Home বিবিধ, গল্প নির্মল আনন্দ
বিবিধগল্প

নির্মল আনন্দ

অঞ্জন বসু চৌধুরী


সেই যুগটাই অন‍্যরকম ছিল। মানুষের জীবনে চাহিদা কম ছিল তাই জটিলতাও ছিল না। নির্মল আনন্দে বেশ কেটে যেতো দিনগুলো। রিটায়ারমেন্টের পর প্রায়ই এ কথা মনে হয় অমিয়বাবুর। সরকারী অফিসের চাকরী। দায়িত্ব থাকতো ঠিকই। তবে কাজে মাথা গুঁজে পড়ে থাকতে হতো না সবসময়। তাই নানারকম হাসি ঠাট্টায় দিনগুলো কেটে যেত। আজকাল খুব মনে পড়ে অমিয়বাবুর তার অফিসের সহকর্মী বিজন আর সুশান্তর কথা।

বয়সে দু-চার বছর ছোট ছিল বিজন, অমিয়বাবু আর সুশান্তর থেকে। বি. বি. সুশান্ত পাল, বি-কম পাস করে অ্যাকাউন্টসে কাজ করতো। থাকতো খিদিরপুরে। তার পাশের টেবিলে বসতো বিজন। খুব হাসিখুশী ছিল আর বিখ‍্যাত ছিল তার অনুকরণ ক্ষমতা। প্রায়ই সে সুশান্ত পালের সাথে ঠাট্টা ইয়ার্কি করতো। অমিয়বাবু ভাবেন নিজের মনেই, আজকের দিন হলে সবাইয়ের কাছে হয়তো অপ্রিয় হয়ে যেতো সে, তবে আমরা খুব ভালোবাসতাম। এমনকি পালও শুধু ভালোবাসতোই নয় ওর সব ফাজলামি সহ‍্য করতো আবার টিফিনের সময় খাবারের ভাগও দিতো।

এহেন বিজন একদিন পালকে বললো, “পালদা অতো দূর থেকে অফিস আসতে অসুবিধে হচ্ছে বলে চাকরি খুঁজছিস ঠিকই। কিন্তু আমার মনে হয় এখন চাকরী পাওয়া তোর পক্ষে সম্ভব নয়। শুনে শান্ত সুশান্ত পালও রেগে গেল, ফোঁস করে বললো, “কেন, আমি এ্যাকাউন্টসের কাজ জানি আর লেখাপড়াও শিখেছি। আমি সব ধ‍রনের কাজই করতে পারবো”। শুনে বিজন বললো, “কিন্তু পালদা, তুই তো ইন্টারভিউতেই চান্স পাবিনা।”

এ প্রশ্নে অমিয়বাবুর মনে আছে তিনি তো বটেই, অফিসের দু একজন আরো যারা ছিলেন তারাও বলে উঠলেন “আরে, বল কি হে বিজন!”

প্রসঙ্গত, অমিয় বাবুর মনে এলো সুশান্ত পালের সর্দির সেই বিখ্যাত সর্দির ধাতের কথা আর সারাক্ষণ নাক বন্ধ থাকার কথাও।

সে যাই হোক, সেদিন নির্বিকার চিত্তে বিজন বলে চলে, “আরে, ইন্টারভিউয়ে আজকাল সব অজানা বা যা কেউ ভাবতেও পারবে না সেই সব প্রশ্ন করে।”

যথারীতি সুশান্ত বললো, “তোর কি মনে হয় আমি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না! আমি পাস করতে পারবো না ইন্টারভিউতে?” একটু রাগের আভাস পাওয়া গেল ওর কথাতে! বিজন কাঁঁচুমাচু মুখ করে বললো, “তুই আসলে ইন্টারভিউ পাস করতে পারবি না কিছুতেই।”

অমিয়বাবু আর থাকতে না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেলেছিলেন, “কেন বিজন ? সুশান্তকে কি এমন প্রশ্ন করবে যে, ও উত্তর দিতে পারবে না!”

উত্তরে বিজন বললো, “অমিয়দা, ধরুন পালদা ইন্টারভিউ দিতে ঘরে ঢুকলো, একজন অফিসার একটা নীল রুমাল দেখিয়ে পালদাকে জিজ্ঞেস করলো যে, এটা কি?”

সঙ্গে সঙ্গে পাল বললো, “আমি এর উত্তর দিতে পারবো না নাকি!! বলবো যে, এটা লিল্‌ লুমাল”।

ব‍্যাস! সে যা হাসির ফোয়ারা ছুটেছিল তাতে বিজনের শেষ লাইনটাই আর কারুর শোনা হয়নি। হাসতে হাসতে বিজন তখনও বলে যাচ্ছিল, “পালদা। এই অফিসেই থেকে যা। আর কোথাও যাস না আমাদের ছেড়ে।” বেচারা সুশান্ত সর্দির জন্য নাক বন্ধ থাকায় ‘ন’ আর ‘র’ উচ্চারণের জায়গায় ‘ল’ বলে ফেলেছে।

তারপর যা হবার তা হোলো। সুশান্ত নিজেও হেসে ফেললো। এখনও কথাটা মনে করে হাসি ফুটে ওঠে অমিয়বাবুর ঠোঁটে।

সুশান্ত পালের আর অফিস বদলানো হয়নি কখনো, ভয় পেয়ে নাকি সহকর্মীদেের ভালোবাসার টানে, সে উত্তর অমিয়বাবুর আর জানা হয়নি।



অঞ্জন বসু চৌধুরী

কর্মাসে স্মাতক এম বি পাস করে চাকুরি জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও গান এবং গল্পের বই পড়া অঞ্জন বসু চৌধুরীর ন্যতম নেশা। এক সময়ে অসম্ভব সুন্দর মাউথ র্গ্যাবাজাতেন

 

 

 


 

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. অফিসে এ রকম মজা প্রচুর হয়। এগুলো না থাকলে কর্মজীবন খুব একঘেয়ে হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!