Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৩৩
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৩৩

গোপা মিত্র

অমৃতসর
পর্ব–১

লেফট্‌ রাইট্‌, লেফট্‌ রাইট্‌, লেফট্‌ রাইট্‌, লেফট্ — আমাদের সামনে দিয়ে নির্দিষ্ট ছন্দে এগিয়ে চলেছে কখনো একজন, কখনো দুজন বা কখনো একাধিক জন সেনা জওয়ান বা সুবেদার। এদের মধ্যে  কজন মহিলাও রয়েছেন। গান্ধীজির ছবি দেওয়া India Gate বা ভারত তোরণ থেকে এসে ওরা পৌঁছে যাচ্ছে ভারত পাকিস্তান সীমান্ত তোরণ পর্যন্ত, তারপর আবার ফিরে যাচ্ছে তাদের পুরনো জায়গায়। এভাবেই চললো বেশ কিছুক্ষণ – কোথাও কোন শৃঙ্খলাভঙ্গ নেই। সমানে বেজে চলেছে কোন দেশাত্মবোধক হিন্দী গান আর আমাদের সামনে দিয়ে চলেছে সেনানীদের মার্চ। বিকেলের পড়ন্ত রোদে আমাদের কান মাথা ঝাঁ ঝাঁ – কিন্তু বসে থাকতেই হবে, যতক্ষণ না জাতীয় পতাকা অবনমিত হয়। হ্যাঁ, আমরা দুজনে, আমি আর কল্যাণ, এখন বসে আছি ভারত পাকিস্তানের সীমান্তচৌকি ওয়াঘায় একেবারে সামনের সারিতে দুদেশের সীমান্ত তোরণের ঠিক পাশেই – পতাকা অবনমনের অনুষ্ঠান ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ দেখতে।

২০১৫ সালের এপ্রিলে ল্যান্সডাউন খিরসু বেড়িয়ে আমরা তখনও দিল্লীতে। আর মাত্র কদিন, তারপরই ফিরে যাবো কলকাতায়। কিন্তু আমার ইচ্ছা এই ক’দিনের মধ্যে একদিনের জন্য গিয়ে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির আর ওয়াঘা বর্ডার বেড়িয়ে আসা। আনুদের আগেই অমৃতসর দেখা – ওদের মতে, একদিনে অমৃতসর, এটা একেবারেই অসম্ভব। কিন্তু এপ্রিলের গরমে সেখানে দু’দিন থাকতে আমি কিছুতেই রাজী নই – পাহাড় হলে না হয় কথা ছিল!

 যখন আমরা প্রায় হতাশ, তখনই একদিন এসে উপস্থিত হলো সুমা, যে আমাদের সঙ্গে অরুণাচল ভ্রমণে গিয়েছিলো (আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৯ ও ১০)। সে কিছুদিন আগেই অমৃতসর বেড়াতে গিয়েছিল এবং যে হোটেলে ছিলো তা একেবারেই স্বর্ণমন্দিরের উল্টোদিকে। তার কাছ থেকে সব জেনে নিয়ে আমরা সেই রাতেই হোটেলের সঙ্গে যোগাযোগ করলাম ও আমাদের ইচ্ছের কথা জানালাম। তারা আমাদের বললো যে আমাদের ইচ্ছেমতোই সব হবে — ষ্টেশনে আমাদের জন্য গাড়ী থাকবে, সেই গাড়ীই আমাদের হোটেলে নিয়ে আসবে আর ওয়াঘা বর্ডারেও নিয়ে যাবে। পরদিন স্বর্ণমন্দির দেখে আমরা দিল্লী ফিরে যেতে পারবো।

১৪ই এপ্রিল ভোরবেলা আমরা রওনা হলাম অমৃতসরের উদ্দেশ্যে শতাব্দী এক্সপ্রেসে, ফিরবো পরদিন ১৫ই  এপ্রিল, ১লা বৈশাখ, ঐ একই ট্রেনে। প্রাতঃরাশ ট্রেনেই দেবে। একরাতের জন্য সঙ্গে মাত্র একটাই ব্যাগ। 

নিউ দিল্লী স্টেশন থেকে অমৃতসর জংশন ৪৪৮ কিমি, শতাব্দী এক্সপ্রেসে সময় লাগে প্রায় সওয়া ছয় ঘন্টা, মাঝে স্টপেজ মাত্র ৬টি। 

