রীনা বাসু
আমরা সবাই জানি বিশ্বসাহিত্যের ইতিহাসে গুরুদেব ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’-এর নাম এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কের মত বিরাজমান। আজ তাঁর ১৬৯ তম জন্মবার্ষিকী, নবসূত্রে পড়ে আজও গাঁথা নব জন্মদিন। আমরা সমবেত হয়েছি তাঁকে শ্রদ্ধাপূর্ণ চিত্তে স্মরণ করার জন্যে। এই দিনটি কোনওদিনক্ষণ তিথিমাত্র নয়, চিরকালের অনুভব। আমরা সততই দুঃখে, সুখে, সজ্ঞানে, শান্তিতে সর্ব অবস্থায় তাঁকে পেতে চাই বারে বারে।
তুমি যদি বক্ষোমাঝে থাক নিরবধি
তোমার আনন্দমূর্ত্তি নিত্য হেরে যদি
এ মুগ্ধ নয়ন মোর – পরান বল্লভ,
তোমার কোমল কাণ্ড চরণ পল্লব
চিরস্পর্শ রেখে দেয় জীবন তরীতে,
কোনো ভয় নাহি করি বাঁচিতে মরিতে।
কবি একজায়গায় তাঁর জন্মদিনকে উপলক্ষ্য করে লিখেছেন আজ আমার জন্মদিনে তোমরা উৎসব করে আমাকে আহ্বান করেছ – এতে আমার অনেকদিনের স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলেছ। তোমরা যদি আমাকে আপন করে থাকো, আজ প্রভাতের সেই পাওয়ার আনন্দকেই যদি তোমাদের প্রকাশ করবার ইচ্ছা হয়ে থাকে, তাহলেই এই উৎসব সার্থক। তোমাদের জীবনের সঙ্গে আমার জীবন যদি বিশেষভাবে মিলে থাকে, আমাদের পরস্পরের মধ্যে যদি কোনো গভীরতর সম্বন্ধ হয়ে থাকে, তবেই যথার্থভাবে এই উৎসবের প্রয়োজন আছে, তার মূল্য আছে।
নিজের জন্মদিন বৎসরের অন্য ৩৬৪ দিনের চেয়ে নিজের কাছে কিছুমাত্র বড় নয়। যদি অন্যের কাছে তার মূল্য থাকে, তবেই তার মূল্য।
রবীন্দ্রনাথ সর্বক্ষেত্রে তাঁর প্রতিভার যে সৌকর্য রেখেছেন তা দেশ ও কালের ঊর্ধ্বে – সর্বকালীন। তাঁরসৃষ্টি অপরাজেয়, অমর, সুস্থ ও নির্ভীক মানসিকতার পথ দেখায়।
আজকের এই অসুস্থ পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসবার জন্যে যে পথ আমরা দেখতে পাচ্ছি তা কবির দেখানো পথ। তাঁর সৃষ্টিকে তাঁর মত করে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব আমরা সকলে যদি নিই তবে আবার আমরা সেই পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে পারবো।
সবশেষে কবির ভাষায় বলি –
“ফিরিয়ে দাও সেই অরণ্য
লহ এ নগর
আজ বিদ্বেষ, হিংসার পরিবেশে
লুপ্তপ্রায় প্রীতির বন্ধন।”
রীনা বাসু
বিজয়গড় নিবাসী। গৃহবধূ। বাচিক শিল্পী।