Home বিবিধ, গল্প সাবস্টিটিউট
বিবিধগল্প

সাবস্টিটিউট


সুজিত চট্টোপাধ্যায়


সংস্কার সংস্কার সংস্কার! কি নিয়ম রে বাবা! বিরক্ত হলেও কিচ্ছু করার নেই। চুপচাপ মুখ বুঁজে পালন করো। হন্নে হয়ে খুঁজে বেড়াও। গোবর চাই গোবর। এক দলা টাটকা গোবর। 

অলক্ষ্মী বিদায়ের মোক্ষম উপকরণ। কুলো, কলাপেটো, পিদিম, সিঁদুর সব জোগার কমপ্লিট। একা গোবর বাকি। কোথায় পাবো। দশকর্মা ভান্ডারে চাঁদের মাটিও ইজি অ্যাভেলেব্‌ল্‌, বাট, নো গোবর, আই মিন, কাউ ডাং।

কালী পুজোর রাতে অলক্ষ্মী বিদায়ের আয়োজন। প্রত্যেক বছরই হয়, মানে হয়ে আসছে। কোন অসুবিধে হয়নি। এবার গোবরে আটকেছে। 

পাচ্ছিনা বললে তো চলবে না চাঁদু , যেখান থেকে পারো জোগাড় করো। এত বছরের নিয়ম, ঝপ্‌ করে ঝেড়ে ফেলে দিলেই হলো? মামদোবাজি! পূর্বপুরুষদের কাছে কি জবাব দেবো শুনি!

খাটাল নেই, গরু নেই, ব্যাস! পূর্বপুরুষ যা বোঝবার বুঝুক। 

বাজে কথা বলে লাভ নেই, গরু নেই, তাহলে এতো এতো দুধ কোথা থেকে আসছে শুনি!

আরে ধুৎ! ও’সব প্যাকেটের দুধ। সাদা সাদা গোলা জল। আর্টিফিশিয়াল মিল্ক , নো দুধ। 

আবার বাজে বকে। চা হচ্ছে, পায়েস হচ্ছে, গেলাসে করে ঢকঢক করে খাওয়া হচ্ছে, নো দুধ? 

দুধ হোক না হোক, ওতে গোবর হয় না — ব্যাস্‌!

ভারি মুশকিল, কি কথার ছিরি। দুধে গোবর হবে কেন? 

দুধে গোবর নয়, যে দুধ দ্যায়, সেই গোবর দ্যায়। এই দুধ যে দ্যায়, সে গোবর দ্যায় না। বোঝাতে পারলুম? 

না, বুঝলুম না। বুঝতে চাই না। আমার গোবর চাই। 

হবে না। খাটাল লাও, গরু লাও তারপর গোবর লাও।

ও মা, কি হবে গো, হায় কপাল আমার। অলক্ষ্মী বিদায়ের কি হবে গো। এতো দিনের পুজো, একটু গোবরের অভাবে বন্ধ হয়ে যাবে নাকি? ধম্মে সইবে? সবসময় মনের মাঝে খিচখিচ করবে, অলক্ষ্মী অলক্ষ্মী — ওগো কিছু একটা উপায় করবে তো না কি? 

উপায় আছে।

আছে? কি গো? 

অনেক দিন এমন বিনয় মাখা আদুরে অথচ আকুলতা ভরা কন্ঠস্বর শোনা যায়নি। কি ভালো লাগে, কি সুন্দর। আবার নতুন করে প্রেম নিবেদন করতে ইচ্ছে করে। মন বলে, ওগো প্রিয়ে,  আরও একবার মধুকন্ঠ ঝরাও। জীবন প্রেমসাগরে ডুব দিক। ওগো নির্জনতা, আবার একবার অন্তত  এসো, ভুলিয়ে দাও অতীতের  কর্কশ হৃদয়বিদারক জ্বালাময়ী বাণীকে। 

আছে উপায় আছে। 

লংকা আর পাতিলেবু। দরজার মাথায় টাঙিয়ে রাখলে, অলক্ষ্মী ঘরে ঢুকতেই পারবে না, সুতরাং তাড়াবার প্রশ্নই নেই। 

ইয়ার্কি হচ্ছে না? এসব মজা করার ব্যাপার নয়। সংস্কার, নিয়ম। কোনও বাজে ফালতু কথা শুনতে চাই না। আমার গোবর চাই — ব্যাস!

