Home ভ্রমণ, প্রবন্ধ আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৪৪
ভ্রমণপ্রবন্ধ

আমার ভ্রমণ বৃত্তান্ত – ৪৪

গোপা মিত্র

শীতল মরুর দেশে—লাদাখে

পর্ব ৩

 

হঠাৎই চোখের সামনে ভেসে উঠল দূরে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে পড়ে আছে এক অপরূপ নীল জলের হ্রদ। এই কি তবে প্যাংগং সো? দূর থেকে মনে হল, আদি অন্তহীন ময়ূরকন্ঠি নীল রঙএর এক সিল্কের শাড়ী যেন লুটিয়ে রয়েছে কালচে বাদামী ধূসর পর্বতের পদতলে। আমি তখন উন্মুখ হয়ে অপেক্ষা করছি কখন গাড়ি থামবে ,আর আমি অসমতল পাথুরে রুক্ষ পথ মাড়িয়ে পৌঁছে যাব একেবারে প্যাংগং সোর পাশে, কাছে থেকে দেখব তার রঙ বদলের খেলা।

পূর্ব লাদাখ ও পশ্চিম তিব্বতের (বর্তমানে চিন অধিকৃত) মধ্যবর্তী অঞ্চলে বিস্তৃত এশিয়ার বৃহত্তম লবণাক্ত স্বচ্ছ জলের হ্রদ প্যাংগং ১৩৮৬২ ফুট (৪,২২৫মিটার) উচ্চতায় অবস্থিত। ১৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ, এই হ্রদের সবচেয়ে প্রসারিত অংশের প্রস্থ ৫ কিলোমিটার। প্যাংগং ও চ্যাংচেনমো পর্বতশ্রেণীর মাঝের এই হ্রদের তিন চতুর্থাংশ চীনের দখলে। মাত্র এক চতুর্থাংশ রয়েছে ভারতের হাতে। শীতে এই হ্রদ একেবারে জমে যায়।   

গতকাল নুব্রা ভ্যালী থেকে ফেরার পরই জেনে গিয়েছিলাম, রাস্তা বরফমুক্ত। তাই আজ আমরা যাব প্যাংগং সো। লে থেকে প্যাংগং সোর দূরত্ব প্রায় ১৬০কিমি, সময় লাগে ৬থেকে থেকে ৮ঘন্টা – নির্ভর করে পথের অবস্থা ও গাড়ীর গতিবেগের উপর। পথে পার হতে হয় বিশ্বের তৃতীয় উচ্চতম মোটর পথ চাংলা পাস (১৭৫৮৬ফুট)। 

সাত সকালে তৈরী হয়ে নিচে নেমে Breakfast সেরে আমরা যে যার গাড়ীতে উঠে বসেছি। তার আগে অবশ্য আমরা সকলেই কোকা-৬ খেয়ে নিয়েছি, সঙ্গের হাতব্যাগে কর্পূরও নিয়ে নিয়েছি। যাদের দরকার তারা রক্তচাপের ওষুধও খেয়ে নিয়েছে। 

লে থেকে প্যাংগং-এর যাত্রা পথও দারুণ আকর্ষণীয়। প্রথমে লে মানালী সড়কপথ ধরে কারু। এরপর জাতীয় সড়ক ছেড়ে বাঁদিকের রাস্তা ধরে পার হতে হল শক্তি, জিঙ্গরাল (Zingral); পথে পড়ল গ্রাম, বাজার, গুম্ফা, আবার কখনো শস্যক্ষেত্র। হঠাৎই যেন ভোজবাজীতে সব উধাও। চারিদিকে শুধু আকাশচুম্বী পাহাড়ের সারি। এ পর্যন্ত রাস্তা বেশ ভালো,পাকদন্ডী পথে শুধুই উপরে ওঠা। কিন্তু এর পরই কোনো রাস্তা আছে বলে মনে হয় না। প্রচন্ড খাড়াই, অপ্রশস্ত ঝুরঝুরে মাটি আর পাথুরে পথ ধরে কয়েক কিলোমিটার উঠে আমরা যেখানে পৌঁছলাম, দেখলাম সেখানে এক বেদী – লেখা আছে চাংলা পাস, উচ্চতা ১৭৫৮৬ ফুট (৫৩৬০মিটার)। আশেপাশে চেয়ে দেখলাম বরফের চিহ্নমাত্র নেই। খুবই অবাক হলাম, এত উঁচুতেও বরফ নেই! তবে কি আজ ভাগ্য আমার সহায় নয়?

