অলকা ভট্টাচার্য
ছোট্ট একটি শব্দ – কিন্তু তার যে এমন দুরতিক্রমী প্রভাব, এমন অমোঘ আকর্ষণ যত দিন যাচ্ছে ততই প্রগাঢ় ভাবে অনুভব করছি। জ্ঞানোন্মেষের পর থেকেই তোমাকে পেয়েছি সুখে দুঃখে, আনন্দে বিষাদে, সাফল্যে বিফলতায়, সমস্যায় সমাধানে – সর্বত্রই মা, তোমার যে রূপ দেখেছি, আজ পরিণত বয়সের প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে সেই রূপময়ী সত্তার সামনে মাথা স্বতোৎসারিত শ্রদ্ধায় নত হয়ে পড়ে। মা, মাগো, তোমার এত কাছে থেকেও, তোমার এত কাছের লোক হয়েও তোমার অন্তর সম্পদের, তোমার অগাধ বৈভবের কণামাত্র পেলাম না কেন?
একটা সংস্কৃতিমনস্ক, প্রগতিশীল আনন্দময় পরিবেশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে যৌবনের শুরুতেই তোমাকে উপস্থাপিত করা হয়েছিল এমন একটি সংসারে, যেখানে তোমার মান মর্যাদা, ইচ্ছে অনিচ্ছে, ভাললাগা, ভালবাসা, চাওয়া, না চাওয়ার কোন মূল্যই দেওয়া হয়নি তো বটেই; উপরন্তু তোমার প্রাপ্তির ভাণ্ডারে শুধুই জমেছিল নিদারুণ অবহেলা, নির্মম লাঞ্ছনা আর অসহ বাক্যযন্ত্রণা। কিন্তু কোনদিনও তোমাকে প্রতিবাদে সোচ্চার হতে দেখলাম না, কোনদিনও অভিযোগে মুখর হতে দেখলাম না, মুখের হাসিটি অমলিনই রেখে দিলে চিরদিন। এই সহনশীলতার ছিটেফোঁটাও তো দিতে পারতে তোমার আত্মজাকে।
স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন অভিধাই ছিল না তোমার। কিন্তু পাঠস্পৃহা ছিল তোমার অসাধারণ, পরিবেশের প্রতিকূলতা সত্ত্বেও সংসারের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর, অবসরের ফাঁকে ফাঁকে বাংলা সাহিত্যের জগতে অগাধ প্রবেশধিকার ছিল তোমার, দেশ বিদেশের খবরও ছিল তোমার নখদর্পণে।
বই পড়ার নেশা আর গান শোনার অদম্য বাসনাই তোমাকে অশান্তির আবহ থেকে সরিয়ে একটা আনন্দলোকের সন্ধান দিয়েছিল, তাই বোধহয় তুমি সংসারের তুচ্ছ দিকগুলোর গ্লানিময় প্রাত্যহিকতা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে পেরেছিলে।
কি ছিল না তোমার? আকর্ষণীয় ব্যবহার, কবিত্ব শক্তি, গানের সুমিষ্ট কণ্ঠ, চোখ জুড়োন হাতের লেখা, অসাধারণ স্মৃতিশক্তি – এতগুলো গুণের আধার হওয়া সত্ত্বেও তোমার যথোচিত মর্যাদা তুমি পাওনি। মা, জন্মান্তর বলে কিছু আছে কিনা জানি না, আর বিধাতার বিধানে আমার সুপ্ত ইচ্ছে পূর্ণতা পাবে কিনা তাও জানি না, তবু যদি মা তোমাকে আর একবার পাই ………
দিদিকে প্রণাম। এতো প্রতিভাময়ী মহিলা খুব কম দেখেছি। আমরা ভাই বোনেরা খুবই ভাগ্যবান যে ছোটবেলায় দিদিকে এতো কাছ থেকে দেখেছি আর তাঁর ভালোবাসা পেয়েছি।
ভালো লাগলো খুব। দিদার সুন্দর কথা বলা, বই নিয়ে অগাধ জ্ঞান আর গুছিয়ে সেই নিয়ে আলোচনা সব মনে আছে এখনো। এই লেখায় আবার যেন নতুন করে সব ফিরে দেখলাম। আরো এমন লেখার আশায় থাকলাম।
অসাধারণ লিখেছেন দিদি। মন ছুঁয়ে গেলো।
Ma er ei bishlesan satyi tulonahin. Apanake pronam janai.
Mashimar hater oshadharon ranna’r swad ajo bhulte pari ni. Oner lekha kobita ekonomone ache. Pronam neben.