Home বিবিধ, প্রবন্ধ ভালোবাসার ক্ষেত্রে সহানুভূতির ভূমিকা
বিবিধপ্রবন্ধ

ভালোবাসার ক্ষেত্রে সহানুভূতির ভূমিকা

সঞ্চারী গোস্বামী মজুমদার


 “সহানুভূতি” এই শব্দটা আমরা কমবেশি প্রত্যেকেই জানি আর  এই শব্দটি ব্যবহারের সাথে আমরা অনেক ছোট থেকেই অবগত। অনেক সময় আমাদের বড়দের কাছ থেকেও আমাদের শুনতে হয় যে আরও সহানুভূতিশীল হলে ভালো হতো। কিন্তু আবেগ,সহানুভূতি, এইসব ব্যাপার গুলোর সাথে আমরা আদৌ কি খুব ভালোভাবে পরিচিত? একটি সম্পর্ক গভীর করতে সহানুভূতির ভূমিকা অনেকটাই থাকে।  তাই আমাদের উচিৎ বুঝে এই শব্দ এবং এর সাথে জড়িত অনুভূতিকেও যত্নের সঙ্গে ব্যবহার করতে হবে, যাতে করে আমাদের কোনদিনও আফসোস  বা অনুতাপ না থাকে।

 

 আসলে এই সহানুভূতি কি?

 সহানুভূতি বলতে গেলে সবার আগে আমি বলব যে একজন মানুষ হয়ে আরেকজন মানুষের কষ্ট বোঝা।  তার সুখে দুঃখে বিপদে পাশে গিয়ে দাঁড়ানো। কিন্তু এইটুকু বলার কি যথেষ্ট হবে? আমার মনে হয়  কোথাও যেন একটা অসম্পূর্ণতা আমরা এই কথার মধ্যে  পাচ্ছি।সহানুভূতিকে  ভালোভাবে  ব্যাখ্যা করার জন্য ইংলিশ  শব্দদুটিকে  আগে বুঝতে হবে।  প্রথম শব্দটি হল ‘সিমপ্যাথি’, যার ব্যাখ্যা হল যখন কোন মানুষ দুঃখে থাকে, কষ্ট থাকে বা কোন বিপদের মধ্যে পড়ে তখন সেই মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি বোঝা এবং তার মনের ভাব কে  বুঝে তার পাশে সবসময় থাকা ও তাকে সান্ত্বনা দেওয়া -এটাই হল সিমপ্যাথি আর দ্বিতীয় শব্দটি হল ‘এমপ্যাথি’।  এমপ্যাথি মানে কারুর কষ্ট দুঃখ বুঝে শুধু তার পাশে গিয়ে দাঁড়ানো নয়,শুধু  তাকে সান্ত্বনা দেওয়া নয় বরং নিজেকে তার জায়গায় রেখে তার সম্পূর্ণ পরিস্থিতির সাথে একাত্ম হয়ে যাওয়াকে এমপ্যাথি বলে। বাংলাতে এই দুটি শব্দের অর্থই সহানুভূতি হয়। এমপ্যাথি আসলে  তৈরি হয় ব্রেনের একটি  অংশে যাকে বলা হয় ‘ইনফিরিয়র ফ্রন্টাল  জায়রাস’।

আসুন এবার দেখা যাক এই সহানুভূতিকে আমরা ঠিক কিভাবে ব্যবহার করে,আমাদের কাছের মানুষের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখব।

 