একটু পরেই অবশ্য ভুল ভাঙলো। সামান্য উঠেই বাঁক নিয়ে গাড়ি যেখানে থামল তার চারিপাশে শুধু বরফ ই বরফ। পায়ের নিচের বরফের উপর থেকে দৃষ্টি ফেরাতেই বিশাল ক্যানভাসে ফুটে উঠল নীল আকাশ আর একই সঙ্গে বরফ আবৃত গ্লেসিয়ারের সারি, যেন দুগ্ধধবল বিরাট এক চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা শিখরগুলি আমাদের দেখা দিতেই চায় না। চোখ ঝলসানো রোদের মাঝে সেই বরফের রাজ্যে দাঁড়িয়ে রয়েছে, শুধুমাত্র প্রবেশ পথটুকু ছাড়া সম্পূর্ণ রংচঙে কাপড়ের আচ্ছাদনে মোড়া একলা ছোট্ট একটা ঘর- যেখানে শুধুমাত্র বসে চা খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে – দায়িত্বে রয়েছে সেনা জওয়ানরা। চাংলা বাবার মন্দিরও রয়েছে এখানে, তবে কোনো স্থায়ী কাফেটেরিয়া বা স্যুভেনির শপ নেই।

এই বরফের রাজত্বে আরো কিছুক্ষণ সময় কাটাবার ইচ্ছে থাকলেও, শরীরে তখন অক্সিজেনের অভাব জানান দিতে শুরু করেছে। ভাবলাম, হয়তবা খারদুংলার থেকে উচ্চতা কম হলেও এখানের বাতাস বেশী হাল্‌কা। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে ফিরে চললাম গাড়ীতে বাকী সহযাত্রীদের সঙ্গে কর্পূরের ঘ্রাণ নেবার জন্য। পরে ড্রাইভারের কাছ থেকে জেনেছিলাম, অক্সিজেনের অভাবে মাথা ধরাটা স্রেফ উচ্চতার উপরেই নির্ভর করে না, তার অবস্থান, বাঁক,  বাতাসের গতি কিভাবে বাধা পাচ্ছে, এইসব আরো কিছু শর্তও আছে। 

এবার উৎরাই পথে শুধুই নামা। চাংলা থেকে কয়েক হাজার ফুট নেমে এসে পৌঁছে গেলাম আর এক সরোবর তীরে। এরপর দুরবুক পার হয়ে পৌঁছলাম তাংসে গ্রামে। মাঝে মাঝেই হচ্ছে পট পরিবর্তন। কখনো তৃণগুল্মহীন ধূসর চরাচরের মাঝে গিরিশ্রেণী, আবার কখনো ফিরে আসে সবুজ শ্যামলিমা। কখনো রাস্তা ভালো, আবার কখনো পাথুরে উঁচুনিচু রাস্তায় ঝাঁকুনি খেতে খেতে এগিয়ে চলা। 

ছুটতে ছূটতে হেঁচকী তুলে গাড়ী যেখানে এসে থামল, তার সামনেই দূর বিস্তারী গিরিশ্রেণীর পাদদেশে এলিয়ে পড়ে রয়েছে নীল জলের অপূর্ব সেই হ্রদ, প্যাংগং। গাড়ী আর হ্রদ বিভক্ত করে চলে গেছে উঁচুনিচু অসমান পাথুরে এক রাস্তা। এখন কিছুক্ষণের বিরতি, তারপর দ্বিপ্রাহরিক আহারের শেষে আবার ফিরে যাওয়া লে’তে। 

