জয়শ্রী বোস
|| দ্বিতীয় পর্ব ||
এক একটা দিন যায়, বিয়ের দিন এগিয়ে আসে। একে অল্প বয়স তার মধ্যে শ্বশুরবাড়ি বেশ অনেকটাই দূরে। ভয় মেশানো ভালোলাগা নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলাম। বাসরঘরে আমার স্বামীর হাসি হাসি মুখ দেখে ভয়টা কিছুটা কমলো। স্বাভাবিক ভাবেই তখনকার দিনের চল অনুযায়ী বাসরঘরে গান, গল্পের আসর বসলো। এই পরিবেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে বলে মন ভারাক্রান্ত ছিল নিশ্চয়ই, আবার নানা রকমে গল্পে গানে ভালো ও লাগছিল। আমার ভাইবোনেরা সব ধরলো তাদের জামাইবাবুকে গান গাওয়ার জন্যে। আমাকে অবাক করে দিয়ে গান ধরলেন “আকাশ ভরা সূর্য তারা” – সেই রবিঠাকুর। মুখ ফুটে না বলতে পারলেও ভালো যে লেগেছিল তা আমার মন বুঝেছিলো ,যখন আমার পালা এলো তখন গাইলাম “আমার পরাণ যাহা চায়”। আমি আর আমার স্বামী প্রথম দিন থেকেই গানের মাধ্যমে একাত্ব হয়ে গেলাম।
দিন কাটতে লাগলো সংসারের নানা কাজের মধ্যে। ইতিমধ্যে শ্বশুরবাড়ির সব আত্মীয়স্বজন কখন আর কেমন করে আপন হয়ে গেছে কে জানে। আমার ননদ গান শিখতো। ননদ ভাজ মিলে গানের পরিবেশ তৈরী হতো প্রায়দিন। বিশেষ করে আমার মামা শ্বশুরবাড়ির সবাই যখন আসতো তখন দিনগুলো কেমন করে কেটে যেত কি বলবো। সবাই কম বেশী রবীন্দ্র আর নজরুল অনুরাগী। নিজে গাইতাম কম, মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। মনে পড়ে যেতো বাড়ির কথা। জানিনা রবিঠাকুরের কোন গান লেখার পেছনে কি কারণ বা মনের অবস্থা লুকিয়ে আছে তবে আমার মতো গৃহবধূর মন ছেয়ে আছে তার গানে। এভাবে কেটে গেল মাস, বছর, দিন। কোলে এলো দুই ছেলেমেয়ে। এই ক’ বছরে সংসারের নানা উনকোটি সমস্যা আর টানাপোড়েনের মাঝে ভরসা ছিল আমার স্বামীর সংবেদনশীল মন আর আমাকে বুঝতে পারার অদ্ভুত এক ক্ষমতা। তাই বোধহয় দৈনন্দিন কাজের ফাঁকে ও সন্ধেবেলা ছেলেমেয়ের পড়াশোনার পাঠ শেষ করে রেকর্ড প্লেয়ারে গান শোনা ছিল আমাদের সব ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠার একমাত্র আশ্রয়। মাঝে মাঝে ছেলে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে চলতো আবৃত্তি। আমরা চেয়েছিলাম আমাদের ছেলেমেয়ে বই পড়ুক, গান নাচ এইসবের ভক্ত হোক। ছেলেমেয়ের মধ্যে রবীন্দ্রচেতনা আনতে পেরেছি আমরা কারণ কবির গান আমাদের বেধেঁছিল ‘সুরের সাধনে”। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বড় হয়ে উঠল আমার ছেলেমেয়ে। লক্ষ্য করলাম মেয়ে আমার মতো বই আর রবীন্দ্র অনুরাগী হয়ে পড়ছে। ভালো লাগতো যখন দেখতাম স্কুলের অন্য সব পড়া সরিয়ে রেখে সবার আগে রবীন্দ্রনাথের কোনো লেখা বা কবিতা পড়তো। মায়েদের অনেক না পাওয়া যে মেয়েদের মধ্যে দিয়ে পূরণ হয়ে যায় তা সত্যি হয়ে উঠছিলো আমার জীবনেও। তখন কলকাতায় লোডশেডিং এর খুব বাড়াবাড়ি। বেশীক্ষন ল্যাম্প বা হ্যারিকেনের আলোয় পড়াশোনা করা যেত না তাই ল্যাম্পের আলো নিভিয়ে দিয়ে লম্বা খোলা বারান্দায় বসে আমার স্বামী উদাত্ত গলায় গান ধরতেন “চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে”। মনে হতো বোধহয় এমন মূহুর্ত্তের জন্যে ই কবি লিখেছেন “এমনি করেই যায় যদি দিন যাক্ না”। বড় প্রিয় আমার এই গানটি। কেমন যেন মনে হয় জীবনের সমস্ত না পাওয়া ভুলিয়ে দেয়।
কেটে গেলো বেশ কিছু বছর। বদলালো আমার ও অনেক কিছু। বিবাহিত জীবনের প্রেম তখন সাংসারিক জীবনের গতানুগতিকতায় হিমশিম খাচ্ছে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেলো। ছেলে গেল কলেজ হস্টেলে। আবার সেই আমরা দুজন। প্রেমের জোয়ারে ভাসার বয়স হয়তো নেই কিন্তু “তোমার সাথে প্রাণের খেলা” তা যে চির সত্যি।
আজ এই অবধি। বাকী গল্প আবার পরে বলছি।
বেশ ভালো।
অসাধারণ
Daarun!
Apurbo, anekdin pare tomar lekha te amader purono smriti abar jege uthlo. Pronam nio ar sange akuntho shubhechha roilo. Parer lekhata r jonye udgrib hoye roilam. Anjan
Tomake r ki dhanyabad debo bolo ,onek bochorer somporko tomader songe,hoyto majher kichu bochor jogajog chilo na tomrato amader songe sobsomoye akatto thakte. Bhalo theko
Sobai.
Sashwati, thank you bhalo theko.