সুদেষ্ণা চক্রবর্তী
পিতৃপক্ষের অবসান আর মাতৃপক্ষের শুরু…….
মৃন্ময়ী মা আসছেন মর্ত্যলোকে তারই তোড়জোড় চলছে মহা সমারোহে।
আমিও লিখতে বসেছি আমার দেখা এক মায়ের কথা।
পাঁশকুড়া থেকে ফুল নিয়ে রোজ ঠিক রাত তিনটের ট্রেনটা ধরেন মহিলা। হাওড়ায় ফুল মার্কেটে ফুলগুলো পৌঁছে দেন ভোরবেলা।
তারপর আবার সকাল ন-টায় ট্রেন ধরে ফিরে আসেন পাঁশকুড়া। সেখান থেকে সাইকেল চালিয়ে পৌঁছোন নিজের গ্রামে।
আমার সাথে তাঁর রোজ দেখা হয় ওই ফিরতি ট্রেনে। না তখনও মাসির হাত ফাঁকা নয়। লেডিজ কামরায় উঠে সে ফল বেচতে থাকে। কলা, আপেল, শশা, আনারস,আমিও কিনে খাই মাঝে সাঝে। ওই ভাবেই আলাপ ওই মুনিয়া মাসির সাথে।
ঘরে তিনজন সন্তান – দুই মেয়ে আর এক ছেলে, তিন জনেই ইস্কুলে পড়ে। আর এক ছেলে চেন্নাইতে কাজ করে। মাসি বলে ছোটো থেকে ওর লেখাপড়ায় মন নেই।
এই সাউথ ইস্টার্ণ রেলের লেডিজ কামরায় সকলেই প্রায় অফিসযাত্রী বা শিক্ষিকা।
বাড়ি থেকে কোনোমতে দু-দলা ভাত খেয়ে ওই ন-টার ট্রেন ধরা। নিত্যদিনের রুটিন।
ভালোই লাগে ওই মাসির হাতের ছোটো ছোটো করে কেটে দেওয়া পছন্দের ফল বিট-লবণ ছড়িয়ে খেতে।
মাত্র কুড়ি/তিরিশ টাকার বিনিময়ে এত যত্নে হাতে তুলে দেওয়া খাবার খেতে বেশ লাগে।
রবিবার দেখা হয়না মুনিয়া মাসির সাথে। ছুটির দিনে আমাদের জীবনযাপন একটু হলেও বদলে যায়।
কিন্তু মুনিয়া মাসির কোনো ছুটি নেই। প্রতিদিন বাড়ি ফিরে রাতের ভেজানো একগামলা ছোলা দিয়ে ঘুগনি তৈরি করে আবার বেরিয়ে পরে স্টেশনের পাশের রাস্তায় একটা ছোট মতন ছাউনি করা টিনের চালার দোকানে।
স্কুলে বসে বসে ভাবি মাসি বিশ্রাম নেয় কখন?
একটা লাল বড়ো টিপ একমাথা চওড়া সিঁদুর আর আটপৌরে ভাবে শাড়ি পড়া সদাহাস্য মুনিয়া মাসির দশটা হাত না থাকলেও আমার কাছে এসে মা দুর্গার মতন।
আজ পঞ্চমী। চারিদিকে ঢাকের আওয়াজ। মা আজ বাপেরবাড়ি এলেন।
আমার আজ থেকে ছুটি।
বাড়ি ফিরছি একটু তাড়াতাড়ি।
আগামী কাল থেকে লক্ষ্মীপুজো অবধি মুনিয়া মাসির সাথে দেখা হবে না আমার।
ট্রেনটা বেশ জোরে চলছে। বাইরে ঝিরঝিরে বৃষ্টির ছিটে গায়ে এসে পড়ছে।
রোজনামচার পথে মাসির সঙ্গে এত গল্প করা সত্ত্বেও শিবের মতন ঘরে তার স্বামী আছেন কিনা জিজ্ঞেস করা হয়নি তো কোনোদিন।
চিত্রাঙ্কন : জয়তী পাল
মন ছুঁয়ে গেল। ঘরে ঘরে মা দুর্গারা এমনই নিজ যোগ্যতায় সফলতা পাক।
ছবিটি অসাধারণ। লেখার সাথে যথাযথ মেলবন্ধন।