Home প্রবন্ধ ফিরে দেখা (পর্ব-৩)
প্রবন্ধ

ফিরে দেখা (পর্ব-৩)

গোপা মিত্র

[অনেকেই হয়ত ভাবছেন গুরুজনদের তথা পরিবারের কথা লিখতে বসে আমি আমার নিজের কথা লিখছি কেন? কিন্তু আমি তো পরিবার বিচ্ছিন্না ছিলাম না, বরং বলা চলে ছিলাম একেবারেই পরিবার সংপৃক্ত। তাই আমাকে বাদ দিলে পরিবার সম্পূর্ণ হবেই বা কি করে? আমার সেই ছেলেবেলার ছোট ছোট ঘটনার মধ্যে দিয়েই তো আমার পরিবারের সম্পূর্ণ চিত্র পাওয়া যাবে]

পর্ব-৩

আমার স্কুলজীবনের শুরু

আমার দীর্ঘ স্কুল জীবন, সেই Preparatory থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত, আমার জীবনের অন্যতম সেরা সময়কাল। সেই ছোটবেলায়, বন্ধুদের সঙ্গে হাসি মজা আনন্দ, খেলাধুলো দৌড়দৌড়ি, কারো পিছনে লাগা-ঐ এখন যাকে বলে ‘ট্রোলিং’, সেসব আজও মনে পড়লে মনটা স্মৃতিমেদুর হয়ে ওঠে। অনেকের কাছে অবশ্য কলেজ জীবনই তাদের সেরা সময়। কারণ তখনই নাকি প্রথম প্রকৃত স্বাধীনতার তথা মুক্তির  স্বাদ পাওয়া যায়! কলেজের ভীড় আর পড়াশুনার চাপ আমাকে সেই আনন্দ পাওয়া থেকে বঞ্চিতই রেখেছিল। গুরুজনদের স্নেহচ্ছায়ায় দায়মুক্ত সেই ছোটবেলা পরাধীন হলেও আমার কাছে ছিল অনেক বেশী আনন্দের। কোনো কিছুতেই আমাদের বাধা দেওয়া হত না। শর্ত ছিল শুধু একটাই – পড়াশোনাটা ঠিকমত করতে হবে। সেই ছোটবয়সেই আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল “তোমাদের কেউ নেই, দাদা নেই, ভাই নেই। আমাদের অবর্তমানে তোমাদের দেখবে কে? তাই তোমাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতেই হবে এবং এর প্রস্তুতি হিসেবেই দরকার পড়াশোনা”। সেই শিক্ষা মনে রেখেই হয়তঃ আমরা কোনোদিনই পড়াশোনায় অবহেলা করিনি।  তাছাড়া আমার মনে হয় স্বাধীনতা একটা অনুভব। স্বাধীনতা মানে যথেচ্ছাচার করা বা উচ্ছৃঙ্খল হওয়া নয়। ঠিক ভুল, ন্যায় অন্যায়, উচিত অনুচিতের বোধই তো আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতার স্বরূপ চিনিয়ে দেয়।

 

এবার শুরু হল আমার স্কুল জীবন। কিন্তু তার আগে বাড়ীর নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হল হাতেখড়ি । এতদিন যা শেখা, সবই ছিল মুখে মুখে – এবার লিখতে শেখা। প্রতিবছর সরস্বতী পূজোর দিন আমাদের বাড়ীতে ঠাকুরমশাই এসে দেবী মূর্তি ছাড়াই বই দিয়ে দেবীর আবাহন করতেন। এমনই এক পুজোর দিনে হাতেখড়ির ব্যবস্থা হল- শ্লেট পেন্সিল এল। বাবা চেলি পরে আমাকে কোলে নিয়ে বসে আমার হাতে লেখার সূচনা করালেন। 

