সৌগত চক্রবর্তী
।। ১ ।।
“লিভসস্টিল”, ডক্টর বাসুদেবন ইজিচেয়ারে আধশোয়া অবস্থাতেই বললেন।
পন্ডিতিয়া প্লেসের ওঁর বাড়ির একতলাতেই চেম্বার। কয়েকমাস আগে পর্যন্তও লালবাজারে অগাধ যাতায়াত ছিল ভদ্রলোকের। কিন্তু বিজয় মালিয়ার সঙ্গে পুরনো ঘনিষ্ঠতার কথা প্রচার মাধ্যমে চাউর হওয়ার পর এই মনস্তত্ববিদের থেকে কলকাতা পুলিশ নিরাপদ দূরত্বে বজায় রেখেছে। অগত্যা সুতনুর অনুরোধে আমাকেই আসতে হয়েছে সত্তরোর্ধ্ব মানুষটির কাছে। ইলিয়ানা আন্দ্রিয়েভের খোঁজে মিসিং পার্সনস্ স্কোয়াড ওঁর সাহায্য চায়, একথা আমার মুখে শুনে ডাক্তারবাবু প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলেন।
“ব্যাংকের চাকরিটা কি ছেড়ে দিয়েছ?”
“না, ঠিক তা নয়। তবে মাঝেমধ্যে পুলিশকে ট্রানজ্যাকশন ডেটা অ্যানালাইসিসে একটু আধটু সাহায্য করি, এই যা।”
“তাহলে আর এই বুড়োকে দরকার পড়লো কেন? মাদামকে খুঁজে বের করার জন্যে যা দরকার, সব তথ্য তো তোমাদের হাতেই রয়েছে। প্লাস্টিক ব্যবহার করতো না, তোমার ঐ ইলিয়ানা?” কার্ড পেমেন্টের ব্যাপারে বাসুদেবনের অনীহা আমার অজানা নয়, তাই এই বিদ্রুপে অবাক হলাম না।
“ওঁর অন্তর্ধানের পর কোনো কার্ডেই কোনো কেনাকাটা করেনি, এমনকি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলোতেও কেউ হাত দেয়নি তারপর।”
“খুব বুদ্ধিমতী বলতে হবে,” ব্যঙ্গের সুরে কথাটা বলেই ঐ অদ্ভুত শব্দটা আওড়ালেন বাসুদেবন।
“লিভসস্টিল। নরওয়েতে লাইফস্টাইলকে বলে লিভসস্টিল। কার্ড বদলে ফেলতে পারে, নাম এমন কি আঙ্গুলের ছাপ, সবটাই, কিন্তু লাইফস্টাইল বদলানো প্রায় অসম্ভব। খোঁজো তথাগত। মেয়েটি ইন্ডিয়াতে থাকাকালীন কোন্ কোন্ হোটেলে থাকতো, কোন্ রেস্তোরাঁয় খেতে পছন্দ করতো, কোনো ব্র্যান্ড প্রেফারেন্স ছিল কিনা, এসব কিছুই তোমাদের কাজে লাগতে পারে। মনে রেখো, she still lives in her livsstill।”
“থ্যাংক ইউ, ডক্টর। আর কিছু বলবেন?”
