অঞ্জন বসু চৌধুরী
১৮৯৯ সালের ২৫শে মে জন্ম নিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম যাঁর প্রতিবাদী মানষিকতার জলন্ত উদাহরণ তাঁর লেখা অজস্র গান ও কবিতা। বিদ্রোহী কবি, সুরকার লেখক এবং বাংলাদেশের জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বিভিন্ন ধারার গান রচনা করেছেন যার মধ্যে ভক্তি এবং প্রতিবাদ দুইয়েরই পরিচয় পাওয়া যায়। তাঁর রচিত গানকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। ভক্তিমূলক, প্রণয়গীতি, প্রকৃতি বন্দনা, দেশাত্মবোধক, রাগপ্রধান, ব্যাঙ্গাত্মক, হাসির গান, সমবেত সংগীত, রণসঙ্গীত এবং বিদেশী সুরাশ্রিত গান। তাঁর রচিত লোকগানগুলির মধ্যে দিয়ে সমাজের বিভিন্ন শ্রেনী যেমন, মাঝি মাল্লা, ধীবরের জীবনযাত্রা থেকে শুরু করে সাঁওতালী, ঝুমুর, বাউলই শুধু নয়, গ্ৰামের লোকজীবনের চিত্রও আঁকা হয়ে যায়। তিনি যেমন বিদেশী সুরের আশ্রয়ও নিয়েছেন তেমনি হারিয়ে যাওয়া কিছু রাগ রাগিনী ও আমরা তাঁর রচিত গানের মধ্যে পেয়ে থাকি। তাঁর রচিত শ্যামাসঙ্গীত যেমন সুমধুর তেমনই তাঁর দেশাত্মবোধক বা প্রতিবাদের গান ও মনকে গভীরভাবে নাড়িয়ে দেয়। এই স্বল্প পরিসরে তাঁর গান ও কবিতার সংখ্যা লিপিবদ্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বেশ কিছু প্রচলিত গান নিঃসন্দেহে সবাইয়ের ভালোলাগার গান হিসেবে চিরদিন থেকে যাবে – কারার ঐ লৌহকপাট, র্দূগম গিরি, নয়ন ভরা জল, তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, ওগো প্রিয় তব গান, আধো আধো বোল লাজে, ফুলেরো জলসায় নীরব কেন কবি প্রভৃতি অগুন্তি গানের ডালি।
তাঁর জীবনের শেষের দিকে যখন কবি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছিলেন সেই সময় তাঁর অনেক ভক্ত ও শ্রোতারা এবং অনেক শিল্পীও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। সেরকমই একটি দিনে ধীরেন্দ্র চন্দ্র মিত্র, মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়, সতীনাথ মুখোপাধ্যায় সবাই কবির সঙ্গে দেখা করতে গেছিলেন। ধীরেন চন্দ্র মিত্র গান ধরলেন “ফুলেরো জলসায় নীরব কেন কবি”। গান শুনে কবির চোখ দিয়ে ঝরঝর করে জল পড়তে লাগলো।
বিদ্রোহী কবির স্মরণে এই লেখাটি আমার অন্তরের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
অঞ্জন বসু চৌধুরী
কর্মাসে স্মাতক ও এম বি এ পাস করে চাকুরি জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়লেও গান এবং গল্পের বই পড়া অঞ্জন বসু চৌধুরীর অন্যতম নেশা। এক সময়ে অসম্ভব সুন্দর মাউথ অরগ্যান বাজাতেন।