স্কুলে ভর্তি হলাম। তখনের নিয়ম অনুযায়ী বাড়ীর একেবারে কাছে থাকা এক মিশনারী স্কুলে আমরা এক এক করে তিনবোনই ভর্তি হয়ে গেলাম। তখন সেই স্কুলে, যাকে আমি প্রাথমিক স্কুল বলেই মনে করি, মাত্র সিক্স পর্যন্তই পড়ানো হত। কিন্তু কি আর করা- বাবা মা’রা হয়ত ভেবেছিলেন পরের কথা পরে ভাবা যাবে! বাড়ীর বয়স্কা পরিচারিকা গোলাপদি আমাদের নিয়ে, যাওয়া আসা এবং টিফিন খাওয়ানোর বাড়তি দায়িত্ব পেল। দুপুরের টিফিনে আমাদের জন্য বরাদ্দ হল একটা করে মিষ্টি আর এক গ্লাস দুধ, যা নিয়ে যাওয়া হত পিতলের এক ঝোলায় করে। হরিণঘাটার দুধ যেদিন থেকে চালু হল সেদিন থেকে দুধ নিয়ে যাওয়া বন্ধ হল – বদলে স্কুলেই হরিণঘাটার দুধের জন্য আমাদের নাম লেখান হল। গোলাপদি আমাদের সেই দুধ আর মিষ্টি খাইয়ে তবেই বাড়ী ফিরত। অবশ্য দুধ খাওয়াতে আমাদের কোনদিনও আপত্তি ছিল না – এখনো আমরা তিন বোনেই ভালোবেসে দুধ খেয়ে থাকি।

আমাদের সেই ডে স্কুলের, চল্লিশ মিনিট টিফিন সময় ছিল সবচেয়ে আনন্দের। কোনোরকমে খাওয়া শেষ করেই শুরু হত আমাদের ছুটোছুটি দৌড়োদৌড়ি। তাই সেই স্কুলজীবনে মাঝে মাঝেই আমি খেলার টানে গোলাপদিকে ফাঁকি দিয়ে এদিক সেদিক দৌড়ে পালাতাম, কিন্তু তবুও তার হাত থেকে বাঁচতে পারতাম না। সে ঠিক আমাকে ধরে এনে টিফিন খাইয়ে তবেই বাড়ি ফিরত। মজা করে আমার বন্ধুরা বলত, “গোপা তোর শ্বাশুড়ি এসে গেছে রে, দেখ গিয়ে তোকে খুঁজে বেড়াচ্ছে”।

স্কুল ছুটির পরে দেখতাম, গেটের পাশে ঘুগনী আলুকাবলি ফুচকা হজমীগুলি বিক্রী হচ্ছে আর আমার বন্ধুরা সেগুলো কিনে খাচ্ছে। একদিন মাকে বললাম যে, মা আমাকেও পয়সা দাও আমিও বন্ধুদের সংগে আলুকাবলি খাব। রাস্তার খাবার খাব- সেরকম নিয়ম আমাদের বাড়িতে ছিল না। মা কিন্তু কাকুকে বলে সেই ব্যবস্থাও করে দিল, তবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে নয়- বিক্রেতাদের বিক্রী শেষ হলে, কাছেই আমাদের বাড়ীতে তাদের ডেকে আনা হল। নিচের উঠোনে দাঁড়িয়ে আমরা তিন বোনে তাদের কাছ থেকে নিয়ে ফুচকা আলুকাবলি খেতে লাগলাম।

স্কুলে ভর্তি হলাম, ঝোলা ব্যাগ ভরে খাতা পেন্সিল বই নিয়ে আর পাঁচটা বাচ্চার মত আমাদের লেখাপড়াও শুরু হয়ে গেল। প্রার্থনার পর ক্লাস শুরু হতে দেখলাম, একজন দিদিমণি (তখন মিস্‌ বা ম্যাম বলা চলত না)একটা লম্বা খাতা নিয়ে এসে তার টেবিল চেয়ারে বসে চীৎকার করে সবার নাম ধরে ডাকতে লাগলেন আর যার নাম ডাকছেন সে দাঁড়িয়ে উঠে কি যেন একটা বলতেই তিনি তাকে বসতে বলছেন। আমার নাম এলে আমিও উঠে দাঁড়িয়ে বললাম ‘বস্‌তি’ তিনিও আমাকে বললেন, ‘বস’, আমিও বসে পড়লাম। এভাবেই বেশ কিছুদিন চলার পর আমি জেনেছিলাম, কথাটা ছিল, ‘উপস্থিত’। প্রথম স্কুলে যাওয়া, বড়দের সাবধানবাণী সব কিছু মিলিয়ে দিদিমণিদের কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস তখন ছিল না। আমার কানে যা এসেছিল তাই বলেছিলাম- ‘বস্‌তি’। 