১.সবার আগে মানে বোঝা

আগেই বললাম সহানুভূতির মানে  ইংলিশে দুটো হয়, সিমপ্যাথি এবং এমপ্যাথি।  সঠিকভাবে কাউকে সহানুভূতি জানাবার জন্য যে শব্দটার ব্যবহার ঠিক সেটা হল এমপ্যাথি। যদিও বহু মানুষ সিমপ্যাথি,কম্প্যাশন এই অনুভূতি গুলোর সাথে  এমপ্যাথি কে মিলিয়ে  ফেলে।  মানেটা ঠিকমতো  বুঝতে পারলে আমরা আসলে বুঝতে পারবো যে এই অনুভূতিগুলো আসলে কি?  তাই সবার আগে এমপ্যাথি ওয়ার্ডটার  মানে বুঝে ফেল্লেই পরে এটি কার্যক্ষেত্রে ব্যাবহার করতে অনেক সুবিধা হবে। অনেক ক্ষেত্রে  বিজ্ঞানীরা এটা বলেন যে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা অনেক বেশি ভালো এমপ্যাথি ফিল করতে পারে অন্যের জন্য। কিন্তু যাই হোক না কেন মানে বোঝা টা সবার আগে জরুরী সবার জন্য। কারণ কোন কিছু যদি আমরা ভালো করে না জানতে পারি তাহলে পরে আমরা অজ্ঞানতার অন্ধকারেই সবসময় থেকে যাব।

 

২.সোশ্যাল লাইফ ভালো হয়

আজকাল কাজ মানুষের জীবনে সোশ্যাল লাইভ ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। আর তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রচুর মানুষের সাথে রোজই কোনো-না-কোনোভাবে যোগাযোগ হয়।  কিন্তু শুধু যোগাযোগ রাখলে হয় না। তার সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য অনুভূতির বিশেষ প্রয়োজন। আর সেই অনুভূতির একটি মুখ্য  জায়গায় আছে এমপ্যাথি।  হ্যাঁ, এমপ্যাথি যেটা আমাদের সোশ্যাল কানেকশন কে ভালো করে, সম্পর্কে আরো  গভীর করে,  অনেক সময় অনেক ঝামেলা অশান্তি কেউ মেটাতে সাহায্য করে।

 

৩.  কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা

আমাদের জীবনে  কর্মক্ষেত্রে অনেকটা সময় চলে যায়।  এমপ্যাথি প্রয়োজন এখানে  তাই অনেক বেশি। এই অনুভূতির কারণে আমরা অন্য সহকর্মীদের সাথে ভাল সম্পর্ক রাখতে পারব এবং তাতে আমাদের কাজ করতে অনেক সুবিধা হবে। আমরা নিজেদের কাজ কে নিয়ে অনেক বেশি খুশি থাকব যাকে বলে ‘জব স্যাটিসফ্যাকশন’।  চাপ এবং উদ্বেগকে আমরা একে অপরের সাথে ভাগ করে নিতে পারবো। ফলে আমাদের কাজ এবং কাজের জায়গাটা আরো বেশি সুন্দর হয়ে উঠবে।

 

৪. পরিবার ও পরিজন

যেকোনো মানুষের জীবনের পরিবারের একটি বিশেষ ভূমিকা আছে। এবং তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা প্রত্যেক অনুভূতি ও গুরুত্ব অনেক বেশি। তাই এটা হয়তো বলে দিতে হবে না যে সহানুভূতি বা এমপ্যাথি যাই বলা হোক না কেন, সেটা আমাদের পরিবারের জন্য এবং পরিবারের মানুষগুলোর জন্য তা  কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। এমপ্যাথি কারণেই অনেক সম্পর্ক অনেক বেশি গভীর হয় আমরা নিজের লোকের অনেক কাছের হতে পারি । আর তারা আমাদেরকে পেয়ে অনেক বেশি নিশ্চিন্ত বোধ করে।কারণ পরিবার -পরিজন একজন আর একজনের পাশে থাকবে,তার সুখ-দুঃখ তাকে নিজের করে নেবে এটাই কাম্য। 

 আর এটা একজন এম্পথেটিক ব্যক্তির পক্ষেই করা সম্ভব।

 

