সঞ্চারী গোস্বামী মজুমদার
বাজার পর্ব -১
শহরের কিছু নিজস্ব বিশেষত্ব থাকে। আমার প্রিয় শহর কলকাতা তার ব্যাতিক্রম কিছু নয়। এখানে যেমন দেখার জন্য বিভিন্ন রকম জায়গা আছে তেমনই বিভিন্ন ধরনের মানুষ নিজেদের জাতিভেদ ভুলে এখানে একসাথে হয়ে বাস করে। এটা বললে ভুল হবে না যে কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী হওয়ার সাথে সাথে, ভারতের পূর্বদিকের এমন একটি রাজ্য যা বাণিজ্যের জন্য যথেষ্ট ভাবে বিখ্যাত। কলকাতায় সব ধরনের জিনিস পাওয়া যায় এবং বিভিন্ন প্রান্তে কলকাতার অনেক বড় বাজার আছে যেখান থেকে মানুষ অনেক সস্তায় নিজের মনের মতন জিনিস কিনতে পারে। আর এটা আমিও আমার অভিজ্ঞতা দিয়ে জানি যে এই বাজারগুলিতে কত ভালো মানের জিনিস পাওয়া যায় যা শুধু বাঙ্গালীদের নয় বরং সব ধরনের মানুষেরই চাহিদা মেটাতে সক্ষম। আমি নিজেও এই জায়গাগুলিতে বিভিন্ন সময়ে গিয়েছি এবং এটা আমার বিশ্বাস যে কলকাতা শহরের এই বাজারগুলো ছাড়া, কলকাতাকে ঠিকভাবে জানাটা হয়তো সম্পন্ন হবে না।
যদিও এটা সত্যি যে কলকাতায় বাজারের অভাব কখনোই নেই। ছোট-বড় মিলিয়ে অনেক ধরনের বাজার আছে তবুও কিছু উল্লেখযোগ্য বাজার আছে যা অনেক বাজারের থেকেই অনেক ভালো আলাদা। তাই আমি বেশি বুঝি এমনই কয়েকটা বাজারের নাম আজ উল্লেখ করব যা কলকাতা এবং তার আশপাশের সমস্ত ছোট বড় বাজারের থেকে একটু আলাদা।
১. যদুবাবুর বাজার
ভবানীপুরের আশুতোষ মুখার্জী রোডে অবস্থিত এই বাজার গড়িয়াহাট বাজার এর আগে তৈরি হয়। আর পাঁচটা বাজার এর মতন এই বাজারেও নানান ধরনের শাকসবজি, মাছ, ফুল পাওয়া যায়। তবে এ বাজারে বিশেষত্ব হলো ফল। দেশ-বিদেশ থেকে এখানে নানা ধরনের ফল আসে হয়তো অন্যান্য বাজারে পাওয়া একটু কষ্টকর কিন্তু যদুবাবুর বাজার আমরা প্রায় সব ধরনের ফলই পাওয়া যায়। আমি নিজেও এখান থেকে ঘুরে ঘুরে নিজের পছন্দমতো নানা রকমের ফল কিনেছি বেশ কয়েকবার।
২. নিউ মার্কেট
কলকাতা সবথেকে পুরনো এবং সব থেকে নামি বড়বাজার হল নিউ মার্কেট। বর্তমানে এই বাজার এসপ্ল্যানেড চত্বরে অবস্থিত যা সেন্ট্রাল অর্থাৎ কলকাতার একদম মাঝে এই জায়গাটি পরে। ব্রিটিশ আমল থেকেই এই জায়গা অতিরিক্ত ভাবে জনপ্রিয় ছিল। তৎকালীন চেয়ারম্যান স্যার স্টুয়ার্ড হকের নামে এই বাজারটি নামকরণ করা হয়েছিল হক মার্কেট বলে।পরবর্তীকালে এই জায়গার নাম পরিবর্তন করে নিউ মার্কেট। তখন থেকে আজ অব্দি এই জায়গা সব জিনিসের জন্য জনপ্রিয়। এটা বলা হয়েছে যে কোন মানুষের কেনাকাটা হয়তো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে যদি সে একবার নিউমার্কেট না ঘুরে আসে। আমি নিজেও এই জায়গা থেকে বহুবার কেনাকাটা করেছি এবং দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ধরনের মানুষকে এখান থেকে কেনাকাটা করে আনন্দ পেতেও দেখেছি।
৩. কোলে মার্কেট
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার হল কোলে মার্কেট। ফারমার্স মার্কেটও বলা হয়। এটি কলকাতার বউবাজার চত্বরে বিপিন বিহারী গাঙ্গুলী স্ট্রিটের, লেবুতলা অঞ্চল অবস্থিত। এখানে চাষীরা এসে সমস্ত ক্রেতাদেরকে নিজেদের জিনিস সরাসরি ব্যাচে এবং সব ধরনের জিনিস এখানে বেচাকেনা করা হয়।এটি একটি অন্যতম বড়বাজার হিসেবে পরিচিত সব জিনিসই টাটকা এবং সস্তা পাওয়া যায়।
৪. শিয়ালদা মার্কেট
