Home প্রবন্ধ, সাহিত্য ও সংস্কৃতি আমার ভালো লাগা রহস্য রোমাঞ্চকাহিনী
প্রবন্ধসাহিত্য ও সংস্কৃতি

আমার ভালো লাগা রহস্য রোমাঞ্চকাহিনী

পর্ব – ৩

বাংলা সাহিত্যে এখনও যে ক’জন মহিলা গোয়েন্দা আছেন, তাদের মধ্যে মনোজ সেনের দময়ন্তী দত্তগুপ্ত এবং তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের গার্গী চৌধুরী বেশ জনপ্রিয়। দময়ন্তী একজন কলেজ শিক্ষিকা হলেও রহস্য সমাধানে আগ্রহ রাখেন। তিনি বন্দুক পিস্তল চালান না। তাড়া করে অপরাধীকেও ধরেন না। শুধু অপরাধমূলক ঘটনার তথ্য বিশ্লেষণ করে অপরাধীকে চিহ্নিত করেন। তারপর যাদের কর্তব্য অপরাধী ধরা তাদের হাতে তাকে তুলে দেন। ‘পর্বতো বহ্ণিমান’ রহস্য উপন্যাসে দময়ন্তী পাহাড়ে বেড়াতে গিয়ে এক মৃত্যু রহস্যের সমাধানে যে কঠিন অথচ করুণ বাস্তব সত্যের সম্মুখীন হন তা পাঠক সাধারণকে নাড়িয়ে দেয়। তার ‘বিষ’ কাহিনীতে বাঘ সাপ কুমীর ঘেরা জল জঙ্গলে এক খুনের সমাধানে উঠে আসে জাতিভেদ প্রথা। নকল বাঘের ডাক, আসল অপরাধী এক পোচারকে আসল বাঘের হাতে ধরিয়ে দেয়। ‘শেষে দিলে রা’ এক গুপ্তধন উদ্ধারের গল্প, যে গল্পে স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্যের কারণ এক পদ্মরাগমণি খুঁজে দিয়ে দময়ন্তী তাদের বিবাদ মিটিয়ে দেয়।  

তপন বন্দোপাধ্যায়ের গার্গী গণিতে স্নাতক। নিতান্ত ঘটনাচক্রে এক নামী প্রসাধনী কোম্পানীর কর্ণধার সায়ন চৌধুরীকে বিয়ে করে সে, তারই কোম্পানীর ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্বপূর্ণ পদ সামলালেও নিজের কৌতূহলী স্বভাব, ক্ষুরধার বুদ্ধি ও অসাধারণ বিশ্লেষণী শক্তির দ্বারা একের পর এক জটিল রহস্যের সমাধান করে থাকেন। গার্গী তার কন্যা লুনা, স্বামী সায়ন ও সহচরী সোনালিচাঁপার সঙ্গে এক প্যাকেজ ট্যুরে মুন্নার বেড়াতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ে এক অদ্ভুত রহস্যে। দলেরই এক মহিলার এক মূল্যবান শাড়ী চুরি যায়। সেই চুরির পিছনে যে কতবড় ষড়যন্ত্র ছিল তা ফাঁস করে গার্গী সেই শাড়ী উদ্ধার করে দেয় ‘মুন্নারে মসলিন রহস্য’ গল্পে। ‘ন্যুড পোট্রেট রহস্য’ এক শিল্পীর খুনের কাহিনী। স্বেচ্ছায় মডেল এক মহিলার চিত্র অঙ্কনের খেসারত দিতে হয় সেই শিল্পীকে। ‘নিষিদ্ধ নগরীতে গার্গী’ রহস্যপোন্যাসে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে গার্গীদের বেইজিং যাওয়া। তারপর সেখানে রহস্যের ঘনঘটা- খুনজখম, ব্ল্যাকমেলিং,কম্পিউটার হ্যাকিং এবং অবশেষে গার্গীর বুদ্ধিতে রহস্যের সমাধান।  

সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘দীপ কাকু’ মানে দীপঙ্কর বাগচী একজন পেশাদার গোয়েন্দা। অন্যান্য গোয়েন্দাদের মত তিনি তেমন স্মার্ট যেমন নন, তেমন ফিটও নন। তবে মগজ তার খুবই শার্প। কলকাতা ও তার আশপাশেই তিনি রহস্য অনুসন্ধান করে থাকেন। এ ব্যাপারে তাঁর সহকারিনী ঝিনুক, তাঁর বন্ধুর মেয়ে। তার কয়েকটি কাহিনী ‘ময়ূর বাড়ীর রহস্য’, ‘অদৃশ্য নজরদার’, ‘মুদ্রা রহস্য’। 

