই পিছনের অতুলনীয়, চোখ ঝল্‌সানো সৌন্দর্য পিছনেই ফেলে রেখে আমরা আবার দুপাশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সঙ্গী করেই ফিরে চললাম শিমলার পথে। তারপর নিচের বাসরাস্তা থেকে লিফ্‌টে করে উঠে গেলাম ম্যাল রোডে – আজ এখানেই, কোন হোটেলে দুপুরের আহার।

পরদিন আমরা নিজেরাই চলেছি গাড়ী ভাড়া করে বেড়াতে। শিমলা রেলষ্টেশন থেকে ২কিমি দূরে পাহাড়ের ঢালে এক সবুজ উপত্যকায় আনানডেল – পুরোপুরি সেনা এলাকা (Army Area). এখানে রয়েছে এক সংগ্রহালয় (Army Heritage Museum) রিড্‌জের একপ্রান্তে যেমন জাকু হিলস উঠে গেছে উপরে, তেমনই অপর প্রান্তে দেওদার বৃক্ষবেষ্টিত সবুজ গালিচা মোড়া আনানডেল নেমে গেছে নিচে, সবুজ উপত্যকায়। আগে এখানে ছিল রেস কোর্স, এখন সেখানে আনানডেল। এখানে শ্রী বীরভদ্র সিং আর্মি হেরিটেজ মিউজিয়ামে যত্নসহকারে সংরক্ষিত রয়েছে বিভিন্ন সময়ের, ভারতীয় সেনাবাহিনীর নানা বীরগাথা – সেনাবাহিনীর সংগৃহীত জয়লাভের নানা স্মারক ও নথিগুলি (Documents) প্রবেশ পথেই রয়েছে কামান।  ‘Line of Control Fence’ বা LOC কেমন হয় তা ভিতরে প্রদর্শিত মডেল থেকে আমরা বুঝতে পারলাম।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে যুদ্ধে ভারতের জয়লাভের নথি, সেসময়ের পাকিস্তানের লেটারবক্স, ১৯৪৫-এ আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে রাজপুত রেজিমেন্টের কাছে জাপানীদের আত্মসমর্পণের নথি। এছাড়াও ১৮৫৭ সালের ৭ই এপ্রিল মঙ্গল পান্ডের ফাঁসির আদেশনামা। এমনই সব বিখ্যাত ঘটনাবলীর নথি দিয়ে সাজানো এই মিউজিয়াম। রয়েছে এক অস্ত্রকক্ষ বা (Infantry Hall).   

এর অন্দরসজ্জাও চমৎকার। শুধুমাত্র অস্ত্রশস্ত্র বা যুদ্ধকালীন নানাপ্রকার নথিপত্র দিয়েই নয়, রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গোলাপ দিয়ে সজ্জিত চমৎকার এক সংরক্ষিত উদ্যান, এক গ্লাস হাউস, যার মধ্যেও রয়েছে একাধিক রংবেরংএর প্রস্ফুটিত ফুলের সমারোহ। পিছন দিকে সবুজ ময়দান সংলগ্ন এক হেলিপ্যাড পর্যন্ত আনানডেলের বিস্তৃতি। সবকিছু  চমৎকারভাবে  সুসজ্জিতই শুধু নয় সংরক্ষিতও বটে (Well Maintained).

কিছুক্ষণ সেখানে কাটিয়ে আমরা এবার চললাম ‘Indian Institute of Advanced Study’। ম্যাল থেকে ৪ কিমি দূরে অবজারভেটারী হিলসে লর্ড ডাফরিনের প্রাসাদে গড়ে ওঠা এই ইনষ্টিটিউট আগে ছিল ভাইসরিগাল লজ, এখন রাষ্ট্রপতি নিবাস। মোটা মোটা থাম, বড় বড় দরজা জানলা সমৃদ্ধ স্কটিশ ক্যাসেলের আদলে তৈরী বিশাল এই ঐতিহাসিক অট্টালিকা গড়ে উঠেছে নীলচে ছাই রংএর পাথর (Masonry) দিয়ে। অন্দর সজ্জিত বার্মা থেকে আনা Teak Wood-এর কাজে, সঙ্গে রয়েছে স্থানীয় সিডার ও ওয়ালনাট কাঠ। রয়েছে একাধিক প্রাচীন দুর্মূল্য বস্তু ও ইংরেজ আমলের দুষ্প্রাপ্য সব ছবি। কিন্তু সব ঘরে প্রবেশ করা যায় না, কারণ এখনো সেখানে চলে পঠনপাঠন। সংলগ্ন বিশাল এক উদ্যানে তখন ফুলের মেলা।