৫. ভালোবাসার মানুষের সাথে সম্পর্ক

আমাদের প্রত্যেকের জীবনে একজন বিশেষ মানুষ থাকে। তা সে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক হোক, বা প্রেমিক-প্রেমিকা, যাই হোক তাদের সাথে আমাদের আত্মা মিলিত হয়।  তাদের সাথে আমরা খুব সহজেই আমাদের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নিতে পারি।  কিন্তু অনেক সময়েই দেখা যায় যে অনেকেই হয়তো  তার পছন্দ অপছন্দ সুখ-দুঃখ এগুলো বোঝে  কিন্তু অনুভব করতে পারে না। আর এই কারণে সৃষ্টি হয় অনেক অশান্তির। আমাদের সবসময় উচিত  সেই বিশেষ মানুষটির কথা শোনা এবং তার বলা এবং না বলা দুঃখ কে বুঝে  তার সাথে এম্পথেটিক হয়ে ওঠা। তাহলে দু’জনেই ভালো থাকা  যাবে।

 

৬. বন্ধুত্ব

এটা বলতে বাকি রাখে না যে বন্ধু প্রত্যেকের জীবনেই আসে। আমাদের নানা বয়সের নানা স্তরে নানা রকম মানুষের সাথে দেখা হয় এবং কিছু কিছু মানুষ সাথে বন্ধুত্ব হয়। বন্ধুত্বের ক্ষেত্রে এমপ্যাথি অর্থাৎ সহানুভূতি একটা অন্যরকম মাত্রা আছে। বন্ধুদের  সাথে আমরা যেমন চাই আমাদের সুখ দুঃখ কষ্ট সব কিছু ভাগ করে নিতে তেমনি এটাও আশা করি যে তারা আমাদের দিকটাও বুঝবে এবং আমাদের সঙ্গ দেবে বা সমস্যার সমাধান করে দেবে। কিন্তু আমারা সব বন্ধুকে সব কথা বলে উঠতে পারি না কারণ অনেকেই হয়তো সিমপ্যাথি দেখায় কিন্তু এমপ্যাথি খুব কম জনই দেখাতে পারে। এমপ্যাথি দেখানো বন্ধুরা কখনোই বন্ধুদের সাহায্য করতে বা কোনরকম সমস্যার সমাধান দিতে পিছিয়ে থাকে না। সবসময় তাদের সাহায্য করার জন্য, পাশে থাকার জন্য তৈরি থাকে কারন তারা মন থেকে বোঝে সেই সমস্যা বা কষ্টের কারণটা আর এটা কখনোই মনে করে না যে  সেটা শুধুই বন্ধুর সমস্যা। কারণ সেটা তাদের নিজেদেরও সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। 

 

৭. নিজের সাথে নিজের সম্পর্ক

নিজেকে আমরা কখনোই  অতটা প্রাধান্য দিতে পারিনা বা চাইও না। নিজের সাথে নিজের সম্পর্ক বলে যে কিছু হতে পারে সেটা আদৌ আমরা কতটা মানি সেটা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সেখান থেকেই একটা বড় সমস্যা শুরু হয়। আমরা অনেকেই নিজেকে নিজে চিনি না বা জানিও না। কিন্তু নিজেকেই যদি না জানলাম তাহলে নিজের সমস্যা গুলোকে কি করে মেনে নেব আর তার সমাধান কি করে পাবো। অনেক সময় অকারণে অন্য কোন মানুষের থেকে কষ্ট পেলে আমরা সেটা মানতে চাই না। নিজেদের অসফলতা কে মেনে নিতে যথেষ্ট কষ্ট হয়। কিন্তু এটা করতে করতে আমরা নিজেদেরকে নিজেরা হারিয়ে ফেলি।  ফলে এমপ্যাথি  ওয়ার্ডটা স্পেলিং জানলেও কার্যকরী কখনোই হয় না।    তাই আমাদের উচিত নিজেদের নিজেকে কিছুটা সময় দেওয়া এবং নিজেদের অনুভূতি গুলোকে গোপন না করে সে গুলোকে স্বীকার করে নিয়ে তা সমাধান করা।

 

যেকোনো অনুভূতি বুঝতে একটু সময় লাগবে।

 আশা করি  যে কিছুটা হলেও আমি সহানুভূতি অর্থাৎ সিমপ্যাথি ও এমপ্যাথি এবং তার ব্যবহার কে বোঝাতে পেরেছি।



লেখিকা পরিচিতি

Sanchari Goswami Majumdar

Loves to teach and practice dance. Likes to read books.

 

 

 


 

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!