সঞ্চারী গোস্বামী মজুমদার
কলকাতা যার আরো দুটি নাম হল ” সিটি অফ জয়” ও “সিটি অফ প্যালেসেস্”।এই শহরকে সিটি অফ জয় বলার কারণ হলো এর সংস্কৃতি,প্রেম, রহস্য,উৎসাহ, কিছু সুস্বাদু খাবার যার মধ্যে অবশ্যই স্থান পায় বিভিন্ন ধরনের মিষ্টির আইটেম। এইসব দিয়ে যেন এই শহরটা সব ধরনের মানুষকে একসূত্রে বেঁধে রেখেছে।এই শহর সব বাঙালির কাছেই খুব প্রিয়। এই শহরের নিজের একটি ঐতিয্য আছে যা পুরোনো এবং নতুন কলকাতার মেলবন্ধন ঘটিয়েছে। আর সিটি অফ প্যালেসেস্ বলার কারণ হল
কলকাতা এই শব্দটা এসেছে কলিকাতা নামক এক গ্রামের থেকে। এবং তার সাথে আরো দুটো গ্রাম গোবিন্দপুর আর সুতানটি মিলে কলকাতা শহর স্থাপিত হয়। তাই এটা বলা যেতেই পারে যে ভারতের অনেক পুরোনো এবং ঐতির্য্যপূর্ণ শহর হল আমাদের এই কলকাতা। তবে এই শহেরে এমন অনেক ছোট-বড় কথা আছে যা না জানলে, এই শহরের অনেকটাই অজানা থেকে যাবে।
এবার দেখে নেবো একে একে সেইসব উল্লেখযোগ্য কথা যেগুলো ছাড়া কলকাতাকে সম্পূর্ণ ভাবে জানা যাবে না।
১. কলকাতার বইমেলা
কলকাতা বইমেলা হল এশিয়ার মধ্যে সবথেকে বড় বইমেলা এবং বিশ্বে কলকাতা বইমেলা তৃতীয় স্থানে আছে। এই বইমেলাতে সব ধরনের মানুষ আসে বিভিন্ন জায়গা থেকে। অনেক নামি দামি মানুষের সাথে সেখানে সাধারণ মানুষ এক হয়ে বই কেনে। এই মেলাতে শুধু যে বই পাওয়া যায় তা নয়, তাছাড়াও অনেক ধরনের শিল্প এবং সংস্কৃতির প্রদর্শন হয়ে থাকে। অনেক ধরনের শিল্পীরা এই মেলাতে আসে নিজেদের শিল্পের প্রদর্শন করতে। তাই এটা বলা যায় যে যতটা সময় ধরে বইমেলার চলে কলকাতার বুকে সেই সময়টা সব বাঙ্গালীদের জন্য খুবই আনন্দের।
২. রিক্সা
রিক্সা শব্দটা খুবই চেনা কিন্তু ভারতের বিভিন্ন জায়গা বা বিশ্বের অনেক জায়গা থেকে আমাদের কলকাতার রিক্সা অনেকটাই আলাদা। কলকাতার আনাচে-কানাচে,গলিতে গলিতে,যেসব রিক্সা চলে তা আর পাঁচটা রিক্সার মতন নয়। এখানে একজন মানুষ হাতে টেনে নিয়ে যায় রিক্সাকে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা, দিন হোক বা রাত, সব সময় আমরা এই রিক্সা দেখতে পাই কলকাতার রাস্তায় চলতে।
৩. ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালকাটা
১৮৫৭তে প্রথম ওয়েস্টার্ন স্টাইলে কলেজ তৈরী হয় এশিয়াতে। এই কলেজ সেক্যুলার এবং এই কলেজের সাথে অনেক গন্য-মান্য ব্যক্তি জড়িয়ে আছে যেমন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন, সি.ভি. রামান,সত্যজিৎ রায়, আদিত্য বিরল এবং আরো অনেক নামকরা ব্যক্তিরা।
৪.হাক্কা নুডেলস
ইন্ডিয়া অর্থাৎ ভারতে যে ধরণের চাইনীজ পাওয়া যায় সেই খাওয়ার প্রথম তৈরী হয় কলকাতাতেই। এই শহরে অনেক চাইনীজ মানুষ আছেন যার কারণে এখানেই একমাত্র ইনস্টিটিউশন্স অফ চায়্না টাউন আছে।
৫.অ্যাস্টর হোটেল
এই হোটেল কলকাতার ময়দান মেট্রো স্টেশনের কাছে অবস্থিত। এই হোটেলকে বলা যায় ব্রিটিশদের স্থাপত্যের চিহ্ন বহন করে চলেছে। এই বিল্ডিং ১০০ বছর পুরোনো তাও আজ অব্দি এর শোভা কমেনি বরং পুরোনো আর নতুন কে একসাথে করে রেখেছে নিজের চার্মে।
