সুদেষ্ণা মিত্র
কবি কালিদাস, অতীশ দীপঙ্কর, পৃথ্বীরাজ চৌহান, আলাউদ্দিন খিলজী অথবা কলিঙ্গ, পাটলীপুত্র, দ্যাক্ষিনাত্যের রাজাদের ইতিহাসের পাতা থেকে তুলে এনে উপন্যাসের পাতায় স্থান দেওয়া যায়, তাহলে যে অভিনবত্বর সৃষ্টি হবে বাংলা উপন্যসের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে আলোড়নকারী। সাহিত্যসম্রাট বঙ্কিমচন্দ্রের পর এই ধারার উপন্যাসের ক্ষেত্রে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় নিঃসন্দেহে উল্লেখ্য।
ইতিহাস সম্পর্কে শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের অত্যন্ত আগ্রহ ছিল। ভারতের ইতিহাসের পুঙ্খানুপুঙ্খ জ্ঞান অর্জন করা ছিল তাঁর অন্যতম নেশা। ইতিহাসপিপাসু মন আর জ্ঞান এই দুইয়ের মিলিত ফসল, ইতিহাসকে উপন্যাসের আকারে পাতায় সাজিয়ে ফেলা। প্রাগৌতিহাসিক যুগ থেকে যার শুরু তারপর প্রাচীন যুগ হয়ে সপ্তদশ শতাব্দী অব্দি তার ঐতিহাসিক উপন্যাসের প্রেক্ষাপট।
প্রমথনাথ বিশীর কথা অনুযায়ী, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় ঐতিহাসিক কল্পনা ও অতীত ইতিহাসের ঘটনার মধ্যে তাঁর লেখার প্রতিভার জোরে প্রাণসঞ্চার করেছিলেন এবং এটাই ছিল ওনার অন্যতম গুণ।
সুকুমার সেন এই প্রসঙ্গে বলেন যে, দুরের দৃশ্যপটকে কাছাকাছি নিয়ে এসে দূরের মানুষকে কাছের মানুষ করে তুলতে সক্ষম হয়েছেন শরদিন্দুবাবু। এখানেই তিনি ঐতিহাসিক গল্পলেখক রূপে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী।
আমরা পাঠক পাঠিকারা ঐতিহাসিক গল্প বা উপন্যাস বলতে বুঝি অতীতের সমাজব্যবস্থা, প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পদ এবং ইতিহাস ভিত্তিক চরিত্রের কাল্পনিক গদ্যরূপ। সেক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ দিকটি হলো ঘটনার স্থান কাল পাত্রের আলাদা নাম বা পরিচয় হলেও পাঠক পাঠিকা ইতিহসের চরিত্রগুলির সঙ্গে তাদের সাদৃশ্য খুঁজে পাবে। ঔপন্যসিক শরদিন্দুর কৃতিত্ব সেখানেই।
পাঠিকা হিসেবে আমার ওনার ঐতিহাসিক গল্পের পাশাপাশি ওনার ঐতিহাসিক উপন্যাসের মধ্যে তুমি সন্ধ্যার মেঘ, তুঙ্গভদ্রার তীরে, কুমারসম্ভবের কবি বিশেষ ভাবে আলোচ্য বলে মনে হয়।
তুমি সন্ধ্যার মেঘ
অতীশ দীপঙ্কর এবং তৎকালীন নালন্দা, রাজগীর এবং দাক্ষিনাত্যের পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর ওপর ভিত্তি করে রচিত এই উপন্যাসটি। রাজা বিগ্রহপা্ল ও রাজকুমারী যৌবনাশ্রীর প্রেম কাহিনী পৃথ্বীরাজ চৌহান ও সুংযুক্তার ঐতিহাসিক ঘটনাবলীকে ভিত্তি করে রচিত। পিতা লক্ষীকর্ণ যৌবনাশ্রীর বিয়ের জন্যে স্বয়ম্বর সভার আয়োজন করলেন এবং তাতে সমস্ত রাজাদের আহ্ববান জানালেও রাজা বিগ্রহপাল আমন্ত্রিত হলেন না। বিগ্রহপাল রাজকন্যাকে হরণ করে আনতে চাইলেন ঠিক যেমন পৃথ্বীরাজ সংযুক্তা কে হরণ করেছিলেন।