স্থিতু হয়ে বসবার পর প্রাতঃরাশ এসে গেলো। কাচের জানলার ভিতর দিয়ে আমরা বাইরে দেখতে লাগলাম। পেরিয়ে গেলো অম্বালা ক্যান্ট, লুধিয়ানা জং, জলন্ধর সিটি। বাইরে চড়া রোদ, কিন্তু ট্রেনের মধ্যে আমরা সেই রোদের তেজ অনুভব করছি না। হঠাৎই থেমে গেলো ট্রেন। কি হল, বুঝলাম না। আমাদের চিন্তা অবশ্য অন্য – সময় মত না পৌঁছতে পারলে স্টেশনে নিতে আসা গাড়ী আবার ফিরে যাবে না তো ? শুধু তাই নয়, দেরী হলে ওয়াঘা বর্ডারেও সময়মত পৌঁছতে পারবো না। আমাদের আসাটাই তখন বৃথা হয়ে যাবে। কিছু করার নেই, দুশ্চিন্তা নিয়েই বসে রইলাম আমরা।

বেশ কিছুক্ষণ পরে অবশেষে ছাড়লো ট্রেন, কিন্তু স্পিড একেবারেই কম। এভাবেই প্রায় সওয়া এক, দেড় ঘন্টা দেরীতে পৌঁছলাম অমৃতসর জংশন। 

আজ বৈশাখী, পাঞ্জাবী শিখদের উৎসব। আমরা ছাড়া ট্রেন যাত্রীরা প্রায় সকলেই পাঞ্জাবী শিখ – তারা এসেছে উৎসব উপলক্ষ্যে। তাদের সঙ্গে আমরাও এগিয়ে চলেছি বাইরের দিকে। আমাদের চোখ খুঁজে চলেছে, কোন এক অচেনা পাঞ্জাবী ড্রাইভারকে – আমরা না চিনি তাকে, না জানি তার গাড়ীর নম্বর। আমাদের শুধু বলা হয়েছে সে-ই খুঁজে নেবে আমাদের। যখন আমরা প্রায় ষ্টেশনের বাইরে এসে গেছি, তখনই একজন এসে আমাদের নাম জিজ্ঞেস করলো আর নিজের পরিচয় দিলো। কোন্‌ হোটেল তাকে পাঠিয়েছে জেনে নিয়ে আমরা দুজনে, আমি আর কল্যাণ, তার গাড়ীতে চড়ে বসলাম।

আমাদের আসতে প্রায় দেড় ঘন্টা দেরী হয়েছে, ড্রাইভার আমাদের প্রথমে হোটেলে নিয়ে যেতে রাজী হলো না। সে বললো যে, হোটেল আর ওয়াঘা বর্ডার একেবারেই বিপরীত দিকে। যদি আমরা এখন হোটেলে যাই তবে সময়মত ওয়াঘা বর্ডারে পৌঁছতে পারবো না। কাজেই আমাদের এখন সেদিকেই যেতে হবে, পথে সে এক পরিচ্ছন্ন ধাবায় দাঁড়াবে – সেখানেই Fresh হয়ে আমরা তাড়াতাড়ি Lunch সেরে আবার বর্ডার রওনা দেবো।

অমৃতসর বিখ্যাত ‘হরমন্দির সাহিব’এর জন্য। শিখদের পবিত্র তীর্থক্ষেত্র এই ‘হরমন্দির সাহিব’ খ্যাত স্বর্ণমন্দির নামে। অমৃতসরের প্রায় কেন্দ্রে এই স্বর্ণমন্দির, আর ভারত পাকিস্তানের সীমানা ওয়াঘা আর্টারি বর্ডার অমৃতসর থেকে ২৮ কিমি ও পাকিস্তানের লাহোর থেকে প্রায় ২২ কিমি দূরে। 

ড্রাইভারের পরামর্শে মালপত্র সমেতই আমরা রওনা দিলাম বর্ডারের দিকে। পথে এক ধাবায়, সে গাড়ী থামালে আমরা মুখ হাত ধুয়ে পাঞ্জাবী খানা – ডাল মাখানি আর পালং-পনীর দিয়ে রুটি খেয়ে নিলাম। সাড়ে চারটের মধ্যে আমাদের পৌঁছতেই হবে, না হলে ভিতরে প্রবেশ করতেই পারবো না। মনে দোলাচল, ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবো তো? এখন এই ড্রাইভারই আমাদের একমাত্র আশা ভরসা!

