গোপা মিত্র
অন্ধ বিচার
রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-৪)
অমলিন বসু বেশ ভালোই বুঝতে পারলেন যে সরকারী উকিল কে.কে.-র কাছে বিক্রী হয়ে গেছে। এই উকিল দিয়ে কেস জেতা যাবে না, অন্ধ মেয়েটিও ন্যায় বিচার পাবে না। দুঁদে পুলিশ অফিসার তিনি, অপরাধীদের তিনি ভালোই চেনেন। মেয়েটি যে সত্য বলছে সে বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তার যেটুকু করবার সেটুকু তিনি নিশ্চয় করবেন। কিন্তু কোর্টের বিচার প্রক্রিয়ার ওপর তার কোনো হাত নেই। তিনি ভাবতে লাগলেন, এমন কি কোনো উকিল নেই যে কোনোমতেই বিক্রী হবে না, বিচারের ধারাগুলি সঠিক ভাবে প্রয়োগ করবে!
কোর্ট চত্বরেই হঠাৎ তার দেখা হয়ে গেল সুমেধার সঙ্গে। তখনই তার মনে পড়ে গেলো অজেয় রায়ের কথা। সুমেধা একসময়ে তার জুনিয়ার ছিলো। একমাত্র অজেয় রায়ই পারবেন কে.কে.-র সঙ্গে টক্কর দিতে। তবে সেই অ্যা্কসিডেন্টের পরে তিনি তো কোর্টে আসাই ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়িতে একলা পড়ে থাকেন, কারো সঙ্গে মেশেন না। তিনি কি কেসটা নিতে রাজী হবেন! তবুও একবার চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি? বিশেষ করে যে কেসে বিরুদ্ধ পক্ষের উকিল হিসাবে দাঁড়িয়েছেন কে.কে.! বছর কয়েক আগে তার গাড়ীর সঙ্গে অ্যা্কসিডেন্টের ফলেই তো অজেয় রায়ের স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছিলো। সেসময় অজেয় রায় কোর্টে কেস করেছিলেন কে.কে.-র বিরুদ্ধে। কিন্তু কে.কে. আইনের ফাঁক গলে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। প্রমাণ হয়ে গিয়েছিলো দোষটা ছিলো তার স্ত্রীর, গাড়ীর চালক কে.কে.-র নয়।
অমলিন বসু সুমেধাকে ডাকলেন। অজেয় রায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন। তারপর অনুপমার কেসটার কথা বলে জিজ্ঞেস করলেন যে, কোনোভাবেই কি অজেয় রায়কে এই কেসটা নিতে রাজী করানো যাবে না?
– আপনি যখন বলছেন স্যর, তখন নিশ্চয় একবার চেষ্টা করবো। আমিও তো চাই উনি আবার কোর্টে ফিরে আসুন, কেস জিতুন।
– বেশ তবে সেই কথাই রইলো। কাল সকালে তুমি থানায় চলে এসো। বেদবাবুও আসবেন। তারপর তিনজনে মিলে অজেয় রায়ের বাড়ীতে যাবো।
পরদিন সকালে তিনজনে মিলে অজেয় রায়ের বাড়ি পৌঁছলেন। বেল বাজালেন, দরজা খুললো না। তখন তারা দরজা ধাক্কা দিতে লাগলেন। ঘুম জড়ানো চোখে দরজা খুলে দেখা দিলেন অজেয় রায়। তিনজনে ঘরে ঢুকলেন। সুমেধা ঘরের সব জানলা গুলো খুলে দিলো। বাইরের আলো ঘরে প্রবেশ করলে দেখা গেলো চারিদিকে বই, কাগজপত্র ছড়ানো, আর টি ভি-টা চলেই যাচ্ছে। তারই মধ্যে একটা খাটে বিছানা পাতা। একটু আগে অজেয় রায় সেখানেই হয়ত ঘুমোচ্ছিলেন।
– এ কি? সুমেধা তুমি, অফিসার আপনি? তোমরা এখানে আমার কাছে, কেন? সঙ্গের এনাকে তো আমি ঠিক চিনলাম না।
– বলছি, বলছি, তার আগে সামনের দোকান থেকে আগে একটু চা বিস্কুট নিয়ে আসি, আপনিও স্যর মুখ হাত ধুয়ে একটু পরিস্কার হয়ে নিন। তারপর নাহয় চা খেয়ে নিয়ে কথা হবে। – সুমেধা বলে উঠলো।
চা বিস্কুট খেয়ে পরিচ্ছন্ন হয়ে অজেয় রায় এসে বসলে কথা শুরু করলেন অমলিন বসু। আনুপূর্বিক সমস্ত ঘটনা বর্ণণা করে তিনি বেদবাবুর সঙ্গে অজেয় রায়ের পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললেন যে, ইনিই বেদ বাবু, এর মেয়ের সঙ্গেই ঘটনাটা ঘটছে। মেয়েটি অন্ধ। বিবাদী পক্ষে দাঁড়িয়েছেন কে.কে.। এখন আপনি যদি মেয়েটির পক্ষে দাঁড়ান, তাহলে আমরা মনে করি মেয়েটি নিশ্চয় ন্যায় বিচার পাবে। অন্ধ মেয়েটির কথা ভেবে আপনি যদি কেসটা হাতে নেন!
– আপনারা তো জানেন আমি অনেকদিন কোর্টে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি। আপনারা বরং অন্য উকিল দেখে নিন।
– বেশ, তা না হয় নেবো। কিন্তু আপনি অন্ততঃ একবার বেদবাবুর বাড়ী চলুন, মেয়েটিকে দেখুন, তার কথা শুনুন, তারপর আপনি যে decision নেবেন, আমরা তাই মেনে নেব।
অমলিন বসুর দৃঢ় বিশ্বাস মেয়েটিকে দেখলে তার কথা শুনলে, অজেয় রায় কিছুতেই মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবেন না।
– বেশ তবে চলুন।