Du~কলম সংগৃহীত
আমাদের প্রিয় শহর কলকাতা। হয়তো ভারতের অন্য শহরগুলোর মতো কলকাতা বাণিজ্যিক দিক থেকে খুব এগিয়ে পড়েনি। কিন্তু সাহিত্য-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান, পড়াশোনা এইসব দিকে কলকাতা এখনো – উচ্চ যেথা শির! তার সাথে আছে কলকাতার সেই ভাঁড়ের চা, ডিটেক্টিভ বা ভুতের আড্ডা এবং বিখ্যাত নস্টালজিয়া। একসময় এই কলকাতাই ছিল ব্রিটিশ সরকারের ক্যাপিটাল।
বাঙ্গালীদের কাছে কিন্তু এই শহর এখনো খুব একটা বদলায়নি। এখনো কলকাতা একটা অদ্ভুত রহস্য। এমনকি বাঙালিরা অনেক কিছুই এই শহরের অনেক তথ্যই হয়তো জানে না বা হয়তো ভুলে গেছে। অদ্ভুত কিছু তথ্য নিয়েই কলকাতা কে আজকে আবার নতুন করে চেনা যাক
১. দুনিয়ার বৃহত্তম বৃক্ষ

কলকাতাতেই আছে সবচেয়ে দুনিয়ার বড় গাছ। বোটানিক্যাল গার্ডেনে সেই গাছ প্রতিষ্ঠিত ও তাঁর নাম দা গ্রেট বেনিয়ান ট্রি। এই বটবৃক্ষ আড়াইশো বছর পুরনো। এখন ভাবলেই কেমন মনে হয় যে এই বটবৃক্ষ কত কি দেখে গেছে আমাদের কলকাতার – তার পতন ও উত্থান। দুর্ভাগ্যবশত আম্ফানের জন্য একটা অংশ ভেঙে পড়েছে এই গ্রেট বেনিয়ান ট্রি-এর। তবুও এখনো জীবন্ত সে – এখনো ইতিহাসের রক্ষক।
২. একসময়ে লন্ডনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর
ব্রিটিশ এর অধীনে থাকা সত্বেও কলকাতা একেবারে অদৃশ্য হয়ে যায়নি। এমনকি ব্রিটিশ সময় থেকেই কলকাতাকে লন্ডন এর পরেই দেখা হতো। কলকাতায় ছিল অজস্র স্সংস্কৃতি, বাণিজ্যিক সুবিধা আর বিভিন্ন জাতের লোকেদের আদান-প্রদান। তাই জন্য এখানেই তৈরি করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়, ন্যাশনাল লাইব্রেরী আর মেডিকেল কলেজ।
৩. ভারতের প্রাচীনতম চিড়িয়াখানা

ভারতের সবথেকে প্রাচীনতম চিড়িয়াখানা কলকাতাতেই। আমাদের খুব প্রিয় জায়গা আলিপুর জু। প্রায় প্রত্যেক বাঙালি এই আলিপুর জু তে একবার না একবার যায় শীতের সকালে। তবুও খুব অল্প বাঙালিরা জানে যে এই চিড়িয়াখানা ভারতের সবথেকে পুরনো। এটি হাজার ১৮৭৫ সাল থেকে আছে মানুষদের বিভিন্নভাবে পশুদের ব্যাপারে আলোকপাত করছে।
৪. দুনিয়ার প্রাচীনতম পোলো ক্লাব
ভারতে পোলোর খুব একটা নাম নেই। তবুও ব্রিটিশ অধীনে দুনিয়ার প্রথম পোলো ক্লাব কলকাতাতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৮৫৮ সালে। শুধু ইউরোপিয়ানরা এইখানে এসে পোলো খেলত না। পোলো খেলা জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল বাংলার নবাবদের কাছেও।
৫. দুনিয়ার দ্বিতীয় পুরাতন ফুটবল ও ক্রিকেট ক্লাব
এটা বলা বাহুল্য যে কলকাতায় কলকাতার ধর্ম যাই হোক না কেন, ক্রিকেট ও ফুটবলের কথা উঠলে সবাই তাকেই ধর্ম বলে মনে করে। সেটা বোধহয় কিছুটা ইতিহাসের সাথে জড়িত। কলকাতাতেই গড়ে ওঠে দ্বিতীয় পুরাতন ফুটবল ক্লাব ও ক্রিকেট ক্লাব। ক্যালকাটা ক্রিকেট অ্যান্ড ফুটবল ক্লাব ১৮৯৮ সাল থেকে এই দেশে ক্রিকেট ও ফুটবল এর আয়োজনের কাজে আছে। এখানে বলা উচিত দুনিয়ায় তৃতীয়তম বড় ক্রিকেট গ্রাউন্ড আমাদের সবার ইডেন গার্ডেনস।
৬. ভারতের সবচেয়ে বড় সেকেন্ড হ্যান্ড বুক মার্কেট