বেশ কিছুদূর যাবার পর থেমে গেলো গাড়ী। দেখলাম পাশে এমন অনেক গাড়ীই দাঁড়িয়ে রয়েছে। ড্রাইভার বললেন যে এবার ১কিমি আমাদের হেঁটেই যেতে হবে, সঙ্গে কেবলমাত্র পার্স, মোবাইল, ক্যামেরা আর জলের বোতল ছাড়া কিছুই নেওয়া চলবে না। সেইমতই আমরা বাকী মালপত্রসমেত গাড়ী সেখানেই ছেড়ে রেখে, রোদের হাত থেকে বাঁচার জন্য সানগ্লাস আর মাথায় ওড়না জড়িয়ে ও টুপি পরে এগিয়ে চললাম,জনতার পিছু পিছু। 

সামনেই এক প্রবেশ তোরণ ‘স্বর্ণজয়ন্তী দ্বার’। পাশেই ‘Security Check’ প্রথমেই পেরোতে হলো ‘Metal Detecter Gate’ প্রবেশের পরই ... জিনিষপত্র ছাড়াও পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা আলাদা করে ‘Full Body Check’ও করা হলো। অগ্রবর্তী জনারণ্যের সামিল হয়ে আমরাও এগিয়ে চললাম। সাড়ে চারটে তখন বাজে – জানি না পায়ে হেঁটে ঠিক সময়ে পৌঁছতে পারবো কিনা! অবশ্য সুমা বলে দিয়েছিলো যে এখানে সেনাবাহিনী কয়েকটি ই-রিক্সা (টোটোর মত – ওরা বলে ই-রিক্সা) চালায়, বয়স্ক ও অসুস্থদের জন্য। দেখা যাক্‌, যদি তাতে জায়গা পাই।

কিছুটা এগিয়েই আমরা দেখলাম এক জায়গায় ক’জন বয়স্ক পুরুষ মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন। জিজ্ঞেস করে আমরাও তাদের পিছনে দাঁড়িয়ে পড়লাম ই-রিক্সার অপেক্ষায়। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর রিক্সা এলে আমরাও তাতে চড়ে বসলাম আর এগিয়ে চললাম সেই জনস্রোতের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠান স্থলের দিকে। 

রিক্সা থামলো। আমরাও নামলাম। এবার দেখলাম প্রবেশ দ্বার বিভক্ত হয়েছে দুভাগে – একভাগ গিয়েছে গ্যালারিতে সাধারণ দর্শকদের জন্য, অন্যভাগ পৌঁছেছে একেবারেই গেটের পাশে ভি আই পি দর্শক ও সেনাবাহিনীর পরিবারবর্গের জন্য। এখানে আরো একবার সকলের ‘Full Body Check’ করা হয়ে গেলো। এবার আমাদের এগোতে হবে। 

আনু আমাদের আসার আগে বারবার বলে দিয়েছিলো যে, আমরা যদি ভি আই পি বক্সে বসতে পারি, তবে একেবারেই সীমান্ত চৌকির পাশে বসে দু’দেশের অনুষ্ঠানই সমানভাবে দেখতে পাবো। সেইমতই আমরা প্রহরারত সেনাদের অনুরোধ করলাম, আমাদের কাছে পুলিশের দেওয়া যে পরিচয়পত্র ছিলো, তাও দেখালাম। অবশেষে আমাদের আগ্রহ ও অনুরোধে তারা আমাদের ভি আই পি গেট দিয়ে প্রবেশের অনুমতি দিলো। আবারো একবার ‘Body Checkup’, তারপর এগিয়ে যাওয়া।

আমরা প্রবেশ করলাম মূল অনুষ্ঠান স্থলে, পাঁচটা তখন বেজে গেছে। ভি আই পি গ্যালারিও তখন পূর্ণ, অনুষ্ঠান শুরু হতে চলেছে, কিন্তু আমাদের বসার জায়গা নেই। একজন সেনানী তাড়াতাড়ি আমাদের জন্য দুটো চেয়ার এনে একেবারে সামনের সারিতে আমাদের বসিয়ে দিলো। ভি আই পি গ্যালারির ওপাশের দর্শক গ্যালারীও তখন পরিপূর্ণ। 

আজ সূর্য অস্ত যাবে সন্ধ্যে ছ’টায়। ঠিক তখনই হবে পতাকা অবনমন। প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে পতাকা উত্তোলিত হয়, আবার সূর্যাস্তের সঙ্গেই পতাকা অবনমিত হয় – ভারতের দিকে ভারতের পতাকা আর পাকিস্তানের দিকে পাকিস্তানের পতাকা। এভাবেই সুর্যাস্তের সময়ের সঙ্গে প্রতিদিন এই অবনমনের সময়ও Vary করে। 

