লেখিকা : ভাস্বতী বোস
তিন বছরের ছোট্ট মেয়ে আমি বুয়া। অনেক খেলনা না থাকলেও আমার দুটো প্রিয় মেলা থেকে কেনা পুতুল ছিলো। আমিই তাদের নাম দিয়েছিলাম নোটন আর ছোটন। বই খাতা আমার বরাবরই প্রিয়। তবে নোটন ছোটনকে কোলে নিয়েই আঁকিবুঁকি কাঁটা খাতায়, স্লেটে। নোটন- ছোটন কিন্তু আমার কোলে থাকবে।
একদিন জানালায় বসে দু’ পা ঝুলিয়ে দুই পুতুলকে দোল খাওয়াচ্ছি। তখন সব শিকের রড দেওয়া জানালা যার ফলে শিশুরা অনায়াসে পা গলিয়ে দিতে পারতো। এরকম এক মনভরানো দোল খাওয়ানো সময়ে আমার মাসী আমাকে আদর করার জন্য পিছন থেকে টান দেয় এবং আমার নোটন ছোটন পড়ে যায় দোতলার জানলা থেকে এক্কেবারে ঝপাং নর্দমায়। কেঁদে কেঁদে আকুল আমি- না আমাকে নীচে যেতে দিচ্ছে, না মা মাসী খুঁজতে যাচ্ছেন। আমার না পরিষ্কার মনে আছে আমি পাগলের মতো কাঁদছিলাম আর ভাবছিলাম যে এরা খুব খারাপ। খাওয়াতে পারেননি সেই রাতে আমাকে। বাবাকে অফিসে ফোন করে বলায় বাবার এক বিরাট পুতুল কিনে বাড়ি এসে কতো না বোঝানো। নোংরাতে পড়ে ওই নোটন ছোটন মাটির নাকি তলায়। আর তাদের পাওয়া যাবে না। তাই আর একজন এসেছে নাকি আমার কাছে।কাল আবার আর একজন আসবে। আমি তো বুঝতেই পারছি না – মা বলেছিলেন আমি নাকি আধো গলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম যে কেউ পড়ে গেলে অন্যরকম হয়ে যায়? আমি কাল পলে যাবো বালান্দা থেকে তোমলা কি আলেক মেয়ে নিয়ে আসবে? মা’রা খুব বিস্মিত হয়েছিলেন এইটুকু মেয়ের মুখে এরকম প্রশ্ন শুনে।
পরের দিন সকালে খবরের কাগজওয়ালা দাদা যেই না কাগজ দিতে এসেছে- দরজা খোলার সাথে সাথে আমি হাতের তলা দিয়ে ফুড়ুৎ। দাদা ছুটছে, মা ছুটছে – ততক্ষণে আমি নর্দমার মধ্যে- আতিপাঁতি করে খুঁজে কাদামাখা অবস্থায় ওঠানো হোলো আমাকে। দুই হাতে আমার নোটন আর ছোটনের চুলের মুঠি ধরা। কাদা মাখা, কাঁদা মুখের মধ্যে – না, না কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। মা আমার কেঁদে আকুল মেয়েটার না জানি কি হলো। আমাকে পরিষ্কার, পুতুলদের পরিষ্কার এবং সর্বোপরি বাবা আসলে আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে দেখানো।আমি অবশ্যই তাদের দুজনকে সাথে নিয়েছি। আহা! ওদেরও তো দেখাতে হবে ডাক্তার না কি!
আবার পড়াশুনা, খেলা চলতে থাকে কিন্তু ভুলেও না কি বাবার আনা বড়ো পুতুলের দিকে তাকাইনি। আজ মনে পড়ে লিখলাম আমাদের সত্যিই শিশুদিবস ছিলো। ছিলো মায়া দয়া, টান। সামান্য পুতুলের প্রতিও এতো ভালবাসা। ছিলো খেলা, ছিলো গান, মা, বাবা,মাসী, দিদাদের আদর। তার সাথে কাগজফেরীওয়ালা দাদাদেরও আদর। ফিরে আসুক সব শিশুদের ছোটোবেলার সেই আনন্দ, গান, খেলা। বিশ্বশুদ্ধ শিশুদের পেটের আর মনের খিদে মিটুক। আর আমরা রবিঠাকুরের কথায় সব শিশুদের উদ্দ্যেশ্যে বলি-
“ইহাদের করো আশীর্বাদ
ধরায় উঠেছে ফুটি শুভ্র প্রাণগুলি
নন্দনের এনেছে সংবাদ…..”।
সংবেদনশীল লেখা। খুব ভালো লাগলো।
বেশ লাগলো।