Home সাহিত্য ও সংস্কৃতি “ভূত আমার পুত…”
সাহিত্য ও সংস্কৃতি

“ভূত আমার পুত…”

লেখিকা : পুষ্পিতা বরাট


আজ হঠাৎই ছোটোবেলার একটা ঘটনা খুব মনে পড়ছে। আমাদের বাড়ির খানিক দূরেই রেললাইন পাতা ছিল সেই লাইনের উপর দিয়ে মালগাড়ি প্রতিদিন কয়েক বার কয়লা বোঝাই করে জাপলা সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে নিয়ে যেতো আর সেখান থেকে সিমেন্টের বস্তা নিয়ে দুর-দুর প্রান্তে পাড়ি দিতো।

আমরা রেল লাইনটা পার হতাম এদিক – ওদিক তাকিয়ে যে গাড়ি আসছে না তো তার কারণ কোনো ব্যারিকেট ছিল না। কিন্তু ইংরেজের আমলে ব্যাবস্থা ছিল। একখানা লাল ইঁটের সুন্দর গুমটি ঘর এখনও আছে, সেটা এখন কুচো-কাচাদের খেলার জায়গা। গুমটি ঘরের কাছেই রাস্তার দুই পাশে দুইটি মস্ত বড় নাম না জানা গাছ ছিল। গরমের দিনে মানুষ জন পথ চলতে গাছ তলায় বসে খানিক জিরিয়ে নেয় আবার কেউ গাছ তলায় বসে হাওয়া খায় গল্প করে সময় কাটায়। সেই সময় এই গ্রাম্য দৃশ্যগুলি খুবই মনোরম হতো। আমার মনে পড়া ঘটনার সঙ্গে এটা স্থান পরিচয় মাত্র। তখন নেহাতই ছোটো ছিলাম পাড়ার কাকা, দাদারা চাক্ষুষ দেখা ঘটনার বর্ণনা এমন করতেন যেন মনে হতো আমি সবটাই দেখতে পাচ্ছি। ওই রেললাইনের পারে যে দুটি গাছ ছিল সেই দুটি কে নিয়েই ছিল আমার ভীষণ সমস্যা, কারণ সবার মতে সেই দুটি গাছেই নাকি অনেক ভূত, পেত্নি, শাঁকচুন্নি, মামদো ভূত, ব্রহ্মদত্যি ইত্যাদি অনেক প্রকার অশরীরী থাকে। তারা গাছে বসে গল্প করছে এ তো সব সময় দেখা যায়। তাদের নাকি কখনো একটা লম্বা পা শুধু ঝুলতে দেখা যায় আবার কখনো নিজের হাতটাকে অনেক লম্বা করে গাছ তলায় বসে থাকা মানুষদের মাথার চুলে বিলি কেটে দেয় আবার নাকি রেগে গেলে পরে মাথায় চাঁটিও মারে। রাত্রিতে তো সাদা শাড়ি পরা পেত্নীদের খুব দেখা যায়। উঃফ! আমার শুনতে-শুনতে গায়ের লোম খাড়া হয়ে যেতো এক্কেবারে। ভূতেদের নিয়ে কল্পনার জগতটা আমার অনেক বড় ছিল।

আমি যখন একা যেতে পারতাম না তখন তো কোনো ব্যাপার ছিল না ।তারপর আমি যখন আমি একা – একা রেললাইনটা পার হওয়া শিখলাম তখন নিঃশ্বাসটা চেপে এক দৌড়ে পার হয়ে যেতাম। আর অবশ্য করেই মনে-মনে আওড়াতাম–

ভূত আমার পূত,
পেত্নি আমার ঝি,
বুকে আছেন রাম-লক্ষণ,
করবি আমার কি।

আর রাত্রিতে যদি কারুর সঙ্গে ফিরতে হতো তাহলেই তারা বলতেন, “ওই দেখ গাছের ডালটা কেমন নড়ল পাতাগুলো খসখস করে উঠলো ওইসব তেনারা বসে আছেন।” মা বলতেন, “ওসব কিছু হয় না!” তখন আমি গাছের ডাল পাতা নড়াচড়ার বর্ণনা বিস্তারিত ভাবে দিতাম।

বড় হয়ে বুঝলাম গাছের ডালে যে পাখি পক্ষীরা বসে তারাই নড়াচড়া করে। আর আমি কিনা ভূতের ভয় মরি আর তাদের নিয়ে কত জল্পনা কল্পনা করি। তবে দিনগুলো খুব ভালো ছিল আজ ভাবি।

আজ সেই ছোটবেলার কথা বারবার মনে পড়ায় ভাবলাম হারিয়ে যাওয়া ছোটোবেলাকে কাগজে কলমে ধরে রাখা যেতেই পারে।

Author

Du-কলম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!