মাটি দিয়ে কাজ চালাও। 

মাটি? মাটি আর গোবর এক হলো? 

হ্যাঁ, হলো। বিজ্ঞান সম্মত হলো। 

কি করে?

শোনো, আগে মাটি, তাতে জন্মালো ঘাস। সেই ঘাস গরু খেলো। ব্যাস্‌, হয়ে গেল। 

কি হয়ে গেল ? 

গোবর । ঘাস খেয়ে পটি, গোরুর পটি গোবর। ভেরি সিম্পল। 

যুক্তি আছে বটে। ঠিকই তো। খড়, ঘাস এইসব খেলে গোবর, আর এইসব তো মাটিতেই জন্মায়। ঠিকই আছে। 

এই প্রথম সঠিক যুক্তি দাতার উদার সার্টিফিকেট পাওয়া গেল। এতদিন নির্ঘাত বিশ্বাস ছিল, বিবাহিত পুরুষ মানেই মাথায় কাউডাং। এখন মনে হচ্ছে , দীপালোক সার্থক। মগজে লেড লাইট ঝিলিক মারছে। আহ! কি আরাম! 

মাটি? পাওয়া যায়? সেও তো একই অবস্থা। 

ঠিকই বলেছ। তবুও ওই প্রমোটারদের কৃপায় ওটা এখনো পাওয়া যায়। 

এরমধ্যে প্রমোটার এলো কোথা থেকে, ওরা কি মাটি তৈরি করে? 

না না, মাটি কি তৈরি করা যায় না কি? পুরনো বাড়ি ভাঙছে, নতুন বাড়ি তুলছে। আগে মাটি তোলা, পরে বাড়ি তোলা। তারপর টাকা তোলা। টাকা মাটি, মাটি টাকা। বলি, বুঝলে কিছু ? 

বুঝে আর দরকার নেই। মাটি দিয়েই কাজ চালিয়ে নিই কি বলো ? 

অবশ্যই। পূর্বপুরুষদের অত অবুঝ ভেবনা। তারা  জানে, যখন যেমন, তখন তেমন। তাদের সময়ে খাটাল ছিল, গরু ছিল, খাঁটি দুধ ছিল, টাটকা গোবর ছিল। এখন সেসব ইতিহাস। এখন দু’পেয়ে অঢেল গরু। শুধু শিং বাগিয়ে গুঁতোতে ওস্তাদ। চিড়িয়াখানা তে গরু রাখার চল নেই। ইস্কুলেও এখন আর গরুর রচনা লিখতে শেখায় না। গরু এখন রাজনৈতিক ইস্যু। গণধোলাই।  সুতরাং চালাও পানসি। গোবেচারার মতো গোবরের বদলে মাটিই মানিয়ে নেওয়া কিংবা মেনে নেওয়াই ভালো। জয় গোমাতা! 

অগত্যা … উপায় তো নেই। সত্যিই তো, যখন যেমন তখন তেমন। মাটিতেই মানিয়ে নেওয়া ভালো। 

তবে, কোনও গ্যারান্টি নেই জানো। আর কিছু দিন পরে হয়তো এ’ও মিলবে না। সাবস্টিটিউট ভেবে রাখো। সারমেয় ডাং ইজি অ্যাভেলেব্‌ল্‌। হা হা হা হা,,,,, 

ছি ছি ছি ছি ………!!!

Author

Du-কলম

Join the Conversation

Leave a Reply to Alok Mukherjee Cancel reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!