সেই অপরূপ নীল জলের বৈচিত্র আর বিশালতা নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে গাড়ি থেকে নেমে রুক্ষ অসমান পাথুরে রাস্তা পার হয়ে পৌঁছে গেলাম একেবারে সেই সরোবর ধারে। রৌদ্রজ্জ্বল নীল আকাশের আলোয় প্যাংগং তখন দ্যুতিময় বিশাল এক নীলকান্তমণি – ময়ূরকন্ঠী নীল রং তখন বদলে গিয়ে হয়ে গেছে গভীর ঘন নীল।উপরে নীল আকাশ আর নিচে স্বচ্ছ অথচ ঘন নীলের এমন যুগলবন্দী খুব কমই দেখা যায়। লবণাক্ত অপেয় অথচ অপরূপ এই নীল জলের সীমানা মিশেছে প্যাংগং আর চ্যাংচেনমো পর্বতশ্রেণীর পাদমূলে। ধূসর ন্যাড়া গিরিশ্রেণী, নেই কোনো সবুজের আবরণ, কিন্তু তবুও উপরে তার দেখা যায় বরফের আলপনা। নীল জলে ছোট ছোট ঢেউ, তারই মাঝে ভেসে বেড়ায় হাঁসের দল বা পরিযায়ী পক্ষীকুল।

সরোবর তীর বরাবর শুরু করলাম পদচারণা, কখনো সামনের দিকে চলা, কখনো পিছন পানে চলা। কিন্তু হাড় কাঁপানো, ছুঁচ ফোটানো এলোমেলো ঝোড়ো হাওয়া সেই চলাতেও বাধার সৃষ্টি করে চলেছে। তবুও চলেছি টলোমলো পায়ে। কাছেই রয়েছে সেনা ছাউনি। ইতিউতি বিচরণরত জওয়ানরা সবসময় লক্ষ্য করে চলেছে আমাদের। তাদেরই একজন দূরের এক পাহাড়ের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে দেখিয়ে দিল কোথায় রয়েছে চিনের সীমানা।

সময় বয়ে চলে, সূর্যের অবস্থান পরিবর্তনের সঙ্গে চলে জলে রঙ বদলের খেলা- সামনে যখন নীল বা সবজে নীল জল, বিপরীত দিকের পাহাড় ঘেঁষা অংশ তখন লালচে থেকে বাদামী বা খয়েরী – ভাসমান পাহাড়ের প্রতিচ্ছবি। মুগ্ধ নয়নে কতক্ষন সেই রঙ এর খেলা দেখেছিলাম জানি না। চেতনা ফিরল খাবারের ডাক পড়াতে।  

সরোবর তীরে এক তাঁবুর মধ্যে টেবিল বেঞ্চি পেতে আমাদের খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। পর্যটক সংস্থার আনা আহার্য দিয়ে দ্বিপ্রাহরিক আহার সমাপ্তির পর শেষবারের মত আর একবার ফিরে চললাম সেই হ্রদের তীরে। মেঘাচ্ছন্ন আকাশের অন্ধকার নেমে এসে নীল জল তখন করে করে তুলেছে কালিমাময়। সেই শেষ দেখা, প্যাংগং এর সাথে। আর একটু এগোলেই এদিকের শেষ গ্রাম স্প্যাংগমিক। একটা দিন যদি সেখানে থাকা যেত, সারাদিন ধরে তাহলে দেখতে পেতাম প্যাংগংএর রঙ বদলের খেলা!

এবার ফিরে চলা একই পথ ধরে। তবে এবার আর থামা নয় চাংলা টপে। অবশেষে দীর্ঘ যাত্রা শেষে আমরা এসে পৌঁছলাম লে শহরের সেই হোটেলে। 

এখনও দেখা হয় নি সিন্ধু আর জাঁস্‌কারএর মিলনক্ষেত্র, বা কাছের শান্তি স্তূপ। পরদিন চলেছি সেই সব দেখতে। সিন্ধু নদকে সঙ্গী করে এগিয়ে চলেছি আমরা। নানা রঙএর পাহাড়ের অলিগলির মধ্যে দিয়ে এবার আমরা পৌঁছলাম শিখ ধর্মস্থান পাত্থরসাহিব। পাহাড়ের উপরে অবস্থিত বিশাল এই ধর্মস্থানে প্রবেশ করতে হয় পা ধুয়ে, মাথা ঢেকে। মূল কক্ষটি চমৎকার সাজানো, ধূপদীপ জ্বালিয়ে চলছে গুরুবন্দনা। লঙ্গরের ব্যবস্থাও আছে, ইচ্ছা হলেই অংশ নেওয়া যায়। আমরা তাদের কর্মকান্ড দেখে, পাহাড়ের উপর থেকে চারিপাশের দৃশ্যাবলী উপভোগ করে ফিরে চললাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে। 