একটু এগিয়ে ৭২০০ ফুট উচ্চতায় হিমালয়ের পটভূমিতে অবস্থিত তারা দেবী মন্দির। শিমলা থেকে এর দূরত্ব ১১ কিমি। পাহাড়ী শৈলীতে নির্মিত এই মন্দিরে রয়েছে এক অষ্টধাতুর মূর্তি। মন্দিরের এক দিকে অরণ্য আর অন্যদিকে পথ চলে গিয়েছে শিমলায়। দশেরা আর দুর্গা অষ্টমীতে এখানে মেলা বসে। 

এবার আমরা আরো একবার চললাম ব্যান্‌টনি পাহাড়ের উপরে, বিখ্যাত শিমলা বা শ্যামলা কালীবাড়ীতে। ১৮৪৫ সালে এক বাঙালী ব্রাহ্মণ রামচরণ ব্রহ্মচারী এই মন্দির স্থাপনা করেছিলেন জাকু হিলসে। পরে ইংরেজরা এই মন্দির সরিয়ে নিয়ে যায় ব্যান্‌টনি হিলসে। মন্দিরে দেবী নীলবর্ণা। 

অনেকটা উঁচুতে হওয়ার জন্য এর ছাদ থেকে চারিপাশের প্রকৃতির সঙ্গে শিমলা শহরও চমৎকার ভাবে দৃশ্যমান। একটাই সমস্যা – বাঁদরের বড়ই উপদ্রব। অবশ্য এবারেই প্রথম দেখলাম বাঁদর তাড়াবার জন্য রয়েছে এক গার্ড, হাতে তার বন্দুক। সে বন্দুক দেখিয়ে বাঁদর তাড়াচ্ছে দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে। বেশ কিছুক্ষণ ছাদের রোদ উপভোগ করে, এখানেই দুপুরের আহার সেরে রওনা দিলাম রিড্‌জের উদ্দেশ্যে। 

এবারের শিমলা ভ্রমণ প্রায় সমাপ্তির পথে। ফেরার সময় নিচে থেকে কিনে নিলাম ডিম, কলা, রুটি, পেষ্ট্রী। পরদিন এসব দিয়েই প্রাতঃরাশ সেরে, মন কেমন করা মন নিয়ে, সুনীতের গাড়ীতে ফিরে চললাম শিমলাকে বিদায় জানিয়ে দিল্লীর পথে। সেখান থেকে ফিরে যাব কলকাতায়। 

এসেছিলাম মনে সংশয় নিয়ে, শিমলা কি আছে এখনো তেমনই সুন্দরী, রূপসী, আকর্ষণীয়া, কালিমাবিহীন –  যেমন তাকে দেখে গিয়েছিলাম শেষবার এসে? আজ বলতে দ্বিধা নেই, অনন্তযৌবনা শিমলা যেন হয়ে উঠেছে আরো বেশি সুন্দরী, রূপসী। নতুন রূপে সেজে উঠেছে আনানডেল ও Institute of Advanced Study . রিড্‌জ হয়েছে আরো সুন্দর, মসৃণ, চক্‌চকে। দুরের বরফাচ্ছাদিত পর্বতশ্রেণী, বা পাদদেশের বৃক্ষরাজি আগের মতই বাধাবন্ধহীন ভাবে দৃশ্যমান। দুদিন আগেই প্রবল তুষারপাতে ঢেকে যাওয়া পথ এর মধ্যেই প্রায় বরফমুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় এবং পর্যটকদের যাতায়াতের জন্য। ম্যালরোডের দোকানদাররাও আগেরই মত আন্তরিক আর লক্কর বাজারে এখনো বিক্রী হচ্ছে এদের উদ্ভাবনী, বিশিষ্ট সব দ্রব্যসম্ভার। আর সবচেয়ে বড় কথা, পর্যটকদের অসুবিধার কথা ভেবে নিচে গাড়ীর রাস্তা থেকেই উঠে গেছে লিফ্‌ট অনেক উঁচুতে ম্যাল রোড পর্যন্ত।

— শিমলা পর্ব সমাপ্ত —

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. খুব সুন্দর বর্ণনা। লেখিকাকে অভিনন্দন।

  2. দারুণ। 2011 এ গেছিলাম। অনেক কিছু মনে পড়লো। আরো লেখা পড়ার আশায় রইলাম।

    1. তোর গিয়ে দেখার সঙ্গে আমার লেখা যদি মিলে যায় , তবেই আমার লেখা সার্থক বলে মনে করবো ।

  3. As usual beautiful detailed description s.ছবিগুলো দারুণ উঠেছে।খুব ভালো লেখা।চালিয়ে যাও গোপা।

    1. তোমাদের জন্যই এখনও লিখতে পারছি, মনে হয় ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!