গোপা মিত্র
অন্ধ বিচার
রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-৯)
আজ আবার কোর্টে কেসের দিন পড়েছে। আজ বিবাদী পক্ষের সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। কোর্টের কাজ শুরু হতেই অজেয় রায় উঠে দাঁড়িয়ে জজ্সাহেবকে বললেন “মহামান্য জজ্সাহেবের কাছে আমার একটা আর্জি আছে। উনি যদি অনুমতি দেন আমি প্রথমেই একবার তদন্তকারী অফিসারকে কাঠগড়ায় আসতে বলতে চাই। এর জন্য আমি আগেই ওনাকে শমন জারি করেছি, তার একটা কপিও আমি কে.কে.-র কাছে পাঠিয়েছি”।
কে.কে.-র দিকে একবার দেখে নিয়ে জজ্সাহেব অনুমতি দিলেন। কে.কে. আপত্তি করলেন না।
অমলিন বসু এসে দাঁড়ালেন কাঠগড়ায়। অজেয় রায় উঠে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন করলেন, “আচ্ছা গত সতেরো তারিখে বেদ বাবু কি আপনার কাছে কোনো অভিযোগ নথীবদ্ধ করিয়েছেন? যদি করে থাকেন কি নিয়ে অভি্যোগ করেছেন, আপনি আদালতকে বলুন”।
– গত সতেরো তারিখের আগের দিন রাতে অভিযুক্ত রীতিন আগরওয়াল দুজন মস্তানের সঙ্গে বেদবাবুর বাড়ী গিয়ে হুমকি দিয়ে বলে এসেছে যে তিনি যদি মামলাটা না তুলে নেন, তাহলে তার মেয়ের অনেক বড় ক্ষতি করে দেবে”। বেদবাবু অবশ্য রাজী হননি। তিনি রীতিনের বিরুদ্ধে আরো একটা এফ আই আর দায়ের করেন।
– আপনার সাক্ষী, কে.কে.।
– না আমার কোনো জিজ্ঞাস্য নেই।
জজ্সাহেব কে.কে.–র দিকে ফিরে বললেন “দেখুন আপনার মক্কেল যদি আর একবারও এমন কিছু করে, আইন হাতে তুলে নিতে চায়, তাহলে কিন্তু আমি ওর জামিন নাকচ করে দিতে বাধ্য হব।
– ও ভুল করেছে স্যর। আর এমন হবে না।
এবার শুরু হল বিবাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রথমেই ডাক পড়লো, রীতিনের গাড়ীর ড্রাইভার সুমন্তর।
– তুমি সুমন্ত? কে.কে. প্রশ্ন করলেন।
– হ্যাঁ স্যর, সুমন্ত জানা। আমি ছোটো মালিকের গাড়ীর একমাত্র ড্রাইভার। মাঝে মধ্যে মালিক নিজে চালালেও, আমি সবসময়ই তার পাশে থাকি।
– তার মানে তোমার কোনোদিনও ছুটি থাকে না?
– থাকে তো। যেদিন মালিকের কোথাও যাওয়ার থাকে না বা উনি বড় মালিকের কাছে মুম্বাই যান সেসময় উনি আমাকে ছুটি দেন। আমি তখন দেশের বাড়ীতে আমার পরিবারের কাছে যাই।
– তা তোমার দেশ কোথায়?
– কন্টাই, মানে কাঁথি হুজুর।
– এবার বলো, যে তারিখের কথা বলা হচ্ছে, সেই তারিখে কে গাড়ী চালাচ্ছিলো?
– আমি, হুজুর। ছোট মালিক আমার পাশে ছিলেন। কিন্তু গাড়ী আমি চালাচ্ছিলাম।
– তারপর দীঘায় পৌঁছে কি হলো?
– ছোট মালিককে আমি একটা হোটেলে পৌঁছে দিলাম। সেখানে ছোট মালিকের বন্ধুরা অপেক্ষা করছিলো। ছোট মালিক তাদের কাছে চলে গেল। আমাকে গাড়ীর চাবি নিয়ে ফিরে যেতে বললো। পরদিন এসে মালিককে নিয়ে যেতে বললো। আমি গাড়ী নিয়ে আমার দেশের বাড়ী ফিরে গেলাম। পরদিন এসে আমি ওনাকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে এলাম।
ড্রাইভার যে সত্যি কথা বলছে, রীতিন তার সঙ্গে ছিল, তার প্রমাণ স্বরূপ কে.কে., রীতিনের ফোনের সংগৃহীত সেদিনের টাওয়ার লোকেশন কোর্টে পেশ করলেন।
বক্তব্য শেষ করে কে.কে. অজেয় রায়ের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন যে এবার আপনার জেরা।
অজেয় রায় উঠে দাঁড়িয়ে জজ্সাহেবকে বললেন “আদালতের কাছে আমার আবেদন, আমি আমার জেরা করার অধিকার রিজার্ভ রাখতে চাই। পরদিন আমি এই সাক্ষীকে জেরা করবো। এর জন্য আমাকে অনুমতি দেওয়া হোক্”।
– বেশ তাই হবে। – জজ্সাহেব বললেন। সুমন্ত নেমে এলো কাঠগড়া থেকে।
এরপর কে.কে., পরপর রীতিনের তিন বন্ধুকে কাঠগড়ায় ডেকে নিলেন। তারা সকলেই একবাক্যে বলল যে ঘটনার দিন সকলে রীতিনকে আসতে দেখেছিল রির্সটে এবং সেদিন রীতিন রির্সটে তাদের সঙ্গেই ছিল। কাজেই কোনোমতেই সে ঐদিনের ধর্ষণের সংগে জড়িত থাকতে পারে না। তার কথার সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ কে.কে. জজ্সাহেবের কাছে রির্সটের সি সি ক্যামেরায় তোলা সেদিনের ঘটনার এক ফুটেজ জমা দিলেন।
পেনড্রাইভের সেই ফুটেজে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, ডাইনিং রুমের দরজা দিয়ে রীতিন ভিতরে প্রবেশ করছে, আর তার বন্ধুবান্ধবরা সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। অকাট্য প্রমাণ।
অজেয় রায় কোনো মন্তব্য করলেন না, শুধুমাত্র জজ্সাহেবের কাছে অনুরোধ করলেন এই ফুটেজের একটা কপি তাকে দেওয়া হোক্।
এবার অজেয় রায়ের জেরার পালা। কিন্তু এবারও তিনি আদালতের অনুমতি নিয়ে এদের তিনজনের জেরার অধিকার পরদিনের জন্য রিজার্ভ রাখলেন।
জজ্সাহেব মামলার পরের দিন ঘোষণা করে, সেদিনের মত সাক্ষ্যগ্রহণের সমাপ্তি ঘোষণা করলেন।
অজেয় রায় কোর্টরুম থেকে বেরিয়ে তার জুনিয়ার সুমেধাকে কাছে ডেকে নিলেন। তারপর তাকে কিসব যেন নির্দেশ দিলেন। সব শুনে চলে যাবার আগে তাকে বলে দিলেন যে, অবশ্যই যেন সুমেধা যত শীঘ্র সম্ভব খবরগুলো জোগাড় করে তার সঙ্গে পরশু দিন তার বাড়িতে এসে দেখা করে।