Home গল্প, রহস্য ও ভৌতিক অন্ধ বিচার – ০৮
রহস্য ও ভৌতিকগল্প

অন্ধ বিচার – ০৮

গোপা মিত্র

অন্ধ বিচার

রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-৮)

অজেয় রায় চলে গেলেন, বেদ ব্যানার্জীও তার পরিবার নিয়ে বাড়ীর পথে রওনা দিলেন, রয়ে গেল শুধু দুই বন্ধু, সুমেধা আর শরণ্যা। তারা কেসের গতি প্রকৃতি নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। শরণ্যা বললো, “দেখ, সুমেধা, কে.কে. সব রকম ভাবেই, সে ন্যায় হোক্‌ বা অন্যায় হোক্‌ , ছেলেটাকে ছাড়াতে চেষ্টা করবে। কিন্তু আমরা ওকে কিছুতেই ছাড়াতে দেব না। এই ছেলেগুলো মেয়েদের কি ভাবে বল্‌তো? নিজেদের ইচ্ছা মতো যখন তখন মেয়েদের ওপর অত্যাচার করবে, আর তারপর টাকার জোরে ছাড়া পেয়ে যাবে? একটি মেয়ের অন্ধত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে ধর্ষণ করা- আমি এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না”।“ কিন্তু কি করবি বল”? সুমেধা উত্তর দিল। শরণ্যা বলল “দেখ স্যোশাল মিডিয়া আজকাল অত্যন্ত শক্তিশালী। আমি সেখানে ছেলেটির বি্রুদ্ধে জনমত গড়ে তুলে চাপ সৃষ্টি করব। কোর্টে তো অজেয় রায় লড়ছেনই, কোর্টের বাইরেও জনগণ ছেলেটির বিরুদ্ধে কথা বলবে। আমার এক বন্ধুর স্যোশাল মিডিয়ায় একটা চ্যানেল রয়েছে। আমি তাকে এই কাজে লাগাবো”। “তাহলে তো খুব ভালো হয়। দেখ্‌ চেষ্টা করে”। সুমেধা বললো। 

পরদিন সন্ধ্যায় বেদবাবুদের বাড়ির বেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই তাকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ঢুকে এলো রীতিন আগরওয়াল, সঙ্গে দুজন মস্তান। এসেই আগে দরজাটা বন্ধ করে দিল, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বেদবাবুকে হুমকি দিয়ে বললো যে কালই গিয়ে, তিনি যেন মামলাটি তুলে নেন, নচেৎ সত্যিই সে তার মেয়েকে তুলে নিয়ে গিয়ে তার জীবনটা নরক বানিয়ে দেবে, কেউ তাকে বাঁচাতে পারবে না। 

বাড়ীর সকলের সামনেই যে হুমকিটা সে দিয়ে গেলো, অন্য কেউ হলে হয়ত তা শুনে ভয় পেয়ে যেত, কিন্তু বেদবাবু সে চরিত্রের মানুষ নন, এমনকি তার মেয়েও নয়, সে শুধু তার অত্যাচারীর শাস্তি চায়। বেদবাবু রীতিনের বিরুদ্ধে থানায় আবার একটা ডায়েরী করলেন। অমলিন বসু তার বাড়ীতে দুজন পুলিশ গার্ড পোষ্টিং করলেন। 

কে.কে. জানতে পেরে রীতিনকে ডেকে পাঠালেন, ক্ষুব্ধ হয়ে বললেন যে, কে তোমায় বলেছিল ওনার বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিতে? তুমি এখন বেলে ছাড়া আছো, আমি তোমাকে বেকসুর খালাস করার চেষ্টা করছি, আর এসময় গিয়ে তুমি তাদের হুমকি দিয়ে এলে? শেষবারের মত আমি তোমাকে সাবধান করে দিচ্ছি, আমাকে না জিজ্ঞেস করে কোনো কাজ করবে না। তাহলে কিন্তু আমি তোমার কেস্‌টা ছেড়ে দিতে বাধ্য হব।

রীতিন তার সাফাই দিতে গিয়ে বলল “কি করবো বলুন, সোস্যাল মিডিয়ায় তো আমাকে নিয়ে যা ইচ্ছা তাই লেখা হচ্ছে। আমার ভাবী স্ত্রী, বস্ত্র প্রতিমন্ত্রীর মেয়ে, আমাকে ফোন করে বলেছে যে , যদি আমি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারি, সে বিয়ে ভেঙে দেবে। এসব দেখেই তো আমার মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিলো”।

এর দু’ দিন পরে সকালে বেল শুনে দরজা খুলে বেদবাবু অবাক হয়ে গেলেন। দরজায় দাঁড়িয়ে তার ডিভোর্সি স্ত্রী সঙ্গে তার ছেলে।“ কি ব্যাপার এত সকালে তোমরা এখানে? আমি তো তোমাদের চাহিদা মত টাকা পয়সা সবই মিটিয়ে দিয়েছি।এতদিন পরে আবার কি চাইতে এসেছো”? 

“তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিলো”। ছেলে বলল।

– বেশ ভেতরে এসে বল। 

– অনুপমার ব্যাপারটা নিয়ে কাগজে খুব লেখালেখি হচ্ছে দেখছি। সৎ হলেও অনুপমা আমাদের বোন তো বটে, তাকে নিয়ে লোকে যা তা বললে আমাদেরও খারাপ লাগে। এবার তো তার বিয়ে টিয়েও দিতে হবে। তাই আমি আর মা তোমাকে বলতে এসেছি, তুমি বরং কিছু কম্‌পেনসেশান নিয়ে কেসটা মিটিয়ে নাও। সেই টাকায় তুমি অনুপমার সংগে বেশ ভাল একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দাও।ছেলে বলল।

– এবার বুঝলাম তোমাদের আসার আসল কারণটা। কত টাকায় বিক্রী হলে? বেরিয়ে যাও, বেরিয়ে যাও, বলছি।  আর কোনোদিনও আসবে না। আমার মেয়ে আমি বুঝে নেব, তোমাদের ভাবতে হবে না। 

– ভালো কথা বলতে এসেছিলাম, তুমি শুনলে না। মেয়েদের চরিত্রে একবার দাগ লেগে গেলে সে দাগ আর মোছা যায় না। দেখি এবার কি করে তুমি তোমার মেয়ের বিয়ে দাও।

– সে তোমাদের ভাবতে হবে না। এক্ষুনি তোমরা বেরিয়ে যাও।

বাইরে বেরিয়েই ছেলে ফোন লাগালো কে.কে.-র কাছে।

(ক্রমশঃ)
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোওকিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!