Home বিবিধ, প্রবন্ধ সম্পর্ক খারাপ হলেও তা ধরে রাখার ১১ টি কারণ
বিবিধপ্রবন্ধ

সম্পর্ক খারাপ হলেও তা ধরে রাখার ১১ টি কারণ

সঞ্চারী গোস্বামী মজুমদার


সব সময় আমরা চাই আমাদের সব সম্পর্ক গুলো খুব সুন্দর ভাবে বজায় থাকুক। কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা হয়ে ওঠে না।  না চাইতে অনেক সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।  আর এই খারাপ সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে জোর করে ধরে রাখার মতন কষ্ট আর কিছুতে নেই।

 অনেক সময়েই আমরা বুঝতে পারিনা যে সম্পর্ক কখন খারাপ হয়ে গেছে। বেশীর ভাগ সময় অবশ্য আমরা সে কথাটা বুঝতেও চাইনা। এইসব ক্ষেত্রে আমাদের নানারকম মানসিক কষ্টের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। অনেকেই আছে যারা সব বুঝে শুনে অন্ধের মতন খালি চেষ্টা করে যায়। আর ভাবে যে পারস্পরিক বোঝা পড়া অর্থাৎ মানিয়ে চলার জন্য সবকিছু একদিন ঠিক হয়ে যাবে।

আমার মনে হয় যে বদলে যাওয়ার মিথ্যে আশাতে বসে না থেকে, আমাদের উচিত সত্যিটা কি স্বীকার করে নিয়ে এগোনো। কোন সম্পর্কে  যদি আমাদের মানসিক গঠন বা কোনো  দৃষ্টিভঙ্গীর, অথবা মান সম্মান বজায় রাখা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে তখন জোর করে সম্পর্কের মধ্যে না থেকে সেই সম্পর্ককে ভেঙে দেওয়াটাই বাঞ্ছনীয়। 

 এবারে এবারে আমরা দেখব কোন ১১ টি চিহ্ন যা সম্পর্ক খারাপ করে।

 

১. সঙ্গীর পক্ষে কথা বলা

যেকোনো সম্পর্কেই আমরা দেখে থাকি যে সঙ্গীর পক্ষে কথা বলাটা কোন ভুল বিষয় নয়।  কারো সাথে কথা বলতে বলতে তার ছোটখাটো দোষ ত্রুটি আমরা ঢাকতেই পারি  বা তার পক্ষে কোন কথা বলে তাকে সে পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করতে পারি।  কিন্তু আসল বিষয় হল যে যদি কেউ আমাদেরকে এমন কিছু বলে যা আমরাও জানি সত্যি কিন্তু সম্পর্কের খাতিরে আমরা আমাদের সঙ্গীর পক্ষ নিয়ে কথা বলে যাচ্ছি সবসময় সে ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। আর ভেবে দেখা উচিত যে সম্পর্কটি সুস্থ কিনা।

 

২.বেশিরভাগ সময় তর্ক-বিতর্ক করা

প্রত্যেক মানুষ আলাদা  আর তাই তাদের চিন্তাধারা আলাদা। সে ক্ষেত্রে দুটি মানুষ একটা সম্পর্কে থাকলেও তাদের কখনো কখনো মতের অমিল হয়। সেটা বড় ব্যাপার নয়।  আমাদের দেখতে  হবে যে এই তর্ক বিতর্ক কি সব বিষয়ই হয়ে থাকে?  আর এই তর্কের পরে কি আপনি সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার জন্য বারবার মনে মনে ভাবেন, তাহলে সেটা কিছুতেই সুস্থ সম্পর্ক নয়।

 

৩. যোগাযোগের  অভাব

কেউ যদি অনুভূতি কে প্রকাশ করার সময় কোন যুক্তিতর্ক মধ্যে জড়িয়ে পড়ে,  এবং নিজেকে ঠিক করে বুঝে উঠতে না পারে সে  ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়। সমস্যার কথা আলোচনা করেই সমাধানে পৌঁছোনো যায়, যদি কেউ সেটা নিজের সঙ্গীর সঙ্গে করতে ব্যর্থ হয় তাহলে অবশ্যই সেখানে বোঝাপড়ার অভাব আছে বলেই ধরে নিতে হবে। 

 

৪.অসম্পূর্ণতা যথেষ্ট আছে বলে মনে হয়

ভালোবাসার ক্ষেত্রে অনেক সময়তেই  অনেক রকম পরিস্থিতি আসে।  আপনি সর্বদা চেষ্টা করেন যে সবকিছু যেন সুন্দরভাবে  চলতে থাকে।  তবে বলা বাহুল্য, যেকোনো সম্পর্কে দুজনের সমান ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে খুবই অসম্পূর্ণ লাগে যখন শুধু একজনই চেষ্টা করে যায় সবকিছু ঠিক করার।  কখনো কখনো আনন্দের দিনেও এই অসম্পূর্ণতা বোধ হয়ে থাকে। বিষন্নতা এবং একাকীত্ব দুটো অনুভূতিই যেন মনে জায়গা করে নেয়।

 

৫.সম্মান করাটা খুবই জরুরী

এটা বলতে দ্বিধা নেই যেকোন সম্পর্কের মধ্যে যদি একজন আরেকজনকে সম্মান না করতে পারে, তাহলে সেটা কিছুতেই সুখী সম্পর্ক নয়। প্রত্যেক মুহূর্তে যদি কেউ অপমান করে বা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে অপরের সামনে তখন কিছুতেই এটা মানা চলে না যে সম্পর্ক স্বাভাবিক। 