নতুন খাতা বইএর সঙ্গে কিছু ব্রাউন কাগজও এল, বই খাতা মলাট দেওয়ার জন্য। দুটো একটা মলাট দিয়ে দেখিয়ে দেওয়া হল। ব্যস্‌ বাকীগুলো আমাদেরই দিতে হবে। নিজের কাজ নিজেদেরই তো করতে হবে! সেই বয়স থেকেই বই খাতার যত্ন নেওয়া আমরা শিখে গেলাম। 

স্কুল শিক্ষার শুরুতেই আমাদের তিন জনের জন্য একজন মাষ্টারমশাই বহাল হলেন। ভোরবেলায় এসে বৈঠকখানা ঘরে তিনি আমাদের তিনজনকে সব বিষয়ই একসঙ্গে পড়াতেন। ক্লাস সেভেনে উঠলে আমাদের জন্য অন্য একজন মাষ্টারমশাই এলেন, তিনিও আমাদের সব বিষয়ই পড়াতেন। তবে ক্লাস নাইনে যখন আমি বিজ্ঞান নিলাম তখন আমার জন্য একজন দিদিমণি এলেন আমাকে অঙ্ক ও বিজ্ঞানভিত্তিক বিষয়গুলি পড়াবার জন্য। মাষ্টারমশাই, দিদিমণি সবই তো হল-কিন্তু পড়াশোনাটা তো আমাদের নিজেদেরই করতে হবে! সত্যি বলতে সে বিষয়ে আমরা অবশ্যই  সচেতন ছিলাম এবং কোনো দিনই পড়াশোনায় ফাঁকি দিয়ে গুরুজনদের চিন্তার কারণ হয়ে উঠিনি বা তাদের হতাশ করিনি।        

মিশনারী স্কুল। সেই ‘Preparatory’, ক্লাসেই ইংরেজী বাংলা অঙ্ক পড়াশোনার সঙ্গে সঙ্গে সেলাই শিক্ষাও শুরু হয়ে গিয়েছিল। প্রথম সেলাই আমার মনে আছে –দিদিমণি বলে দিলেন, “কাল সকলে একটা পুরণো পোষ্টকার্ড বা শক্ত নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে আসবে আর সঙ্গে মোটা সূঁচ সুতো”। পরদিন দিদিমণি সেই কার্ডে লাইন করে আধ ইঞ্চি অন্তর গর্ত করে দিলেন, বললেন যে এবার এই গর্ত ধরে একবার সুতো পরানো সুঁচ নিচে ঢোকাও আবার পরের গর্তে ওপরে তোল। এভাবেই আমাদের সেলাই শিক্ষার হাতেখড়ি হল। পরে অবশ্য ঐ প্রাইমারী স্কুলেই সেলাই, বোনা অনেক কিছুই করতে হয়েছিল এবং দক্ষতার সঙ্গে আমরা সেগুলো সম্পন্ন করেছিলাম। 

দৌড়োদৌড়ি করলেও স্পোর্টসে অবশ্য আমি ভালো ছিলাম না। ওটা ছিল কজন বিশেষ মেয়ের মনোপলি। প্রতিবছর বড়োদিনের ঠিক আগে যিশুর জন্মের ওপর ক্লাস সিক্সের মেয়েরা একটা একাঙ্ক নাটক করত আর তখনই সারা বছরের সাফল্যের খতিয়ান দেখে ছাত্রীদের পুরস্কৃত করা হত। অ্যানুয়াল পরীক্ষার পর প্রতি বছরই বাস রিজার্ভ করে আমাদের নিয়ে যাওয়া হত কখনও চিড়িয়াখানা, মিউজিয়াম, বা বোটানিক্যাল গার্ডেন। 