“তোমার এসিপি বন্ধুটিকে বোলো এরপর দরকার হলে যেন আমাকে শমন পাঠানো হয়। মিডিয়া জানতে চাইলে বলতেই পারে বিজয়কে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার ছিল,” বৃদ্ধমানুষটি হাসতে হাসতে বললেন।
।। ২ ।।
ওয়েস্টিন কলকাতা হোটেলের অতিথি পরিষেবার প্রধান নৌরীন প্যাটেলের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বাসুদেবনের পরামর্শ অনুযায়ী আমরা ইলিয়ানা যে দু’বছর ভারতে চষে বেড়িয়েছে, সে সময়কার ওঁর করা সমস্ত লেনদেন ঘেঁটে ফেলি। কলকাতায় আসলে যে ইলিয়ানা বেশিরভাগ সময় নিউটাউনের এই হোটেলেই থাকতো, সেটা এভাবেই জানতে পারি। নৌরীনের কথা শুনে মনে হচ্ছিল ডক্টর ঠিকই বলেছিলেন। পুলিশ রেকর্ড অনুযায়ী ইলিয়ানাকে ভারতে দেখা যায় ২০১৮-এর ডিসেম্বরে। দমদম থেকে দুবাই ‘মাস পরে। ততদিনে লালবাজার সাইবার পুলিশস্টেশনই উনি কয়েনের সেক্টর ফাইভের অফিস রেইড করে ফেলেছে।
“ঐদিন ডিনারে ইলিয়ানার সঙ্গে আর কেউ ছিল?” সুতনু প্রশ্ন করে।
“হ্যাঁ, আমাদেরই আরেকজন বোর্ডার দুজনের জন্য পুলসাইড টেবিলটা বুক করেছিলেন।”
“এই বোর্ডারের নাম নিশ্চয় আপনাদের রেকর্ডে আছে, মিস্প্যাটেল,” আমি বলি।
“নিশ্চয়। আমি রেকর্ড না দেখেও বলে দিতে পারি। মিস্টার লালছুয়ানকিমা। উনি নিজে একজন হোটেলিয়ার। আইজলে ওঁর একটা হোটেল আছে।”
এডমন্ড লালছুয়ানকিমার নাম শুনেই আমি সুতনুর দিকে তাকালাম। ইলিয়ানা ঐ দুবাইগামী ফ্লাইটে উঠে বসার পর এই প্রথম যেন আমরা আশার আলো দেখতে পারছিলাম। রিজেন্সী গ্রুপের পার্টনার এডমন্ডের আইজল হোটেলে আমি যে শুধু বেশ কয়েকবার নিজে থেকেছি তাই নয়, ওঁর সঙ্গে ডিনারে ফুটবল নিয়ে কথাও হয়েছে প্রচুর। এডমন্ডের সেলফোনে ওঁর সঙ্গে কথা বলার জন্যে আমার তখন হাত নিশপিশ করছে। সুতনু কিছু একটা বুঝতে পেরেই নৌরীনকে আর দু-একটা সাধারণ প্রশ্ন করে ছেড়ে দেয়।
“চিনিস নাকি?” নৌরীন বেরিয়ে যেতেই জিজ্ঞেস করেও।
“বেশ ভালো করে। নাম্বারও আছে।”
“লাগা তাহলে। স্পীকারে রাখিস।”
বেশ কয়েকবার রিং হওয়ার পর ফোনটা ধরে।
“হাই, এডমন্ড কেমন আছো?”
“মিস্টার চ্যাটার্জী যে, কী ব্যাপার? কতদিন দেখাসাক্ষাৎ নেই। তুমি তো আমাদের ভুলেই গেছ।”
“কী বলছো, তোমাদের আতিথেয়তা কি ভোলা যায়?”
“বলো তাহলে, নেক্সট কবে আসছো আইজলে?”
“এর মধ্যে যাওয়ার সত্যি কোনো প্ল্যান নেই, আবার বলাও যায় না। একটা কথা বলো, তুমি কি এখনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে টাকা খাটাচ্ছ?”
“না, তুমি আওয়াজ দো’র ব্যাপারে সাবধান করার পর থেকে আর রাখিনি। হঠাৎ কেন জানতে চাইছো?”
আওয়াজ দো অ্যাপ ২০১৬-তে মিজোরামে খুব জনপ্রিয়তা পায়। সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন হিসেবে শুরু ক’রে নয়ডার এই সংস্থাটি কিছুদিনের মধ্যেই একটা বিনিয়োগ প্রকল্প চালু করে, যার সদস্যরা কিছু নির্দিষ্ট ফেসবুক বা টুইটার পোস্ট লাইক করলেই তাঁদের আওয়াজ দো-তে জমা রাখা টাকার উপর চড়া হারে রিটার্ন দেওয়া হতো। শুধু তাই নয়, নতুন সদস্যদের নিয়ে আসতে পারলে লোভনীয় বোনাসের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এডমন্ডের