কোনো এক শারদীয়া পত্রিকায় প্রকাশিত ‘মোখা মুখি’, রহস্য কাহিনীটি যখন আমার হাতে এসে পড়ল আমি চমকে গেলাম – এমন লেখাও হতে পারে! উত্তরবঙ্গের গ্রাম গঞ্জের পটভূমিতে বিস্তারিত গম্ভীরা মুখোশ নাচের ওপর আধারিত এ এক প্রতিশোধের কাহিনী – যার সূচনা আর সমাপ্তির মধ্যে রয়েছে বেশ কিছুটা সময়ের পার্থক্য। লেখিকার নাম দেখলাম, দেবারতি মুখোপাধ্যায়। আমার পড়া তার সেই প্রথম উপন্যাসই আমাকে তাঁর সম্বন্ধে আগ্রহী করে তোলে। আমি তার রুদ্র-প্রিয়ম সিরিজের থ্রিলার গুলি জোগাড় করে পড়া শুরু করি। রুদ্র, পুরো নাম রুদ্রানী, পেশায় ব্যাঙ্ককর্মী হলেও রহস্য সমাধানে তার আগ্রহ তাকে দেশ বিদেশে যেমন নিয়ে যায়, তেমন তাকে বিপদেও ফেলে। তার স্বামী প্রিয়ম, একজন কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ হলেও সাধ্যমত তাকে সাহায্য করে। এই সিরিজের বৈশিষ্ট্য এতে অতীত বর্তমান মিলে মিশে একই সঙ্গে এগিয়ে চলে। তার অনবদ্য থ্রিলারগুলি ‘অঘোরে ঘুমিয়ে শিব’, ‘ঈশ্বর যখন বন্দি’, ‘নরক সংকেত’ –প্রতিটিই রোমাঞ্চকর এবং পাঠককে ভাবতে বাধ্য করে। 

সায়ন্তনী পুততুন্ডর থ্রিলারের নায়ক একজন পুলিশ অফিসার অধিরাজ ও তার সঙ্গী অর্ণব। অধিরাজের কাহিনীতে ফরেনসিক পরীক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বারেবারে তিনি তাই ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টের অভিজ্ঞ অধিকর্তা ডক্টর চ্যাটার্জীর কাছে ছুটে আসেন আর তার মতামত জানতে চান। পরে তার সূত্র ধরেই সমাধান করেন রহস্যের। তবে সায়ন্তনী পুততুন্ডর সাইকোলোজিক্যাল থ্রিলারগুলোতে মাঝেমধ্যেই এসে পড়ে বড় বেশী ভায়োলেন্স, রক্তারক্তি। তার কাহিনীগুলির মধ্যে রয়েছে ‘সর্বনাশিনী’, ‘ডেয়ার অর ডাই’, ‘ক্ষ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফেরে’।   

হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তর সুদীপ্ত ও হেরম্যান – দুই অসম বয়সী বন্ধুর অ্যাডভেঞ্চার কাহিনীগুলোও আমার খুব প্রিয়। বাঙালী যুবক সুদীপ্ত আর জার্মান ক্রিপ্টোজ্যুলজিস্ট হেরম্যান সারা পৃথিবী জুড়ে খুঁজে বেড়ান প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীদের, যাদের কথা লোককথা উপকথায় ছড়িয়ে আছে। বারে বারে তারা বিপদে পড়েন, তবুও, এমন কোনও প্রাণীর সন্ধান পেলে আবারও ছুটে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই বিপদের মধ্যেই। তাদের সেই দুঃসাহসিক অভিযানের কাহিনী লেখকের কলমে জীবন্ত হয়ে ওঠে। ‘সুন্দাদ্বীপের সোনার ড্রাগন’, তাদের প্রথম প্রকাশিত অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস। ইন্দোনেশিয়ায় কোমোডো ড্রাগন খুঁজতে গিয়ে তারা সম্মুখীন হন এক হিংস্র উপজাতির। তারপর তাদের হাত থেকে বেঁচে ফেরা, এই কাহিনীর বিষয়বস্তু। সত্যিই কি আছে সিংহ মানুষ? ‘শেবা মন্দিরের সিংহ মানুষ’ – সুদানের এক পরিত্যক্ত নগরীতে তাদের খুঁজতে গিয়ে যে সত্যের সন্ধান তারা পান, তা আজ হারিয়ে গেছে বালির তলায়। কখনো লাল আরশুলা, বা কখনো ম্যামথ বা বিশালাকৃতি প্রাগৈতিহাসিক হাতীর দেখাও তারা পেয়েছিলেন, তবে তাদের সভ্য জগতে নিয়ে এসে প্রমাণ দেওয়া ছিল তাদের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। শুধু অ্যাডভেঞ্চার কাহিনী নয় তিনি এর সঙ্গেই লিখেছেন রহস্য কাহিনীও। তার হাড়হিম করা এক রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনী ‘জীবন্ত উপবীত’ কুসংস্কার অন্ধবিশ্বাস ও তন্ত্র মন্ত্রের এক বীভৎস কাহিনী যেখানে এক পাঁচ মাসের ভ্রুণও রক্ষা পায় না।  

