প্রিয়াঙ্কা ঘোষ
চরিত্রবর্গ —
কথক – বয়স বাইশ-চব্বিশ। পেশায় দৈব্য ঔষধের মাদুলি বিক্রেতা। পোশাক পরতেন সাধু ও সাত্ত্বিক বামুনের মতো। গিরিমাটির রঙে ছোপানো কাপড়, পায়ে ক্যাম্বিসের জুতো, গলায় মালা, হাতে একটা ক্যাম্বিসের ব্যাগ।
শচীশ কবিরাজ – কথকের মালিক। এখানে অনুপস্থিত চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে
তাঁর অধীনে কথক চাকরি করতেন। মাদুলি বিক্রি করে শচীশ কবিরাজের তরফ থেকে মাইনে ও রাহা খরচ পেতেন। তিনি ছিলেন চুঁচড়োর বাসিন্দা।
নফর চন্দ্র দাস – একজন বৃদ্ধ মানুষ এবং ফাঁসুড়ে ডাকাত দলের সর্দার। তাঁর বলিষ্ঠ গড়ন, সবল মাংসপেশী,গলায় রুদ্রাক্ষের মালা, হাতে ছোট একটা লাঠি। তালদিঘীর পাশে সঞ্জয়পুর গ্রামে তাঁর বাড়ি ছিল। তাঁরা জাতে বারুই ছিল।
বামা – ফাঁসুড়ে ডাকাত নফর চন্দ্র দাসের মেজছেলের বউ এবং কথকের জীবনদাত্রী।তার পোশাক সাধারণ পল্লীগ্রামের বধূর মতো। সে বর্ধমান জেলার কুসুমপুর গ্রামের মেয়ে।
পার্শ্ব চরিত্র – বাজারের দোকানদাররা, বামার স্বামী শম্ভু।
প্রথম দৃশ্য
মঞ্চ পরিকল্পনা – নাটকের শুরুতেই মঞ্চ সজ্জায় কাগজ কাটিং করে একটি স্টেশন তৈরি করা হয়েছে।পর্দায় ফুটে উঠেছে গ্রাম্য বাজারের ছবি। সূত্রধর কথকের মাখমপুর যাওয়ার কারণ ব্যক্ত করার পরেই কথকের প্রবেশ। বাজারের দোকানীদের সঙ্গে কথকের কথপোকথন –
কথক : দয়া করে একটু শুনবেন।
দোকানীরা : কী ব্যাপার বলুন ?
কথক : একটু সাহায্য করবেন?
দোকানীরা : অবশ্যই !
কথক : বলছিলাম যে এখান থেকে মাখমপুর আর কত দূর?
দোকানীরা : অন্তত ক্রোশ তিনেক পথ তো হবেই। আরেকটু বেশিও হতে পারে। সেখানে পৌঁছাতে আপনার রাত ৯টা বেজে যাবে। সন্ধ্যার পর আর এগোবেন না।
কথক : কেন?
দোকানীরা : সেখানে ফাঁসুড়ে ডাকাত আছে।
কথক : তাহলে উপায় কী?
দোকানীরা : তালদীঘি পেরিয়ে সঞ্জয়পুর গ্রাম আছে। আপনি রাতে সেখানে আশ্রয় নেবেন।
কথক : আচ্ছা!
দ্বিতীয় দৃশ্য
মঞ্চ পরিকল্পনা – মঞ্চের একপাশে কাগজ কাটিং দিয়ে তালগাছ সাজানো।পর্দায় দীঘি আর গ্রামের ছবি।
(কথক এবং নফর চন্দ্রের প্রবেশ।)
নফর চন্দ্র: এই যে শুনছেন,,,আপনি মনে হচ্ছে এখানে নতুন এসেছেন!
কথক : আজ্ঞে হ্যাঁ!
নফর চন্দ্র: আপনি কোথায় যাবেন?
কথক : মাখমপুর গ্রামে।
নফর চন্দ্র: ঠাকুরমশাই, আপনার এখানে কী কোনো দরকারী কাজ আছে?
কথক : আমার মালিক শচীশ কবিরাজের শ্বশুরবাড়িতে যাব। পৌষ কিস্তির টাকা আদায়ের জন্য।
নফর চন্দ্র: আপনার কী এখানে পরিচিতি আছে?
কথক : আজ্ঞে না!