এখানেই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের আধুনিক মানসিকতার পরিচয় পাওয়া যায় যখন রাজকুমারী বিগ্রহপালকে বলে, সে যেন সবার মাঝখান থেকে এসে স্বয়ম্বর সভায় উপস্থিত হয় এবং যৌবনাশ্রী তখন সেখানেই তাকে স্বামীরূপে বরণ করবে।
অতীশ দীপঙ্কর এক ঐতিহাসিক চরিত্র হওয়া স্বত্বেও তিনি আধুনিক চিন্তাধারার ব্যক্তিত্ব হিসেবেই পরিচিত হয়েছেন। ইতিহাসের পাতার ধ্যানগম্ভীর ভাবমূর্তির অতীশ দীপঙ্কর লেখকের কলমের গুণে আধুনিকমনস্ক এক ব্যাক্তি হিসবে উপস্থিত হয়ে, বিগ্রহপাল ও রাজকুমারী যৌবনাশ্রীর বিবাহে রাজা লক্ষীকর্ণকে রাজী করানো এবং শেষকালে ওদের বিবাহ সম্পন্ন করে উপন্যাসটিকে মিলানাত্মক করে তোলা অত্যন্ত ভিন্নধর্মী ঔপন্যাসিকের পরিচয়।
কুমারসম্ভবের কবি
মহাকবি কালিদাসকে নিয়ে রচিত হলেও ইতিহাসে যেহেতু কালিদাস সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানা যায় না, তাই লেখক এখানে কল্পনার আশ্রয় নিয়েছেন। রাজপ্রাসাদের এবং রাজপথের রাজকীয় বিবরণের পাশাপাশি কালিদাস ও রাজকুমারী হৈমশ্রীর প্রেম, বিবাহ এবং বিচ্ছেদ ও মিলনের যে গাথা রচনা করেছিলেন তা ইতিহাসভিত্তিক হলেও বেশিরভাগই কাল্পনিক এবং তা সচেতনভাবেই করা। কুমারসম্ভবের কবির রোমান্সে্র ধরণ আলাদা অন্যান্য উপ্যানাসের তুলনায়।
তুঙ্গভদ্রার তীরে
পঞ্চদশ শতাব্দীর ইতিহাসকে নিয়ে রচিত এই উপ্যনাসটি। কলিঙ্গ রাজকন্যা বিদ্যুন্মালা বিজয়নগরের রাজা দেবরায়ের সঙ্গে বিবাহসুত্রে আবদ্ধ হওয়ার জন্যে যাত্রা করেন জলপথে। পথের মধ্যে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নেয় যখন রাজকুমারী অর্জুনকে সাঁতার কাটতে দেখে। সেই প্রেম ও মিলনের গল্প হলো এই উপন্যাসের মূল ঘটনা। তুঙ্গভদ্রার তীরে আমার কাছে একটি সর্বাঙ্গীন ঐতিহাসিক উপ্যন্যাস। সাধারণতঃ ইতিহাসশ্রয়ী বিষয়ে যে ধরনের অ্যাডভেঞ্চার থাকে এই উপন্যাসটি তার থেকে আলাদা নয়। নৌকাযাত্রা, পথের বর্ণনা, শত্রুর আগমন, লোকাচার ও তার পাশাপাশি উদ্দাম প্রেমের যে ছবি পাওয়া যায় সেগুলিই এই রচনাটিকে এক ঐতিহাসিক উপন্যাসের মযার্দা দেয়।
কালের মন্দিরা ও গৌড়মল্লার
এই দুই রচনা শুধুমাত্র ইতিহাসের দুই অধ্যায়ের অনুপ্রেরনায় লেখা এর বেশী আর কিছু ইতিহাস জড়িত তথ্য এই লেখাটিতে পাওয়া যায় না। কালের মন্দিরা পঞ্চম শতাব্দীতে হূণ আক্রমণ ও স্কন্দগুপ্তের রাজত্বকালের ওপর লিখিত হলেও অজস্র সাধারণ মানুষ, তাদের জীবনযাত্রা, সেই যুগের পরিবেশ ও পরিস্থিতির যে রূপ আমরা দেখতে পাই তাতে এই রচনাটি এক ঐতিহাসিক রূপকথার আ্যখ্যা পায়।
