গোপা মিত্র
সমাপ্তি পর্ব
[‘ফিরে দেখা’ শুরু করেছিলাম আমার ছোট বেলায় – আমার পরিবার পরিচয় আর স্কুল জীবনের সূচনা দিয়ে। মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন, বছর। কখন যেন গুটি গুটি পায়ে চলতে চলতে আমি বড়ো হয়ে পৌঁছে গেছি একেবারে স্কুল জীবনের শেষ প্রান্তে। আমার বড় হয়ে ওঠার সেই সময়টাই আমি ধরতে চেষ্টা করেছি এই পর্বে। এখানে অবশ্য আমার গুরুজনদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি একেবারেই প্রায় নেই, কিন্তু যেহেতু তাদের দেখানো পথেই আমার এগিয়ে চলা, বেড়ে ওঠা, তাই তাদের প্রচ্ছন্ন উপস্থিতি সবসময়ই আমার সঙ্গে রয়ে গেছে।]
আমার কথা
আমার এখন কিশোরী বেলা। ভর্তি হয়েছি এসে হেদুয়ার কাছে সেসময়ের নাম করা এক মিশনারী উচ্চ মাধ্যমিক বাংলা মিডিয়াম স্কুলের ক্লাস সেভেনে। এখন আর হাঁটাপথে যাতায়াত নয়, যেতে হবে ট্রামে বা বাসে। প্রথম তিন চার দিন বাবা’ই আমাকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে ফেরার পথটাও ভালো করে বুঝিয়ে দিল। তারপর শুরু হল আমার বড় হয়ে ওঠার প্রথম পদক্ষেপ, একলা চলা। নিজের দায়িত্ব নিজেই স্বাধীনভাবে বহন করে এগিয়ে চলা। এতদিন যা কিছু শিখেছি গুরুজনদের কাছে, এবার শুরু হল তার বাস্তব পরীক্ষা।
বাবার সঙ্গে আসার সময়েই আমি দেখে নিয়েছিলাম যে ডালহৌসীগামী একটা লেডিস ট্রাম ঠিক ঐ সময়েই আমাদের ষ্টপেজ দিয়ে যায়। আমি রোজ স্কুলে যাওয়ার জন্য ঐ ট্রামটাকেই বেছে নিলাম। ট্রামের প্রথম শ্রেণী মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট হলেও, দ্বিতীয় শ্রেণী কিন্তু নয়। ষ্টপেজেই দেখা হল মায়ার সঙ্গে, মায়া ঘোষ, সেও আমার সঙ্গে পুরোনো স্কুল থেকে নতুন স্কুলে ভর্তি হয়েছে। ভালোই হল – আমরা একসঙ্গে যাতায়াত শুরু করলাম। ষ্টপেজে নেমে হাঁটাপথটাও বেশ গল্প করতে করতে যেতে লাগলাম।
লেডিস ট্রামের যাত্রাটা ছিল বেশ মজার। আমাদের সঙ্গীরা কেউ যাচ্ছে অফিসে, কেউ যাচ্ছে ইউনির্ভাসিটিতে, কেউ কলেজে, আবার আমাদেরই মত, কেউ স্কুলে। রোজ যাওয়ার সূত্রে সবাই, সবাইয়ের পরিচিত। কেউ একদিন অনুপস্থিত হলে, তার কি হল সকলেই তাই নিয়ে ভাবতে বসত। মাঝে মাঝে কেউ আবার চকোলেট লজেন্স এনেও সকলকে বিলোতো। আমাদের সঙ্গেও সকলের বেশ পরিচয় হয়ে গেল, আমরাও এই ট্রামযাত্রাটা বেশ উপভোগ করতে লাগলাম।
এই সময়েই তাইমার একজন আমেরিকা প্রবাসী বোনঝি কিছুদিনের জন্য কলকাতায় এসেছিলেন। ফিরে যাবার সময় তিনি মেয়েদের কতকগুলো পোষাকের ক্যাটালগ রেখে দিয়ে গেলেন। উত্তর কলকাতার বিখ্যাত দর্জির দোকান ‘এলিট’-এ আমরা সেসব ক্যাটালগ নিয়ে গিয়ে তাদের দেখিয়ে, আমাদের মাপ দিয়ে, কতটা কি কাপড় লাগবে জেনে নিয়ে, সেইমত কাপড় কিনে আমাদের পছন্দ মত, অথচ সেসময় একেবারেই অপ্রচলিত স্কার্ট বা ফ্রক বানিয়ে পরতে লাগলাম। আত্মীয়স্বজন প্রশংসার চোখে দেখে আমাদের জিজ্ঞেস করলে আমরা তদের ‘এলিট’ দেখিয়ে দিলাম, কিন্তু ক্যাটালগের ব্যাপারে একেবারেই নিশ্চুপ রইলাম।
