Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ দারিংবাড়ির অন্দরমহলে
ভ্রমণপ্রবন্ধ

দারিংবাড়ির অন্দরমহলে

 

লেখক: সোম শেখর বোস


দারিং সাহেবের খোঁজে তিন রাত্তিরের ছুটি নিয়ে পৌঁছলাম ওড়িশার কান্ধামাল জেলায়। শুনেছি বরফ পড়ে এখানে, ওড়িশায় আবার বরফ? কিছুটা অবাক হলেও, কৌতূহল হলো বটে। ভোর ৬টায় ব্রহ্মপুর স্টেশনে নেমে ৫৯ নং জাতীয় সড়ক ধরে এগিয়ে চললাম দারিংবাড়ির উদ্দেশ্যে। পথে পড়লো সারোদা ড্যাম এবং ক্ষুন্টেশ্বরী মন্দির। কিছুক্ষণ কাটিয়ে এগিয়ে চললাম গন্তব্যের দিকে। পথে পড়লো ঋষিকুল্লা নদী। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে ১১টায় পৌঁছলাম ওড়িশার অতি প্রাচীণ, আদিবাসী অঞ্চল দারিংবাড়িতে। অনুচ্চ পর্বতমালায় ঘেরা এই জনপদের প্রাণকেন্দ্র ছোট্ট বাজারটি অতিক্রম করে ডানদিকে ঘুরতেই পৌঁছে গেলাম গাছপালা জঙ্গলে ঘেরা আমাদের রিসর্টে। বাজার অঞ্চলে কিছু হোটেল থাকলেও, প্রকৃতির কোলে দূষণহীন পরিবেশে থাকা এক আলাদা অনুভূতি। রিসর্টের নিরিবিলি পরিবেশে বসে সেদিনটা কাটিয়ে পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম কিছু দর্শনীয় স্থান দেখতে।

সকাল ৯টায় বেরিয়ে প্রথমে যাওয়া হলো নেচার পার্ক বা বাটারফ্লাই গার্ডেনে। অসংখ্য গাছ, ফুল দিয়ে সাজানো পার্কে রয়েছে হরেক রকম প্রজাপতি। পাশেই রয়েছে হিল ভিউ পার্ক। এখান থেকে দারিংবাড়িকে পরখ করে নেওয়া যায়। এটাই না কি দারিংবাড়ির সব থেকে উঁচু জায়গা। চায়ের দোকানে সময় কাটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম লাভার্স পয়েন্টের দিকে। পথে পড়লো এমু গার্ডেন। এমু পাখীর চাষ করা হয়। চাইলে এখানে থাকতেও পারা যায় এদের ৬টি সুসজ্জিত কটেজে। ২০ মিনিটের পথ অতিক্রম করে পৌঁছলাম লাভার্স পয়েন্টে। কিরিকূট (KIRIKUT) জলপ্রপাতের ঠান্ডা জলরাশিতে পা ভিজিয়ে, আড্ডার ছলে কখন যে বিকেল গড়িয়ে এলো বোঝা গেলো না। তাই হোটেলে ফেরার পালা।

পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম দারিংবাড়ির আর এক দর্শনীয় স্থান মৃদুবান্দা জলপ্রপাতের উদ্দেশ্যে। জঙ্গলে ঘেরা, ২২৩টি সিঁড়ি এবং উঁচু-নিচু পথ অতিক্রম করে জলপ্রপাতের পাদদেশে। ৫০ ফুট উচ্চতা থেকে জলরাশি পাথরের ওপর আছড়ে পড়ে বয়ে চলেছে এক অজানা উদ্দেশ্যের দিকে। এই মনোরম পরিবেশে বসে প্রকৃতিকে উপভোগ করতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ে গেলো James N. Watkins-এর সেই বিখ্যাত উক্তিটি –

“A river cuts through rock,
Not because of its power,
But because of its persistence.”

ফেরার পথে গেলাম পাইন জঙ্গলে। ওড়িশায় পাইন জঙ্গল! অনেকেই হয়তঃ অবাক হবেন। তবে জঙ্গলটি যতো সুন্দর, যাত্রাপথটি ততোটাই অসুন্দর। আমাদের মতো কিছু শিক্ষিত মানুষের দ্বারা প্লাস্টিকে ভরে গেছে সমগ্র পথটি। জঙ্গলের উল্টোদিকেই রয়েছে কফি আর গোলমরিচের বাগান। এই বিশাল বাগানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে, গেলাম সূর্যাস্ত দেখতে – আমাদের শেষ গন্তব্যের দিকে। সেখানে বাড়তি পাওনা আদিবাসী নৃত্য। এই কান্ধামাল জেলায় বাস ‘কুটিয়া কান্ধা’ উপজাতির। ছোট ছোট গ্রামে, মাটির বাড়িতে এরা বাস করে। সুর্যাস্ত দেখতে দেখতে, গরম চায়ের ভাঁড়ে চুমুক দিতে দিতে মনে পড়ে গেলো অদ্যই শেষ রজনী, বিদায় জানাতে হবে এই ‘সভ্য’ সমাজকে। ফিরতে হবে কাল।

যাতায়াত : হাওড়া/শিয়ালদহ থেকে চেন্নাই বা বিশাখাপত্তনম যাওয়ার ট্রেন ধরে ব্রহ্মপুর স্টেশনে নেমে ঘন্টা চারেকের পথ দারিংবাড়ি। প্লেনে গেলে ভুবনেশ্বর হয়ে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়, ঘন্টা পাঁচেকের পথ।

বিঃ দ্রঃ: প্লাস্টিকমুক্ত অঞ্চল, দয়া করে প্লাস্টিক বহন করবেন না।

 

Author

Du-কলম

Join the Conversation

  1. খুব ভালো লাগলো। আরো এই রকম article পড়তে পাওয়ার আশা রাখলাম।

  2. bhari sundor lekha …erokom bhromon khahini porle berate jete echhe kore eisob jaygay,i…..ektai onurodh,,,aro ektu details e jodi thakar jayga ba dekhbar jayga gulor bornona thake tahole suvide hoy,
    apnar lekha amader blog er oti proyojoniyo ekti bisoy.. vobishote aro erokom lekha porar opekkhay thaklam….

Leave a Reply to sudeshna mitra Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!