প্রাথমিক স্কুলের কয়েকটা ঘটনা আমার মনে দাগ কেটে গেছে। সেইজন্যই হয়ত সেগুলো এখনও আমার মনে রয়ে গেছে। তখন আমি ক্লাস ফোর, যোগমায়া বলে একটি মেয়ে এসে একদিন আমাকে বলল যে, জানিস তো গোপা, ওর ( কার নাম বলেছিল ভুলে গেছি)একটা বয় ফ্রেন্ড আছে। আমি বলেছিলাম যে, বয় ফ্রেন্ড তো থাকতেই পারে। তাতে কি হয়েছে? সেও তো একজন ফ্রেন্ড। তবে? সে আমাকে বলেছিল, ‘দূর বোকা তুই কিছুই বুঝিস না’- বলে সে আমাকে ছেলে মেয়ের প্রভেদ বুঝিয়ে এটা যে করা উচিত নয়, এটা যে কত খারাপ এসব বোঝাতে চেষ্টা করেছিল। নেট মোবাইল বিহীন যুগে এরকম কিছু পাকা মেয়ে আমাদের মত কিছু আনাড়ি মেয়েদের শিক্ষার দায়িত্ব নিজেদের কাঁধেই তুলে নিয়েছিল। আজও স্বাধীন ভারতের এত অগ্রগতি সত্ত্বেও- যে যুগে মানুষ চাঁদে যাচ্ছে, সেই যুগেও ভারতের কত জায়গাতেই না লিঙ্গভেদে, জাতিভেদে, বর্ণভেদে মেলামেশা নিষিদ্ধ। সত্যিই কি আমাদের চিন্তাধারার কোনো বদল হয়েছে? সত্যিই কি আমরা নিজেদের স্বাধীন বলে গর্ববোধ করতে পারি?

আর এক ঘটনা ক্লাস সিক্সের। বুলু সেন বলে একটি মেয়ে, তার বাড়ী ছিল সি এ বি র সঙ্গে জড়িত। সে একদিন ক্লাসে একটা ছবি নিয়ে এসে আমাদের দেখিয়ে বলল “ এই যে দেখছিস্‌, এ হল একজন ক্রিকেট প্লেয়ার, আব্বাস আলি বেগ। কি সুন্দর দেখতে দেখেছিস্‌, একে আমি খুব ভালোবাসি। এবার কলকাতায় খেলতে এলে আমি বাবার সঙ্গে গিয়ে আলাপ করে আসব”। ক্রিকেট খেলা? সেটা আবার কি খেলা? সে তখন আভিনয় করে কিভাবে খেলতে হয় আমাদের দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল। কি সব আকাশকুসুম কল্পনা! আমরা তখন কেউ কিশোরীবেলার দোরগোড়ায়, কেউ বা সবে পা দিয়েছে। বাড়ীর চৌহদ্দি বা স্কুলের বন্ধুবান্ধবদের গন্ডীর বাইরে তো আমাদের কোনো জগৎ ছিল না, তাই আমাদের চিন্তাধারাও ছিল সীমিত। এখন অবশ্য আমি, শুধু ক্রিকেটই নয়, ফুটবল, টেনিস, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, সব খেলার নাড়িনক্ষত্র যেমন জানি তেমন টিভির মাধ্যমে উপভোগও করে থাকি। 

আমার মা কাজ করতে করতে গুণগুণ করে গান গাইত। পুরোটা হয়ত নয় , কয়েক কলি মাত্র। চর্চিত গলা না হলেও, মায়ের গলা ছিল বেশ মিষ্টি এবং সুরজ্ঞান ছিল প্রখর। কোন্‌টা রবীন্দ্রসঙ্গীত, কোন্‌টা নজরুলগীতি, কোন্‌টাই বা সীনেমার গান এসব বোঝার বোধ তখন আমার ছিল না। আশপাশের বাড়ী থেকে ভেসে আসা গান শুনেই আমরা সন্তুষ্ট থাকতাম। কাকুর ঘরে অবশ্য বেশ বড় একটা H M V রেডিও ছিল , কিন্তু সেটা চলত কম, বন্ধ থাকত বেশী- আমাদের পড়া যেন কোনমতেই বিঘ্নিত না হয়, সেই কারণে।

ক্লাস সিক্সের পরীক্ষা হয়ে গেছে। একদিন দিদিমণি এসে বললেন “আজ কোন পড়াশোনা হবে না, কদিন পরই তোমরা অন্য স্কুলে চলে যাবে। আজ শুধু গল্প হবে। দেখি তোমরা কে কি করতে পার”। দুএকজন আবৃত্তি করল। কিন্তু আমাদেরই দুই বন্ধু দুটি গান গাইল- শুভ্রা চ্যাটার্জী আর বাসবী (পদবীটা ভুলে গেছি)। শুভ্রা গাইল ‘বিশ্বজোড়া ফাঁদ পেতেছো’ বাসবী গাইল ‘রাজপুরীতে বাজায় বাঁশী’। কি যে অপূর্ব গেয়েছিল দুজনে। তারা ছিল সুচিত্রা মিত্রের ছাত্রী। সেই প্রথম আমার রবীন্দ্রসঙ্গীত ভালো লাগা, চিনতে শেখা। আমার মা’ও ‘রাজপুরীতে বাজায় বাঁশী’ গাইত, কিন্তু সেটা যে রবীন্দ্রসঙ্গীত তা আমার জানা ছিল না। এর পরে অবশ্য অনেক স্বনামধন্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পীদের সামনে বসে, আমার, তাদের গান শোনার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আমি সেই সুযোগের সদ্বব্যাবহারও করেছি। 