স্কুলবাড়িটা ছিল বিরাট। পাঁচতলার বিশাল ছাদে দুটি মাত্র ক্লাসরুম – 7A ও 7B. আমরা নতুন মেয়েরা হলাম 7Bর ছাত্রী, আর স্কুলের পুরোনো মেয়েরা সব রইল 7A তে। প্রথমেই এই যে বিভাজনটা আমাদের মধ্যে করে দেওয়া হল, স্কুলের শেষদিন পর্যন্ত সেটা কিন্তু আমাদের মধ্যে রয়েই গেল –ওরাও আমাদের কাছে টানলো না, আমরাও ওদের এড়িয়ে চলতে লাগলাম।
প্রায় এসময় থেকেই রাত জেগে পড়া আমি অভ্যাস করে ফেলেছিলাম। আমার Biological Clock আমি এমনভাবে Set করে নিলাম যাতে আমার ঘুম ভাঙতে বা ঘুম আসতে কোনো অসুবিধা না হয়। স্কুল থেকে ফিরে জলখাবার খেয়ে, মাষ্টারমশাইয়ের উপস্থিতির সময়টুকু ছাড়া সন্ধ্যেবেলায় আমি বেশ কয়েক ঘন্টা ঘুমিয়ে নিতাম। রাতের খাওয়ার পরে শুরু হত আমার পড়াশোনা – মা এক ফ্লাস্ক কফি করে দিয়ে যেত যাতে নির্ঘুম অবস্থায় আমার মস্তিস্ক সচল থাকে। প্রায় ৪টে পর্যন্ত পড়ে আমি ঘুমিয়ে পড়তাম। পরদিন সকালে ৮টা/৮.৩০র মধ্যে উঠে তৈরী হয়ে স্কুলে বেরিয়ে যেতাম।
নতুন স্কুলে আমি নতুন মেয়ে, প্রথমদিকে বেশ একটু ভয়ে ভয়েই থাকতাম। টিফিনের সময়ও একতলার মাঠে নেমে খেলার চেষ্টা করতাম না। ঐ ছাদেই টিফিন খেয়ে যেটুকু দৌড়োদৌড়ি করে খেলা যায়, সেটুকুই মাত্র করতাম। ক্লাসের পড়ানো মন দিয়ে শোনার চেষ্টা করতাম। পড়াশোনা নিয়ে অবশ্য আমাদের ক্লাস টিচার কল্পনাদির আমার সম্বন্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। তবুও ঘটে গেলো বিপর্যয় – হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষায় অংকে পেলাম মাত্র ৩২, পাশ নম্বর ৪০-ও ওঠেনি। কল্পনাদি অবাক, “তুমি অংকে এত ভালো গোপা, তুমি এত কম নম্বর পেলে কি করে”! খাতা পেয়ে দেখলাম অজস্র Careless Mistake. কি আর করা যাবে, মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম, অ্যানুয়াল পরীক্ষায় ভালো নম্বর পেতেই হবে। বাবা অবশ্য রেজাল্ট দেখে কিছু বলল না, শুধু বলল যে, এবার থেকে অংক করবার সময় একটু খেয়াল রেখো।
আমার ক্লাস সেভেনেই আমাদের জন্য নতুন একজন মাষ্টারমশাই এলেন – কৃষ্ণহরি হাজরা। তিনি আমাদের তিন বোনকেই সব Subject পড়াবেন, এমনকি ক্লাস সেভেনে শুরু হওয়া সংস্কৃত পর্যন্ত। সত্যি সেসময়ের মাষ্টারমশাইদের শিক্ষাগত যোগ্যতা যে কোন্ পর্যায়ের ছিলো, এর থেকেই তা বোঝা যায়। এখন, এই এক Subject এক Teacher এর যুগে এসব ভাবাই যায় না। আমার এই অংক তথা অ্যালজেব্রা ভালোবাসার পুরো কৃতিত্ব তার। তিনি এমন ভাবে X, Y, Z-এর সমাধান করা শিখিয়ে ছিলেন না বলে, বরং বলা যায় মাথার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন যে আমার পক্ষে ভুল করাই মুস্কিল।