মতো লোকেদের কাছে শুরুর সাতহাজার টাকা জমা রাখা ছিল নস্যি। প্রথমমাসের শেষে কথা মতো চল্লিশ শতাংশ টাকা ফেরত পাওয়ার পর, এডমন্ড হোটেলের কর্মচারীদেরও সদস্য বানিয়ে দেয়। সৌভাগ্যবশতঃ মিজোরামে আওয়াজ দো-র আত্মপ্রকাশের মাসদুয়েকের মধ্যেই একটা পুলিশ প্রশিক্ষণ কর্মশালায় আমার ডাক পড়ে। হোটেল লবিতে এডমন্ডের সঙ্গে দেখা হতেই ও আমাকে জিজ্ঞেস করে, সদ্য লঞ্চ হওয়া ইউনিকয়েন নামের ক্রিপ্টোকারেন্সীর দাম কবে থেকে বাড়বে সেটা আমি জানি কিনা। আওয়াজ দো তখন ইউনিকয়েনের টাকা ফেরত দিচ্ছে।
আমি বলি যে তখনো ইউনিকয়েনের নামই শুনিনি।
“চ্যাটার্জী, চ্যাটার্জী, আমার কথা মিলিয়ে নিও ইউনিকয়েন পরবর্তী বিটকয়েন হতে চলেছে। হয়তো আরও বড় কিছু। তুমি যদি ওদের প্রেজেন্টেশন দেখো বুঝবে। ইউনিকয়েন মানে ইউনিভার্সাল কয়েন – সারা পৃথিবীর কারেন্সী।” পরে ভিডিওতে দেখেছি মুম্বাইয়ের এন.সি.পি.এ. প্রেক্ষাগৃহে ইউনিকয়েনের ইন্ডিয়া লঞ্চে ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিল ইলিয়ানা।
এডমন্ডকে সেদিন বোঝাতে না পারলেও মিজোরাম পুলিশকে আওয়াজ দো-র মোডাস অপারেন্ডি বোঝাতে আমাকে বিশেষ বেগ পেতে হয়নি। কয়েকদিনের মধ্যেই রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর সবাইকে আওয়াজ দো-র বিষয়ে সাবধান করে দেয়।
।। ৩ ।।
বর্তমানে ফিরে আসি।
“জিজ্ঞেস করছি কারণ ক্রিপ্টোকারেন্সী বিপ্লবের মক্ষিরাণীর সঙ্গে গত ফেব্রুয়ারিতে তোমাকে কলকাতায় ডিনার করতে দেখা গেছে বলে খবর।” এডমন্ডকে বলি।
“তুমি তো জানোই চ্যাটার্জী, আমার লোকেদের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব আছে। আওয়াজ দো-তে আমার টাকা ডুবেছে, সেটা সব ব্যবসাতেই হয়, তাই ও নিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই। কিন্তু আমি তো আরও অনেককে ইউনিকয়েন কিনতে বলেছিলাম। বন্ধুদের, আত্মীয়দের। ইলিয়ানা আমাকে ওদের সেন্ট্রাল সার্ভারে ঢুকতে দিয়েছিল। ওখানে নিজের চোখে আমি ইউনিকয়েনের দাম বাড়তে দেখেছি। আমি পুলিশ রেইডগুলোর ব্যাপারে জানতাম, কিন্তু ও আমাকে বোঝায় যে ওগুলো ভুয়ো খবর, বিটকয়েন লবি করিয়েছে কারণ ওরা ইউনিকয়েনের দ্রুত উঠে আসায় ভয় পেয়েছিল। তারপর যখন ও কলকাতায় একটা পাবলিক প্লেসে আমার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হয়ে গেল, তখন এই ব্যাপারগুলো আমার আরও সত্যি বলে মনে হতে থাকলো। পুলিশ যাকে খুঁজছে, সে কি কখনো এরকম প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে পারে? ঐ ডিনারে ও আমাকে সমস্ত জমা টাকা রুপীতে ফেরত দেবে বলে কথা দেয়।”
“তারপর কী হলো?”
“ও আমার কাছে একটা ছোট্ট সাহায্য চায়। তুমি তো জানো এখানে সানডেতে পুরো শহর এক জায়গায় জড়ো হয়। ও চেয়েছিল আমি যেন বিশপকে বলি যাতে উনি সবাইকেই উনি কয়েনের উপর বিশ্বাস রাখতে বলেন।”
“আর তুমি সেটা করেছিলে?”
” উমম্, হ্যাঁ। আমি ওঁকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেছিলাম,” এডমন্ডকে খুব বিমর্ষ শোনায়।
“তারপরে ও তোমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল?”
