Home বিবিধ, প্রবন্ধ “তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…”
বিবিধপ্রবন্ধ

“তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে…”

লেখিকা: সর্বানী ঘোষ বাসু


 

সূচনা অধিকাংশ সময়ই আনন্দের। তোমাদের নতুন পত্রিকা “দু-কলম” তার যাত্রা শুরু করতে চলেছে। সেই শুভ সূচনাকে ঘিরে রয়েছে অনেকখানি আশা আর আনন্দ। তবুও এই মুহূর্তে আমাদের চারপাশের পৃথিবীতে এক ঘোর বিষাদ। মহামারীর কালো ছায়া গ্রাস করে নিচ্ছে সমগ্র বিশ্বকে। চারপাশে ঘনিয়ে উঠছে হতাশা, আতঙ্ক আর শোক। কেমন যেন দিশাহারা আমরা সকলে। মন আশ্রয় খুঁজছে, খুঁজছে আশার আলো যা দিয়ে এই বিষাদের অন্ধকারকে জয় করা যাবে। সেই আশার আলোকে কেই বা আর এমন করে সঞ্চার করতে পারেন, যেমন করে পারেন রবীন্দ্রনাথ? সব প্রতিকূলতা, সব যন্ত্রণা, সব হতাশা কাটিয়ে উঠে যিনি বারবার আমাদের উত্তরণের মন্ত্রে দীক্ষা দিয়েছেন –

অন্ধকারের উৎস হতে উৎসারিত আলো
সেই তো তোমার আলো,
সকল দ্বন্দ্ব বিরোধ মাঝে জাগ্রত যে ভালো
সেই তো তোমার ভালো।”

সত্যি সত্যিই, তিনি ছিলেন তাই আমরা আছি। তাঁর জীবনবোধের কাছে প্রতি মুহূর্তে হাত পেতে আছি আমরা সকলে আর তিনি অকুণ্ঠ হাতে দিয়ে চলেছেন সঞ্জীবনী সুধা। তাঁর কথা যত পড়ি ততই বিস্মিত হই। জীবনের পরম প্রিয় মানুষদের মৃত্যু-মিছিল পেরিয়ে এসে যিনি বলতে পারেন “আরো আঘাত সইবে আমার”, তাঁর সহিষ্ণুতার কাছে আপনি মাথা হেঁট হয়ে আসে। তাঁর সবচেয়ে প্রিয় সন্তান শমীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর, তাঁকে দাহ করে ফিরে আসছেন শোকস্তব্ধ পিতা রবীন্দ্রনাথ। হঠাৎ চলন্ত রেলগাড়ির জানলার বাইরে চোখ পড়তে দেখলেন, অকুণ্ঠ জ্যোৎস্নায় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। সেই অপার্থিব সৌন্দর্য্যের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তাঁর মন যেন বলে উঠল যে, সব কিছুই তো রয়েছে আগের মতোই। বিশ্ব চরাচরে কোথাও তো কিছু কম পড়েনি। ঠিক যেমন দিনের আলোর আড়ালে থেকে যায় রাতের সব তারা, তেমন করেই যতোটুকু আমাদের দৃষ্টির বাইরে যায়, তার সবটুকুই থেকে যায় আমাদের অগোচরে। ঠিক যেন এ ঘর থেকে ও ঘরে যাওয়ার মতো।

এই ঘটনাটা যতবার পড়ি, ততবারই স্তব্ধ হয়ে যাই। এমন করেও কি ভাবা যায়? অন্ধকারকে অতিক্রম করে, এমন করে কি আলোর পথের পথিক হওয়া যায়?  তিনি পেরেছিলেন। আর তাই আমাদের সব আবেগের আজো একটাই আশ্রয় – রবীন্দ্রনাথ। তাঁকে ধ্রুবতারা করেই তাই বলতে পারি যে, এই যে বিপর্যয়ের ঝড়ে আজ গোটা পৃথিবী বিধ্বস্ত, সেই ঝড়ও থামবে। সব কষ্ট, শোক, হতাশা কেটে গিয়ে পৃথিবী আবার শান্ত হবে। আরো একবার অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, অস্থিরতা থেকে শান্তির দিকে, শোক থেকে আনন্দের দিকে এগোবে জীবন।

“আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে।”


 

Sarbani Ghosh Basu

 

She is a teacher and a special children educator. Associated with performing arts. An anchor and a content writer. Co-partner in Romoni’s (Boutique).

 


 

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply to kusumika saha Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!