‘Magnetic Hill’ – এই পাহাড়ের চৌম্বক শক্তি গাড়ীকে আপনিই চালিয়ে নিয়ে যায় – চালককে গাড়ী চালাতে হয় না। সামান্যক্ষণ এখানে থেমে এবার এগিয়ে চলা নিমু গ্রামের দিকে।

বেশ কয়েক কিলোমিটার পেরিয়ে আমাদের গাড়ী থামল সেই গ্রামে। রুক্ষ পাহাড়ের মাঝে এ গ্রাম যেন এক মরুদ্যান – চারিদিকে সবুজের সমারোহ। হিমালয় থেকে উদ্ভূত সিন্ধু নদ আর জাঁসকার গিরিশ্রেণী থেকে উদ্ভূত জাঁসকার নদীর মিলনক্ষেত্র এই নিমু গ্রাম। তাদের সঙ্গমের পাশেই বাঁধান ঘাটে উপস্থিত আমি তখন দেখছি দূরের জাঁসকার পর্বতমালার মাঝের সরু খাত বাহিত হয়ে নীল জাঁসকার নদী এসে মিলিত হয়েছে আমারই পায়ের কাছে বয়ে চলা সবুজ সিন্ধু নদের সঙ্গে। লোকচক্ষুর অন্তরালে দুই নদী নিজেরাই নিজেদের নির্জনতা খুঁজে নিয়েছে। কোথা থেকে যেন এক মেঘ এসে নীল আকাশে এক কালো চাদর বিছিয়ে দিল। সেই কালোয় জাঁসকারের নীল জল হয়ে উঠল কালিমাময়, আর সিন্ধুর সবুজ জল হয়ে গেলো ঘোর কালো। এদের তীরে দন্ডায়মান দুরন্ত হাওয়ায় টলোমলো আমি চারিদিকের অনবদ্য দৃশ্যছবিতে তখন মুগ্ধ। শীতে সম্পূর্ণরূপে জমে যাওয়া জাঁসকার নদী ট্রেকারদের স্বর্গ – কারণ তখনই চলে সেই জমে যাওয়া নদীর বরফের উপর দিয়ে ট্রেকারদের ট্রেকিং, চাদ্দর ট্রেক।

এবার চললাম ‘হল অফ ফেম’ – কার্গিল যুদ্ধের সেনানীদের বীরগাথার ইতিহাসের সংগ্রহালয়। মূল শহর থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরত্বে লে কার্গিল রোড NH1 এর উপর অবস্থিত ‘হল অফ ফেম’। সামনেই রয়েছে এক বুদ্ধমূর্তি। দ্বিতলবিশিষ্ট এই ‘Hall Of Fame’ এ রয়েছে একাধিক গ্যালারি। সেখানে সাজান কার্গিল যুদ্ধের নানাবিধ চিত্রাবলী, সেই যুদ্ধে সৈন্যদের ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র, পোষাক পরিচ্ছদ। এছাড়াও রয়েছে ভারতীয় সেনানীদের দখল করা অস্ত্রশস্ত্র, যুদ্ধক্ষেত্রে শহীদ হওয়া বীর জওয়ান ও সেনা অফিসারদের ছবি। এদের মধ্যে একটি গ্যালারি সজ্জিত সিয়াচেন অঞ্চলের চিত্রে –সেখানের গ্লেসিয়ার বা সৈন্যদের কঠোর জীবন যাপনের প্রামান্য দলিলচিত্র দ্বারা। 

এর মধ্যেই কোনো এক জায়গায় আমাদের দেখান হল, অবশ্যই দূর থেকে, থ্রি ইডিয়টস্‌ খ্যাত র‍্যাঞ্চোর সেই বিখ্যাত স্কুল ‘ড্রুক পদ্মা কারপো স্কুল’। এই স্কুল পরিচালিত হয় বৌদ্ধধর্মনীতিতে। নিকটবর্তী পাহাড়ী ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যত গড়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্রতী এই স্কুল।  