কলকাতার কথা উঠলে বইপাড়া কথা না ওঠাটা অসম্ভব। কলেজ স্ট্রিট বা বইপাড়া আমাদের আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের মার্কেট আর দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় সেকেন্ড হ্যান্ড বইয়ের মার্কেট হিসেবে দ্বিতীয় স্তানে আসে। বলা বাহুল্য, কলকাতাতেই ন্যাশনাল লাইব্রেরী আছে – আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় আর প্রাচীনতম পাবলিক লাইব্রেরী। বইপোকাদের সব আশাই কলকাতা পূর্ণ করেছে বলা যায়।
৭. এশিয়ার বৃহত্তম তারামণ্ডল
বিজ্ঞানের প্রতি ভালোবাসা কলকাতা ও বাঙ্গালীদের মনে হয়ে সব সময়ই ছিল। আমাদের নোবেল জয়ী বাঙ্গালীদের দেখলেই তার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আমাদের বিজ্ঞানের প্রতি এই আকর্ষণের জন্যে এটা খুব অবিশ্বাস্য নয় যে এশিয়ার সবচেয়ে বড় তারামণ্ডল আমাদের কলকাতাতেই – বিরলা প্লানেটরিয়াম। দুনিয়াতেও দ্বিতীয় বৃহত্তম তারামণ্ডল। 1963 সালে জাওয়াহারলাল নেহ্রু এটির উদ্বোধন করে।
৮. একমাত্র শহর যেখানে এখনও ট্রাম চলে
এশিয়ার সবথেকে পুরাতন ইলেকট্রিক ট্রাম কলকাতাতেই এখুনো চলছে। 1902 সাল থেকে এই বাহন কলকাতার যাত্রীদের এখান থেকে ওখানে পৌঁছে দিয়েছে। যদিও দুনিয়ার বহু শহর থেকে ট্রাম অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে, কলকাতায় এটি শুধু রূপান্তরিত হয়ে নতুন হয়ে উঠছে। এখন এসি ট্রামও পাওয়া যায় যাতে গরমে কলকাতা যাত্রীরা শান্তশিষ্ট ভাবে যাতায়াত করতে পারে। এমনকি শুধু তাই নয়, কোলকাতাই দুনিয়ার একমাত্র শহর যেখানে হাতে টানা রিক্সা পাওয়া যায়।
৯. ভারতের সবচেয়ে পুরনো বন্দর

বাণিজ্যিক দিক থেকে আমরা যতই উন্নত হতে থাকছি ততই আমাদের দেশের বিভিন্ন বন্দরগুলি আরো সুন্দর ও মজবুত হয়ে উঠছে। স্বাধীনতা থেকেই আমাদের বন্দরগুলি পরিণত হতে থেকেছে। কিন্তু এই সব পরিবর্তনের মধ্যে আমরা ভুলে যাই যে হুগলিতে খিদিরপুর বন্দর ভারতের মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীনতম।
১০. জুয়েল অফ দা ইস্ট

বিখ্যাত সাহিত্যিক রুডিয়ার্ড কিপলিং তার ছোট গল্প ‘সিটি অফ দ্রেদফুল নাইট’-এ আমাদের গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল কে ‘জুয়েল অফ দা ইস্ট’ বলে বিখ্যাত করে তুলেছিলেন। এই হোটেল 1841 সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং অনেক বছর ধরেই লেখক-লেখিকা, নেতা-নেত্রী, বইগ্যানিক, খেলোয়াড় এবং দুনিয়ার নানা গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সেবা ও আশ্রয় দিয়েছেন। এটাও বলা বাহুল্য যে এই গ্রেট ইস্টার্ন হোটেল এশিয়ার প্রথম হোটেল যা পাবলিকদের জন্য খোলা হয়েছিল।
বলেছিলাম না – কলকাতা অদ্ভুত শহর আর এখনও অনেক রহস্যই এই শহরের সাথে জড়িয়ে আছে। এই কিছু তথ্য শুনে আপনার কি রকম লাগলো?
যদি ভালো লাগে তাহলে আপনার বন্ধুদের সাথে এই আর্টিকেল শেয়ার করুন আর কলকাতার এই কিছু অজানা তথ্য তাদেরও জানিয়ে দিন।
আপনাদের কাছেও যদি কিছু অদ্ভুত তথ্য তাকে কলকাতা নিয়ে তাহলে আমাদের সাথে সেটা শেয়ার করুন।
Feature Image Credit: By DasAritra – Own work, CC BY-SA 4.0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=50100735