যাইহোক্ অ্যানুয়াল পরীক্ষায় আমি অংকে পুরো ১০০ নম্বরই পেলাম। জীবনে এত আনন্দ আমি এর আগে বোধহয় কোনোদিনও পাই নি। সেইদিন থেকে কোনোদিনও আমাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয় নি। তবে আমার সবচেয়ে অপছন্দের Subject-টাও তখন আমাকে পড়তে হচ্ছিল – সংস্কৃত। ক্লাস ফাইভ সিক্স এ তো আমাকে হিন্দী পড়তে হয়েছিল – অক্ষরের সঙ্গেও পরিচয় ছিল। প্রায় একই রকম সংস্কৃত অক্ষরগুলো, তাই দিয়েই ম্যানেজ করে নিলাম। কিন্তু শব্দরূপ, ধাতুরূপ – সেগুলো তো মুখস্ত করতেই হবে, পরীক্ষায় পাশ করার জন্য! কোনোরকমে সেভেন, এইট দুটো বছর কেটে গেলেই হবে- তারপর আমি নিশ্চিত, আমি বিজ্ঞান নিয়েই পড়ব।
এবার ক্লাস এইট – দোতলায় ক্লাসরুম। টিফিন টাইমে রোজ নিচে নেমে টিফিন খেয়ে দৌড়োদৌড়ি করে খেলা শুরু করলাম – মাঝে মাঝে ‘চোর–চোর’ খেললেও বেশীরভাগই খেলতাম ‘কিৎকিৎ’। পাথুরিয়াঘাটা থেকে আসত আলো বোস – একটু ভারী চেহারা, গায়ে জোর খুব, সে আর আমি এক দলে থাকলে আমরা জিতেই ছাড়তাম।
যতই খেলা করি না কেন, লক্ষ্য তখন আমার একটাই – বিজ্ঞানটা আমায় পেতেই হবে। বাবা তো বলেই দিয়েছে, নিজের যোগ্যতায় আমি Science পেলে অবশ্যই আমি Science নিয়ে পড়তে পারি। এর জন্য আমাকে অংক আর বিজ্ঞানে ভালো নম্বর পেতেই হবে। জানতাম, Arts নিয়ে পড়লে Compulsory Subject সংস্কৃত আমাকে নিতেই হবে। বাকী বিষয়ে না হলেও সংস্কৃতে আমার Allergy. এবার আর সব Subject এ জোর দিয়ে ক্লাস Position ধরে রাখার চেষ্টা না করে আমি অংক আর বিজ্ঞানে জোর দিলাম। বিজ্ঞান, অ্যালজেব্রা, জ্যামিতি নিয়ে আমার চিন্তা নেই, চিন্তা পাটীগণিত নিয়ে। পাটীগণিতের অংকও আমি X,Y,Z দিয়ে সমাধান করতে চেষ্টা করলাম। দিদিমণি বললেন যে পাটীগণিতের অংক আমাকে পাটীগণিতের নিয়মেই করতে হবে।
হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষায় অংকে পেলাম মাত্র ৫৬! হয়ে গেল – এই নম্বরে আমি বিজ্ঞান পাব কি করে! না, আমাকে অন্য কিছু ভাবতে হবে! পাটিগণিতের পুরো অংক করার চেষ্টা ছেড়ে দিলাম। বরং যেগুলো ভালো পারি -ঐকিক নিয়ম, লাভক্ষতি, সুদকষার অংকে জোর দিলাম। ঐ তৈলাক্ত বাঁশে বাঁদরের ওঠানামা, একাধিক নলযুক্ত চৌব্বাচার কোনো নল দিয়ে জল আসছে আবার কোনোটা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে বা দুটি ট্রেণ মুখোমুখি আসছে আর ধোঁয়া ছাড়ছে, এসব অংক নিয়ে মাথা ঘামানো ছেড়েই দিলাম। আচ্ছা বলুন তো – তেলা বাঁশে বাঁদরের ওঠানামায় আমাদের কি যায় আসে, চৌবাচ্চার জল বেরিয়ে যাবার নল বন্ধ করে দিলেই তো চৌবাচ্চা ভর্তি হয়ে যাবে (শুধু শুধু জলের অপচয়), এখন আর ধোঁয়া ওড়ানো ট্রেণ আছেই বা কোথায়? যত্তসব বাজে বাজে অংক!