প্রাইমারী স্কুলের দিন শেষ। এবার যাব উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে। কিন্তু তার আগেই গল্প বই পড়ার নেশায় আমরা তিন বোনেই মজে গেছি। জন্মদিন বা অন্য কোনো কারণে আমাদের হাতে পয়সা এলেই আমরা দেব সাহিত্য কুটীর থেকে অনুবাদ বা কোনো রহস্য সিরিজের বই কিনতাম। তাছাড়া মামারবাড়ী তো ছিলই- সেখানের এক আলমারী ভরতি রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনীর বই, যার কথা আমি ‘আমার ভালো লাগা রহস্য রোমাঞ্চ কাহিনী – ১ম পর্ব’তে আগেই লিখেছি তা পড়ার তাগিদে আমরা মাকে ধরে প্রায়ই যেতাম সেখানে আর গোগ্রাসে একটা বই গিলে রাতে বাড়ী ফিরতাম।    

এখন যখন পিছন ফিরে দেখি, তখন মনে হয়, সেই কত কত বছর আগে মেয়েদের যখন মা বাবার বোঝা বলে মনে করা হত, পড়াশোনা শেখায় জোর না দিয়ে বিয়ের প্রস্তুতির জন্য ঘরের কাজকর্ম বা রান্নাবান্না শেখানো হত, আমাদের অভিভাবকরা সেইসময় গৃহকর্ম বা রান্নাবান্না শেখানোর বিন্দুমাত্র চেষ্টাও করে নি, বরং বলেছিল পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে। মনে আছে আত্মীয়দের প্রশ্নের উত্তরে মা বলত “আমি জানি আমার পড়াশোনা জানা মেয়েরা, নিজেদের জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েই ভবিষ্যতে সব কিছু শিখে নিতে পারবে”।

তৃতীয় পর্ব সমাপ্ত

 

 

 

গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. খুব ভালো লিখছো ।
    আমাদের ছোট বয়সের দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে ওঠে । কত স্মৃতি, কত গল্ল্প ।

    1. ধন্যবাদ । তবে ছোটবেলার কথা, আমার মনে হয় কেউই ভোলে না । তুই ও নিশ্চয় ভুলে যাস নি ।

  2. খুব ভালো লাগল তোমার এই journey down the memory lane.তোমার আমার বড় হয়ে ওঠার মধ্যে অনেক মিল পেলাম।হতেই পারে আমরা দুজনেই তো dinosaur যুগের মানুষ।আমি দিল্লীতে তে বড় হয়ে উঠেছি আর আমাদের ও একজন মাষ্টার ছিলেন ,তিনি রাত এগারো টা অবধি পড়াতেন আর কোনদিন অসুস্থ হয়েছিলেন বলে মনে পড়না ।আমি আর দাদা বিরক্ত হতাম তবে উনি রবিবার হলেই আমাদের সিনেমা নিয়ে যেতেন আর library থেকে বই নিয়ে আসতেন।তোমার ছোটবেলার স্মৃতি গুলো এতো সহজ সুন্দর ভাষায় লিখেছ যে আমার ও মনে পড়ে গেল আমার ছোটবেলার কথা।অপেক্ষা করছি পরের লেখাটার জন্য।

  3. আমাদের ছোট বেলা সত্যি ছিল এখনের চেয়ে একেবারেই আলাদা । আমরা আমাদের পরিবারের সীমাবদ্ধতার মধ্যেই আনন্দ খুঁজে নিতাম। এজন্যই হয়তো এখন পরিবারের অভাবটা বড্ড বেশী কষ্ট দেয়, বড্ড মনে পড়ে ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!