শিয়ালদা মার্কেট হল সবথেকে বড় বাজার। এখানে বিভিন্ন বিভিন্ন জায়গা ভাগ করা আছে যেখানে আলাদা আলাদা জিনিস বিক্রি করা হয়। এই বাজার প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা এবং রাস্তার দুধারে অবস্থিত এটি এম জি রোড থেকে ছবিঘর সিনেমা হল অব্দি লম্বা।এই বাজারের ভিতরে আরো অনেক ভাগ করা বাজার আছে যেখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের জিনিস অনেক সস্তায় পায়। সেই বাজার গুলির নাম হল শিয়ালদা ডিমের বাজার,বৈঠকখানা মার্কেট যাকে আবার ছাগল কাটা ফিস মার্কেট হিসেবেও জানা যায়। এই বাজারগুলোতে একদিকে যেমন আমরা ভালো শাকসবজি ফলমূল পাব তেমনই মাছ মাংস ডিম তাও পাব। তাছাড়া এখানে পাওয়া যায় জামাকাপড়, খাতা বই, জুতো ইত্যাদি নানা ধরনের জিনিসপত্র।বলা চলে এই মার্কেটে কোন জিনিসের কোন অভাব নেই এবং সবকটা জিনিসই বেশ সস্তায় ভালো কোয়ালিটিতে পাওয়া যায়।
৫. গড়িয়াহাট বাজার
আরেকটি অন্যতম বড় বাজার হল গড়িয়াহাট বাজার। এই বাজার অবস্থিত গড়িয়াহাট চত্বরে আশপাশে গড়িয়াহাট বাজার বিভিন্ন বিভিন্ন জিনিসের জন্য আলাদা করে বিখ্যাত। বালিগঞ্জ স্টেশনের ঠিক পাশে গড়িয়াহাট মাছের বাজার যা সাউথ কলকাতার একটি জনপ্রিয় বাজার যেখানে সব ধরনের টাটকা মাছ পাওয়া যায়। তাছাড়াও গড়িয়াহাটে শাড়ি,জামাকাপড়,জাঙ্ক জুয়েলারি,ঘর সাজানোর জিনিস, এবং বিভিন্ন ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসের সম্ভার রয়েছে। এখানে কলকাতার অন্যতম মিষ্টির দোকান বাঞ্ছারামের মিষ্টির দোকান আছে। দক্ষিণ কলকাতার লোকের কাছে এই জায়গা বাজার করার জন্য অতিরিক্ত ভাবে প্রিয় এবং যারা বাইরে থেকে ঘুরতে আসে তারা এখান থেকেই কেনাকাটা করে থাকে।
৬. মেছুয়া ফলের বাজার
জোড়াসাঁকোতে অবস্থিত এই বাজার। যেখানে শুধু সব ধরনের ফল পাওয়া যায়। এখানেও বিভিন্ন জায়গা থেকে চাষিরা আসে এবং নানা ধরনের ফল বিক্রি করে। এখানে আমরা খুব সস্তায় ভালো কোয়ালিটির ফল খুব সহজেই পাই।
৭. ল্যান্সডাউন মার্কেট
আরেকটি খুব জনপ্রিয় বাজার যা শরৎ বোস রোডে অবস্থিত তার নাম হলো ল্যান্সডাউন মার্কেট। এই বাজারে আমরা সব ধরনের জিনিসপত্র পাই যা আমরা অন্যান্য বাজারেও পেয়ে থাকি। কিন্তু এই জায়গার লোকেশন বা অবস্থান হল বেলতলা রিজিয়নের মোটরভিকেল ডিপার্টমেন্টের খুব কাছে। যার ফলে এখানে আমরা বিভিন্ন ধরনের গাড়ি রিপিয়ারিং এর সরঞ্জাম এবং সব ধরনের গাড়ির পার্টস পাই যা হয়তো অন্যকোন বাজারে এত সহজে পাওয়া যায় না।
৮.হাওড়া মার্কেট
এই বাজার হাওড়া স্টেশনে কাছাকাছি অবস্থিত এবং এটিও অন্যতম একটি বড় বাজার তাই এর আরেক নাম হল “বড় বাজার”। এখানে পাওয়া যায় না এমন কোন জিনিস নেই।বিভিন্ন দোকানে বিক্রেতারা এই বাজার থেকে জিনিস খুব সস্তায় কিনে আনে এবং ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। দেশ-বিদেশের নানা রকম জিনিস এখানে পাওয়া যায় যার মধ্যে থেকে যে য়ারা নিজেদের পছন্দমতো জিনিস সংগ্রহ করে নিয়ে যায় হয় নিজের ব্যবহারের জন্য, বা অন্য কোন বিক্রেতার কাছে বিক্রি করার জন্য।
হাওড়ার অন্যতম বড় মার্কেট হল ”মল্লিক ঘাট ফুল মার্কেট”। ভারতের মধ্যে অন্যতম বড় ফুলের বাজার এটি।
এছাড়াও আমাদের কলকাতায় অনেক ছোট বড় বাজার আছে যা বিভিন্ন জিনিসের জন্য বিখ্যাত। যেমন কলেজ স্ট্রিটের বুকমার্কেট যা নতুন এবং পুরনো বই বেচাকেনা করার সবথেকে বড় জায়গা। ঠিক সেরকমই আরো অনেক এমন বাজার আছে যেখান থেকে আমরা জিনিস কিনে সন্তুষ্ট হয়ে থাকি। আমি আজ শুধু এখানে সবথেকে জনপ্রিয় এবং বড় বাজার গুলির নামই উল্লেখ করেছি যা বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করার জন্য বিখ্যাত কলকাতায় ।
Feature Image Credit: By Ranktip at English Wikipedia – No machine-readable source provided. Own work assumed (based on copyright claims)., CC0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=58370313
Sanchari Goswami Majumdar
Loves to teach and practice dance. Likes to read books.