Home গল্প অব্যক্ত
গল্প

অব্যক্ত

 

লেখিকা: তপতী রায়

 

“গনসা ও গনসা, খাবি আয় বাবা। আয় তাড়াতাড়ি আয়। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।”

“যাই বাবা।” – বলে গনসা দৌড়ে এসে ভাতের নিয়ে বসে।

গনসা মা মরা ছেলে। বাবা অধীরবাবু তাকে নিয়ে আজ দশ বছর যাবৎ সামলাচ্ছেন। বাবার আদরে গনসা স্কুলের গণ্ডীটুকুও পেরোতে পারেনি। তা না পারুক, গনসা কিন্তু বখাটে নয়। শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির। বাবা অধীরবাবু কেরানির চাকরি করেন। মাস গেলে যা পান, তা দিয়ে দুজনের চলে যায়। বাবা অফিসে বেরিয়ে গেলে গনসা মোড়ের মাথায় দাঁড়িয়ে আড্ডা মারে। কখনো বা পাড়ার দাদু-দিদা গোছের লোকেদের সাহায্যও করে।

এহেন গনসা পাড়ার মেয়ে বনলতার প্রেমে পড়লো। সে বনলতাকে দেখার আশায় সকাল বিকেল তার আসা যাওয়ার রাস্তয় দাঁড়িয়ে থাকে। বনলতা সেটা বুঝতে পারে, কিন্তু সে করুণভাবে তাকিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। এইভাবেই দিন এগোতে থাকে।

একদিন গনসার বাবা বললেন, “কি রে গনসা, তোর মনে হয় না, এ বাড়িতে একজন মেয়েছেলে থাকলে ভালো হতো। যে আমাদের দুজনকে রেঁধে বেড়ে খাওয়াতো। যে আমাদের দুজনকে আদরযত্ন করতো।” গনসা যেন হাতে স্বর্গ পেলো। সে তড়াক্‌ করে উঠে বললো, “হ্যাঁ বাবা, অবশ্যই। আমিও তাই ভাবি সব সময়।” বাবা ছেলের মতের মিল হওয়াতে দুজনেই খুব খুশী হলো।

গনসা ভাবলো এই সুযোগে সে বনলতার সম্বন্ধে বাবাকে বলবে। সে বনলতাকে এই বাড়ির বৌ করে আনবে। এই ভেবে গনসা দিবাস্বপ্নে ডুবে গেলো।

একদিন বাবা তাকে তার স্বপ্নের রানীর বাড়ি নিয়ে গেলেন। সেখানে বাবা অনেক গল্প করলেন। কিন্তু তা শুধুই তাঁর নিজের সম্বন্ধে। বনলতার মাসী পিসীরা তাদের পেট ভরে খাওয়ালেন। তাঁরা বললেন, “গনসা, তোমার কোনোও আপত্তি নেই তো, বনলতা তোমাদের বাড়ির বৌ হলে?”

গনসা লজ্জায় মাথা নিচু করে মাথা নাড়লো। বাড়ির লোকজন তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠলো। আনন্দে তার বাকরুদ্ধ হলো।

সবাই দিন স্থির করলো যে, আগামী অমুক তারিখে রেজিস্ট্রী করে এই বিয়ে হবে। শুভ দিনে বাপ বেটা সেজে গুজে রেজিস্ট্রী অফিসে গেলো। আনন্দে গনসার চোখে জল। যাওয়া মাত্র সবাই দৌড়ে এসে বাবার মাথায় টোপরটা পরিয়ে দিয়ে বললো, “নিন্‌, সাইন করুন, মালা বদল করুন।”

অধীরবাবুর মালা বদল, বিয়ে সব হয়ে গেলো। গনসা বোবা আর কালা হয়ে বাড়ি ফিরলো।

তপতী রায়

জন্ম ও পড়াশুনা অধুনা ঝাড়খণ্ডে। বিবাহসূত্রে দেশের নানা প্রান্তে ঘুরেছি। উপস্থিত রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে গত পঁচিশ বছর ধরে বাস করছি। জয়পুরের প্রচুর বাঙালী আছেন এবং তাঁদের মধ্যে সাহিত্য সংস্কৃতির চর্চা যথেষ্টই আছে। আজ আমি গর্বিত বাঙালী বলে ও জয়পুরের বাসিন্দা বলে।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!