গোপা মিত্র
অন্ধ বিচার
রহস্য ধারাবাহিক (পর্ব-২)
“গতকাল মা বাবা, বেরিয়ে যাবার একটু পরেই সুহাসীও বেরিয়ে গেলো ব্যাঙ্কে, বাইরে থেকে দরজায় চাবি লাগিয়ে। আমি ভিতর থেকে দরজা বন্ধ করে একলাই রয়ে গেলাম। এমন আগেও হয়েছে। বাইরের দরজা খুলে বেল বাজালে, গলার আওয়াজ পেয়ে আমি দরজা খুলে দিই। সুহাসী চলে যাবার পরে আমি স্নান করতে বাথরুমে ঢুকি। স্নান সেরে বাথরোব পরে বাইরে বার হতেই কে যেন আমার মুখ চেপে ধরলো, তারপর বাথরোবটা জোর করে খুলে ফেলে দিয়ে, আমাকে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। আমি বাধা দেবার চেষ্টা করেও গায়ের জোরে তার সঙ্গে পেরে উঠলাম না। সে তখনও আমার মুখ চেপে ধরে রেখে আমাকে বলল যে, চেঁচিয়ে কোনো লাভ নেই, তাহলে সে আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলবে। আমিও বুঝতে পারলাম, এই বদ্ধ ঘরের ভেতর থেকে গলা ফাটিয়ে চেঁচালেও বাগান পেরিয়ে কারো কানেই সেই চিৎকার পৌঁছবে না। আমি অত্যাচারিতা হলাম, আমি ধর্ষিতা হলাম, কিন্তু কিচ্ছু করতে পারলাম না।
একটু পরেই বুঝলাম, সে আমাকে ছেড়ে চলে গেল। দোতলার সিঁড়িতে তার পায়ের শব্দ মিলিয়ে যেতে আমি আস্তে আস্তে উঠে আলনা থেকে আমার পোষাক নিয়ে পরে আবার মাটীতেই বসে পড়লাম। খানিক পরে সুহাসী এসে দরজার চাবি খুলে বেল বাজালে কোনোরকমে উঠে আমি দরজা খুলে দিলাম।
সুহাসী আমাকে দেখেই বুঝেছিলো যে আমার সঙ্গে নিশ্চয় কিছু একটা ঘটেছে। সে আমাকে বিছানায় উঠিয়ে বসিয়ে দিলো। আমি তাকে সব কিছু খুলে বললাম। সে প্রথমে আমার বাবার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলো। কিন্তু না পেয়ে পাশের বাড়ীর আন্টিকে গিয়ে ডেকে এনে আমার পাশে বসতে বলে বাবার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতে লাগলো। অবশেষে বাবাকে পেয়ে সে বাবাকে সবকিছু জানালো। বাবা সব শুনে সুহাসীকে বললো যে তিনি চেষ্টা করছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফিরে আসতে, সে সময়টুকু যেন সুহাসী আমার সঙ্গেই থাকে। আমি জানি পিসীর বাড়ী থেকে বাবার ফিরতে অন্ততঃ তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগবে। সেই সময়টায় আমি সুহাসীকে নিয়ে দোতলায় আমাদের ষ্টুডিয়োও গিয়ে আমার অত্যাচারীর মুখের একটা মূর্তি বানাতে চেষ্টা করলাম। আমার অনুভব দিয়ে আমি অত্যাচারীকে যেমন বুঝেছিলাম, আমি চেষ্টা করলাম তেমনই একটা মুখাবয়ব গড়ে তুলতে। এছাড়া সেই অপরাধীকে চেনাতে আমি আর কি-ই বা করতে পারতাম”!
এবার অমলিন বসু বেদবাবুর দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলেন যে আপনি এবার বলুন ছেলেটিকে কিভাবে চিনলেন।
– ঘটনার আগের দিন সকাল, তখন প্রায় আটটা বাজে, আমরা তিনজনে বাগানে বসে ব্রেকফাস্ট করছিলাম, সুহাসী আমাদের পরিবেশন করছিলো, গেট খোলা ছিলো, এমন সময় একটি দামী গোল্ডেন ইয়েলো গাড়ী আমাদের গেটে এসে দাঁড়ালো। সেখান থেকে একজন অচেনা ছেলে নেমে এসে আমাদের কাছে অজয়ের বাড়ি কোনটা জানতে চাইলো। অজয় আমাদের প্রতিবেশী, তিন চারটে বাড়ি পরেই থাকে। আমি তাকে বাড়ীটা দেখিয়ে দিলে, সে চলে গেলো।
অফিসার বললেন, “সে তো বুঝলাম, কিন্তু ঘটনার সময় সুহাসী যে থাকবে না, সেটা সে জানলো কি করে?”
বেদবাবু বললেন “ছেলেটি যে সময় এসেছিলো, সে’ সময় সুহাসী আমাকে বলছিলো যে পরদিন সে সাড়ে দশটায় যখন ব্যাঙ্কের কাজে যাবে, আমি যেন ব্যাঙ্কের বড়োবাবুকে বলে রাখি, যেহেতু বড়োবাবুর সঙ্গে আমার হৃদ্যতা আছে, তাহলে সে কাজটা শেষ করে তাড়াতাড়ি ফিরে আসতে পারবে, তা না হলে অনুকে অনেকক্ষণ একা থাকতে হবে, কারণ কাল আমরাও তো বাড়ী থাকবো না! আমি রাজী হয়ে সুহাসীকে বললাম যে ঠিক আছে আমি বলে রাখবো, সুহাসী যেন ঠিক সাড়ে দশটায় চলে যায়।”
অমলিন বসু বললেন “বুঝলাম।তবে অএখন নুপমাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হবে। ওর ডাক্তারী পরীক্ষা হবে। তারপর কোর্টে কেস উঠলে, আমি চেষ্টা করবো, অনুপমা যেন ন্যায় বিচার পায়। আপনাদের কি কোনো পরিচিত উকিল আছে, যিনি অনুপমার হয়ে কেসটা লড়বেন? যদি তা না থাকে, তবে সরকারী উকিলই ওর হয়ে লড়বে”।
– না, তেমন কোনো উকিলের সঙ্গে আমাদের তো পরিচয় নেই। আপনি বরং সরকারী উকিলেরই ব্যবস্থা করুন। এখন তবে চলুন, ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাক্।