৬. U.S.কনস্যুলেট
এই U.S. কনস্যুলেট হলো দ্বিতীয় পুরোনো কনস্যুলেট। ১৭৯২ সালের ১৯শে নভেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন একজন মার্কিন কনসুলকে পাঠায় কলকাতায়। তারপর অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এই কনস্যুলেট তৈরী হয় বেঞ্জামিন জয় এর হাত ধরে।
৭.রসগোল্লা
রসগোল্লা এই মিষ্টির যে জগৎজোড়া নাম আছে তাকে অস্বীকার করতে পারবে না। যদিও সম্প্রতি বলা হয় যেএই মিষ্টি প্রথম উড়িষ্যাতে তৈরি হয় তাও আমাদের কাছে স্যার নবীনচন্দ্র দাস ই প্রথম। আর তাই এনাকে দা ফাদার অফ রসগোল্লা বলা হয়। একবার তিনি প্রকৃত বাঙালির মতন এক প্লেট সাদা রঙের মিষ্টি এক গ্লাস জলের সাথে একজনকে খেতে দিয়েছিলেন। তিনি ছিল এক বণিক এবং তার সঙ্গে সঙ্গে এই মিষ্টির স্বাদ ভীষণ পছন্দ হয়। তারপর থেকেই বাঙালির আইকন হিসাবে রসগোল্লা খ্যাত।
৮.গড়িয়াহাট চেস্ ক্লাব
বাংলার ঘরে ঘরে চেস্ অর্থাৎ দাবা খেলার চল অনেকদিন ধরেই আছে। আর এই খেলার প্রতি ভালবাসা এতটাই বেশি যে তার জন্য গড়িয়াহাটের রাস্তার উপরে এই খেলা মানুষের দিনের পর দিন খেলে। অফিস ফেরতা লোকেরা সবাই রোজদিন ফেরার পথে গড়িয়াহাটের সেই জায়গায় পৌঁছে যায় এবং অপেক্ষা করে নিজেদের পালা আসার।
৯.হাওড়া স্টেশন
এই স্টেশনকে বলা চলে ভারতের সবথেকে ব্যস্ততম স্টেশন। শুধু তাই নয় হাওড়া জংশন হল এই স্টেশনের সবথেকে পুরনো এবং সবথেকে বড় পুরো ভারতের মধ্যে। এই স্টেশনে মোট 23 টি প্ল্যাটফর্ম আছে আর 25 টি ট্র্যাক আছে। এটা বলা হয় যে এই স্টেশনে রোজদিন কমপক্ষে 1 মিলিয়ন লোকের যাতায়াত হয়।
১০. দুর্গাপুজো
কলকাতায় বাঙ্গালী উৎসব বললেই সবার আগে যা মনে আসে তা হলো দুর্গাপুজো। যদিও আমরা জানি যে বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ কিন্তু তাও এই পুজোর একটা আলাদা রকম মাহাত্ম্য আছে প্রত্যেক বাঙালির কাছে। প্রত্যেক বছর এই সময় সব ধরনের মানুষ নিজেদের সবটুকু দিয়ে আনন্দ উপভোগ করার চেষ্টা করো আর আমাদের শহর কলকাতা কে পুরো নববধূর মত সাজিয়ে ফেলে। এই পূজাকে ঘিরে প্রচুর মানুষের যা একদিকে যেমন উপার্জন হয় তেমনি অনেক মানুষ ঘরে ফিরে আসে নিজেদের পরিবারের কাছে। এই পার্বণ জুড়ে থাকে নানা রকম অনুষ্ঠান খাওয়া-দাওয়া। তাই বাঙালির মনে দুর্গাপুজোর জায়গা অনেক উপরে আর কলকাতায় তার রূপ অতুলনীয়।
এছাড়াও আরো অনেক এমন জিনিস আছে যা কলকাতার সাথে একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। বাঙালিরা কলকাতাকে নিয়ে ভীষণ বেশি ইমোশনাল। যেকোন বাঙালি বা অবাঙালি, যে একবার কলকাতায় এসেছে সে নিশ্চয়ই এই ব্যাপারটাকে নিজের মন থেকে ফিল করবে আর আমি নিশ্চিত যে সেও সিটি অফ জয় বা সিটি অফ প্যালেসেস্-কে ভালবেসে ফেলবে।
Sanchari Goswami Majumdar
Loves to teach and practice dance. Likes to read books.