গৌড়মল্লারে তৎকালীন বেতস ও কর্ণসুবর্ণের কথা থাকলেও বেতসের কথা ইতিহাসে পাওয়া যায় না।শশাঙ্কের পুত্র মানবের রাজ্বত্বকাল ও তাকে ঘিরে রোমান্সের যে চিত্র আমরা পাই, তাতে এই উপন্যাসটি নিঃসন্দেহে রোমান্টিক তকমা্ পেতে পারে। ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর কাল্পনিক রূপ এবং রোমান্সের যথাযথ বিশ্লেষণ আর এই দুইয়ের মেলবন্ধন উপন্যাসটিকে জনপ্রিয় করে তুলেছে।
পাঠকের দৃষ্টিভঙ্গি
শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসগুলি পড়তে গিয়ে যে দিকগুলি আমাকে আর্কষন করে আজ ও তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রতিটি বিষয়বস্তুর বিস্তারিত বিবরন। সে রাজপ্রাসাদ হোক বা গ্রাম্য জীবন। আর একটি দিক হলো নারীর রূপের বিবরণ। একটা সময়ে ছিল যখন যে কোনো জনপ্রিয় উপন্যাসের মূল উদ্দেশ্য ছিল নারীর রূপের বিশেষ বর্ণনা। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চটুল বা অতিরিক্ত মনে হোত। লেখক শরদিন্দু এখানেই আলাদা ছিলেন। তিনি শুধু রূপের বর্ণনাই দেননি অপুর্ব ভাষার প্রয়োগ এবং সেই যুগের উপযুক্ত সাজপোষাকের বিবরণ মনকে মুগ্ধ করে রাখে। তার ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে রচিত গল্প বা উপন্যাসগুলি তাই কাল্পনিক হলেও মনকে সেই সুদূর অতীতে নিয়ে যায়। এখানেই শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঐতিহাসিক কাহিনিকার হিসেবে সার্থকতা। নিজের লেখা সম্পর্কে ওনার নিজেরই উক্তি আমার সব থেকে উপযুক্ত মনে হয়। তুঙ্গভদ্রার তীরে উপন্যাসে তিনি লিখেছিলেন “Fictional History” নয় “Historical Fiction” – যা সব অর্থে সত্যি।
ভালো লাগল পড়তে, অনেককিছু জানলাম.. এমন আরও পড়তে চাই
ধন্যবাদ। ইচ্ছে রইলো আরো এ ধরনের লেখার।
Sharodindu Bandopadhyay er lekhar anyotamo akarshan chhilo bistarito bibaran seta gramer jibon e hok ba pariparshik bisaybostu hok. Tui ekebare thik bolechhis je uni nari samporke je sab jaygagulo bishlesan korechhen ta anyanya lekhak der theke ekebare alada. Nari samporke kato manogrshi ullekh thake tar lekhate.
Tor samporke amar shradhha din ke din bere cholechhe. Tui nijeke katota enrich korechhis seta dekhe pore khub valo lage.
Sundar tor upadthapana, kritityer abosyoi dabi rakhe.
Aro lekh, valo lagbe.
Dhonyobad bolbo na pronam roilo.
Shorodindu bondoypadhayer moto writer er opor likhte giye barbar mone hoyeche kichui lekha hoini. Aro onek lekha jay..Amar simito khomotay ektui somvob holo.
Bah,khubbhalo likhechish. Amio oner nana dharoner golpor gunomugdho pathika. Kintu etihash bhittic golpo gulo aro beshi akorshon kore.
Thank you.