ক্রীড়া সাংবাদিক রূপক সাহার কল্প চরিত্র কালকেতু নন্দীও পেশায় ক্রীড়া সাংবাদিক, কিন্তু নেশায় গোয়েন্দা। তার কাহিনীতে বার বার এসেছে ক্রীড়া জগতের নানা অপরাধ। বিখ্যাত ক্রিকেটার পঙ্কজ রায়ের বিশ্বরেকর্ড করা ব্যাট হারিয়ে যেতে তার সন্ধান করতেই কালকেতুর প্রথম আবির্ভাব। তারপর কখনো ক্রিকেটের বেটিং চক্র, কখনো নামী ক্রিকেটারের হীরের আংটি খুঁজে দিতে মাঠে নামেন তিনি। তার একটি কাহিনীতে রয়েছে  অদ্ভুত এক তীরন্দাজী প্রতিযোগিতা। তার ‘জিহাদী’ রহস্যপোন্যাস বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত ও নিরুদ্দিষ্ট এক বালিকাকে খুঁজে পাওয়ার কাহিনী। অনেক বছর পরে কালকেতু যখন তার খোঁজার দায়িত্ব পায় বালিকাটি তখন প্রৌঢ। ছোট্ট বয়সের মাত্র একটি ঝাপসা ছবি সম্বল করে কালকেতু আমেরিকা যায়। তারপর নানা ঘটনা দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে তার সন্ধান পেয়ে তাকে ফিরিয়ে দেয় তার ভাইয়ের কাছে বাংলাদেশে। 

বর্তমানে বাংলা রহস্য সাহিত্য আর একমুখী নয় বরং বলা চলে দ্বিমুখী – লেখকের লেখনীতে অতীত, বর্তমান একই সঙ্গে এগিয়ে চলে। এই কাহিনীগুলোতে রহস্যের সূচনা অতীতে হলেও সমাধান হয় বর্তমানে। এমন অনেক কাহিনী আমি পড়লেও সবই যে সমান আকর্ষক এমন বলা চলে না। সবসময় না হলেও, কখনো কখনো লেখক কোনো একটি কালকে বেশী গুরুত্ব দিয়ে ফেলেন, আবার কখনো কাহিনী সূত্র অনুধাবন করতে পাঠককে পাতা উলটে পিছিয়ে যেতে হয়। এমনই একটি রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনী এক নবীন লেখিকা বৈশালী দাশগুপ্ত নন্দীর ‘জেগে আছে শয়তান’, যেখানে ক্রমান্বয়ে সবই এসেছে – খ্রীষ্টপূর্ব দশম শতকে সূচনা হলেও, কাহিনী খ্রীষ্টপূর্ব পঞ্চম শতক হয়ে এসে পৌঁছেছে বর্তমানে একবিংশ শতকে। কাহিনীর আদিপর্বের আধার বন্দী শয়তানরা  কোনক্রমে ভারতবর্ষে এসে পড়লে তাদের বন্দী করে রাখা হয় রাজগীরের এক গুহায়। কলসবন্দী সেইসব শয়তানদের সন্ধান ও মুক্ত করার প্রচেষ্টাই এই কাহিনীর উপজীব্য। প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুর চুরি, ভারতে ঘটে যাওয়া একটি  খুন, সংগে আমেরিকায় ঘটে চলা একাধিক অকাল্ট মার্ডার, শয়তানের দলের জেগে ওঠা, সিক্রেট সার্ভিস, অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই, রুদ্ধশ্বাস রহস্য রোমাঞ্চ আতঙ্ক এই কাহিনীকে চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে। অনেক আগেই অবশ্য বিদেশী সাহিত্যে এমন কাহিনী এসে গেছে।      