লে শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড় চূড়ায় জাপানী সহযোগিতায় নির্মিত শান্তি স্তূপ। দ্বিতল বিশিষ্ট এই স্তূপের নিচতলায় রয়েছে ধর্মচক্র ও উপরতলার অন্দরে তার বুদ্ধদেবের সোনালী শান্তমুর্তি আর বহিরংগে তার ভাস্কর্যে খোদিত বুদ্ধের জীবনের নানা অধ্যায়

এই উচ্চতা থেকে পুরাতন ও আধুনিকতার মিশেলে নিচের লে শহর, তাদের মাঝের সবুজ শ্যামলিমা আর দূরের পাহাড়ের এক চমৎকার Panoramic View পাওয়া গেল।

ফিরে এলাম হোটেলে। সামনের প্রশস্ত প্রাঙ্গনে গোল করে ঘিরে চেয়ার পাতা। আজ লে’র শেষ বিকেলে এখানেই আমাদের চা কফির সংগে জলযোগের ব্যবস্থা। আরো এক বিস্ময় তখন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। একটু পরেই শুরু হল আমাদের জন্য লাদাখী লোকনৃত্য। একদল নৃত্য শিল্পী রংচংএ পোষাকে সজ্জিত হয়ে লাদাখী বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে গান গেয়ে শুরু করল নাচ। আমাদেরও আহ্বান জানাল তাদের সঙ্গে যোগ দিতে। আমাদের মধ্যে কেঊ কেঊ তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের নৃত্যসঙ্গীও হল। নাচের সঙ্গে আমাদের মুখও সমানে চলতে লাগল- চা কফি ও চিকেন পকোড়ার সঙ্গে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে চলল এই নৃত্য প্রদর্শন। তারপর সন্ধ্যার আঁধার নেমে এলে লে’তে থাকার শেষ দিনটাও প্রায় ফুরিয়ে এল।

পরদিন সকালে লে’কে বিদায় জানিয়ে ফিরে চললাম আপনঘরে। প্লেনের জানলা দিয়ে একবার নিচের দিকে দৃষ্টি চলে গেল। কিন্তু এবার আর পাহাড় চূড়াগুলি নজরে পড়ল না। হয়তঃ বিমান চলেছে অন্য কোনো পথে। মনের মণিকোঠার এক কামরায় বন্ধ রয়ে গেল লাদাখ ভ্রমণের অপূর্ব উজ্জ্বল স্মৃতিগুলি। যা দেখলাম আর কোনোদিনও হয়তঃ তার দেখা পাব না। 

অনেকদিনের অতৃপ্ত বাসনা পূরণ করে এখন চলেছি দিল্লী, সেখান থেকে ক’দিন পরে কোলকাতা। মনে হচ্ছে, বয়সটা যদি আরো একটু কম হত, তাহলে হয়তঃ আরো একবার যেতে চেষ্টা করতাম লাদাখে, তবে এবার প্লেনে নয়, শ্রীনগর থেকে কার্গিল লামায়ুরু হয়ে বা মানালি থেকে একাধিক পাস পার হয়ে। যদিও জানি, এ জীবনে সে আশা পূরণ হবার নয়।

— লাদাখ পর্ব সমাপ্ত —

লেখিকা পরিচিতি
 
 
 
গোপা মিত্র

ফিজিক্স অনার্স। একসময়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করলেও, প্রকৃতপক্ষে গৃহবধূ – কিন্তু পায়ের তলায় সর্ষে। ভ্রমণের নেশা প্রবল। ভারতের বাইরে কোথাও না গেলেও দেশের মধ্যেই প্রচুর ঘুরেছেন। পাহাড়, সমুদ্র, জঙ্গল, ঐতিহাসিক স্থান – কোনোও কিছুই বাদ নেই। এখনও সুযোগ সুবিধে হলেই বেরিয়ে পড়েন। দু-কলমের জন্যে জীবনে প্রথমবার কলম ধরা।

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply to Anjana datta Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!