 

৬.সবার দৃষ্টির সামনেই অস্বাভাবিক কিছু

অনেক সময়েই আমরা এমন অনেক জিনিস আছে যা জেনেও জানিনা।  আমাদের কাছের মানুষরা অনেক সময়  অনেক পরিস্থিতিতে এটা বোঝাবার চেষ্টা করে যে, যে সম্পর্কের মধ্যে আমরা আছি, সেটা হয়তো আমাদের জন্য সঠিক নয়।  কখনো-সখনো সেরকম কোন কথা শুনলে দুশ্চিন্তার কোন কারণ হয় না। কিন্তু বিপরীত  উক্তি যদি আপনি প্রায়ই অনেক মানুষের কাছ থেকে শুনতে থাকেন তবে আপনার একবার ভেবে দেখা উচিত যে আদৌ সেই মানুষটা আপনার যোগ্য কিনা।  কারণ এমনটা হয়ে থাকে যে একাধিক মানুষ যা দেখতে পাচ্ছে তা হয়তো আপনার দৃষ্টিতেই আসেনি।

 

৭. যখন সম্পর্কে স্ট্রেস এসে যায়

সব সম্পর্ক কখনো কখনো টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে যায়। কিন্তু সেটা হয় কিছু সময়ের জন্য। কিন্তু যখন কোন ব্যক্তি রোজদিনই স্ট্রেস অনুভব করে একটি সম্পর্কের মধ্যে তাহলে সেটা কিছুতেই সুখী সম্পর্ক নয়।  এমনও মনে হবে যে আপনার ধীরে ধীরে সবকিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে,আপনি আর কোন দিক দিয়েই এনার্জি পাচ্ছেন না।এহেন অনুভূতি কিছুতেই ঠিক নয়।

 

৮.প্রতারণা করা

সম্পর্ক দাঁড়িয়ে  থাকে বিশ্বাসের উপর। আর সে বিশ্বাসই যদি ভেঙে যায় তবে সম্পর্ক থাকা না থাকা  দুটোই সমান। প্রতারণা করা এমন একটা কাজ যা একটি সম্পর্ককে চিরকালের মতন ভেঙে দিতে পারে।  তাই সুস্থ সম্পর্ক রাখার জন্য দুজনেই প্রতারণা করার প্রবণতা থেকে দূরে থাকলেই ভালো হবে।

 

৯.হিংসা যদি থাকে

হ্যাঁ,হিংসার জন্ম হয় কেউ আমার সঙ্গে প্রতারণা করতে পারে এরকম কোন মনোভাব থেকে।  কিন্তু যদি এই হিংসা অমূলক হয়, অর্থাৎ  আপনার সঙ্গী আপনার ওপর অহেতুক  সন্দেহ করছে এবং তা নিয়ে হিংসার জন্ম হচ্ছে তবে সেটাকে প্রশয় দেওয়া কিছুতেই উচিত নয়।  ভরসা ও বিশ্বাস ছাড়া একটি সম্পর্ক ঠিক ভাবে এগোতে  পারে না আর হিংসা তো কিছুতেই সম্পর্ককে  এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেনা।

 

১০.অন্তরের অনুভূতি

আমাদের অন্তরের  অনুভূতি অনেক সময় আমাদের অনেক এমন কিছু বলে যা আমাদের জন্য সঠিক হয়।  তাই আমার মনে হয় বুদ্ধি দিয়ে খুব ভেবেচিন্তে নিজের অন্তরের কথা শুনে আমাদের কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত।  যদি কোন সম্পর্ককে অন্তর মেনে নিতে না পারে তবে তা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবাটা অতীব প্রয়োজন।

 

১১.নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা

প্রত্যেক মানুষের কাছেই নিজের  স্বাধীনতা ভীষণ প্রিয়।  আর সেটা খুব স্বাভাবিক বিষয় কারণ প্রত্যেক মানুষেরই নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার অধিকার নিজের থাকা উচিত। কিন্তু অনেক সময় আমরা দেখতে পাই যে আমাদের সঙ্গী আমাদের পছন্দ মতন জীবন চালাতে দিতে চায়না। বারে বারে হস্তক্ষেপ করে এবং তাদের পছন্দমত চালাবার চেষ্টা করে।   অনেক সময় তাদের অতিরিক্ত মুড সুইংর প্রভাব আমাদের নিজেদের জীবনের ওপর পড়তে থাকে। আর সে দায় এড়ানোর  জন্য সব সময় আর একজন কে দোষী করে, তাকে ভুল সাব্যস্ত করার চেষ্টা করে থাকে। এইসব ঘটনা গুলি একদিক দিয়ে আপনাকে,আপনার চিন্তা ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করছে। এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করুন কারণ এই সম্পর্ক কখনোই সুন্দরভাবে এগোতে পারবে না।

ভালোবাসার সম্পর্ক কে সুন্দর ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুজন সঙ্গীকে একসাথে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আশা করি আমার এই এগারোটি বিশ্লষণ যা খারাপ  সম্পর্কের কারণ হতে পারে, তা থেকে সবাই দূরে থাকবেন এবং সুখী সম্পর্ক গড়ে তোলবার চেষ্টা করবেন।



লেখিকা পরিচিতি

Sanchari Goswami Majumdar

Loves to teach and practice dance. Likes to read books.

 

 

 


 

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!