Amar nijer sobcheye pochonder ei lekha. Tai prothom lekha onar oitihasik uponyaser opor i korlam
পড়ে ভালো লাগল।💐💐💐
Dhonyobad.
ছোট্ট পরিসরে উপন্যাসগুলির বর্ণনা সহ এমন লেখা –খুবই মনোগ্রাহী ।
Thank you.
Valo legeche sune valo laglo
লেখিকা কি মনে করে পৃথ্বিরাজ চৌহান বা আলাউদ্দিন খিলজি বা কলিঙ্গ রাজকে শরদিন্দুর উপন্যাসের চরিত্র হিসাবে বর্ণনা করলেন তাজানিনা তবে শরদিন্দুর কোনো উপন্যাসেই কিন্ত এঁদেরকে কোনো চরিত্র হিসাবে দেখা যায় না। তুমি সন্ধ্যার মেঘ উপন্যাসে মগধের যুবরাজ তৃতীয় বিগ্রহপালের সাথে চেদীরাজ গাঙ্গেয়দেবের (গল্পের লক্ষ্মিকর্ণদেব) কন্যা যৌবনশ্রীর বিবাহ হয়। এটি একটি ঐতিহাসিক সত্য। সেখানে যে স্বয়ংবর সভার বর্ণনা আছে তার সাথে পৃথ্বিরাজ সংযুক্তার স্বয়ংবর সভার মিল আছে। উপন্যাসের মুখবন্ধে লেখক তার উল্লেখ করেছেন। এই প্রসঙ্গেই শরদিন্দু পৃথ্বিরাজের করেছেন মুখবন্ধে, এবাদে এই চরিত্র কোনো উপন্যাসে বা গল্পে স্থান পায়নি। আলাউদ্দিনের উল্লেখ আছে শঙ্খকঙ্কণ গল্পে কোনো উপন্যাসে। সে ভাবেই কলিঙ্গ রাজের শুধুমাত্র উল্লেখ আছে তুঙ্গভদ্রার তীরে নামক উপন্যাসে। কিন্তু তিনি সেই উপন্যাসের কোনো চরিত্র নন এমনকি আজকের দিনে সিনেমার ভাষায় কোনো ক্যামিও রোল ও তার ছিল না।
উপন্যাসে শুধু উল্লেখ আছে যে কলিঙ্গরাজ বিজয়নগরের রাজা দ্বিতীয় দেবরায়ের সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে সন্ধির শর্ত হিসাবে কন্যা কলিঙ্গরাজকন্যা বিদ্যুন্মালাকে বিবাহের জন্য বিজয়নগর প্রেরণ করেন। বস্তুত তুঙ্গভদ্রার তীরে উপন্যাসটির শুরু এখান থেকেই। এর বাইরে কোনো কলিঙ্গরাজের উল্লেখ কোনো ঐতিহাসিক উপন্যাস বা গল্পে পাওয়া যায় না। আর দাক্ষিণাত্যে রাজাদের উল্লেখ বলতে শুধুমাত্র বিজয়নগরের দ্বিতীয় দেবরায়ের উল্লেখ আছে ওই একই উপন্যাসে এবং বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে হুক্ক বুক্কর উল্লেখ আছে। লেখিকার প্রবন্ধ রচনার পূর্বে একটু তথ্যনিষ্ঠ হওয়া প্রয়োজন ছিল।
নমষ্কার।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা।
আপনার প্রতিটি মতামত অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। মতামত মানুষকে সঠিক তথ্য জানতে এবং নিজের জানার পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে।
ঐতিহাসিক চরিত্র ও তথ্যগুলির উল্লেখ করবার সময় ভাষার ব্যবহার যদি অন্য হতো তাহলে আমার মনে হয় প্রবন্ধটির সঠিক উপস্থাপন হতো। ভুলগুলি ধরিয়ে দেওয়ার জন্যে ধন্যবাদ।
আপনার মতামত পড়ে আমার মনে হয়েছে আপনি সাহিত্যপ্রেমী। তাই আপনার কাছ থেকে সাহিত্য সংক্রান্ত লেখা পাওয়ার আশা রাখছি। আমরা ও আমাদের পাঠক পাঠিকারা সমৃদ্ধ হব।