বিশাল সীমান্ত তোরণের ঠিক পাশেই বসে আছি আমরা। তোরণ তখনো বন্ধ। তার রং ভারতের জাতীয় পতাকার রঙে রঞ্জিত। দু’পাশের স্তম্ভে শিখেদের প্রতীক চিহ্ন। তারই একদিকে রয়েছে ভারতের জাতীয় প্রতীক, অশোক স্তম্ভ। উপরে তখনও উড়ছে ত্রিবর্ণ রঞ্জিত ভারতের জাতীয় পতাকা।

ভারতের তোরণের ওপাশেই পাকিস্তানের সবুজ তোরণও তখন বন্ধ। তার পিছনে ওদের দিকে রয়েছে আরো এক দ্বার জিন্নার ছবি দেওয়া। সেখানেও তখন চলছে পাকিস্তানী সেনাদের আনাগোনা। ওদিকের গ্যালারিতেও তখন কিছু দর্শক বসে আছেন। 

আমার ডানদিকে কিছু দূরে আমি দেখছি, আরো এক তোরণ, যার উপরে গান্ধীজির ছবি দিয়ে লেখা রয়েছে ‘India’. ভারত পাকিস্তান তোরণ থেকে এই ‘India Gate’ পর্যন্তই মুল অনুষ্ঠান স্থল – যা হচ্ছে সবই এই জায়গাটুকুর মধ্যে।

সময় হয়েছে – সেনা বাহিনীর আসা যাওয়ার মার্চ পাস্ট তখন বন্ধ হয়ে গেছে। মাঝে একবার জনতার মধ্যে থেকে উঠে একদল তরুণ তরুণী দেশাত্মবোধক গানের সঙ্গে নেচে নিলো। আমরা সবাই উৎসুক, এবার কি হবে! ভারতীয় সেনাবাহিনীর কয়েকজন অফিসার, এর মধ্যে মহিলাও রয়েছেন, তখন সীমান্ত চৌকির পাশে Position নিয়ে দাঁড়িয়ে গেছেন। পাকিস্তানের দিকেও একই রকম তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে।

এবার একই সঙ্গে দুদিকের তোরণদ্বারই খুলে গেলো – এখন এই খোলা দ্বারপথে দুদেশেই যাতায়াত করা যাবে। সেনা অফিসার স্যলুট করে দড়ি টেনে আস্তে আস্তে পতাকা নামিয়ে নিলেন। ওদিকেও একই ব্যাপার ঘটলো। তারপরই দেখলাম আদ্ভূত কায়দায় চমৎকার ভাবে পতাকা, শাড়ী পাটের মত, পাট করা বা মুড়ে ফেলা হলো। এবার সামনে কজন সেনা অফিসার মার্চ করে এগিয়ে চললেন, পিছনে তাদের চললো কজন পতাকা বাহক সেনা, প্রায় মাথার ওপর সেই পাট করা পতাকা তুলে ধরে। পতাকা নামার সঙ্গে সঙ্গেই দুদিকের প্রবেশ তোরণও বন্ধ হয়ে গেলো।

আজকের মত ‘বিটিং দ্য রিট্রিট’ অনুষ্ঠান শেষ হলো, আবার কাল সূর্যোদয়ের সঙ্গে পতাকা উত্তোলিত হবে।

যেপথ দিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছিলাম, এবার সে পথে নয়, ভি আই পি দের নির্গমন পথ একেবারেই পাকিস্তানের সীমানা ঘেরা কাঁটাতারের বেড়ার পাশ দিয়ে। কাঁটাতারের ফাঁক দিয়ে দেখলাম ওদিকেও তখন ভাঙা হাট। কয়েকজন মাউন্টেড সেনা ওদিকে পদচারণা করছে আর এদিকে নজর রাখছে।

বাইরে এসে আবার সেই জনারণ্যের সামিল হয়ে আমরা এসে পৌঁছলাম আমাদের সেই রেখে যাওয়া ট্যাক্সির কাছে। এবার ড্রাইভার আমাদের সোজা নিয়ে চললো আমাদের নির্দিষ্ট হোটেলে।

— প্রথম পর্ব সমাপ্ত —

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোও কিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!