“ও আমাকে বলে পরের দিনই ও থাইল্যান্ডে চলে যাচ্ছে। একমাস পরে ইন্ডিয়াতে ফিরবে। একটা থাই নম্বর থেকে তারপরে সপ্তাহ দুয়েক মেসেজ আসতেও থাকে। ব্যাস্, ঐ পর্যন্তই।”
সুতনু আমাকে হাতের ইশারায় কথোপকথন বন্ধ করতে বলে।
“থ্যাংকস এড। আমি আবারও তোমাকে এ ব্যাপারে বিরক্ত করতে পারি।”
“যে কোনো সময় কল কোরো। আর জলদি আইজল আসার একটা প্ল্যান বানাও।”
“নিশ্চয়। দেখা হবে,” বলে ফোনটা কেটে দিই।
“তুই নিশ্চিত যে এই এডমন্ড ইলিয়ানার শাগরেদ নয়?” সুতনু জানতে চায়।
“ও খুব একটা বোকা নয়, আবার এটাও ঠিক যে ওঁদের সম্প্রদায়ের মধ্যে ওঁর খুব প্রভাব আছে আর এখানে সেটাই নষ্ট হতে বসেছে। ইলিয়ানার আসল উদ্দেশ্য বুঝতে পারলে ও কখনোই অন্যদেরকে এর মধ্যে জড়াতো না।”
“হুঁ। ফেব্রুয়ারি থেকে ওর সমস্ত ফোন রেকর্ড চেক করতে হবে। থাই নম্বর থেকে মেসেজগুলোর নিশ্চয় ও উত্তর দিয়েছিল। ইলিয়ানা নিজে যদি মেসেজগুলো করে থাকে তাহলে আরও আড়াইমাসের খবর আমরা পেয়ে যাব।”
।। ৪ ।।
কলের শুরুতেই মৃন্ময় একটা মজার কথা বললো, “তথাগত স্যার, আপনি অ্যানাগ্রাম ভালোবাসেন?”
“হ্যাঁ, যদিও আমি নিজে খুব একটা ভালো সলভ করতে পারিনা।”
“স্যার, আমার মনে হয় সাতোশি নাকামোতো একজন ভারতীয়।”
“কী?” আমি একটু জোরেই বলে ফেলি। সিঙ্গাপুরে ইউরো ফিনান্সের-এর একটা সেমিনারে এক মার্কিন ভদ্রলোক যিনি নাকি বিটকয়েনের গোড়া থেকেই নাকামোতোর সঙ্গে কাজ করেছেন বলে দাবী করেন। তিনি নাকামোতোকে এশিয়ান জিনিয়াস বলে অভিহিত করছিলেন ঠিকই, কিন্তু আমার কখনো মনে হয়নি নাকামোতো আমাদের উপমহাদেশের মানুষ হতে পারেন।
“সাতোশি নাকামোতোর নাম ইংরেজিতে সন্তোষী মাতাকো’র অ্যানাগ্রাম হতেই পারে স্যার। হতে পারে উনি মাতার কোনো বড় ভক্ত,” মৃন্ময় বেশ গম্ভীর স্বরেই বলে।
“আর ইলিয়ানা অ্যান্দ্রিয়েভ? এটাও কি কোনো অ্যানাগ্রাম?”
“আপনি ভালোই জানেন স্যার। ওর ইউনিকয়েনের আগের জীবন নিয়ে তো কোনো রহস্য নেই। জাতে রোমানিয়ান, জন্ম বুলগেরিয়ার সোফিয়ায়।”
“আর ইউনিকয়েনের রহস্যটাই বা কী? আইজলের আমার এক ভালো বন্ধু আমাকে বলেছে যে ওদের সেন্ট্রাল ডেটাবেস সার্ভারেও নিজের চোখে ইউনিকয়েনের দাম বাড়তে দেখেছে।”
“সেটাই তো হাস্যকর ব্যাপার স্যার। আপনার বন্ধু একা নন, আরও অনেককেই একইভাবে বোকা বানানো হয়েছে। ইউনিকয়েন কোনোদিন কোনো এক্সচেঞ্জে কেনাবেচা হয়নি। উনি যে দামটা দেখেছেন সেটা ইলিয়ানারই কোনো কর্মচারী বেলাইজে বসে আপডেট করতো। ইউনিকয়েন কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সীই নয় স্যার। ক্রিপ্টোর দাম নির্ধারণে মানুষের কোনোরকম হাত থাকে না।”
