বসন্ত বিদায় নিয়েছে কবেই কিন্তু রেখে গিয়েছে মৃত্যুর পরোয়ানা। আকাশে বাতাসে মৃত্যুর গন্ধ এখন আরো তীব্র। গাছের পাতা ঝরার মত ঝরে পড়ছে মানুষের প্রাণ। বাঁচার আকুতি মানুষকে বাধ্য করেছে মানতে স্বেচ্ছাবন্দীত্ব। জীবনে প্রথমবার শোনা ‘লকডাউন’ শব্দটা আমাদের মত ‘প্রিভিলেজড’-দের অনেক কিছু শিখিয়ে দিয়ে গেল।
আমাদের মত কিছু ‘বুরবকের’ দল যারা মাইনের চিন্তায় ঘুরে মরি, তারা আজ হঠাৎ এই ক’মাসে নতুন করে আবিষ্কার করি প্রতিবেশীদের…… ছোটবেলার নিরীহ ‘একানড়ে’-কে পাশের আমগাছটায় বা দোর্দণ্ডপ্রতাপ ‘ব্রহ্মদত্যি’-র বাস বেলগাছটাকে। ওই জারুল গাছ, কাঠবিড়ালি, ফিঙে, দোয়েল, শালিখ, চড়াই … ওরাও এই একানড়ে ব্রহ্মদত্যির মতো আমারই এক অংশ, আগে কোনদিন মনেই হয়নি। আমার বেঁচে নেওয়া জীবনের, অতীত হয়ে যাওয়া দিনগুলির পান্ডুলিপি সযত্নে গচ্ছিত আছে ওদেরই কাছে।
এই লকডাউন শিখিয়েছে সংখ্যার মহিমা। সবকিছুকে পেছনে ফেলে এই সংখ্যাই এখন ফোরফ্রন্টে। সকালে দাঁত মাজার সময় যা থাকে তিনশো পঞ্চাশ, দুপুরে জেলুসিল খেয়ে ওঠার পর হয়ে যায় পাঁচশো কুড়ি … সংখ্যার নিরিখে শঙ্কাও বাড়ে ক্রমবর্ধমান হারে। এই ক’মাসে আচমকা বিশেষজ্ঞ হয়েওঠা লক্ষ পাবলিকের কারণে ‘জেনে গিয়েছি’ অসুখটা কি এবং কেন। বিভিন্ন ব্যক্তিপ্রতিভার প্রজ্ঞার আলোতে আলোকিত হয়েছে ‘কতগুলো লেবু একসঙ্গে খেলে বা টানা কতক্ষণ বারান্দার ঈশাণ কোণে এক কোয়া রসুন, কাঁচা হলুদ মুখে দিয়ে নীলডাউন হয়ে রোদ লাগালে এই ইনফেকশন নাকি “বাপ বাপ” বলে হিমালয়ে চলে যাবে’ গোত্রের সিরিয়াস তত্ত্ব। আয়ুর্বেদ, এলোপ্যাথ, হোমিওপ্যাথ সবাই সিমপ্যাথেটিক…. সব ঘেঁটে ‘ঘ’।
দেখলাম সিনেমায় দেখা মহাকাশচারীদের মতো বর্ম , মুখোশ পরে পরাক্রমশালী মানুষ ভয়ানক লড়াই করছে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এক ভাইরাসের বিরুদ্ধে নিধিরাম সর্দারের মত। দেখলাম চরণামৃতর বদলে এখন হাত পাতলেই পড়ে স্যানিটাইজার (মাথায় চলে যায় হাত মাঝে মাঝে অভ্যাসবশত)। জানলাম আগে যা ছিল ওয়াই-ফাই হটস্পট, এখন তাই হয়ে গেছে এই রোগের হটস্পট … যেখানে সামনে পাবলিক স্ট্যাচু কিন্তু আড়ালে চলে চুক্কি দেওয়ার খেলা।
পাখিদের মতো মানুষও পরিযায়ী হয়, এই প্রথম জানলাম।ভাদুর মা সমানে কেঁদে চলে, ”মানুষটার কি হঠাৎ ডানা গজাবে যে, উইড়্যা উইড়্যা চলে আসবে? মালিকই তো খেদিয়ে দিল … সরকার কি কিছুই করবেনি ?”
সরকাররা আর কবে কার কথা ভাবে! হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে যায় পুঁটলি নিয়ে সন্তান কাঁধে এই পরিযায়ী ভারতবাসীরা —- কেউ বাড়ি ফেরে, কোনো কোনো ভাদুর বাপের আর ফেরা হয় না।
কার দিকে আঙ্গুল তুলব? লকডাউনের লাল চোখ না দেখলে এই রোগে পড়তে হয়। ঝড় সামলাতে গেলে সামাজিক দূরত্ব লোপাট হয়। সিস্টেমের দিকে দৃষ্টি ফেরালে প্রকৃতি হাসে। প্রকৃতিকে দোষ দিলে, নিজের দোষ আগে আসে।অন্ধকার রান্নাঘরে পেঁয়াজের ঝুড়ির ওপর দিয়ে অনিশ্চয়তা হেঁটে যায়। আমরা তো তাও খেতে পাই। যারা তাও পায় না? ডীপ ফ্রিজের ভেতর থেকে অশুভ যাপনের বাসি গন্ধ বেরোয়।
উঁচুতে ড়তে থাকা পেটকাটি চাঁদিয়ালরা হাসতে থাকে।
ঊর্মি বসুন্ধরা দুহিতা
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাতত্ত্বে স্নাতকোত্তর। শিক্ষকতা ছাড়াও সমাজসেবার কাজের সাথে যুক্ত আছেন অনেকদিন। অবসরের সঙ্গী রঙ-তুলি আর কলম। সাদা কাগজে কল্পনা কখনো রঙীন হয়ে ওঠে তাঁর তুলির আঁচড়ে কখনোও বা ইচ্ছেঘুড়ি ডানা মেলে লেখিকার কলমের কালিতে।
Sundar lekhata. Darun…
Dhonyobad
Urmi tomar lekhata mon chuye gelo khub bhalo laglo..
Thank you ❤🌹😊
Thank you ❤🌹😊