এই Du~কলম টীম তাঁর পাঠকদের সাহায্য ও ভালোলাগার দিকে যেমন তাকিয়ে থাকি তেমন ই কোনো ভুল তথ্য পরিবেশিত হলে তাকে সঙ্গে সঙ্গে স্বীকার করে নিতেও দ্বিধা করিনা। তাই ভবিষ্যতের জন্যে অনুরোধ রইলো লেখক বা লেখিকার যোগ্য সম্মান বজায় রেখে আপনার মূল্যবান পেলে আন্তরিক ভাবে কৃতার্থ হই।
আপনার থেকে লেখা আর মতামত পাওয়ার আশায় থাকলাম আমরা টীম Du~কলম।
নমস্কার। আপনি ধনাবাদার্হ যে আপনি আমার মতন অতি সাধারণ ব্যক্তির লেখা পড়ে আপনি মতামত দিয়েছেন। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে। আমি ইতিহাসের এক সাধারণ ছাত্র, শরদিন্দু আমার ভগবান। উনার মতন কেন আমার সাহিত্য রচনার কোনো যোগ্যতা আছে বলে মনে করি না। তবে যদি কখনো দু লাইন লিখি অবশ্যই আপনাকে জানাবো। নববর্ষের শুভেচ্ছা সহ
শৈবাল কুমার বোস
নমস্কার। আপনি ধনাবাদার্হ যে আপনি আমার মতন অতি সাধারণ ব্যক্তির লেখা পড়ে আপনি মতামত দিয়েছেন। আবারো ধন্যবাদ আপনাকে। আমি ইতিহাসের এক সাধারণ ছাত্র, শরদিন্দু আমার ভগবান। উনার মতন কেন আমার সাহিত্য রচনার কোনো যোগ্যতা আছে বলে মনে করি না। তবে যদি কখনো দু লাইন লিখি অবশ্যই আপনাকে জানাবো। নববর্ষের শুভেচ্ছা সহ
শৈবাল কুমার বোস
নমষ্কার।
সবার আগে বলি আমরা টিম দু কলম পাঠকদের জন্যে এবং পাঠকদের নিয়ে তৈরি একটি ব্লগ ম্যাগাজিন। তাই পাঠকদের প্রতিটি মতামত আমাদের কাছে খুবই গুরত্বপূর্ণ।
আশা রাখবো এখনও আপনার লেখা পাওয়ার। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত আপনি। তিনি আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওনার লেখার ওপর আরো কাজ করবো। আপনার সাহায্য পেলে আমরা উপকৃত হবো।
ভালো থাকবেন।
অবশ্যই। আমার সীমিত ক্ষমতার মধ্যে নিশ্চয়ই সাহায্য করবো।
আরো একটি তথ্যবিচ্যুতি নজর এলো। তুমি সন্ধ্যার মেঘ উপন্যাসের আলোচনাকালে লেখিকা লিখেছেন যে তৎকালীন নালন্দা, রাজগীর ও দাক্ষ্যিণাত্যের পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলীর উপর ভিত্তি করে এই উপন্যাসটি লেখা। এটি সঠিক নয়। প্রথমত অতীশ দীপংকর শ্রীজ্ঞান বিক্রমশীলা মহাবিহারের অধ্যক্ষ ছিলেন। উপরোক্ত উপন্যাসে নালন্দা বা রাজগীরের কোনো উল্লেখ নেই। তবে লেখকের জাতিস্মর সিরিজের প্রথম গল্প মৃৎপ্রদীপে রাজগীরের উল্লেখ আছে। লেখিকা সম্ভবত দুটোকে গুলিয়ে ফেলেছেন। আর চেদীরাজ গাঙ্গেয়দেবের ( গল্পের লক্ষ্মিকর্ণদেব) রাজধানি ত্রিপুরী ছিল বর্তমান জবলপুরের কাছে নর্দমার তীরে। জবলপুরকে দাক্ষ্যিণাত্য বলা যায় কি ? এছাড়াও যৌবনশ্রীর স্বয়ংবর সভাতে জনৈক চোল অধিপতির উল্লেখ পাওয়া যায়। চোল সাম্রাজ্য দাক্ষ্যিণাত্যেই ছিল