এবার আসি বর্তমানে আমার সবচেয়ে প্রিয় লেখক সাহিত্যিক প্রীতম বসুর কথায়। প্রবাসী বাঙালী প্রীতম বসু তার রচনায় দেশ কালের গন্ডী অতিক্রম করে কখনো গিয়েছেন অতীতে আবার কখনো ফিরেছেন বর্তমানে। তার কাহিনী সুতোর একদিকে অতীত তো অন্যদিকে বর্তমান, আর তার মাঝ দিয়ে প্রবহমান নদীর ধারার মত সাবলীল গতিতে বয়ে চলেছে তার রোমহর্ষক থ্রিলার। প্রাচীন বাংলা সাহিত্যের হারিয়ে যাওয়া রত্নগুলি – কখনো মঙ্গল কাব্য, কখনো চর্যাপদ আবার কখনো পদাবলী কীর্তন, তুলে ধরেছেন তিনি তার কাহিনীর প্রেক্ষাপটে। ‘পাঁচমুড়োর পঞ্চাননমঙ্গল’ কাহিনীর দুই চরিত্রের একজন পাঁচমুড়ো গ্রামের সঙ্গতি হীন জমিদার সদানন্দ ভট্টাচার্য আর অন্যজন হরু ঠাকুর – একজন প্রাচীন পুঁথি পড়ায় পারদর্শী, একজন পুঁথি নকলে। তবে এদের দুজনের কেউই নয়, কালাচাঁদ নামে এক পুঁথিচোরই এই কাহিনীর প্রকৃত নায়ক। চন্ডীদাসের এক নকল পুঁথি বিক্রী করতে গিয়ে ধরা পড়ে কালাচাঁদ। আর তখনই গ্রামের পুকুর থেকে পাওয়া যায় কিছু পাথর, যাতে কিসব যেন খোদাই করা আছে – মঙ্গল কাব্যের সঙ্গে গণিতের মেলবন্ধন। এমনটা কি হতে পারে? সেই সূত্র ধরেই তো পঞ্চাননমঙ্গল-এর রহস্য সমাধান আর প্রাচীন পঞ্চানন মন্দিরের উদ্ধার।

উনবিংশ শতকের শেষ দশকে নেপালের এক প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এক হতদরিদ্র ভাগ্য বিড়ম্বিত পরিবার লুকিয়ে ভারতে চলে আসার পর চুক্তিবদ্ধ শ্রমিকরূপে পাড়ি দেয় সুদূর গায়ানায়। তাদের সঙ্গেই কি সাগরপাড়ি দিয়েছিলে ‘কপিলাবস্তুর কলস’ – যার মধ্যে থাকার কথা স্বয়ং বুদ্ধদেবের দেহাস্থির? আমেরিকায় এক চক্রান্তের শিকার হয়ে পালিয়ে বেড়ায় রিধিমা, সেই চক্রান্তের মূলে কি সেই কলসের কিংবদন্তী? কম্পিউটার নেটওয়ার্ক হ্যাকিং বিশারদ সুনয়ন সীটাপেটি কি তাকে উদ্ধার করতে পারবে? প্রীতম বসুর এই কাহিনী যেন এক রুদ্ধশ্বাস হলিউডি সিনেমা। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যুক্তি যেন বুদ্ধির সঙ্গে মেলেনি। 

বাংলার পদাবলী কীর্তনের প্রেক্ষাপটে প্রীতম বসুর লেখা ‘প্রাণনাথ হৈও তুমি’ শুধু রোমাঞ্চকরই নয়, সেই বিশেষ যুগেও আমাদের পৌঁছে দেয়। প্রবীণ ঐতিহাসিক ‘নাইট্রোজেনের’ মুখে সনাতন কীর্তনের উল্লেখ শুনে চমকে ওঠে বর্তমান কাহিনীর নায়ক পদাবলী বসু। তার ঠাকুমার নোটবইতে লেখা সনাতন কীর্তন ও গায়ক প্রাণনাথ কীর্তনীয়ার মধ্যে কোন সম্পর্ক আছে কিনা জানতে সে রওনা হয় করতালতলী গ্রামে। সেখানে পৌঁছে সে জানতে পারে প্রাণনাথ কীর্তনীয়া রুদ্ধদ্বার নীলমাধবের মন্দির থেকে রহস্যজনক ভাবে অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন। তাকে ধরার জন্য বাইরে তখনও দাঁড়িয়েছিল প্রতীক্ষারত ব্রিটিশ পুলিশ। পরে ব্রিটিশ পদলেহনকারী অত্যাচারী জমিদারও উধাও হয়েছিল এই মন্দির থেকে। কি হয়েছিল তাদের? সব প্রশ্নেরই উত্তর পাওয়া যাবে এই কাহিনীর শেষে।  