অ্যানুয়াল পরীক্ষায় অংকে পেলাম ৯২, ব্যাস্ আমার বিজ্ঞান পড়া পাকা। শব্দরূপ ধাতুরূপ আর পাঠ্য বইয়ের প্রশ্নোত্তর মুখস্ত করে সংস্কৃতেও পাশ করে গেলাম।
বিজ্ঞান পড়াতে বাবা আমার জন্য একজন দিদিমণি বহাল করলেন, স্মিতাদি। পরে আমার দুই বোনও যখন বিজ্ঞান নিয়ে পড়া শুরু করেছিল তখন তাদের জন্যও বাবা মাষ্টারমশাইএর ব্যবস্থা করেছিল। মধ্যবিত্ত পরিবার হলেও বাবা কিন্তু কোনোদিনও আমাদের খাওয়া পরা বা পড়াশোনার ব্যাপারে কার্পণ্য করে নি।
এখন থেকে আমরা স্কুলের Main Building সংলগ্ন Science Building-এ এসে বসব। মাত্র তিনতলা এই Science Buildingএর প্রতি তলায় রয়েছে একটি করে ক্লাসরুম, একটি করে ল্যাবোরেটরী ও একটি করে টীচার্স রুম বা কমন রুম। পড়ার চাপ সত্ত্বেও আমার স্কুলজীবনের সেরা সময়টা আমি কাটিয়েছিলাম এখানে। Senior Teacher রা Main Building থেকে পড়াতে আসতেন মাত্র দুটি বিষয় – বাংলা আর ইংরাজী, আর বাকী বিজ্ঞান বিষয় গুলো পড়াতেন সব Junior Teacher-রা যারা হয়ত মাত্র কয়েক বছর আগে কলেজ ইউনিভার্সিটি পাশ করেছেন। তাদের সঙ্গে আমাদের Age Difference কম হওয়ার কারণে তারা সকলেই প্রায় আমাদের বন্ধুর মত হয়ে গিয়েছিলেন। তারা আমাদের বকাবকি করতেন কম – আমরা সবকিছুই নির্ভয়ে সেই দিদিমণিদের সঙ্গে Share করতে পারতাম। তবে যাই হোক্ না কেন পড়াশোনায় কিন্তু আমরা কোনো দিনই ফাঁকি দিই নি- আমরা সকলেই তো স্বেচ্ছায় বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে এসেছি, ফাঁকি দেবই বা কেন! এখানে একজন স্যরের কথা বলতেই হচ্ছে, নারায়ণ স্যর – মাত্র কয়েকদিন অংক করিয়েছিলেন তিনি।
আমরা তখন সবে ক্লাস নাইনে উঠেছি, তিনি এলেন আমাদের ক্লাস নিতে। Co-Ordinate Geometry, Trigonometry সব নতুন বিষয়। সাদা ধুতি আর শার্ট পরে তিনি ক্লাসে এসেই হাতে চকটা তুলে নিয়ে আমাদের দিকে পিছন ফিরে বোর্ডে অংক কষা শুরু করলেন। পিছন ফিরে নিজের মনে কি যে বোঝাতে লাগলেন আমরা তার কিছুই বুঝলাম না। মাঝে মাঝে আবার ডাষ্টার এর বদলে নিজের হাতে ধরা রুমাল দিয়ে বোর্ড মুছে সেই রুমাল দিয়ে নিজের মুখ মুছে নিজেকে দ্রষ্টব্য করে তুললেন। হাসি চেপে আমরা চুপচাপ বসে রইলাম। বুঝতেই পারলাম মেয়েদের পড়াতে তিনি স্বচ্ছন্দ নন। যা হোক্ বেশীদিন অবশ্য তিনি রইলেন না, বলা যায় আমরাই তাকে থাকতে দিলাম না। আমাদের জন্য এবার এক নতুন অংকের দিদিমণি এলেন।
ক্লাস নাইনে ক’জন নতুন মেয়ে এসে ভর্তি হল –তাদের মধ্যে দুজন, জয়িতা গায়েন আর শিপ্রা মিত্রর সঙ্গে আমার, মায়ার আর কৃষ্ণার খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেল। আমরা পাঁচ জনে বেশ এক বন্ধুদল হয়ে উঠলাম – বাকী মেয়েরা আমাদের নাম দিল ‘পঞ্চপান্ডব’। আমরা পাঁচজনে সবসময় এক সঙ্গে থাকতাম, টিফিন খাওয়া থেকে শুরু করে বাড়ী ফিরতামও একই সঙ্গে, সচরাচর বাসে – কারণ কৃষ্ণা থাকত পাইক পাড়ায়, সেখানে ২নং বাস ছাড়া কোনো বাস যেত না। জয়িতা অবশ্য আমার আর মায়ার সঙ্গে লেডিস ট্রামেরই যাত্রী হয়ে গেল। সে থাকত জগৎ মুখার্জী পার্কের কাছে কিন্তু একসঙ্গে যাওয়ার জন্যে সে হেঁটে এসে আমাদের ষ্টপেজ থেকে ট্রামে উঠত।