আমার পরিচিতদের মধ্যে একমাত্র মৃন্ময় কিছুদিন বিটকয়েন মাইনিং করার চেষ্টা করেছিল। যদিও ও এখনো ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গৌহাটি কার্যালয়েই রয়েছে, ওর কথা শুনে বুঝলাম ক্রিপ্টোকারেন্সী নিয়ে আগ্রহে একটুও ভাঁটা পড়েনি।
“আর স্যার, আপনার বন্ধুর কথা বলতে পারবো না, কিন্তু এই ইলিয়ানা দেবী উত্তর-পূর্বে একেবারে ম্যাসাকার করে গেছেন। ক’দিন আগেই অফিসে হাইকোর্টের এক রিটায়ার্ড রেজিস্ট্রার এসেছিলেন। ভদ্রলোক ওঁর অবসরের সময় পাওয়া পুরো টাকাটা দিয়েই উনি কয়েন কিনেছিলেন। এই মহিলার কঠোরতম শাস্তি হওয়া উচিত।”
“ঠিকই বলেছ, মৃন্ময় কিন্তু সেটা আদৌ সম্ভব হবে কিনা বলা মুশকিল। আপাতত পুলিশের কাছে যা খবর তাতে ও থাইল্যান্ডে একটা ফেসিয়াল রিকন্সট্রাকশন সার্জারি করিয়ে আবার ভিন্ন কোনো পরিচয়ে গত এপ্রিলে এদেশে ফিরে এসেছে। তারপর থেকে সব ঠান্ডা।”
“এপ্রিলে ফিরেছে বললেন?” মৃন্ময়কে বেশ উত্তেজিত শোনায়।
“হ্যাঁ, কেন বল তো?”
“স্যার আমি আপনাকে একটা ফোল্ডার পাঠাচ্ছি। আমার নিজের বানানো। মে মাসে এখানকার টাইমস্ অফ ইন্ডিয়ার প্রথম দু’পাতা জুড়ে একটা এর পিজি ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির বিজ্ঞাপন বেরোয়। ওরা উত্তর-পূর্বে ডিস্ট্রিবিউটর খুঁজছিলেন। এটাও দাবী ছিল যে মণিপুরে ইতিমধ্যেই একটা বটলিং-প্ল্যান্ট খুলেছে। আমাদের একটা রেজিস্টার্ড মাইক্রো ফিন্যান্স সংস্থার হেডঅফিস ওই এলাকাতেই। ওদের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি একটা সাইনবোর্ড ছাড়া আর কোনো চিহ্নই নেই। পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসনিয়ন্ত্রক বোর্ডের গুয়াহাটি অফিসেও কেউ কোম্পানির নামও শোনেননি, অনুমতি দেওয়া তো দূরের কথা।”
“বুঝলাম, কিন্তু এর সঙ্গে ইলিয়ানার কী সম্পর্ক?”
“ঐ কোম্পানির ওয়েবসাইটে পিকচার গ্যালারিতে ঝাড়খন্ডে একটি বটলিং-প্ল্যান্ট উদ্বোধনের কিছু ছবি ছিল। মিডিয়াও ছিল সেখানে। কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর একজন মহিলা। অনিলারাণী দেবী। সাংবাদিকদের জোরাজুরিতে অনিচ্ছাসত্ত্বেও একটা ছোট্ট বাইট দিয়েছিলেন। জ়ি ঝাড়খন্ডের আর্কাইভ থেকে পাওয়া ভিডিওটাও ফোল্ডারেই ডাউনলোড করে রেখেছি। ওঁর ইংরেজি উচ্চারণে স্লাভিক ছাপ স্পষ্ট। অনিলারাণীদেবীও কিন্তু ইলিয়ানা আন্দ্রিয়েভের অ্যানাগ্রাম। তাই না, স্যার?
পরিশিষ্ট
মিজোরামের এক হোটেল ব্যবসায়ীর দেওয়া খবরকে ভিত্তি করে রাঁচি থেকে ইলিয়ানা আন্দ্রিয়েভ ওরফে অনিলারাণী দেবীকে সি.বি.আই. গ্রেফতার করে। ডি.এন.এ. টেস্টে তাঁর আসল পরিচয় জানা গেছে বলে খবর। সি.বি.আই.-য়ের বিশেষ আদালতে ইউনি কয়েন মামলার শুনানি আর কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হতে চলেছে।
সৌগত চক্রবর্তী
আরো পড়ুন: অন্যান্য ভৌতিক গল্প, সৌগত-এর অন্যান্য গল্প
বেশ ভালো।
দারুন গল্প !!