শুধু চোল রাজের উপস্থিতিতেই যদি দাক্ষ্যিণাত্যের পারিপার্শ্বিকে উপন্যাস রচনা হয়েছে বলে ধরা হয় তাহলে আর কোনো মন্ত্যব্যের অর্থ হয় না।
উত্তর ভারত ও দক্ষিণ ভারতের মধ্যবর্তী সীমারেখা হিসেবে বিন্ধ্যপর্বতকে ধরা হয়। জব্বলপুর বিন্ধ্যপর্বতের দক্ষিণে; সেক্ষেত্রে সমগ্র ভারতের ঠিক মধ্যভাগে অবস্থিত হওয়া সত্ত্বেও স্থানটিকে দাক্ষিণাত্য বলা যেতেই পারে।
লেখকের সাথে একমত হতে পারলাম না। আমার সীমিত জ্ঞানের পরিধি যা বলে তা হলো মহর্ষি অগস্ত্য বিন্ধ্যপর্বত অতিক্রম করে দাক্ষিণাত্যে তাঁর অগস্ত্য যাত্রা করেছিলেন। আমার মতে সেই থেকে বিন্ধ্যপর্বতকে সীমারেখা হিসাবে ধরা হয় যদিও সেটা সঠিক নয়। তাহলে বিদর্ভ বা ছত্তিসগড় কে দাক্ষিণাত্যের মধ্যে ধরা উচিত কারণ উভয়ের অবস্থান বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে। কিন্তু সেটা করা হয় না। আরেকটা ভুল আমরা বাঙ্গালীরা করে থাকি উচ্চারণ বা বানানটা জবলপুর হবে জব্বলপুর নয়।
অগস্ত্য মুনি র বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তথ্য টি জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
তবে জবলপুর কথাটি জানা ছিল।
ধন্যবাদ। সুদেষ্ণাদেবী আমি আপনার অনুরোধ মত নবদ্বীপ এ শ্রীচৈতন্যদেবের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস নিয়ে দু লাইন লিখেছি। ঠিক কীভাবে কোথায় পোস্ট করব বুঝতে পারছি না। আমি অতটা Tech savy নই। যদি সাহায্য করেন ভাল হয়।
নমস্কার।
আপনার নবদ্বীপ বিষয়ক লেখাটি পেয়েছি। অত্যন্ত তথ্যমূলক। অনেক কিছু জানতে পারলাম।
আপনাকে একটি reply mail ও পাঠিয়েছি সেইদিন। আপনার লেখা আজ সন্ধ্যে 6 টা নাগাদ পোস্ট করা হবে। যেহেতু আপনি জানিয়েছেন যে অতটা tech savy নন সেক্ষেত্রে আপনাকে মেইল ছাড়া আর কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে যদি জানতে পারা যেত তাহলে আমাদের টীমের পক্ষে সুবিধে হতো।
আমার দ্বিতীয় মন্ত্যব্যটিতে নর্মদা টাইপের ভুলে (অটো কারেক্ট) নর্দমা হয়ে গ্যাছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য দু:খিত
তুমি সন্ধ্যার মেঘের আলোচনায় লেখিকা বিগ্রহপালকে রাজা হিসাবে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু উপন্যাসে বিগ্রহপাল ছিলেন মগধের যুবরাজ, রাজা নয়পালের পুত্র।
দুটো ভুল আমিও করেছি। জাতিস্মর সিরিজের প্রথম গল্প অমিতাভ, মৃৎপ্রদীপ নয়। আর লক্ষ্মীকর্ণদেবের পিতার নাম ছিল গাঙ্গেয়দেব।
সুদেষ্ণা দেবী আমার WhatsApp no 9831044781. মেইল বাদে এই নং এ যোগাযোগ করা যেতে পারে।