নফর চন্দ্র : একটু ভেবে নিয়ে।
ঠাকুরমশাই আমার বাড়িতে চলুন,রাতটা থেকে সেখানে দুমুঠো অন্ন রান্না করে খেয়ে কাল সকালে নিজের গন্তব্যে যাবেন।
কথক : আচ্ছা।
(কথক এবং নফরের প্রস্থান)
তৃতীয় দৃশ্য
মঞ্চ পরিকল্পনা : মঞ্চে কুকুরের ঘেউ ঘেউ ডাক। একপাশে ধানের গোলা, গোয়াল ঘর, অন্যপাশে অন্তঃপুর তৈরি আছে, রান্নার সরঞ্জামও রাখা।পর্দায় চণ্ডীমণ্ডপের ছবি।
(কথকের প্রবেশ।)
হাত মুখ ধোয়া এবং রান্নার দৃশ্য।
(ঝাঁটা হাতে বামার প্রবেশ। ঝাঁট দিতে দিতে কথকের দিকে তাকিয়ে প্রস্থান। আবার বামার প্রবেশ।)
বামা: ঠাকুরমশাই আপনার খুব বিপদ! আপনি এখান থেকে পালান।
কথক : কী বলতে চাইছো? কেন পালাবো?
বামা:এরা সবাই ফাঁসুড়ে ডাকাত। আপনাকে মেরে আপনার কাছে যা আছে সব নিয়ে নেবে।
কথক : আমি কিভাবে পালাবো এখান থেকে? কোনো উপায় আছে কি?
বামা : একটা উপায় আছে। আপনাকে আমার বাপের বাড়ির লোকজনের কথা মনে রাখতে হবে।পারবেন তো?
কথক : পারতে তো হবেই।
(বামা কথককে সব কথা জানিয়ে মাঝে মাঝে এসে জিজ্ঞেস করে যাচ্ছিল।)
অন্তিম দৃশ্য
মঞ্চ পরিকল্পনা: কথকের ঘরের দৃশ্য।
(নফর চন্দ্রের প্রবেশ।)
নফর চন্দ্র: ঠাকুর মশাই খাওয়া হলো?
কথক : আজ্ঞে হ্যাঁ।
নফর চন্দ্র: এবার তাহলে এই পানটা খেয়ে শুয়ে পড়ুন।
কথক: হ্যাঁ। একটা কথা ছিল আমাদের একজন মন্ত্রশিষ্য আছে। তার মেয়ের নাম বামা।এদিকেই কোথাও বিয়ে হয়েছে। আপনি কি চেনেন তাদের?
নফর চন্দ্র: হ্যাঁ। তবে আপনি এদের কিভাবে চিনলেন?
কথক : আমরা একই গুরুবংশীয়।আমার বাবার ওরা মন্ত্রশিষ্য।
(নফর চন্দ্রের প্রস্থান। তারপরই নফর, বামা,শম্ভুর এবং নফর চন্দ্রের স্ত্রী’র প্রবেশ।)
নফর : ঠাকুরমশাই, এই যে বামা। আমার মেজছেলে শম্ভুর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে। সবাই ঠাকুরমশাইকে প্রণাম করো। দেখ তো বামা ওনাকে চিনতে পারো কিনা।
বামা: হ্যাঁ, উনি তো আমাদের গুরু বংশীয়। ঠাকুরমশাই আপনি এখানে?
কথক : আমাকে তো উনি (নফরকে দেখিয়ে) নিয়ে এসেছেন।এদিকে কাজে এসেছিলাম।
বামা প্রণাম করল। তারপর সবার প্রস্থান। মঞ্চ অন্ধকার। একটু পরেই জল নিয়ে বামার প্রবেশ।
বামা: বিপদ কেটে গিয়েছে ঠাকুরমশাই। আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমোন। এই বাড়িতে আর ব্রহ্মহত্যা হতে দেবো না। ওকে বারণ করলেও শোনে না, আসলে শ্বশুরমশাই আছেন তো।
কথক : তুমি দয়াময়ী।
(বামার প্রস্থান। এরপর নফর চন্দ্র আর বামার প্রবেশ।)
নফর চন্দ্র: ঠাকুরমশাই এই নিন পাঁচ টাকা গুরু প্রণামী।
কথক : একটু আড়ালে গিয়ে বামাকে, তুমি আমার মা। আমার জীবনদাত্রী। আশীর্বাদ করি চির সুখী হও।
(এই দৃশ্যের পরেই ধীরে ধীরে পর্দা নেমে এলো।)