কৃষ্ণা (দাস) আনত একেক দিন একেক রকম টিফিন, বিশেষ করে নানারকম আচার –ফুলকপির, সজনে ডাঁটার, আমের, কুলের, কত রকমের। আমরা সেসব ওকে না দিয়ে খেয়ে নিয়ে বলতাম “আরে তোর বাড়িতে তো আরো আচার রয়েইছে, তুই বরং বাড়ী গিয়ে খাস, এগুলো বরং আমাদেরই খেতে দে”। শিপ্রা মিত্র, আনত লুচি বা পরোটা তরকারি আর জয়িতা আনত কেক পেষ্ট্রী এইসব, মায়া আনত ফল, মিষ্টী। আমার টিফিনে রোজই থাকত জ্যাম বা মাখন দেওয়া দুস্লাইস পাঁউরুটি, কলা আর মিষ্টি। সবার টিফিনই ভাগ হত, আমাদের কাউকেই রোজ একঘেঁয়ে টিফিন খেতে হত না।
টিফিন খেয়েই শুরু হত আমাদের পাঁচজনের ছুটোছুটি, দৌড়োদৌড়ি খেলা –কখনো দুদ্দাড় করে সিঁড়ি দিয়ে ওপর নিচ করে, কখনো ক্লাসের বেঞ্চি টপকে, কখনো মাঠের মধ্যে চোখ বেঁধে কানামাছি আবার কখনো বা রুমাল চোর। ক্লাসের সকলেই আমাদের বেশ সমীহ করে চলত – তারা জানত আমাদের ঘাঁটালে মুশকিল আছে, কারণ আমরা একসঙ্গে পাঁচজন আর তারা সব একলা, আলাদা আলাদা।
সম্ভবতঃ সেটা ক্লাস নাইন বা টেন আমাদের হেডমিষ্ট্রেস এসেছেন ইংরাজী ক্লাস নিতে। সিলেবাসে না থাকলেও আমাদের ইংরাজী শিক্ষার জন্য সেক্সপীয়ারের অরিজিন্যাল কতগুলো পিস্ পড়তে হয়েছিল। সেদিন পড়াচ্ছেন ‘মার্চেন্ট অফ ভেনিস’। এসেই উনি আমি, আমার পাশে বসা মাধবী, আমাদের পিছনের বেঞ্চে বসা আরো দুজন ও পাশের দিকে বেঞ্চে বসা আরো দুজন মেয়েকে দাঁড় করিয়ে দিলেন। এবার বই খুলে শুরু হল ওনার পড়ানো – আমাকে বললেন যে তুমি পোর্সিয়া, মাধবী অ্যান্টোনিও, পিছনের দুজনের একজন শাইলক আর একজন ব্যাসানিও। পাশের দুজনের কোনো রোল জুটল না, তারা শুধু দাঁড়িয়েই রইল। এবার বললেন যে, শুরু কর পোর্সিয়া – আমি বই দেখে পোর্সিয়ার অংশটুকু পাঠ করলাম। তিনি সময় নিয়ে আমাদের বুঝিয়ে দিয়ে বললেন “কই এবার বল অ্যান্টোনিও”। মাধবী তখন ভুলে গেছে যে সেই অ্যান্টোনিও। তাকে বাঁচাতে সাইলক তখন অ্যান্টোনিও হয়ে গেছে। আবার বোঝানো হয়ে গেল, এবার শাইলক বলবে। কিন্তু কে শাইলক? সে তো তখন অ্যান্টোনিও হয়ে গেছে। এবার যাদের কোনো রোল ছিল না তাদের মধ্যে একজন শাইলক হয়ে গেল। এমনই মজার পরিস্থিতি তৈরী হত হেডমিষ্ট্রেসের ক্লাসে, কিন্তু আমাদের হাসবার উপায় ছিল না, তাহলেই জানি বকুনি খাব। বোঝাতে বোঝাতেই তিনি আমাদের প্রশ্ন করতেন আর আমাদের উত্তরও দিতে হত, তবে ইংরাজীতে। কারণ ইংরাজী ক্লাসে বাংলা বলা নিষিদ্ধ ছিল।
বাবা আমাদের জন্য ইতিমধ্যে একটা রেডিও কিনে এনেছে। কাজেই অন্যের বাড়ি থেকে ভেসে আসা গান এখন আর শোনার দরকার হয় না। বাংলা, হিন্দী গানের সঙ্গে বেশ কিছু ইংরিজি গানও আমি শুনতে লাগলাম। ক্লিফ রিচার্ড, এলভিস প্রেসলি, প্যাট বুন, ন্যাট কিংকোল – এদের গানের কথা তখন আমার বোধগম্য না হলেও, গানের সুর, তাল মন ভরিয়ে দিত, মনে হত নেচে উঠলেই হয়!
