মঞ্জুশ্রী দে
।। ১ ।।
আমার নাম রাধিকা, আমি কলকাতার ভবানীপুরের বাসিন্দা। আমি, আমার স্বামী ও দুই মেয়ের সংসার ছিলো। মেয়েদের বিয়ে হয়ে যাওয়ার এখন আমি আর আমার স্বামী দুজনে থাকি। আমাদের বাড়িতে মাঝবয়সী একজন মহিলা প্রায় ২০ বছর ধরে রান্নার কাজ করে। নাম মায়া। দেশ কৃষ্ণনগরে। ওরা চার ভাইবোন কলকাতাতেই থাকে। ওর ছোট ভাই ওদের গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করে কুঁদঘাটে একটি ঘর ভাড়া করে থাকে। বৌয়ের নাম কল্পনা। মায়ার ছোট ভাই বাস কন্ডাক্টর। সকালে বেরিয়ে যায়, রাতে ফেরে।
কল্পনা খুবই অলস প্রকৃতির ও ভীষণ ঝগড়ুটে। সেই জন্য পাড়ার কেউ তার সঙ্গে কথা বলে না। একদিন মায়ার ছোট ভাই, বৌকে নিয়ে মায়ার বাড়িতে এসে তাকে বলে, কল্পনাকে মাসখানেকের জন্যে তার কাছে রাখতে। মায়া সানন্দে রাজি হয়ে যায়।
একদিন কল্পনা মায়াকে বলে। “দিদি, তোমার একটা শাড়ি দেবে? আমি পরবো, যাওয়ার সময়ে দিয়ে দেবো।” মায়া আলমারী খুলে বললো, “দেখ, কোন শাড়িটা পরবি?” কল্পনা একটা কমলা রঙের শাড়ী পরতে চাইলো। ওই শাড়িটা মায়ারও খুব পছন্দের শাড়ি ছিলো।
শাড়িটা কল্পনা সব সময়ে পরে থাকতে লাগলো। এইভাবেই দিন কাটছিলো।
প্রায় একমাসের কাছাকাছি এসে, একদিন সামান্য কারণে কল্পনা ভীষণ ঝগড়া করলো মায়ার সঙ্গে। মায়াকে সে, যা নয় তাই বলে গালাগাল দিতে লাগলো। অবস্থা এমন দাঁড়ালো যে, শেষপর্যন্ত রাগ করে মায়া তাকে বাড়ি থেকে বার করে দিতে বাধ্য হলো। মায়ার সেই পছন্দের কমলা রঙের শাড়ীটা পরেই কল্পনা তার বাড়ি ছেড়ে চলে গেলো।
এই ঘটনার প্রায় মাসখানেক পর একদিন মায়ার ভাই ফোনে তাকে একটা দুঃসংবাদ দিলো। আগের রাতে চা করতে গিয়ে কল্পনা স্টোভ বার্স্ট করে মারা গেছে। মায়া খুব খারাপ লাগলো। কিন্তু তার আর কি-ই বা করার আছে।
এর দু মাস পর, এক রাতে মায়া একমগ জল নিয়ে বাথরুমের যাওয়ার সময়ে দেখতে পেলো, তার সেই কমলা শাড়িটা পরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। ঘুম চোখে মায়া প্রথমটায় ঠিক বুঝতে পারেনি। ভাবলো তার শাড়িটা আবার কে চুরি করে নিলো! দু-এক পা এগিয়ে সে দেখলো – কল্পনা! ভয়ে কাঁটা হয়ে গেলো মায়া। জল্ভর্তি মগ হাত থেকে খসে পড়ে মেঝে সহ তার পা দুটোকে ভিজিয়ে দিলো, সে টেরও পেলো না। মাথা কাজ করছে না তার। বিস্ফারিত চোখে সে দেখতে লাগলো, তার থেকে কিছুটা দূরে বাথরুমের সামনে তারই দিকে তাকিয়ে কল্পনা দাঁড়িয়ে আছে। তারপর ধীরে ধীরে সে যেন অদৃশ্য হয়ে গেলো। তারপরেই যেন হুঁশ ফিরে পেলো মায়া। বাথরুমের কথা ভুলে গিয়ে, পড়ি কি মরি করে ঘরে ফিরে এসে বিছানায় শুয়ে ভয়ে ঠকঠক করে কাঁপতে লাগলো।
২/১ দিন পরে আবার মাঝরাতে নুপুরের ঝুম্ ঝুম্ শব্দে মায়ার ঘুম ভেঙে গেলো। ঘরের বাইরে কেউ যেন নুপুর পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে। মায়া বেশ অবাক হয়ে গেলো। এমন তো আগে কখনোও হয়নি।
পরদিন সকালে মায়া একটা কাজ করলো। কল্পনা যাওয়ার সময়ে তার ব্যাগপত্র কিছু নিয়ে যায়নি। সেগুলো মায়ার ঘরেই পড়ে ছিলো। সেই ব্যাগ খুলে ভেতর থেকে একজোড়া রুপোর মল আবিষ্কার করলো মায়া। তারপর ভাইকে ফোন করে বললো, “তুই এসে কল্পনার ব্যাগটা নিয়ে যা।”
ভাই এসে ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার পরে আর কোনোও ঘটনা ঘটেনি।
।। ২ ।।
মায়ার এক দিদি গড়িয়ায় থাকে। সে রোজ কাকেদের খাওয়ার জন্যে কলাপাতায় করে ভাত, ডাল আর বাটিতে করে জল দিতো। একদিন পাঁচিলে খচখচ আওয়াজ শুনে জানলা খুলে সে সবিস্ময়ে দেখলো, কল্পনা গায়ে প্লাস্টিক জড়িয়ে ওই ডাল-ভাত খাচ্ছে। পোড়া মৃতদেহ প্লাস্টিকে জড়িয়ে দাহ করে, কল্পনাকেও তাই করা হয়েছিলো – মায়ার দিদি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গেলো। পরের দিনই সকালে মায়াকে ফোন করে সব ঘটনা বললো।
মায়া আমাদের সব বললো। আমরাও খুব চিন্তিত হয়ে পড়লাম। বিশ্বাস করতে মন চাইছে না, কিন্তু মায়া এতো জোর দিয়ে বলছে, আর আমরা জানি সে বানিয়ে বানিয়ে কিছু বলবার লোক নয়। তাই বললাম, “গয়ায় প্রেতশিলা বলে একটা জায়গা আছে। তোর দিদিকে বল্, জামাইবাবুকে সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে কল্পনার নামে পিন্ড দিয়ে আসতে। তাতে সব ঠিক হয়ে যাবে।”
মায়ার দিদি-জামাইবাবু তাই করলো। তারপর থেকে ওদের পরিবারে আর কোনোও ঘটনা ঘটেনি।
কল্পনা শান্তি পেলো। তার আত্মার চিরমুক্তি ঘটলো।
(সত্য ঘটনা অবলম্বনে)
Darun likhechish golpota amaro shona.
ভাল লাগল। চালিয়ে যা।
ভাল লিখেছিস। চালিয়ে যা।