প্রীতম বসুর ‘চৌথুপীর চর্যাপদ’ আমার পড়া তার সেরা কাহিনী। খ্রীষ্টীয় দ্বাদশ-ত্রয়োদশ শতাব্দীর সন্ধিক্ষণে সামান্য একজন জেলে-মাঝির মেয়ে অশিক্ষিত গন্ধকালীর বিদুষী সঞ্জীবনী, আগুনপাখী হয়ে ওঠার রুদ্ধশ্বাস গতিময় উপাখ্যান ‘চৌথুপীর চর্যাপদ’। সেসময় মধ্যপ্রাচ্য থেকে আগত দুর্দ্ধর্ষ তুর্কী হানাদাররা দিল্লী জয়ের পর ক্রমশঃ পূর্বদিকে অগ্রসর হওয়ার পথে অতর্কিতে আক্রমণ করে বিহার এবং  বাংলার মন্দির ও বৌদ্ধ মঠগুলিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছিল। এই সঙ্কট মুহূর্তে ভিক্ষুণী সঞ্জীবনী কিভাবে বরেন্দ্রভূমির (বর্তমান উত্তরবঙ্গ) এক মঠের মূল্যবান পুঁথিগুলো রক্ষা করেছিল, তাই ধরা রয়েছে এই কাহিনীতে। তাকে সাহায্য করেছিল, তখন সেখানে উপস্থিত থাকা এক তিব্বতীয়  রাজপুত্র খু-স্তোন। অতীতের গন্ধকালী কি তবে হারিয়ে যাবে, কালের স্রোতে? না কি, বর্তমানের যোজনগন্ধা কিছুতেই তা হতে দেবে না? যোজনগন্ধা যে নিজের জীবন পণ করেছে গন্ধকালীর আত্মজীবনী সমৃদ্ধ অমূল্য পুঁথি বিদেশীদের হাত থেকে রক্ষা করবার। এই প্রতিজ্ঞাই তাকে ছুটিয়ে নিয়ে চলে নানা বাধা বিঘ্নের মধ্যে দিয়ে। তার পাশে থেকে তাকে সর্বতোভাবে সাহায্য করে এক পুলিশ কর্মচারী হাফি হাবিলদার, যে নিজের ধর্ম পালটে মুসলিম হয়েছে। নিজেদের জীবন বিপন্ন করে অনেক বাধা বিঘ্ন পার হয়ে অবশেষে সেই পুঁথি তারা উপযুক্ত হাতে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছে। কি আশ্চর্য দক্ষতায় লেখক এই দুই কাহিনীকে একসঙ্গে মিলিয়েছেন তা না পড়ে দেখলে বিশ্বাস করা শক্ত।

বর্তমানে আরো কয়েকজন লেখক, লেখিকা রহস্য রোমাঞ্চ সাহিত্য রচনায় বেশ নাম করেছেন, তাদের মধ্যে রয়েছে সৈকত চট্টোপাধ্যায়, অভিজ্ঞান সরকার, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য, অমৃতা কোনার প্রমুখ। এরাই হয়ত ভবিষ্যতের বাংলা রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনীর দিক নির্দেশ করবে! 

তবে এদের কথা এখনই নয়। অপেক্ষা করতে হবে আরো বেশ কিছু বছর।

~ সমাপ্ত ~

 

গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। এক সময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

    1. তোমার লেখাটা An eye opener for me.আমি বর্তমানের এইলেখক লেখিকা দের সম্পর্কে কিছুই জানতাম না।আশা করছি এনাদের বই আমি তাড়াতাড়ি হাতে পাব।খুব ভালো লাগল তোমার লেখা।

  1. অনেক ধন্যবাদ । যদি রহস্য রোমাঞ্চ ভালো লাগে ‌, তবে অবশ্যই এদের লেখা ভালো লাগবে ।এবং রহস্য সাহিত্যের বিবর্তন টাও বুঝতে পারবে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!