ক্লাস টেন-এ আমরা গিয়েছিলাম Excursion-এ, যে কথা আমি আগেই বলেছি। থ্রি-টায়ার কামরার একটা ক্যুপের মধ্যে আমাদের সাতজনের থাকার ব্যবস্থা হয়েছিল – নিচের টায়ারের মাঝে একটা কাঠের বেঞ্চ আটকে দিয়ে। ঊল্টোদিকে জানলার ধারে একজন দিদিমণি অঞ্জলীদি, আমরা ডাকতাম অঞ্জুদি। প্রায় দুদিন পরে আমাদের প্রথম ষ্টপেজ ঝাঁসি। আমাদের বলা হল ওয়েটীং রুমের বাথরুম ব্যবহার করে তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে নিতে, কারণ আমরা বেড়াতে যাব।
আমাদের কামরার সকলেই বিজ্ঞানের ছাত্রী, ক্লাস টেনের পঞ্চপান্ডব দলের আমরা চারজন, – আমি, মায়া, জয়িতা, কৃষ্ণা আর অন্য একজন সম্ভবতঃ রীতা। বাকী দুজন অন্নপূর্ণা আর সোমা ছিল ক্লাস নাইনের ছাত্রী। আমরা চট্পট্ নেমে ওয়েটীং রুমের বাথরুমগুলোর দখল নিয়ে স্নানটান সেরে তৈরী হয়ে হেডমিষ্ট্রেসের সামনে এসে দাঁড়ালাম। দেখলাম কলা বিভগের ছাত্রীরা তার আগেই তৈরী হয়ে আমাদের জন্যে অপেক্ষারত। আমাদের দেরী দেখে হেডমিষ্ট্রেস রেগে আগুন – আমাদের শাস্তি হল, আমরা সেদিন কোত্থাও যেতে পারব না। আমাদের কোনো সময় বলে দেওয়া হয়নি, কিন্তু কলা বিভাগের ছাত্রীরা দেখলাম জানে, তারা ফিরে এসে স্নান সারবে। চুপচাপ আমরা আমাদের কামরায় উঠে এলাম, খারাপ লাগছে অঞ্জুদির জন্য। বেড়াতে বেরিয়ে প্রথমেই ধাক্কা।
দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পরে প্যাকেজ ট্রিপের ম্যানেজার এলেন আমাদের কামরায়, বললেন যে এবার তোমরা চলো আমার সঙ্গে, আমি তোমাদের ঝাঁসি দেখাব। তারপর ম্যানেজারের সঙ্গে অঞ্জুদিসহ আমরা আটজন চললাম ঝাঁসীর দুর্গ দেখতে। কি যে মজা হয়েছিল ! বকুনির কেউ নেই, সারা দুপুর আমাদের হাতে, আমরা সব এখন মুক্ত বিহঙ্গ। এই মওকায় ম্যানেজারের সঙ্গেও বেশ একটা সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে উঠল – যার সুবিধা আমরা এই যাত্রায় পরেও পেয়েছিলাম।
যেসব জায়গায় যাওয়ার কথা, সেসব জায়গায় আমাদের কামরা কেটে রেখে ট্রেণ এগিয়ে যেত, আবার পরে অন্য ট্রেণের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হত। খাওয়াদাওয়া প্ল্যাটফর্মে বা কামরায়। হঠাৎই একদিন কামরায় প্রচন্ড দুর্গন্ধ – কোথা থেকে আসছে আমরা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। তারপর আবিস্কার হল তিনতলায় কৃষ্ণার বাঙ্কে কৃষ্ণা একটা ভিজে শাড়ি কবে থেকে যেন দলা পাকিয়ে রেখে দিয়েছে, সেখান থেকেই আসছে গন্ধ। কামরার বাকী, আমরা সকলে স্কার্ট বা ফ্রক পরলেও কৃষ্ণা ক্লাস টেনেই শাড়ী পরা ধরে নিয়েছে। আমাদের জামা ট্রেণের জানলায় দিয়ে শুকিয়ে নিলেও কৃষ্ণার শাড়ী কোথায় শুকনো হবে!
এই Excursion-এ অনেক জায়গা – ঝাঁসীর দুর্গ, সাঁচীর স্তূপ, গোলকোন্ডা দুর্গ, নিজাম প্যালেস, চার চিনার, মেরিন ড্রাইভ, এ্যালিফ্যাণ্টা কেভ, সব কিছু তো দেখা হয়েছিল, কিন্তু মুগ্ধ হয়েছিলাম অজন্তা ইলোরা দেখে। বন্ধুর পাহাড়ের উপরে আঁকা চিত্রশিল্প, বা বিশাল পাহাড় কেটে এমন ভাস্কর্য কোন্ শিল্পীরা যে করেছিল?
বই পড়ার নেশা আমাদের তিন বোনেরই ছোটবেলা থেকে – আর এটা বড়দের বই, তোমরা পড়বে না, এমন কোনো নিষেধও আমাদের বাড়ীতে ছিল না। তাই রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র শেষে মামার বাড়ীতে থাকা রহস্য রোমাঞ্চ গল্পে তখন মজে আছি। এমন সময়, আমার হাতে এসে পড়ল স্বপন কুমারের ৬৪ পাতার চটি বইগুলো – দীপক চ্যাটার্জী, রতনলালের রহস্য সমাধানের গল্প। হয় ক্লাসেই খাতা বইএর মাঝে লুকিয়ে বইগুলো শেষ করা বা বাড়ীতে এনে বইএর ফাঁকে গুঁজে সেগুলো পড়ে নেওয়া – শুরু করলে শেষ না করে ছাড়া যেত না। আজ এই বয়সে এসে, আমি একবার স্বপন কুমারের বই পড়তে চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু পড়ে উঠতে পারলাম না। একদিন যা ছিল আমার খুবই প্রিয়, দেখলাম আজ তার কোনো মূল্যই নেই আমার কাছে। সময়ের সঙ্গে কত কিছুই না বদলে যায়!
