গল্পরহস্য ও ভৌতিক

চশমা

বেগম মাহফুজা


অনিল বাবুর মনটা কয়েকদিন ধরেই খুব খারাপ। মনের মধ্যে অস্বস্তি বোধটা বেড়েই চলেছে। অথচ কাউকে কিছু-ই বলতে পারছেন না। কাকে বললেন? কিভাবেই বা বলবেন? তারাই কি ভাববেন? এসব মনের মধ্যে আন্দোলিত হতে থাকলো। আবার আজ ঘটল সেই অদ্ভুত ঘটনাটা তা ও আবার ভরদুপুরে। এবার অনিল বাবু ভয় পেয়ে গেলেন। ভাবলেন আমাদের সমূহ বিপদ। কাউকে না কাউকে কথাটা বলতেই হবে। 

এই ভেবে বিকাল বেলায় চায়ের দোকানে বসে বন্ধুদের বললেন দেখ–

“বিগত ৩ মাস ধরে অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে আমার সঙ্গে, ঠিক বুঝতে পারছি না কি হচ্ছে?” 

বন্ধুরা উৎসুক হয়ে বললেন “বল না কি হয়েছে? তিনি বললেন আমি রাতের বেলা ডাইনিং-এ টিভি দেখছিলাম, সেখান থেকে আমাদের মেনগেটটার দূরত্ব কম থাকায় পরিষ্কার দেখা যায়। আমি দেখলাম- সবাই জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে আছেন অনিল বাবুর দিকে, তিনি যোগ করলেন – আমি দেখলাম গেটের সামনে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে, তারপর যখন সাহস করে এগিয়ে গিয়ে  দেখলাম সব স্বাভাবিক আছে কোন আগুন জ্বলেনি। কিন্তু তার ১৫ দিন পর ভোরের বেলায় যখন জল খেতে উঠেছি, দেখলাম সেই ‘মেনগেটটাতে’ আমার মৃতা দিদিমা মাথা নিচু করে জুতো খুলছেন তিনি কিন্তু আমায় দেখেননি, তার চারপাশটা দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে ঠিক যেমন আগেরদিন দেখেছিলাম।”

বন্ধুরা নড়েচড়ে বসে ভয়ার্ত কন্ঠে ফিসফিস করে বললেন “তারপর, তারপর” …..

(অনিল বাবু ভূতপ্রেত মানেন না, বলা ভালো বিশ্বাস করেন না।) 

“আমি আলো জ্বেলে দেখি সব ঠিক আছে। ভেবেছিলাম আমার মনের ভুল। কিন্তু আজকে যেটা ঘটল তাতে আমি অবাক হয়ে গেছি!”

বন্ধুরা বললেন “তাড়াতাড়ি বল না, কি দেখলি?”

“আজ যখন লেবু গাছ থেকে  লেবু পাড়ছি, একঝলক দেখলাম লেবু গাছের কাছে যে গেটটা  আছে আমাদের ,তার পাশে দাউদাউ করে  আগুন জ্বলছে। আজ আমার মনে হয়েছে, ‘অলৌকিক ঘটনা’ বলে কিছু আছে কিনা?”

বন্ধুরা সমস্বরে বলে উঠলেন “আছে মানে! আলবাত আছে।” 

গ্রামের সবাই এ কথাটা জানে ও মানে। অমাবস্যার রাতে শ্মশানে গেলে সব-ই দেখা যায়। অনিল বাবু ছিলেন খুব সাহসী মানুষ, এইসব ঘটনাগুলো তার সঙ্গে কেন ঘটছে? সেটা জানার প্রবল ইচ্ছা ছিল। তাই অমাবস্যার রাতে টর্চ হাতে বেড়িয়ে পড়লেন শ্মশানের পথে ভূত দেখার উদ্দেশ্য নিয়ে।শ্মশানে গিয়ে অনেকক্ষণ বসে আছেন কিন্তু ভূতের দেখা নেই, অগত্যা তিনি সিগারেট ধরালেন। এমন সময় কিছু মানুষের আর্ত চিৎকার শুনতে পেলেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার অনুভব করলেন ভূত, ভূত বলে তারা চিৎকার, চেঁচামেচি করতে করতে দৌড়াচ্ছেন। 

অনিল বাবু তাদেরকে দেখতে পাননি শুধুমাত্র তাদের আওয়াজটা শুনেছেন। তিনি ও চারিদিকে ভূতকে খুঁজতে  লাগলেন। কিন্তু ভূতের দেখা পেলেন না। বিড়বিড় করে বললেন, “কোথায় ভূত! ওরা দেখতে পেল অথচ কতক্ষণ ধরে মশার কামড় খেয়ে আমি অপেক্ষা করেও দেখতে পেলাম না।”

তিনি বিষন্ন মনে বাড়ি ফিরে এলেন।

পরের দিন পাড়ার মোড়ে হৈচৈ শুনে এগিয়ে গিয়ে  জানতে পারলেন, কাল রাতে দুজন কাপড় ব্যাবসায়ী কলকাতা থেকে ফিরছিলেন, তারা তখন নিজের চোখে শ্মশানে ভূতটাকে  দেখেছেন। একবার আলোর তেজ বাড়ছে আর একবার আলোর তেজ কমছে। অনিল বাবুর বুঝতে অসুবিধা হল না যে, আলোর ব্যাপারটা তার “সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য”। তিনি নিজের বোকামির জন্য মনে মনে লজ্জিত হলেন এবং ভাবলেন “ভূত দেখতে এসে শেষে নিজেই ভূত হয়ে গেলেন”।

পরের দিন চোখের ডাক্তার দেখিয়ে জানতে পারলেন তার চোখের পাওয়ারটা অনেকটা-ই বেড়ে গেছে।


Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!