Home বিবিধ, প্রবন্ধ সিনিয়র সিটিজেন
বিবিধপ্রবন্ধ

সিনিয়র সিটিজেন

জয়শ্রী বোস

আমার মেয়ে থাকে দিল্লীতে তার স্বামী-ছেলে-মেয়ে সংসার নিয়ে ব্যস্ত। কলকাতায় ছেলে, বৌমা, একমাত্র নাতনী আর আমি থাকি। সকাল থেকে আমার প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যে দিয়েই দিন শুরু হয়। ছেলের অফিস, বৌমার স্কুলে বেরোনো, নাতনীর স্কুলের বাসের তাড়া। ঠিক ঠিক সময়ে সবাইকার কাজ শেষ করার পর আমার অফুরন্ত অবসর। আর এই অসময়ে চুপচাপ বসে থাকলেই অতীতের সুখ-দুঃখের স্মৃতিই ভিড় করে আসে। সুখের থেকে দুঃখের স্মৃতিই তাড়া করে বেশী। আমার ছোটবেলার এক বন্ধু ঢাকুরিয়ায় ডিগনিটি ফাউন্ডেশন (Dignity Foundation) বলে Senior Citizen-দের একটি প্রতিষ্ঠানে আমাকে নিয়ে এলো। বললো, তোর এখানে খুব ভালো লাগবে। সত্যি, আমার সমবয়সী, সমমনস্ক ভদ্রমহিলারা এবং অনেক বয়স্ক ভদ্রলোক ওখানকার সদস্য। প্রতি সপ্তাহে পাঁচদিন নানারকম Activities হয়। যেমন, সোমবার: গানবাজনা, গল্প, চায়ের আড্ডা, মঙ্গলবার: বয়স্কদের যোগা ক্লাস, বুধবার: নিজস্ব গল্প লেখা, গল্প পড়া ও ‘খোলামন’ বলে একটি ম্যাগাজীনের গল্প-কবিতা ইত্যাদির আলোচনা হয়। শুক্রবার Indoor Games। কোনোও বাধ্যবাধকতা নেই, যে যার খুশীমতো, মনের তাগিদে ওখানে যেতে পারে।

ওখানে গিয়ে আমার ভীষণ ভালো লাগলো। আস্তে আস্তে আমার বয়সী অনেক বন্ধু হয়ে গেলো। আমরা যেন একটা পরিবার হয়ে উঠলাম। আর বিশেষ একজনের কথা এখানে না বললেই নয়, সে হচ্ছে এখানকার প্রাণ – যার নাম রুমা। তার মধ্যে আছে সবাইকে আপন করে নেওয়ার, মস্ত বড় গুণ। অসম্ভব ধৈর্যশীলা এবং নরম মনের মেয়ে। আমরা সবাই তাকে খুব ভালোবাসি।

আমরা মাঝে মাঝে সবাই মিলে কখনও কাছেপিঠে আবার কখনও ২/৩ দিনের জন্যে বাস ভাড়া করে বাইরে বেড়িয়ে আসি। রুমাই উদ্যোগ করে আমাদের জন্যে ব্যবস্থা করে। পুজোর আগে আগমনী, পুজোর পরে বিজয়া দশমীর অনুষ্ঠান হয়। আমাদের মধ্যে যারা নাচ-গান জানে, তারা মনের আনন্দে যোগদান করে। আমরা সবাই মিলে, খাওয়া-দাওয়া, আনন্দ করি।

আমাদের ডিগনিটি নানারকম সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। কয়েকদিন আগে ঘটে যাওয়া বিধ্বংসী ঝড় আম্ফানের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ডিগনিটি। এছাড়াও যখনই কোনো জায়গাতে অসহায় মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ এসেছে ডিগনিটি সেখানে ছুটে গেছে। শুধু অসহায়দের সাহায্য করাই নয়, আমরা যারা এই সুন্দর সংস্থাটির সঙ্গে জুড়ে আছি, সবাই নানা ভাবে উপকৃত হই এদের বিশেষ কিছু প্রোগ্রামের জন্যে। যেমন হেলথ সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচি, সে মন ভালো রাখাই হোক বা শরীর স্বাস্থ্য – সমস্ত কিছু খুব সুন্দর ভাবে আমাদের বোঝানো হয়, যাতে আমরা সব কিছুকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী দিয়ে বিচার করতে পারি।

সব থেকে ভাল লাগে নানারকম মনোরঞ্জন মূলক অনুষ্ঠানগুলি। আমরা নিজেরাও যেমন তাতে হইহই করি, তেমনই আবার অনেক সময়ে বাইরে থেকেও অনেক নামী দামী শিল্পী এসে এইসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আমাদের সময়গুলো কোথা দিয়ে যেন কেটে যায়, হাসি আনন্দ হইচইয়ের মধ্যে দিয়ে।

ওখানে গেলে আমাদের বয়সের কথা মনে থাকে না। তখন আমরা সবাই আমাদের যে যার মনের রাজা। আমরা সবাই রাজা।

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
 
জয়শ্রী বোস

গৃহবধূ। রান্না আর বই পড়া অন্যতম শখ। গান সোনা হলো ভালোবাসা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!