হঠাৎই একদিন কোনো কারণে ছাত্র ধর্মঘট ডাকা হল। স্কুল চলছে তখন – ছাত্ররা এসে ঝামেলা করাতে ছুটি দিয়ে দেওয়া হল। দোতলার জানলা থেকে দেখলাম, Main Building-এর মেয়েরা বাড়ি ফিরছে কিন্তু আমরা বসে আছি ক্লাসরুমে – কারণ আমাদের ছুটি হয় নি। এটা তো হতে দেওয়া যাবে না – আমাদেরও ছুটি চাই। রাস্তায় যারা বিক্ষোভ দেখাচ্ছিল, দোতলার জানলা থেকে তাদের ডাকলাম, “এই যে দাদারা, দিদিরা, আমরা কিন্তু এখনও স্কুলেই রয়েছি, আমাদের ছুটি হয়নি”। বলার সঙ্গে সঙ্গেই তারা এসে আমাদের Building-এর প্রধান দরজার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো। ব্যাস! ছুটি পেয়ে গেলাম।
ষাটের দশকের সেই সময়ে ছেলে মেয়েরা যে প্রেম করত না এমন নয়, সংখ্যায় কম হলেও করত – তবে এমন খুল্লম খুল্লা নয়, লুকিয়ে চুরিয়ে। এখন যেমন কার কটা বয় ফ্রেন্ড বা গার্ল ফ্রেন্ড আছে তাই দিয়ে তার মূল্য নির্ধারণ হয়, তখন অবশ্য তেমন ছিল না। একটা থাকলেই যথেষ্ট, তাও আবার সবসময় লুকিয়ে চুরিয়ে রাখতে হত। রোজ বিকেল বেলা স্কুল ছুটীর পর আমরা, পঞ্চপান্ডব, ফিরতাম হেদুয়ার মধ্যে দিয়ে। দেখতাম জোড়ায় জোড়ায় ছেলেমেয়েরা বসে নিজেদের মধ্যে গল্পে মগ্ন – নিশ্চয়ই তারা বেপাড়ার ছেলেমেয়ে, পাড়ায় বসলে তো বাড়ীতে ধরা পড়ে যাবে! আমরা তাদের পেছনে লাগলেও তারা কিছু বলতে পারত না। তাতে আমরা আরো বেশি মজা পেতাম, আরো বেশি করে পেছনে লাগতাম। কোনোদিন জোড়ার একজন না এলে পেছন থেকে কথা ভাসিয়ে দিতাম, “আহা রে! আজ দিনটা মনে হয় বৃথাই গেল। নাও গো সোনা, এবার ফিরে যাও, বাড়ি ফিরে আঙুল গোনো”।
তবে একটা জুটিকে রোজই দেখতাম – মেয়েটি আমাদের একক্লাস জুনিয়ার, ছেলেটি কলেজ ছাত্র। আমরাও যেমন তাদের চিনে গিয়েছিলাম, ওরাও তেমনি আমাদের। স্কুল পাশের পর সেই মেয়েটির সঙ্গে ছেলেটির বিয়েও হয়েছিল। ছেলেটি তখন কলেজ শিক্ষক। পরে শুনেছিলাম, মেয়েটি মারা গেছে – সম্ভবতঃ স্যুইসাইড। পরে ছেলেটি বিখ্যাত (?) হয়েছিল লেখক সঞ্চালক হিসেবে। তবে তার দু একটি লেখা পড়ার পর আমি তার লেখা পড়া ছেড়েই দিয়েছি। কারণ, দেখলাম, তিনি তার লেখায় নামীদামী ব্যক্তিত্বদের অন্ধকার দিকগুলোই শুধু তুলে আনতে ব্যস্ত।
ছুটীর সময় বৃষ্টি পড়ে জল জমলে, আমাদের খুব আনন্দ, সেদিন আর বাস ট্রামে ওঠার কোনো তাড়া নেই। এমনিতেই কর্ণওয়লিশ ষ্ট্রীটের বেশীর ভাগ জায়গাই তো জল জমার জন্য বিখ্যাত। সেই জলের মধ্যে দিয়েই আমরা পঞ্চপান্ডব পাশাপাশি রাস্তা জুড়ে হেঁটে যেতাম হা হা হি হি করতে করতে। পিছন থেকে কোনো গাড়ি হর্ণ দিলেও রাস্তা ছাড়তাম না, রাস্তা এখন আমাদের দখলে। কোথাও শুকনো ফুটপাথ দেখলে তবেই সেখানে উঠে তাদের রাস্তা দিতাম। তখন বয়স কম – শ্যামবাজার পর্যন্ত হেঁটে যাওয়া আমাদের কাছে কোনো ব্যাপারই ছিল না। শুধু কৃষ্ণার বাস দেখলে তাকে ঠেলেঠুলে বাসে তুলে দিতাম। হায়! আমার সেই বন্ধুরা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কোথায় যে হারিয়ে গেল, কে জানে! স্মার্ট ফোন, সোশ্যাল মিডিয়াবিহীন যুগে তারা যে কোথায় ছিট্কে গেল তাদের আর সন্ধানই পেলাম না।
ছেলেদের চোখের ভাষা পড়ার বয়স তখন আমার হয়ে গেছে। সেই বয়সে সব মেয়েরাই নিজেদের রাণী বলে মনে করে। আমিও তার ব্যতিক্রম ছিলাম না। এমনিতে আমি তো একলা চলি না, কোনো না কোনো বন্ধু সঙ্গে থাকেই। শুধুমাত্র আড়চোখে একবার দেখে নিতাম, লাইনে কে কে আছে, তারপর এগিয়ে যেতাম রাণীর মতই হিল খটখট করে, তাদের পাত্তা না দিয়ে। দাঁড়িয়ে আছে, থাকুক দাঁড়িয়ে আমার তাতে কি আসে যায়!
সামনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। প্র্যাকটীক্যাল পরীক্ষাও হয়ে গেছে। এখন অপেক্ষা থিয়োরিটিক্যাল পরীক্ষার। ক’মাসের স্কুল ছুটি – বাড়ীতে সারাক্ষণ ঘাড়মাথা গুঁজে প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছি খাওয়ার আর ঘুমের সময়টুকু বাদ দিয়ে। নাইন, টেন, ইলেভেন, তিন বছরের সিলেবাসের ওপর প্রশ্ন থাকবে – বেশির ভাগই Descriptive. সময় নষ্ট করা একেবারেই চলবে না, কারণ এর ওপরেই নির্ভর করছে আমার ভবিষ্যতের পছন্দমত Subject বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা। আমার অবস্থা দেখে মা’র বোধহয় মায়া হল, ঘোষণা করল যে পরীক্ষা শেষ হলেই পরপর তিনদিন তিনটে বাংলা সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাবে। বোনেদের তো খুব মজা, তারা জানে, মা তাদের ফেলে যাবে না।
‘জয়া’ (সাবিত্রী চ্যাটার্জী), ‘এতটুকু বাসা’ (সৌমিত্র চ্যাটার্জী, সন্ধ্যা রায়) সীনেমার টিকিট কাটা হয়েও গেল। রূপবানীতে তখন রম্রম্ করে চলছে ‘সপ্তপদী’। আমি মা’কে বললাম যে মা আমি ‘সপ্তপদী’ দেখব। উত্তম কুমার, সুচিত্রা সেন অভিনীত সেই ছবির গান ‘এই পথ যদি না শেষ হয়’ আর উত্তম কুমারের Lipএ উৎপল দত্তর ভারী গলায় ‘ডেসডিমনা’কে বলা ‘ওথেলো’র সেই Dialogue তখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে “It is the cause, It is the cause, my soul. Let me look at your face. Look at my eyes”. মা রাজি হল না কারণ ওটা নাকি বড়দের বই, আমাদের দেখার উপযুক্ত নয়, আমরা এখনও বড় হইনি। তখন ছোটো মাসী মা’কে বোঝালো “আচ্ছা রাঙাদি, তোমার মেয়ে দুদিন পরে কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছে, ও নাকি এখনও ছোট আছে। কি যে বল না তুমি”!
সেই প্রথম আমার সুচিত্রা উত্তমের সিনেমা দেখা, দেখে বুঝলাম যে উত্তমকুমারকে কেন সর্বোত্তম বলা হয় আর সুচিত্রা সেন ছাড়া কেই বা রীণা ব্রাউন হতে পারত! যাক্, আমি আমার বড় হয়ে যাওয়ার স্বীকৃতি পেয়েই গেলাম।
ভেবেছিলাম ছোটবেলার সেই মধুর মুহূর্তগুলোর স্মৃতিচারণ করলে ক্ষণিকের জন্যে হলেও আনন্দে মন ভরে উঠবে, বুঝতে পারিনি সঙ্গে বেদনার ভারও বহন করতে হবে। লিখতে বসে কতবার যে চোখ ভিজে উঠেছে, মনে হয়েছে না আর দরকার নেই, যা হয়েছে, যথেষ্ট হয়েছে। কিন্তু তবুও আমি হার মানিনি, কারণ এই লেখাই যে আমার প্রিয় আত্মজনদের প্রতি আমার একমাত্র শ্রদ্ধা তর্পণ।
সমাপ্ত
গোপা মিত্র
ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।
তোমার লেখা সম্পর্কে আর নতুন কিছু বলার নেই।তোমার লেখার style টা ধরে রেখেছ এতো সুন্দর ভাবে যে কি বলবো।এতো বছরের আগের কথা, রোজকার ঘটনা, কিন্তু তুমি তোমার ভাষা দিয়ে ঘটনা গুলো কে প্রাণবন্ত করেছো।খুব ভালো লাগলো
তোমাদের ভালো লাগাই আমার অনুপ্রেরণা ।
Daarun! Brilliant collation of thoughts and nostalgia. Khoob bhaalo laaglo.
Thank you .